অশ্লীল পেইজগুলোর পিছনের নানা কথা,
যেগুলো আমাদের
জানা প্রয়োজন:
কিক-অফ গ্রুপের সাথে কাজ
করতে গিয়ে অনিচ্ছা-সত্বেও
ফেসবুকের কিছু অশ্লীল পেইজ
ঘেঁটে দেখতে হয়। সত্যি বলছি,
ভীষণ লজ্জা পেয়েছি মানুষের এত
নোংরা একটা রূপ
দেখতে পেয়ে। বিকৃত মানসিকতার
একটা সীমা থাকে,
কখনো কখনো কিছু কমেন্ট
পরে রাতে ঘুমাতে কষ্ট
হয়েচ্ছে আমার। আরো অবাক হয়েছি,
এবং ব্যাপারটা এখনো আমার
কাছে একটা প্রশ্ন যে,
মানুষ
কিভাবে সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে এই
কমেন্টগুলো করতে পারে? একজন যখন এসব
কমেন্ট করে, তার
ফেইসবুক ফ্রেন্ডরা তো নিশ্চয়ই
তা দেখতে পায়! সব
ফ্রেন্ডরাই কি তবে একই রকম? নাকি সব
আইডি'ই ফেইক?
জবাবটা কারো জানা থাকলে জানাবেন।
একটু গভীরে গিয়ে জানতে পারি, এই
পেইজগুলো খোলার মূল
উদ্দেশ্যটা আসলে কি। আমার মনে হয় সবার
এটা জানা উচিত। এই পেইজগুলি নিয়মিত
অশ্লীল ছবি,
গল্প ইত্যাদি পোস্ট করতে থাকে "লাইক"
বাড়ানোর জন্য।
সবসময় যে অশ্লীল ছবিই তারা পোস্ট
করে তা কিন্তু না,
যে কারোর ফেইসবুক থেকে "পাবলিক"
করে রাখা ছবি থেকে যে কোনো ছবি কপি
আপলোড
করে দিতে হাত কাঁপে না তাদের;
সাথে দিয়ে দেয়
মনগড়া একটা গল্প - যা কিনা একদমই মিথ্যা।
দুঃখজনক
হলেও সত্যি, আমাদের দেশে বিকৃত
মানসিকতার মানুষের
অভাব নাই। দ্রুত এদের পেইজে লাইক-
সংখ্যা বাড়তে থাকে। তারপর শুরু হয় ব্যবসা।
কি ব্যবসা শুনবেন? ধরুন
কোনো একটা কোম্পানি তাদের
ফেইসবুক পেইজে ভিজিটর বাড়াতে চায়। তখন
তারা ব্যবহার করে এইসব অশ্লীল
পেইজ্গুলিকে।
এরা টাকার বিনিময়ে তাদের
পেইজে একটা অশ্লীল পোস্ট
দেয়; কিন্তু সম্পূর্ণ পোস্ট'তা দেয় না। অর্ধেক
পোস্ট পরার
পর একটা লিংক
আসে যেখানে লেখা থাকে "সি মোর";
কৌতুহল নিবারণ
করতে না পেরে সেখানে ক্লিক করলেই
আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে সেই
কোম্পানির ফেইসবুক
পেইজে বা তাদের ওয়েবসাইটে। তাদের
ওয়েবসাইটে ভিজিটর বারে,
টাকা পেয়ে যায় অশ্লীল
পেইজের অ্যাডমিন। ব্যবসা শুধুমাত্র এই একটাই
না,
আরো আছে। ধীরে ধীরে সবই
জানতে পারবেন। শুরুমাত্র
কৌতুহল সামলাতে না পারার
কারণে আপনি নিজের
অজান্তেই জড়িয়ে যান একটা অপরাধের
সাথে। যেন তেন
অপরাধ কিন্তু না, আপনার এই "নিষ্পাপ" কর্মের
ফলে হয়ত
একজন নিরপরাধ মেয়ে আত্মহত্যা করার
পরিকল্পনা করছে।
যদি ধরে নেই এইসব অশ্লীল পেইজের
অ্যাডমিনরা খুব
খারাপ; তাহলে আমরা কি? এবার
আরো দু'টি তথ্য দেই।
১।
ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে নামকরা কয়েকটি ব্
উল্লিখিত উপায়ে ফেইসবুক পেইজ
এবং ওয়েবসাইটে লাইক
বাড়াতে দেখেছি আমরা। নাম প্রকাশ
করতে পারতাম,
কিন্তু অনেক ভেবে দেখলাম, ব্র্যান্ডের
যারা মাথা,
তারা হয়ত ব্যাপারটা জানেনই না। জুনিয়র
কোনো এক্সিকিউটিভ কে হয়ত দায়িত্ব
দিয়েছিলেন ফেসবুকে র
লাইক বাড়াতে,
সে সোজা উপায়ে না পেরে,
বাঁকা উপায় বেছে নিয়েছে। আমার ফ্রেন্ড
লিস্টে এসব
কোম্পানির মাথারা আছেন। একটু খবর নিন,
আপনার
পেইজের লাইকগুলি অরিজিনাল
নাকি ফেইক। যদি লাইক
গুলি টাকা দিয়ে কেনা হয়ে থাকে,
যে কিনেছে তাকে সাবধান করে দিন।।
কিক-অফ
গ্রুপ'কে বলেছি নজর রাখতে। পরেও যদি একই
কাজ হতে দেখি,
প্রমানসহ সব কিছু আপলোড করে দিব।
২। প্রতিটা পেইজে গিয়েই দেখেছি, আমার
ফ্রেন্ডলিস্টের
কেউ না কেউ অলরেডি সেই পেইজে লাইক
দিয়ে বসে আছে।
কি ভেবে দিয়েছে তা তো জানি না,
আমি কিন্তু সবক'টার
স্ক্রীনশট নিয়ে রেখেছি। আবারও বেনিফিট
অফ ডাউট
দিলাম - হয়ত জানতেন না যে খারাপ কাজ
করছেন, তাই
লাইক দিয়েছেন। এতবড় একটা লেখা লিখলাম,
এখন
তো জানলেন কত বড় খারাপ একটা কাজের
সাথে জড়িয়ে গেছেন সামান্য একটা লাইক
দিয়ে। ৫ মিনিট
লাগবে, আপনার লাইক দেয়া পেইজগুলো একটু
চেক দেখুন।
যদি আপত্তিকর কিছু খুঁজে পান, আনলাইক
করে দিন
অথবা রিপোর্ট করুন। আর স্ক্রীনশটের
কপি পেতে চাইলে আমাকে ইনবক্স
করতে পারেন।
দেখেন ভাই, ভুল মানুষই করে। ভুল শুধরে নেয়ার
মধ্যে লজ্জার কিছু নাই। কিন্তু সবকিছু জানার
পরও
যদি আমরা তা গায়ে না মাখি, ভুলটা তখন
আর ভুল
থাকে না; অপরাধ হয়ে যায়। জানি,
লেখাটা অনেক বড়
হয়ে গেছে। কিন্তু একবার ভাবুন,
একটা নিরপরাধ মেয়ের
আত্মহত্যার চিন্তা করাটাও কিন্তু অনেক বড়
একটা ব্যাপার। সবাই জানলে হয়ত এই খারাপ
কাজটা বন্ধ হবে। তাই অন্যদেরও
জানতে সাহায্য করুন।
আপনি-আমি মিলেই তো এই দেশ, তাই না?
আমরাই তো বাংলাদেশ।
(মূল লেখা - রাজীব হাসান চৌধুরী । সংকলিত )