ঘটনা ১.
একজন পলায়নরত সরনার্থী, যে কি না সিরিয়া থেকে আসছিল, যার কোলে ৫ অথবা ৬ বছর বয়সী সন্তান ছিল, তাকে ল্যাং মেরে ফেলে দিল এক হাঙ্গেরীয় মহিলা ফটো সাংবাদিক। হুমড়ি খেয়ে পরে গেলেন মানুষটি ছেলেকে বুকে আগলে রেখেই।হাঁচারেপাঁচরে উঠে দাঁড়ালেন, মুখে তার ক্রোধ কিন্তু ছেলের সামনে লজ্জায় কুঁকড়ে গেলেন কিছুটা।
ঘটনা ২.
১৯৪৮ সালে চিত্র পরিচালক দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরবর্তি সময়ের অর্থনৈতিক মন্দা্, এতে কর্মহারা মানুষের জীবনের চিত্র আঁকতে গিয়ে দেখালেন বাবা এনতোনিও রিচ্চি ( Lamberto Maggioroni) সাইকেল চুরি করলেন তার একমাত্র চাকরি টি বাচানোর জন্য। কিন্তু সেখানে ধরা পরলেন এবং ছেলে ব্রুনো রিচ্চি (Enzo Staiola) র সামনেই হেনস্থা হলেন। তারপর বাবা ছেলের কারো দিকে না তাকিয়ে হেটে যাওয়া, ফুটপাতে অসহায় বাবা র চেয়ে থাকা পরিচালক যখন ছেলের চোখে দেখাতে চাইলেন তখন তা কাঁদিয়ে দিল অগণিত মানুষ কে, কাঁপিয়ে দিল মানবতা।
ঘটনা ৩.
আমি আমার বাবার সাথে আমার স্কুলের হেড মাস্টারের অফিসে। বাবা এসেছেন আমার টিসি উঠাতে। কারন, ক্রমানুসারে আমার খারাপ ফলাফল, এজন্য আমাকে স্কুল বদলিয়ে অন্য স্কুলে নেয়া হবে এবং সে স্থানের এক আবাসিক হোস্টেলে আমাকে রাখা হবে। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। সেখানে অন্য একজন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। তিনি খুব সব জান্তা ভঙ্গীতে আমার বাবা কে নানা কথা জিজ্ঞেস্ব করছিলেন? আমাকে কেন স্কুল বদল করাবে? আমি খারাপ কেন করছি এসব বিষয়ে ওনার কথার সরমর্ম হল, আমার মাথায় গোবর ছাড়া অন্য কিছু নাই। সব শেষে তিনি বাবা বলেই বসলেন সরাসরি, "ছেলের মাথায় কিছু না থাকলে স্কুল বদলিয়ে কি কোন লাভ হবে"? সত্যি বলছি হাতের কাছে বিষ থাকলে আমি এক মুহূর্তও হয়ত ভাবতাম না। আমি যেমনই হই আমার কাছে আমার বাবা ছিলেন গল্পে শোনা রাজা র মত। সে সব পারে।
তাঁর এহেন অপমান তাও আবার আমার জন্য, আমার পক্ষে মানা খুব কষ্টের ছিল। সেদিন আমার আর আমার বাবা র স্কুলের বারান্দা দিয়ে হেটে আসার মুহূর্ত টি জীবনে ভুলতে পারব বলে মনে হয় না।
পরিশেষ
স্থান বা সময়ের তারতর্ম থাকলেও সবখানেই তাদের বাবা রা চেষ্টা করে গেছেন তার সন্তান কে সর্বোচ্চ সুজোগ সুবিধা দিতে। এক এক জন বাবা হয়ে উঠেছেন এক একজন সুপার হিরো, তাদের সন্তানের কাছে। সেই যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশ গুলোর সুপার হিরোরা আজ তাদের সন্তানদের হয়ত ভুলিয়েছেন নতুন দেশের কথা বলে। যেখানে মৃত্যু কে সঙ্গী করে বাঁচাতে হবে না, যেখানে প্রতিদিন আপনজন হারাতে হবে না, যেখানে স্বপ্ন দেখা যাবে। কিন্তু হায় সুপার হিরো বাবা রা একটু বোকা। তারা জানে না কিছু মানুষের ভালথাকার জন্য তারা আজ গৃহ হারা। কিছু পত্রিকায় খবর হওয়ার জন্য তারা ছুটছে। তাদের খবরের কাটতি ভাল। টি আর পি বেশি হয়, তাদের মেনে নেয়া মানবেতর জীবন নিয়ে মানবিকতা বেচাকেনা হয়। তারা পরে গেলে অসঙ্খ্য ক্যামেরার ফ্ল্যাশ ঝলসে ওঠে কিন্তু কেউ হাত বাড়িয়ে দেয়না উঠে দাড়ানোর জন্য। তাদের কারো সন্তান হারানোর আহাজারি আজ ব্যাবসার হট কেক।
ঝগড়া করে এখন রাজায় রাজায়, মরে পোষা সৈনিক, ঘর হারায় আমজনতা, স্বপ্ন দেখায় রাজার পোষা ময়না গুলো ঐ ......যে...... আসছে আলো, এগিয়ে চলো এগিয়ে চলো। আর মানুষ মৃত্যকে সঙ্গী করছে আশার সাগর পারি দিতে গিয়ে। এ সবই জীবন না জীবনের ট্রাজিক কমেডি?
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:১৪