somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমাদের এই নগরে

২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৪:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের বারান্দায় এখনো মৌমাছি আসে, প্রজাপতি উড়াউড়ি করে।ঘাস ফুল ঝাঁক বেধে ফুটে থাকে লাল,হলুদ, সাদা আর লাল-সাদা মিক্সড। ক্যাকটাসেও লাল চার পাপড়ির ফুল ফোটে, ঢোল মানিকের লতা টব ছাড়িয়ে বাইরে ছড়িয়ে যাচ্ছে আর মানি প্ল্যান্টের লতাতো বারান্দা ছাড়িয়ে নিচেই নেমে গেছে!তবে অর্কিডে লাল ফুল ফোটার কথা, ফুটে আছে কড়া নীল রঙের ফুল।এত সুন্দর ফুল কিন্তু ঘ্রাণ নেই।

আয়নার কোণে লাল, নীল টিপ ঠিকই আছে;ড্রেসিং টেবিলে সাজানো আছে বিভিন্ন রকমের চুড়ি আর সব রঙের রেশমি চুড়ি।তমা ওসব চুড়ি আর পরে না, কপালে টিপও দেয় না।আগের মত অফিসে যাবার আগে ড্রেসিং টেবিলের সামনে তমার অনেক সময় নষ্ট হয় না।

তমাকে এখন রান্নাঘরে বেশি সময় দিতে হয় না,সে চট করেই অফিসে যেতে পারে।আমাকেও শুনতে হয় না,"তোমাদের জন্য রান্না ঘরে থেকে থেকে আমি কালো হয়ে যাচ্ছি।আমি দেখেই করছি, অন্য মেয়েরা দেখ গিয়ে সারা দিন সিরিয়াল দেখে।"

কালো কফি মগ বা টেবিলের উপর বাড়তি গুড়া দুধ আর চিনি পড়েই আছে।ওগুলো নিয়ে কেউ টানাটানি করে না।আমরা শান্তভাবে কফি খাই।টিভি রুমে রিমোট নিয়ে আর কাড়াকাড়ি হয় না, কেউতো টিভি রুমে ঘুমিয়ে পরে না।আমাকে মাঝরাতে কাউকে বিছানায় দিয়ে আসতে হয় না!

এখনো ঝমঝমিয়ে রাত দুপুরে মেঘ নামে, পৃথিবী ঝাকিয়ে চাঁদের আলো ঠিকরে পরে, তবে কেউ ডাকে না,"চল ছাদে যাই, বৃষ্টিতে ভিজি।চল ছাদে যাই, চাঁদের আলো খাই।" গাছে পানি কষ্ট করে আমাকেই দিতে হয়।

এখন আর কেউ বলে না,"চল না, জাহাঙ্গীরনগর যাই।বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিয়ে আসি।বটে ইচ্ছেমতো ভর্তা-ভাত খাবো।"

তমার ওসবে খেয়াল নেই।ও বৃষ্টি এলেই ছাদে যায়, একা একা ভিজে, কাঁদে কিনা বোঝা যায় না।পূর্ণিমা রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে, আমাকে ডাকেও না।হাসনাহেনার ঘ্রাণ, কামিনী ফুলের ঘ্রাণ চারপাশ আলোড়িত করে কিন্তু এতে যে বেশি আনন্দিত হত, সে নেই!

বারান্দায় ফুল ফুটলে যে আনন্দিত হত, সে নেই!মগ ভরা না হলে সে কফি খেত না, কাড়াকাড়ি করে টিভির রিমোট নিত আর আধা রাত টিভি দেখতো; সে নেই!
টিপ, চুড়ি সব আছে শুধু ওগুলো পরার মানুষটা নেই। এখন আর সময়ে অসময়ে কারও এটাসেটা খেতে ইচ্ছে করে না।
আমরা তিনজন একসাথে চাঁদ দেখি না, বৃষ্টিতে ভিজি না, কারও বৃষ্টি এলেই ইলিশ পোলাও খেতে ইচ্ছে করে না।।তমা এখন কাউকে কাজল, চুড়ি, লাল শাড়ি পরিয়ে বৌ সাজিয়ে দেয় না।
এখন আমাকে জাহাঙ্গীরনগর যেতে হয় না, ছুটির দিন আমি ঘুমিয়ে কাটাই, কাকে নিয়ে যাবো?

তাকে আল্লাহ নিজের কাছে নিয়ে গেছেন, খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে গেছেন!
এটাও ঠিক কথা না, তাকে আমি খুন করেছি।আমার মেয়ে ইসমামকে আমি নিজে খুন করেছি।

সেদিন আমি তাকে নিয়ে স্কুল থেকে ফিরছিলাম, সে তর্ক জুড়ে দিল, একা একা রাস্তা পার হবে।এ আর এমন কি?আমার মেয়ে ফাইভে পড়ে, বড় হয়ে গেছে।পারবে, না পারার কোন কারণ নেই।

আমি জসিমউদদীন সিগনালে দাঁড়িয়ে রইলাম, মেয়ে বীরের মত রাস্তা পাড় হচ্ছে।আমার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।হুট করে কিছু একটা হয়ে গেল! রাস্তায় লেপ্টে আছে স্কলাস্টিকা স্কুলের ড্রেস আর স্কুল ব্যাগ, ওর হাতের একুরিয়ামের এঞ্জেল মাছটাও রাস্তায় লাফাচ্ছে, কিন্তু আমার মেয়েটাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।আশ্চর্য! ওকে দেখা যাচ্ছে না কেন?আমি দৌড়ে রাস্তায় চলে গেলাম, কই আমার মেয়েটাতো নেই, এতো রাস্তায় লেপ্টে থাকা মাংস আর রক্ত!

আমি এখন ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করি না, চোখ বন্ধ করে রাস্তা পার হই।কই আমাকেতো রাজপথ গিলে ফেলতে পারে না!আর আমার মেয়েটাকে আমি নিজেই খুন করলাম।
এখনো আমরা দুজন কাঁদি, কেউ জিজ্ঞেস করে না,"ছি!বড় মানুষ হয়ে কাঁদছো, তোমাদের লজ্জা করে না।"

আজ সেই দিন,এই দিনে আমি মেয়ে ইসমামকে নিজে খুন করেছি।
আজ সকাল থেকে আকাশ ঝাকিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে।সূর্য আর কালো মেঘের প্রতিযোগিতা সারাদিন ধরেই চলছে, সূর্য কোনভাবেই কালোমেঘের সাথে পারছে না।কালো মেঘও আমাদের সাথে দুঃখে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
আমি আর তমা আমাদের চোখ বেধে ফেললাম, শক্ত করে হাত ধরলাম।আমরা জসিমউদদিন মোড় পাড় হচ্ছি, অনন্তকাল ধরে পাড় হচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১:১২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×