somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেমেসিস

১০ ই জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৪:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইনিতো চোর না, মানুষ। তবে গরীব মানুষ। এই দাদা, একে মারছে কেন? তুমিতো পুলিশ, একে বাচাও।একে মেরে ফেলছেতো!

আমি বললাম,তুমি চোর দেখতে চেয়েছিলে,দেখ।এটাই চোর।আমার পিচ্চি বোন নিহান ছলছল চোখে আবার বললো, ইনি চোর না।হতেই পারে না।ইনি মানুষ। মানুষ চোর হয় কি করে?বলেই দৌড়ে বাসার ভিতর ঢুকে গেল।

লোকজন কাশেম চোরাকে খুব পিটাচ্ছে।এই মাইর তার কাছে পানি ভাত।হাত পায়ের বাধন খুলে দিলে সে এখনি দৌড়ে পালাবে,আর এদের অকথ্য ভাষায় গালি দিবে।

তবে এই মুহুর্তে আমার মনোযোগ অন্যদিকে।নয়তো আমিও দুই-চারটা লাত্থি দিয়ে আসতাম।পুলিশ হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব। আমি খুব চিন্তিত, কারণ আমার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছোট বোন সানিয়া কাল রাতে বাসায় ফেরেনি!

সকাল থেকে তার খোজ করা হচ্ছে, পাওয়া যাচ্ছে না।মোবাইল বন্ধ,কোন আত্মীয়ের বাসায় যায়নি।খুব অস্থির লাগছে!আমি ওর বান্ধবী রাইসাকে কল দিলাম।

:হ্যালো, আমি সানিয়ার ভাই এস.আই মাসুদ।কাল তুমি আর সানিয়া একসাথে বের হয়েছিলে।সানিয়া কোথায় বলতে পার?
:ভাইয়া, আমি সানিয়াকে হ্যান্ডশেক রেস্টুরেন্টে রেখে বাসায় ফিরেছি।আমিও কাল থেকে ওকে ফোনে পাচ্ছি না।কিছু হয়েছে ভাইয়া?

আমি কল কেটে দিলাম।মনে মনে বললাম,পুলা হইলে তোরে থানায় এনে লটকাইতাম।সারাদিন দুইজনে গুটুরগুটুর করতে পার, আর ও কই জানতে পার না। একটা খারাপ গালিও দিলাম মনে মনে।আসলে পুলিশ গালি ছাড়া কথা বলতে পারে না।

কোথায় যাবো, কার বাসায় খুজবো ভাবছিলাম।আজাদ সাহেবের কল এলো। এই লোকটা বিরক্তিকর, তার মেয়েকে কে একটু শারীরিক নির্যাতন করছে মামলা করে দিছে এলাকার চেয়ারম্যানের ছেলের নামে।একজন সম্মানী লোককে অসম্মান করার চেষ্টা, তার চেয়েও বেশি টাকা নেয়ার ধান্দা?

:কি বলবেন বলুন।খুব ব্যস্ত আছি, আপনার কেস নিয়ে।আর একটা একাউন্ট দিচ্ছি ৫ লাখ টাকা দিয়ে দিবেন সন্ধ্যার আগে।
:স্যার,এত টাকা কই পাবো?আর আপনাকে টাকা দিব কেন, পুলিশ হিসেবে এটা আপনার কাজ।সরকার আপনাকে বেতন দেয়।

:হ্যা, কাজ।তবে ভুলে যাবেন না, আপনার আরেকটা ছোট মেয়ে আছে।আর পাংগা নিয়েছেন বাঘের সাথে, বাঘ যদি ঐ মেয়েটার দিকেও থাবা দেয়!টাকা দিন, বাঘ শান্ত রাখি।আমার টাকার লোভ নাই।
:আসলে এত টাকা নেই।কোথা থেকে দিবো,মেয়েটার চিকিৎসায় এত টাকা গেল?

:এত প্যাচাল, পাইরেন না।টাকা কেমনে দিবেন আপনে জানেন।
:.......

