somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সূচনার শেষ অধ্যায়

০৮ ই নভেম্বর, ২০১১ সকাল ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- একটা কথা ভাবছি
: কি কথা?
- এই যে আমি আর আপনি একা একটা রুমে। অন্য সময় হলে এমনটা সম্ভব হতো কিনা
: মানে?
- মানে এই ধরুন পারিবারিক ভাবে না এসে আমি যদি একা আসতাম। যদি আমাদের পূর্বপরিচয় থাকতো...
: ওহ্‌।
: আপনার কথা বলুন
- নতুন করে আর কি কিছু বলবার আছে। বায়োডাটা থেকে নিশ্চই সব জেনেছেন।
: ওটা পড়ে সব জানা হয় নাকি! এই যেমন আপনি কাজ আর পড়াশোনা ছাড়া আর কি কি করেন?
- ছুটির দিনের দুপুরে আয়েশ করে একটা ঘুম দিয়, সেটিকে যদি কিছু করা বলেন। হাহা। আমি কিন্তু আপনার সম্পর্কে কিছুই জানি না তেমন
: বলুন কি জানতে চান
- এই আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি? পড়ালেখাটা চালিয়ে যেতে চান?
: হুম, সেরকমই তো ইচ্ছে।
- পড়া শেষ করে চাকরী খুজবেন?
: তেমন সুযোগ হলে কেন নয়
- আচ্ছা
: কেন আপনার হবু স্ত্রীকে বুঝি চাকরী করতে দিবেন না?
- না না, সেরকম কিছু নয়, এমনিই জানতে চাইছিলাম
: আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনাটা শোনা যাক
- আমার? হুম। আমি আসলে তেমন করে কিছু ভাবিনি। আপাতত যদ্দুর ভাবছি সেটি হচ্ছে চাকরীর পাশাপাশি এই পার্টটাইমের মাস্টার্সটা শেষ করা আর ফাইনান্সিয়ালী একটু গুছিয়ে উঠা।
: আচ্ছা
- আপনাদের এই রুমটা কিন্তু বেশ! আপনার রুম?
: আমার ছোট ফুফির। অবশ্য আমারও
- ওহ্‌
- নীচে থেকে চলে এসে ভালো হয়েছে, কেমন অস্বস্তিকর লাগছিল
: বরঞ্চ বলুন, ওখানে সবার মাঝে পাত্রী দেখতে আপনার অসুবিধে হচ্ছিল। এইখানে নিরিবিলিতে এসে আপনি ভালো করে পরখ করে নিতে পারছেন
- হাহা। তা মন্দ বলেননি খুব একটা। তা একি কথা তো আমিও বলতে পারি, তর্পা।
: আমাকে আপনি সহিনী বলবেন প্লীজ। কাছের মানুষরা ছাড়া আমাকে তর্পা বলে ডাকুক আমার পছন্দ না।
- ওহ সরি।
: ইটস্‌ ওকে। ইয়ে মানে আপনাকে একটা কথা বলার ছিল
- জ্বী নিশ্চই বলুন।
: আমি আসলে এখন বিয়ে করতে চাইছি না
- আচ্ছা
: শুধুই আচ্ছা?
- নীচে আপনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ অনেকটা সেই কথায় বলছিল। আপনার পেছন পেছন উপরে আসতে আসতে ভাবছিলাম কথাটা কখন বলেন। ইট্‌স ওকে সহিনী।
: আপনি প্লীজ কিছু মনে নিবেন না। আসলে বিয়ের জন্য মনে মনে একটা প্রস্তুতি লাগে। সে সময়টা আমি পাইনি। এরা আমাকে এক প্রকার জোর করেই আপনাদের সামনে যেতে বাধ্য করেছে।
- না আমি কিছুই মনে করিনি। বরঞ্চ আপনি এভাবে সামনাসামনি কথাটা বলে ফেলেছেন দেখে ভালো লাগলো। কেবল একটা প্রশ্ন ছিল মনে
: কি?
- আপনি কি এখনি বিয়ে করতে চাইছেন না নাকি আমাকে আপনার পছন্দ না
: পছন্দ অপছন্দের কথা আসছে কেন! আর তাছাড়া একবার দেখেই কাওকে পছন্দ হয় নাকি আপনিই বলুন।
- আপনার কি অন্য কেও আছে?
: অন্য কেও মানে?
- মানে আপনার পছন্দের কেও?
: না নেই।
- আচ্ছা
: আপনি কি ভাবছেন বলুন তো
- ভাবছি আপনি চাইছেন আমি এই বিয়েতে না বলি, কিন্তু...
: কিন্তু কি?
- কিন্তু আপনাকে যে আমার পছন্দ হয়েছে।

(নীরবতা)

ঠিক সে সময়টায় দরজা ঠেলে তাদের বাড়ীর এক লোক চা এর ট্রে হাতে রুমে ঢুকলো। সহিনী ট্রে-টা নামিয়ে রেখে এক কাপ চা বাড়িয়ে দিল আমার দিকে।

