somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘপঞ্জিকা - বেশ তো আছি

২১ শে নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৮:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বয়সের ধাপগুলো কেমন লাফিয়ে লাফিয়ে পেরোচ্ছি...কত গ্রীস্ম, শীত, বসন্ত পেড়িয়ে এসেছি...কতবার গাছে গাছে পাতায় পাতায় নতুন রঙের উৎসব দেখে শিহরিত হয়েছি...ঝরা পাতার দিনে মন বিষণ্ণ করেছি...বসন্তের আগমনী গান গাইতে গাইতে নতুন নতুন প্রেমে পড়েছি...বিশ্বপ্রকৃতির.. .ভালোবেসেছি...কষ্ট পেয়েছি...বৃষ্টির দিনে দুহাত বাড়িয়ে বৃষ্টিকে ছুঁইয়ে দেখেছি...তুষারকন্যার শুভ্র নাচ দেখেছি জানালায় দাঁড়িয়ে সকালের চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে...সব আমার জীবন তরীর পালের হাওয়া হয়ে আমাকে ঠেনে নিয়ে চলেছে একটু একটু করে ঐ দূর দিগন্তে...যেখানে একদিন পাল ঘুটিয়ে বসবো...মুচকি হেসে আমার জীবন তরীর বৈঠা তুলে দিব সেই মৃত্যুদূতের কাছে...

আমার নিজের বড় শঙ্কা গতবাঁধা, বৈচিত্র্যহীন, ছন্দহীন জীবনটাকে...তাই তো নতুন নতুন পথের খুঁজে বেড়িয়ে পড়েছি...কখনো কখনো খোঁজ পেয়েছি অমূল্য কিছু অভিজ্ঞতার...গলা ছেড়ে কীর্তন গাইবার উপকরণ...আবার কখনো কখনো হৃদয়টা ছিঁড়ে ফুঁড়ে নিংড়ে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন ক্ষত বিক্ষত করে গিয়েছে...প্রাণেশ্বরের কাছে মিনতি করেছি...আমাকে শক্তি দাও প্রভু...শক্তি দাও যেন ফেলে আসা পথের মতোই এই পথটাও পেরিয়ে যেতে পারি

নির্লিপ্ত থাকবার চেষ্টা করেছি...করে যাচ্ছি...কত কথা বলতে গিয়েও গলার কাছটায় দলা পাকিয়ে গিয়েছে...জীবনের কত মুখোশ পড়ছি নিত্য...মন ধরা দিতে চেয়েছে...হয়তো দিয়েছিও...কত প্রহর অপেক্ষায় কেটেছে একটা বার্তা পাওয়ার...একটু সঙ্গ পাওয়ার...কত ইচ্ছেকে অঙ্কুরেই গলা টিপে মেরেছি...ক্ষেদ আছে কি তার জন্য মনে...আছে নিশ্চই...মানুষ তো রক্ত মাংসের

আক্ষেপ আছে কি? আছে হয়তো...কিছু কথা কখনোই বলতে না পারার...বুঝাতে না পারার...অনুশোচনা? বোধ হয় না...এখন আমাকে বলবার সুযোগ না দিয়েই কেও নিজের ইচ্ছে মতোন ভেবে নিবে যদি আমার কি সাধ্য তাকে বাধা দেবার...

কতবার জানতে ইচ্ছে করেছে, "আমি? আমার কারণেই? কিন্তু কেন! এমন তো হওয়ার কথা ছিল না" কত ম্যাসেজ টাইপ করে আবার সেই ব্যাকস্পেস...

অভিমান? হুম...বাড়তে বাড়তে বুকের ভেতর পাহাড় জমে গেছে...

কিছু আমি করি নি গোপন।
যাহা আছে সব আছে
তোমার আখিঁর কাছে
প্রসারিত অবারিত মন।
দিয়েছি সমস্ত মোর করিতে ধারণা,
তাই মোরে বুঝিতে পার না?

তোমার পায়ের কাছেই লুঠিয়ে দিয়েছিলাম আমার সেই বহুদিনের সঞ্চিত নামের মালা। তার পরেও আমাকে বুঝতে তুমি পারোনা।

এ যে সখী, হৃদয়ের প্রেম,
সুখদুঃখবেদনার
আদি অন্ত নাহি যার--
চিরদৈন্য চিরপূর্ণ হেম।
নব নব ব্যাকুলতা জাগে দিবারাতে,
তাই আমি না পারি বুঝাতে।

নাই বা বুঝিলে তুমি মোরে।
চিরকাল চোখে চোখে
নূতন নূতনালোকে
পাঠ করো রাত্রি দিন ধরে।
বুঝা যায় আধো প্রেম, আধখানা মন--
সমস্ত কে বুঝেছে কখন?

...

