somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার নিঝুম অরণ্য

০৯ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৮:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিঝুমদের বাড়ি যেতে আমার সবসময়ই অস্বস্তি হত।শুধু ওরা এত বড় বাড়ির মালিক বলে না,ওর বাবা-মা এত বেশি ভাল আর ফ্রেন্ডলি যে আমি নিজের বাবা-মার কথা ভেবে ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্সে ভুগতাম।ও এমন সব কথা দুম করে আঙ্কেল-আন্টির সামনে বলে ফেলত যে আমি লজ্জায় লাল হয়ে ভাবতাম,আব্বা এই কথা শুনলে আমাকে কি করতেন!যাই হোক,তবু প্রায়ই ওদের বাসায় যেতে হতো আমাকে।আমি একটু ক্যাবলা টাইপ বলেই কিনা কে জানে,নিঝুম আমার সাথেই সবকিছু নিশ্চিন্তে শেয়ার করতো।আমার নাম যদি কেউ ওকে জিজ্ঞেস করে,আমি নিশ্চিত ও বলতে পারবেনা।দিনরাত গাধা,বলদ,গরু,হাদারাম ডাকতে ডাকতে আমার আসল নাম শুধু ওই না,আমিও ভুলে যাচ্ছিলাম।ঠিক ফ্রেন্ড না,আমি ছিলাম ওর উপগ্রহ টাইপ।ওকে কেন্দ্র করেই ঘুরতাম।ও নিউমার্কেট শপিং এ,আমি ওর পিছে ব্যাগ হাতে।ইডেনের সামনে ৬০টাকায় জুতা পাওয়া যায়,দৌড়াই ওর সাথে।পারলারে গিয়ে ওর সুন্দর চেহারা আরো সুন্দর বানাবে,আমি ওর এসিস্টেন্ট।কখনো ওকে আর কিছু ভাবার কথা মাথাতেই আসেনি।আর আমাকে গরু,ভেড়া ছাড়া আর কিছু ও তো ভাবতেই পারবে না।তবে আমরা না ভাবলেও ক্যাম্পাসে আমাদের সবাই কাপলই ভাবত।তাই ওকে আর কেউ কিছু বলার সাহস পেতনা।এর মাঝেই একদিন মহারাণীর মাথায় ভুত না দানব কি চাপল জানিনা।রাত ১টা ৩৮ এ ফোন দিয়ে বলে,এই গরু বলতো আমি কি দেখতে খারাপ?