ঘরের পরিবেশটা হালকা করার জন্য চা এর কাপটা নিয়ে চুমুক দিতে দিতে উঠে রুমটা ঘুরে দেখতে লাগলাম। কেমন গুছানো, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। দেয়ালে বেশ কিছু ছবি ঝুলানো। একটা হাওয়াঘন্টা মৃদু শব্দে টুংটাং করে যাচ্ছে। যেন হাসছে সে মৃদু মৃদু আমাদের দিকে থাকিয়ে। জানালার পর্দা গলে সূর্য্যের আলো উকিঁ মেরে যাচ্ছে থেকে থেকে। যেন চেষ্টা করছে আমরা কি নিয়ে কথা বলছি সেটি দেখার। রুমের বাসিন্দাদের রুচি সম্পর্কে অনেক কিছুই বলে দিচ্ছে এই সাজানো গুছানো ঘরটা। এক পাশে বই এর তাক। বেশ অনেক পরিচিত অপরিচিত লেখকের ভীড়ের মাঝে একটা নাম দেখে চমকে উঠলাম। রক্ত করবী! কাপ ধরা হাতে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলাম

- এসব আপনার বই?
: আমাদের দুজনের
- ওহ্‌
- আপনি রবি ঠাকুর পড়েন?
: হুম পড়ি তো মাঝে মাঝে
- (রক্ত করবীর বইটার দিকে ইঙ্গিত করে বললাম) রক্ত করবী পড়েছেন?
: পড়বো না কেন! নাটকও করেছি ওটার উপর
- আপনি নাটকও করেন? (আমার কন্ঠের আর্শ্চয্যিত ভাবটা গোপন রইলো না)
: তেমন কিছু না। ইউনির ফাংশানে মঞ্চস্থ হয়েছিল। আমি নন্দিনীর ভূমিকায় অভিনয় করেছি
- বাহ্‌! আপনাকে যত জানছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি।
: (সে এড়িয়ে গিয়ে বললো) শুনলাম আপনি নাকি লেখালেখি করেন?
- লিখি নিজের জন্য। তবে সে ওমন আহামরি কিছু না। মাঝে মাঝে ভাবনার পাখীটাকে বাণী দিয়ে শব্দ দিয়ে বেঁধে উড়িয়ে দিয়। সে সেইসব নিয়ে উড়ে বেড়ায় মনের আকাশের এধার থেকে ওধার। তার সেই স্বাধীন, মুখর, চঞ্চল উড়ে বেড়ানোটায় আমাকে আনন্দ দেয়। সেই আনন্দটুকুন
পাওয়ার জন্যই লিখি।
: দারুণ বললেন তো!

মনে মনে খুশী হলাম তার ভালো লেগেছে জেনে। কেন জানি না, রবি ঠাকুর ভালো লাগে এমন কারো সান্যিধ্যে এলে অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে। মনে মনে যেন কত অব্যক্ত কথা বলা হয়ে যায়। আগ্রহী হয়ে নন্দিনী সম্পর্কে আরও কথা পাড়বো ভাবছিলাম, পরক্ষণেই মনে হলো আমরা দুজন এই রুমে আছি বেশ অনেকক্ষণ যাবত। এইবার বিদায় নিতে হয়

- এইবার বোধহয় উঠতে হয়। আপনার সাথে কথা বলে বেশ লাগলো
: আমারো
- তাহলে আসি, সহি...
: (সে বাধা দিয়ে বললো) আপনি চাইলে আমাকে তর্পা বলে ডাকতে পারেন

(শুনে আমার চোখ দুটোর ঔজ্জ্বল্য বেড়ে গিয়ে থাকবে।)

: (সাথে সাথে বললো) এত খুশী হওয়ার কিছু নেই। এর মানে এই নয় যে আমি বিয়েতে হ্যাঁ বলছি
- (মৃদু হেসে বললাম) না ও তো বলছেন না
: (সে আমার দিকে না থাকিয়ে ধীরে ধীরে বললো) তা বলছিনা
- তার মানে এই দাঁড়াচ্ছে, আপনি আমাকে হ্যাঁ, না-র সীমানায় ঝুলিয়ে রাখছেন। বেশ। আচ্ছা আসি তর্পা।

(রুম থেকে বেড়োতে যাব হঠাৎ কি মনে করে ঘুরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম)

- আপনার মেইল আইডিটা কি পেতে পারি?

(সে কি ভাবলো। একটু পর, দাঁড়ান বলে ভেতরে চলে গেলো কাগজ কলম আনতে। একটায় আমি আমারটা লিখে দিলাম আর অন্যটায় সে তারটা লিখে দিল। মুখের সামনে ধরে পড়তে লাগলো, বৃষ্টির_দিন...

: ...আপনার বৃষ্টি পছন্দ? আমারো (বলেই হাসলো)

আমি তারটা পড়তে লাগলাম। নন্দিনী...মনে মনে বললাম, নন্দিনী তো দেখি একে পেয়ে বসেছে...অবশ্য আমাকেও যে পাইনি সে কথা অস্বীকার করি কি করে। রক্ত মাংসের এই জীবন্ত নন্দিনী। এখন শুধু দেখার পালা তার বিপরীতে কিসের রুলটা পাই শেষ পর্যন্ত

- আচ্ছা থ্যাংকস্‌। আসি। আবার কথা হবে। হয়তো :-)
- (সেও হেসে বললো) হয়তো :-)
৩৫টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×