মাস বছর পেরোতে পেরোতে কখন এক যুগ হয়ে গিয়েছে এই সুদূর প্রবাস জীবনে। কথা হচ্ছিল আমার এক বিবাহিত বন্ধুর সাথে, যার সাথে পরিচয়ের সাত বছর পেরোলো আজ। সে তার সংসারী জীবনের ছোটখাট নানা খুঁটিনাটি বর্ণনা করে বলছিল, সুখী থাকতে আসলে খুব বেশী কিছুর প্রয়োজন পড়ে না। দুজন দুজনকে বুঝলেই হল। একটু সমঝোতা, অপরের জন্য নিজেকে একটু একটু করে বদলে ফেলা। তার কাছে জানতে চাইছিলাম, সে নিজে কি বদলেছে। উত্তর মিললো, অনেক। অনেক বেশী বাস্তববাদী হয়েছে আগের চাইতে। সে বলছিল, একটা মানুষ চাইলেই বদলাতে পারে, কিন্তু তাকে ভেবে দেখতে হবে এই বদলানোর ফল কি হবে, আর না বদলালে কি হবে। পরিস্থিতিও হয়তো এই বদলানোটা ডিমান্ড করতে পারে।

তার মতে আমিও চেষ্টা করলে বদলাতে পারি। তাকে বলছিলাম এই তো বেশ আছি এখন। খাচ্ছি, দাচ্ছি, ঘুমাচ্ছি, কাজ করছি, পড়ছি, শুনছি, লিখছি, এই মন খারাপ হচ্ছে, ভালো হচ্ছে। দুঃখের প্রদীপ দিয়ে কল্পনার আকাশে নিত্যই ব্যাথার ফানুস জ্বালতে হচ্ছে না।

জীবন সায়াহ্নে হিসেবের খাতা খুলে বসলে প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির অংশটা খুব একটা অসম্পূর্ণ থাকবে না। তবে আর কিসের জন্য এই ছুটে চলা। আর কত পথ পাড়ি দিতে হবে। আর কত লাভ-ক্ষতির হিসেব লিখতে হবে এই খাতায়। বেলা শেষে এ জীবন-নদীতেই তো বিসর্জন দিতে হবে সব...তবে?

তাকে বলছিলাম, নিজেকে নিয়েই আমার যত চিন্তা...কখন সে কি চায়, কি করে, কোথায় ছুটতে চায়, এখনো যে বুঝে উঠতে পারিনি...অবশ্য আর কেই বা আছে আমার এই খেয়ালীপনা সইবার

হে প্রাণেশ্বর, তুমি ভাবছো আমার এই দ্বিধার অবসরে তুমি মুচকি হাসবে...উহুঁ সেটি হতে দিচ্ছিনা আমি...আমি পাড়ি দিব দুর্গম, নতুন নতুন পথ...দেখবো জীবনটাকে শেষ জীবনীশক্তি দিয়ে...দেখি আর কি কি আছে তোমার আমাকে দেখানোর...প্রতিকূল ঝড়ের সাথে লড়বো আমার সর্বশক্তি দিয়ে। ভাবছো আমাকে ঠেনে ধরবে...চেষ্টা করেই দেখো!

...

রাত নয়টা বেজে ছয় মিনিট

:| নিজের উপরের লেখাগুলো পড়ে আমার অভিব্যক্তি এখন এই রকমই। কি ভাবছিলাম আমি এইসব লিখবার সময়! রবিঠাকুরের কবিতার লাইন লেখা একটা ফতুয়া পড়ে আছি। কেমন একটা ভাব ভাব আসছে, আহেম :) কেমন হাসি পাচ্ছে লেখাগুলো পড়ে এখন। যাক আমার ভাবনাগুলোর সাথী হয়েই থাক না হয় শব্দগুলো এইখানে বন্দী হয়ে। একটা মজার ঘটনা ঘটেছে আজ। ইউনিতে আমি যখন এই লেখাটা লিখছিলাম, আমার সহপাঠী সেই চাইনীজ জিনিয়াস ছেলেটা কথায় কথায় হঠাৎ জানতে চাইলো আমি কি লিখছি। তাকে দেখালাম। সে জানতে চাইলো কি। বললাম বাংলা। সে বললো কখনো নামই শুনেনি। দেশের নাম বললাম তাও চিনলো না। পরে উইকিপিডিয়া থেকে যখন দেখিয়ে দিলাম বলে, ও চিনে। ইংলিশ নামে চিনছিল না কারণ তারা বাংলা, বাংলাদেশ এই শব্দগুলোর চাইনীজ ভার্সানে চিনে। "বাংলা" শব্দটা তাদের চাইনীজ ভাষায় দাঁড়ায় man dza la। মনে মনে বললাম, সেরেছে। পরে সে নিজেই উইকিপিডিয়ার চাইনীজ ভাষার একটা আর্টিকেল খুজে বের করে। একটা ছবি দেখিয়ে বলে, Do you know him? দেখে আমার চোয়াল আরেকটু হলেই ঝুলে পড়ে আর কি। রবিঠাকুরের ছবি! বললাম চিনবো না কেন! তার লেখা কবিতায় তো লিখেছি। বলে উপরের কবিতাটা দেখালাম তাকে। কথায় কথায় জানালো চাইনাতে সে হাইস্কুলে রবিঠাকুরের কবিতাগুলো পড়েছে। চাইনীজ ভাষায় অবশ্যই। মনে মনে অবাক হলাম অনেক। এরপর রবিঠাকুর নিয়ে অনেক কথা হল দুজনের মাঝে। তার ইচ্ছে কম্পিউটার সাইন্সের সব চাইতে বড় পুরস্কারটা সে জিতে। হেসে বললাম পাবে নিশ্চই একদিন :)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৮:৩৯
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×