somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আত্মীয়তা রক্ষা করার চেয়ে আত্মহত্যা করা ভালো

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৭:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা একটা অসম্ভব বাজে জিনিস। তার থেকেও বাজে ব্যাপার হলো, কেউ অপরাধ করলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া। এই দুইটি বিষয় যে এড়াতে না পারবে, তার জীবনে দু:খের আর শেষ নেই। কারণ, আপনি যতই রক্তের বন্ধন টাইট করে জুড়তে চান, আপনার রক্তীয়রা তত বেশি আপনাকে বিরক্তিকর মনে করবে এবং আপনাকে ভাগাড়ে নিক্ষেপ করতে চাইবে।

আত্মীয়তার মধ্যে সবচে’ খারাপ দিকটা হলো, আত্মীয়দের কাউকে তার দুর্দশার সময়ে দেখভাল করা । এটাকে আত্মীয়-সমাজে বলা হয়, অবদান। এই অবদান দাতা ও গ্রহীতা দুজনের জন্যেই একসময় গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়ায়। দাতার মধ্যে তেমন কোনো বড়াই কাজ না করলেও এইটুকু আশা সে হৃদয়ে পোষণ করে যে, আমাকে অন্তত ওরা কখনো জলে ফেলে দেবে না। কিন্তু গ্রহীতা পড়ে মহাঝামেলায়- “আরে বাবা এতদিন তো ভালোই ছিলাম, এখন আবার কোন সিন্দাবাদের দৈত্য ঘাড়ে এসে পড়লো” এমন আর কি! সন্দেহ নেই, কোনো মানুষকেই আজীবন অন্যের অবদানে ভর করে চলতে হয় না। সুতরাং একসময় যখন গ্রহীতা শক্ত পায়ে দাঁড়াতে শেখে, তখন প্রতিনিয়তই সে নিজেকে হীনমন্য ভাবে, নিজেকে দাতার জন্যে দায়বদ্ধ ভাবতে থাকে।


এইখানে বিরাট একটা সমস্যা এসে দাঁড়ায়। যেহেতু গ্রহীতা এখন স্বনির্ভর এবং সাধারণ নিয়মে দাতা এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ, দুর্বল; ফলে দেখা যায়, সেই দুর্বলতার কারণে বিভিন্ন সময়ে দাতার থেকে কিছু ভুলচুক বেরিয়ে পড়ে, যা একসময়ের গ্রহীতার চোখে কাঁটা হয়ে বেঁধে। সে ভাবে, এইসব ভুলচুক তাকে বড় হতে, তার সামাজিক স্ট্যাটাস বজায় রাখতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ওদিকে দাতার মনে আশা থাকে, আমি ওদের জন্যে এত করেছি, সুতরাং ওরা আমার এই ত্রুটিটুকু বড় করে দেখবে না। ক্ষমাঘেন্না করে দেবে। পক্ষান্তরে যুগের পরিবর্তনে গ্রহীতার মনে হয়, এইসব চরম ‘অন্যায়’, দাতার সামনে দাঁড়িয়ে এইসব ‘অন্যায়ের’ প্রতিবাদ করা উচিত। কিন্তু ওই যে হীনমন্যতা, ওই যে একসময় অন্যের দান খেয়ে সে বড় হয়েছে, তাই সে প্রতিবাটা করতে পারে না, মুখ ফুটে কথা বলতে পারে না।

এইসময়, ঠিক এই সময়টাতে এসে আত্মীয়তার বন্ধনটা একটা প্রবল দোটানায় দুলতে থাকে। বৃদ্ধ দাতা ছোটদের হাত ধরে বাঁচতে চায়, আর ছোটরা ক্রমশ চায় বন্ধন থেকে মুক্তি।

এমনই সঙ্কটকালে দাতার কপালে যদি কোনো দুর্ঘটনা আছড়ে পড়ে, তাহলেই কাম ফতে। অর্থাৎ, দাতা যদি মান-সম্মানঘটিত কোনো বিপদের মুখে পড়েন, যেমন ধরুণ, চুরির দায়ে তাকে রাস্তায় লোকসম্মুখে জুতোপেটা করা হলো, তাহলে আর কথা নেই। এতদিনের গ্রহীতারা একটা বিরাট মওকা পেয়ে বসে, সব বন্ধন ছেড়ে-ছুড়ে মুক্তির আকাশে ডানা মেলবার। তাদের রক্তের আত্মীয় যে কী বিরাট বিপদে পড়েছে, সেখান থেকে তাকে উদ্ধারের চেয়েও তখন বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় সমাজে নিজেদের মান রক্ষা হবে কিভাবে।


সুতরাং তখন আত্মীয়তার বিষয়টিতে যে কী একটা বিশ্রী রূপ পায়, তা যারা অনুভব করতে পারেন না, তাদের মতো হতে পারলেই ভালো হয়। অনেক গ্রহীতাই তখন হীনমন্যতা ঝেড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় এবং এতদিনকার দাতার চোখে চোখ রেখে দু-দশ কথা আচ্ছামতো শুনিয়ে বহুরাত হারাম করে পুষে রাখা দেহ-মনের ঝাল ঠাণ্ডা করে সে। কেউ কেউ ফেসবুকে সংবাদ-সম্মেলন করে ঘোষণা দেয়, “আসলে ও নামে আমার কোনো মেজো কিংবা বড় মামা নেই, আমার বড় মামাও আমার মতো একই কলেজে পড়েছেন” ইত্যাদি ইত্যাদি।

আত্মীয়তা ও আত্মহত্যা প্রায় সমছন্দের দুটি শব্দ। আত্মহত্যাকে আমরা যতই খারাপ চোখে দেখি, কতটা সঙ্কটে পড়লে যে মানুষ আত্মহত্যার কাজটি করে, তা যে না করেছে, তাকে বোঝানো অসম্ভব; আর যে করেছে, সে পুনরায় জেগে উঠে যে বুঝিয়ে দেবে, সেই সুযোগটিও নেই। তবে একটা তথ্য আপনাদের জানাতে চাই, পৃথিবীতে যতগুলি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে, তার প্রায় সবগুলির পেছনেই রয়েছে রক্তের আত্মীয়দের কাছ থেকে পাওয়া অসহ্য অপমানের যন্ত্রণা।
ভুল তো মানুষেরই হয়, কিন্তু অন্যকে ক্ষমা করা যত সহজ, নিজেকে ক্ষমা করা তারচেয়ে অনেক বেশি কঠিন। আত্মীয়দের থেকে ক্ষমা পাওয়ার অপমানই সেই কঠিন বিষয়কে অসীম কষ্টে রূপান্তরিত করে মানুষের ভেতর আত্মহত্যার মতো অমার্জনীয় অপরাধের আগুন উস্কে দেয়।

এমনই এক সঙ্কটে দাঁড়িয়ে আজ আমার বারবার প্রশ্ন জাগে, ধর্মে কেনো তাহলে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করতে বলা হয়েছে? কেনো ক্ষমার বাণীকে এত মহৎ বলে প্রচার চালানো হয়? কেনো আত্মহত্যা মহাপাপ?

আমি টোটালি কনফিউজড। আমি সত্যিই সন্দিহান। আমার কিন্তু মনে হয়, আত্মীয়তা রক্ষার চেয়ে আত্মহত্যা অনেক ভালো....
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৪৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×