গত বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে এক গ্রাহক তার কর্মচারীকে নিয়ে আমাদের ব্যাংক এবং আরও একটি ব্যাংক থেকে কিছু টাকা তুলে নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে হটাৎ একটা মাইক্রোবাস তাদের গতিরোধ করল। একজন হ্যান্ডক্যাপ দেখিয়ে বলল যে তারা র্যাবের লোক , তল্লাশি করবে। এরপর মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে যথারীতি টাকাগুলো ছিনতাই করে নামিয়ে দেয়া হলো। র্যাব আর পুলিশকে ঘটনা জানানো হলে র্যাব আর পুলিশের সদস্যরা দুপুরে আমাদের অফিসে এসে ভিডিও ফুটেজ দেখতে চাইলেন, গ্রাহক টাকা তোলার সময় আশেপাশে সন্দেহ জনক ছিনতাইকারীর কেউ ছিল কিনা সেটা যাচাই করতে। কিছু খুজেঁ না পেয়ে সবাই এরা দুপুরেই চলে যান ব্যাংক থেকে । সন্ধ্যার কিছু পরে আমি অফিস থেকে বের হয়ে সামনের একটা ঔষধের দোকানে গেলাম এংকলেট কিনতে। সেখানে দেখি লোকজন আলোচনা করছে আজ সামনের ওয়ান ব্যাংকে ডাকাতি হয়েছে, ষাট লাখ টাকা নিয়ে গেছে!!! দোকানি বলছিল, আমাদের টাকা জমা আছে সেটার খবর কি কে জানে। আমি গুজবের এই নমুনা দেখে চরম অবাক হলাম। তখনও জানতাম না গুজব কতদুর যেতে পারে। আমি দোকানদারদের পরিচয় দিয়ে বললাম যে ব্যাংকে এইরকম কোন ঘটনা ঘটেনি, নিশ্চিত থাকুন।
পরদিন অর্থাৎ গতকাল শুক্রবার সকালে ম্যানজারের ফোন পেলাম, বললেন জনকন্ঠ কিনে এনে অফিসের সামনে আসুন। আমি জনকন্ঠ কিনে চমকে গেলাম। বাংলা নিউজ টুয়েন্টিফোর এর সূত্র দিয়ে পত্রিকাটির শেষের পাতায় খবর দিয়েছে যে গতকাল রাত সাড়ে দশটায় একদল ডাকাত র্যাব পরিচয়ে ওয়ানব্যাংক পল্লবী ব্রান্চে অস্র তল্লাশি করতে ঢুকে চার লাখ ষাট হাজার টাকা ডাকাতি করে নিয়ে গেছে!!!! অফিসের সামনে যেয়ে আমি আর ম্যানেজার কিছুক্ষন হতবুদ্ধি হয়ে দাড়ালাম। উনি বলছিলেন যে সাংবাদিকদের মান কত নিচে নেমে গেছে দেখুন রাত সাড়ে দশটার দিকে কোন ব্যাংকে অফিসাররা থাকেনা তাই ভোল্ট বন্ধ থাকে এটা এরা জানেনা, সেইসাথে অত রাতে ব্যাংক ডাকাতি হলে ভোল্ট ভাংতে হবে আর ভোল্ট ভেংগে কোটি টাকা রেখে মাত্র সাড়ে চার লাখ নিয়ে নিশ্চয় কোন ডাকাত যাবে না। সাংবাদিকতা করতে যে ন্যুনতম শিক্ষার প্রয়োজন সেটাও বোধহয় এখন আর দরকার হয় না।
আমাদের জন্য আরও চমক অপেক্ষা করছিল। আমি আর ম্যনেজার স্যার ওখান থেকে ধানমন্ডি মাঠে গেলাম আমাদের একটা টুর্নামেন্টে খেলার জন্য, সেখানে উপস্থিত আমাদের অন্য ব্রান্চের এক কলিগকে তার স্ত্রী বার'টা দিকে ফোন করে জানালো যে আরটিভির শীর্য নিউজে ওয়ান ব্যাংকে ডাকাতি হয়েছে সেটা বলছে!!!!আমাদের টপ ম্যানেজমেন্ট উদ্বিগ্ন হয়ে গেছেন ইতোমধ্যে।
রাতে বাসায় ফিরে নেট ঘাটলাম। জনকন্ঠের অনলাইন সংস্করনে খবরটা নেই। সম্ভবত সরিয়েছে। বাংলানিউজটুয়েন্টিফোরেও তেমন কিছু চোখে পড়ল না। আমাদের সাংবাদিকরা খবর তৈরি করে জানতাম, কিন্তু ঘরে বসে এতো ভয়াবহ গল্প তৈরি করে সেটা এবার হাতেনাতে প্রমান পেলাম।