-নাহ,গরুর বান্ধবী মানে গাভিরা দেখতে যেমন হয়,তেমনি তো।
-লাত্থি খাবি হাদা।সিরিয়াসলি বল।
-এই মাঝরাতে তোর এই প্রশ্নের জবাব দরকার কেন?
-দেখতে যদি খারাপ নাই হই,তো আমার বয়ফ্রেন্ড নাই কেন?
কি ভয়ানক কোশ্চেন রে বাপ!কোনোরকমে বল্লাম,আমি গরু হইলেও তো বয়।আর তোর ফ্রেন্ড।কে বলছে তোর বয়ফ্রেন্ড নাই?
বলেই একগাদা গালির জন্য রেডি হলাম।কিন্তু তিনি আজ গালির মুডেই নাই।মন খারাপ গলায় বলল,আজকে তিথির জামাই ওকে লং ড্রাইভ এ নিয়ে গেছিলো।
-তিথির জামাই?ওর বিয়া হইল কবে?
-আরে বলদ,ওর বয়ফ্রেন্ডরেই ও জামাই ডাকে।
-অ।তুই কি এখন আমারে জামাই ডাকতে চাস!!!!!!!!
-ধুর গরু!
-তাইলে মাঝরাইতে এগুলা কি কস?
-আমাকে একটা বয়ফ্রেন্ড খুঁজে দে না হাদা!
ও মোর খোদা!এ কি আবদার!ওর জন্য আর কতো আজিব জিনিস খুঁজতে হবে আমার!এর আগে আড়ং এ মুলতানি না সুলতানি মাটি খুঁজতে গিয়াই আধামরা হইছিলাম!আর এইবার মাটি না,আস্তা মানুষ চায়!
“কিরে দিবি তো?”।
ফোঁস করে একটা শ্বাস ফেলে বললাম,তুই চাইলে কবে না করতে পেরেছি আমি?
-থ্যাংকস গাধা।
আসলেও আমি গাধা।নাইলে কি আর আমি থাকতেও বয়ফ্রেন্ড খোঁজে নিঝুম?আমারে boy ও ভাবেনা মাইয়াটা!যাই হোক,পরদিন থেকেই ক্যাম্পাসে শকুনের মত চোখ করে পোলা দেখে বেড়াই।নাহ,নিঝুমের বয়ফ্রেন্ড ভাবতে গেলেই পোলাগুলার খুঁত বের হতে থাকে।তার মাঝে একদিন চোখ পড়লো ক্লাসের ভাল ছেলে নাদিমের দিকে।যদ্দুর মনে পড়ে লাজুক পোলাটা নিঝুমের প্রতি উইক।মুখচোরা হওয়ার কারনেই হোক আর আমাকে নিঝুমের বয়ফ্রেন্ড ভাবার কারনেই হোক,বলতে পারে নাই।ওকে একফাঁকে ধরলাম,”দোস্ত,কি খবর বল?”একগাল হেসে নাদিম বলল,”এই তো দোস্ত।চলে আর কি।তুই একলা যে!নিঝুম কই?”চান্স পেয়ে বলে বসলাম,’নিঝুমরে তোর খুব পছন্দ,না দোস্ত?”
একটু চুপ থেকে নাদিম বললো,হলেই কি এসে যায়?
-মানে?গাধা নাকি?তুই বলবি না ওরে?
-যাহ্‌,আমার বন্ধুর গার্লফ্রেন্ডরে আমি বলব কেন?
-বন্ধুর গার্ল ফ্রেন্ড?
-হ্যাঁ।তোর গার্লফ্রেন্ড না?
-ধুর!ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
-কি বলিস?আমি তো এই ভেবেই...
-ভাবাভাবি অফ করে যা।ওরে বল।
-যদি মানা করে দেয়!ইনসাল্ট করে যদি?
-সেই ব্যবস্থা আমি করব।আজ রাতেই ফোন দিবি।
-ভয় লাগতেসে দোস্ত।
-আরে ধুর!পেয়ার কিয়া তো ডরনা কিয়া!
উফ!যাক পারলাম অবশেষে!জানে তু ইয়া জানে নার মত কাহিনী!জাস্ট অদিতির কাজটা আমার করা লাগলো আর কি!
রাত ২টায় নিঝুমের ফোনে ধড়মড় করে উঠে বসলাম।“হ্যালো,জানিস কি হইছে?”
বুঝলাম,নিশ্চয়ই নাদিম বিরাট সাহসের কাজটা করে ফেলছে।না জানার ভাব করে বললাম,কি আর হবে?তুই বুঝতে পারছিস যে আমি গাধা না।
-আরে না বলদ।নাদিম আছে না?ও ফোন দিছিল।কি বলছে জানিস?
-কি আর বলবে?কোশ্চেন নিয়ে প্যাঁচাল পা্রছে।
-নারে।ও নাকি আমাকে লাভ করে।ক্যান ইউ ইমাজিন?
-ওরে আল্লাহ!তাই নাকি?ভালই ত।ভাল পোলা।
-আমিও ভাবতেছি রে।২দিন পর জানাব বলছি।
এরপরের কাহিনী পুরাই আজিব।প্রেম তো স্টার্ট নিল কিন্তু ২মিনিট যাইতে না যাইতে ব্রেক করে দাঁড়ায় পড়ে।নাদিম যদি উত্তরে যায়,নিঝুম দক্ষিণে।এ যদি শপিং এর গল্প করে ও করে কোন চ্যাপটার পড়া হয় নাই সেই গল্প।একজন যাইতে চায় নিউমারকেট,আরেকজনের পড়া ছেড়ে ঘুরার ইচ্ছাই নাই।২জনের মাঝখানে পড়ে আমার তো মরার দশা।অবশেষে দুম করে ব্রেক আপ।নিঝুম নাকি এগ্রেসিভ,আনপ্রেডিক্টেবল।আর নাদিমের দোষের সীমাই নাই।
কয়দিন মনমরা হয়ে থাকল নিঝুম।হাসেনা,কথা বলতে চায়না।আজিব ব্যাপার আমাকে গাধা ডাকে না।একদুপুরে ফোন করে বলে,এই মুহূর্তে বাসায় আয়।কেন জানতে চাইবি না।
কি আর করা!গিয়ে দেখি আঙ্কেল আন্টি বাসায়!আজকে না জানি কি বেফাঁস কথা বলে বসে পাগলিটা।
খাবার টেবিলে বসে কোন পূর্বাভাস ছাড়াই মেয়ে বলা শুরু করল,”আব্বু,আম্মু,তোমরা তো জানই নাদিমের সাথে ব্রেক আপ করেছি আমি।অনেক কারন ছিল,সবচে ইম্পরট্যান্ট হল,আদিবের(আমার নাম এই প্রথম নিঝুমের মুখে) সাথে একটা comparison চলে আসতো।ভাবতাম,আদিব তো এটা করে,নাদিম কেন করবে না।আর ওর সাথে মিশেই বুঝলাম,আদিবকে ছাড়া আমার চলবেনা।আমার কথাবার্তা মুভিকে হার মানাচ্ছে জানি।এখন তোমরা ওকে জিজ্ঞেস কর ও আমার সাথে থাকবে কিনা!
আঙ্কেল মুচকি হেসে তাকালেন আমার দিকে।“আমার পাগলীটার সাথে থাকবে না আদিব?
আমি কি কখনো না বলতে পেরেছি মেয়েটাকে!উপগ্রহ আমি,পৃথিবীকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা কোথায় আমার?শুধু ভাবছিলাম,আমার বাপের সামনে এই কথা বললে আমাকে কি করা হত!!!!

(অনেক আগে লেখা একটা লুতুপুতু রোমান্টিক গল্প পোস্ট দিয়ে যাত্রা শুরু করছি সামহয়ারে। দেখাই যাক এই যাত্রা কতটা আনন্দময় হয় :) )
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ২:৩১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×