ইদানীং ধর্ষণ বাড়াতে ভালোই হইছে।উপরে কামাই বাড়ছে।খুব সোজা টাকাওয়ালা পুলাপান অকাজ করবে, তাদের বাচানোর জন্য অভিভাবক এত এত টাকা ঢালবে।সব পুলিশের পকেটে।একটু চালাক হইলে টাকা-পয়সার অভাব হয় না।

আমি আহসান-উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হলাম। হ্যা, কাল সে ক্লাসে এসেছিল।দুপুরেই তার ক্লাস শেষ।তাহলে গেল কোথায়?মাকে বলেছি, সানিয়াকে না নিয়ে বাসায় ফিরবো না।বাসায় গিয়ে মাকে কি বলবো?

ফোন বেজে উঠলো। ধর্ষক আশিক কল দিয়েছে।ধর্ষক বললাম, কারণ আমি জানি আজাদ সাহেবের মেয়ে তনুকে সে ধর্ষণ করেছে। নইলে চেয়ারম্যান আমাকে এত ধরণা দিত না।এখন যে দিনকাল পরেছে, টাকাওয়ালা আর রাজনীতিবিদদের সাথে ঝামেলায় গেলে খুব বিপদ!

:আশিক, বল।
:ভাই, আপনে কই?আপনের জন্য পাখি ধইরা রাখছি। একদম ফ্রেশ, আসেন দুই জনে মিলে খাইয়া দেই।

:সেদিন একটা ধর্ষণ করলে, সেই ঝামেলাই এখনো মিটাতে পারি নাই। এখন আবার আরেকটা! ২০ লাখের এক টাকাও কম হবে না।
:ধুর মিয়া!এইটা আপনে আগে খাবেন।আমি পরে।প্রতিবার আমি আগে খাই,এইবার আপনে আগে!হে হে.....

:কাকে ধরে আনছো, কে জানে?কোথা থেকে আনলে?
:আর বলবেন না।আমাদের এলাকারই, আমাদের এলাকায় থেকে অন্য পোলার লগে প্রেম করে বেড়াবে, আর আমরা একটু মজা নিবো না!বেশিদিন না, দুই দিন রাইখা ছাইড়া দিবনে।

:যদি চিল্লাচিল্লি করে, বের হয়ে পুলিশে খবর দেয়।
:তাইলে আপনে আছেন কেন?আর বেশি তেড়িবেড়ি করলে মাইরা ফেলবো!

মন অত্যন্ত খারাপ। কি করবো, কোথায় যাবো, কোথায় খুজবো?

সন্ধ্যায় ফার্মেসী থেকে এক বক্স প্যানথার কিনলাম। আশিকদের আড্ডাখানায় দরজা নক করতেই ছোট একটা পিচ্চি দরজা খুলে দিলো।আশিক আমায় দেখে গাল পর্যন্ত একটা হাসি দিয়ে বললো, যান আপনে আগে যান।মজা নিয়া আসেন।আপনে আমারে বাচাইছেন। মনে করেন, এইডা আপনের গিফট!হে হে।

আমি তালা খুলে রুমে প্রবেশ করলাম।অন্ধকার ঘর, আলো জ্বেলে দেখি কেউ রুমে নেই।ব্যাগ, ভাঙা মোবাইল, বইপত্র ছড়িয়ে আছে। কাঠের জানালায় আচড় কাটা, মেয়েটা বের হবার খুব চেষ্টা করেছে, হয়তো হাত-মুখ বাধা।আর ডাকলেই এখানে কেউ আসবে না।শহর থেকে দূরে এদিকে কেউ অতটা আসে না, আসে আমার কিছু ভালো নামধারী খারাপ লোক।

আমি আস্তে করে টয়লেটের দরজা খুললাম, একটা মেয়ে গুটিয়ে শুয়ে আছে।হাত-মুখ বাধা টয়লেট ব্যবহার করতে পারেনি, গন্ধে নাক কুচকিয়ে এক মগ পানি ঢেলে দিলাম।মেয়েটি মাথা ঝারা দিয়ে উঠলো, মুখ চুল দিয়ে ঢাকা। গোঙানির মত আওয়াজ করছিল, কিছুই বুঝতে পারছি না।

আমার দিকে এগিয়ে আসতে চাচ্ছে, হাতা-পা বাধা তাই পারছে না। মুখের বাধন খুলে দিলাম।মেয়েটি আমার গায়ে পরে বললো,ভাইয়া! ভাইয়া!পানি খাবো, পানি!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৪:৩০
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×