অর্থমন্ত্রী অর্থবোধক কথা বলেননি ! তিনি বলেছেন কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা অত্যন্ত বিপদ জনক !!
তার বক্তব্যকে আমি সমর্থন করি না । আমার জানা মতে যারা মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে ভাল জ্ঞান রাখেন তারা এই কথার প্রতিবাদ করবেন । সকল মাধ্যমের যেমন ঐতিহ্য আছে তেমনি কওমী হল প্রকৃত ঐতিহ্যবাহী ইসলামীক শিক্ষা । হয়ত না জেনেই আমার কথার অনেকেই প্রতিবাদ করবেন । কিন্তু জেনে রাখুন কওমী মাদ্রাসাই একমাত্র দেশে বৃহৎ শিক্ষা প্রসার পদ্ধতি যেখানে কোন ছাত্র বা ছাত্রী জামায়াতে ইসলামী করতে পারবেনা ! কেউ মওদুদীর ভ্রান্ত ধ্যানধারণা পোষণ করতে পারবেন না । যদি কেউ করেন তবে তাকে ছাত্র অবস্থায় মাদ্রাসা থেকে বহিস্কার করা হয় । অপরদিকে আলীয়া (এফতেদায়ী, দাখিল আলেম হতে কামেল পর্যণ্ত ) যা সরকার নিয়ন্ত্রণ করে, সরকারী বেতন প্রদান করা হয় সেখানে মওদুদীর চেতনার জামায়াত তৈরির কারখানা হিসেবে আমি মনে করি ।
মওদুদী ছিলেন ব্রিটিষদের অনুসারী আর কওমী হুজুর সেই সময় থেকেই মওদুদীর চেতনার বিরোধী । কওমী মাদ্রাসার সিলেবাসে এমন কোন বই নেই যেখানে মওদুদীর চিন্তা চেনতা ধ্যান ধারণা পোষণ করে । তারা বিভিন্ন বই পুস্তকের মাধ্যমে নিন্মতম এটুকু ধারণা প্রদান করেন যে জামায়াতী ইসলামী বা তাদের ধ্যান ধারণা হল বাতেল মতবাদ । এটা ফেতনা , এখানে প্রবেশ করানো যাবেনা ।
অর্থমন্ত্রী এটা বলতে পারতেন যে কওমী মাদ্রাসা সেকেলে বা আদি অথবা সনাতন পদ্ধতি । তবে কওমী মাদ্রাসায় আছে প্রকৃত ইসলামী শিক্ষা । তাদের শিক্ষাপিঠ গড়ে উঠেছে ভারতের দেওবন্দের মাধ্যমে , এদেশের প্রতিটি কওমী মাদ্রাসাকে ভারতের দেওবন্দের শাখা হিসেবে ধরা হয় । তারা নারী পূরুষ একসাথে শিক্ষা গ্রহণ করতে নারাজ বলে ওনেকেই সেকেলে ভাবতে পারেন তবে ইসলাম যেটা বলে তারা সেটাকে নির্দিধায় মেনে নিবে কিন্তু জোড় করে কোন আধুনিকতার নামে অনৈসলামীক কার্যকলাপ মেনে নিবে না । তাই তারা এতদিনেও সরকারী নিয়ন্ত্রণে আসতে নারাজ । তারা মনে করে সরকারী নিয়ন্ত্রণে আসলে মহিলা শিক্ষক দিবে যা পুরুষ হুজুরদের সাথে চাকুরী করাটা ইসলামী শরীয়ত বিরোধী , তাছাড়া আধুনীকতার নামে দেওবন্দী শিক্ষা সরিয়ে দেয়া হবে । এগুলো তারা সমর্থন করে না । দেওবন্দ মাদ্রাসা একটি শান্তিপ্রিয় ও জঙ্গিবাদ মুক্ত প্রতিষ্ঠান । অনেকেই মনে করেন কওমী মাদ্রাসা হল একটি জঙ্গিবাদ সৃষ্টির মাধ্যম ! আসলে যারা জানেননা তারা এসব মনে করে থাকেন । কওমী মাদ্রাসাকে গালি দিয়ে প্রকৃত জঙ্গিবাদ সৃষ্টিকারী মাদ্রাসাগুলোকে আড়াল করা হচ্ছে । প্রকৃত জঙ্গবাদ তৈরির মাধ্যম হল জামায়াতে ইসলামী , যা আলীয়া মাদ্রাসা (সরকার নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসাগুলো) তে বসবাস করে । প্রকৃতপক্ষে শিবির আর জামায়াত এত বৃদ্ধি পেয়েছে কোথায় তা হয়ত আমাদের বাঙালী চেতনার মানুষ বুঝতে ভুল করেছে । তারা যা জেনেছে তা নয় , আর যা জানে তাই হল বাস্তব অবস্থা ।
একটা বিষয় আপনাদের চিন্তা করতে পরামর্শ দিব , তা হল : কওমী মাদ্রাসা যদি জঙ্গিবাদ আর শিবির তৈরির কারখানা হত তবে প্রশাসনে কি করে এত জামায়াত শিবির প্রবেশ করল ?? কওমী মাদ্রাসার কোন ছেলে বা হুজুর ত দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে বা প্রশাসনে চাকুরী করে না । বা সে সুযোগও নেই !! কারণ তাদের সনদ দিয়ে ত সরকারী বা আধাসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা সম্ভব নয় ।
সরকার ভাত দিয়ে ভুত পালছে , আর দোষ দিচ্ছে কওমীদের উপর ।
যদিও কওমী মাদ্রাসার কিছু কিছু ছাত্র জঙ্গি হিসেবে রাস্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরা পড়ছে তবে সেটা নগন্য , সেটাও টাকার লোভে । মাদ্রাসার শিক্ষাকে পদদলিত করে তারা লোভে পরে এই পথে পা বাড়ায় । যদি তাদের শিক্ষার প্রকৃত মূল্য পেত তবে তাদের মত সৎ মানুষ আর দ্বিতীয়টি হত না । কারণ আমরা দেখেছি যে কোন প্রতিষ্ঠানে তাবলীগি দ্বিনী ভাই যদি চাকুরী করে তবে তাদের মত সেবা দানকারী ও সৎ আর ঐ প্রতিষ্ঠানে খুঁজে পাওয়া যায় না । তাবলিগ হল দেওবন্দেরই শাখা , আর তাদের শিক্ষা মাধ্যম হল কওমী মাদ্রাসাগুলো ।
বৃটিশদের সময়ে এই উপমহাদেশে সিপাহী বিদ্রোহ হয়েছিল , সেটা আসলে সিপাহীদের বিদ্রোহের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল তারা হলেন দেওবন্দের বড় বড় হুজুর । তাদের খেলাফতি আন্দোলন ভারত স্বাধীনতার ক্ষেত্রে স্বর্ণালী স্বাক্ষর বহণ করে । যার কারণে মহত্মগান্ধীজির মত নেতারাও দেওবন্দের খেলাফতি আন্দোলনের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করেন ।
এর কারণ ছিল , ব্রিটিষরা এদেশে মুসলীমদের উপর অত্যন্ত অত্যাচার নিপিরন শুরু করে দেয় , বড় বড় আলেমদের হত্যা আর জেলে বন্দী করে রাখে । এথেকে মুক্তির জন্য মুসলীম নেতা তথা দেওবন্দের অনুসারীরা বৃটিশর বিরুদ্ধে আন্দোলন সৃষ্টি করে । এমত পর্যায়ে বৃটিশ সরকার দেওবন্দের সকল মাদ্রাসা শিক্ষা ও তাদের শাখা বন্ধ করে দিতে থাকে । আর মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধ করে বড় বড় আওলীয়াদের যখন দেশদ্রোহী অপবাদ দিতে থাকে তখন মুসলীমদের সেন্টিমেন্টে আঘাত লাগতে থাকে । বৃটিশ ইংরেজ ও তাদের চর চিন্তা করে এই উপমহাদেশে যদি মুসলীমরা বৃটিষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে ভারতে শাসন করা অসম্ভব হবে । তাই তারা তাদের মত করে মাদ্রাসা চালু করে । সেই মাদ্রাসাগুলো হল বর্তমানের আলীয়া মাদ্রাসা, যা সরকার নিয়ন্ত্রণ করে । আর সেই মাদ্রাসায় শিক্ষার জন্য সিলেবাস হিসেবে গ্রহণ করে মওদুদী মার্কা লোকদের লেখা বই !! আবু আ’লা মওদুদী হল বৃটিশদের আবিস্কার । একজন লেখক ও পত্রকার থেকে বড় আলেম হয়ে উঠার পেছনে বৃটিষদের অনেক অবদান আছে । এমনকি জামায়াতে ইসলামী গঠন করতেও বৃটিশদের প্রচুর অর্থ খরচ করতে হয়েছে । আর তারই সূত্র ধরে আবু আ’লা মওদুদী ও জামায়াতে ইসলামী বৃটিশর গোলামী করেছে এবং ভারত স্বাধীনতার বিরোধীতায় নেমেছে ।
মওদুদী ও জামায়াতে ইসলামী এবং আলীয়া মাদ্রাসাগুলো একই আদর্শের উপর ভিত্তি করে গঠিত । সবগুলোই হল বৃটিশদের অশীর্বাদ !! এগুলো গঠনের উদ্দেশ্য হল যাতে মুসলীমরা ইসরামের প্রকৃত আদর্শ থেকে দূরে সরে থাকে । তারা ইসলামী খেলাফতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে জামায়াতে ইসলামী গঠন করে দেয়ে , যা গণতান্ত্রীক একটি দল ! যেখানে সন্ত্রাসবাদ মূল আকীদাহ ।
তারা বড় বড় আলেমদের হত্যা ও বন্দী করতে ‘মওদুদী’মার্কা আলেম সমাজে প্রতিষ্ঠা করে ।
বৃটিশরা দেওবন্দী শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করতে তৈরি করে আলীয়া মাদ্রাসার নামে ইসলামী আদর্শ বিরোধী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ।
আর যেহেতু এই শিক্ষা ব্যবস্থার গোড়াতেই গলদ , তাই এর থেকে ভাল কিছু আশা করা যায় না । তাই শুরু থেকেই কাঠমৌলভী তৈরি করে চলেছে এই প্রতিষ্ঠানগুলো । তারা দ্বীর্ঘদিন ধরে মওদুদীর বা তাদের অনুসারীদের লেখা বইগুলো রপ্ত করতে করতে জড়িয়ে পড়ছে অপরাধ আর অপকর্মে , আর তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীকে রাস্ট্রক্ষমতায় আনা সব সময় । তারা সরকারী নিয়ন্ত্রীত বলেই প্রশাসনে চাকুরী করার সুযোগ পাচ্ছে , ফলে সরকার টাকা দিয়ে ভুত পুষে নিজেদের ক্ষতি করছে ।
আমাদের উচিত কওমী মাদ্রাসা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জেনে কথা বলা , কারণ তারা যা নয় তা ভেবে আমরা যেমন ভুল করছি , সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করছি যার সুযোগ সেই বৃটিষ ভারত থেকেই মওদুদীবাদীরা গ্রহণ করেই চলেছে ।