somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনল, নদী এবং সকালের গল্প

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৩:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


-নদী। এই নদী।
-বলো। আবেশাচ্ছন্ন কন্ঠ নদীর।
-আজকের সকালটা কী সুন্দর তাই না? জানো, আমার বড্ড ইচ্ছে করছে এই ঝলমলে সুন্দর সকালের কাঁচা রোদ গায়ে মেখে তুমি আর আমি অনেক দূর পথ হাত ধরাধরি করে হাঁটি।
-উহুঃ, তুমি হাঁটো। আমার এখন বিছানা ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।
বেডরুমের জানালার ওপাশে সকালের সুন্দর সোনা-রোদ। পর্দা সরিয়ে রোদের অপরূপ দেহে চোখ ডুবিয়ে কথাগুলো বলছিলো অনল।
স্প্রিংয়ের শেষভাগের সকাল। এমন সকালের তরতাজা নরম রোদটা অনলের বেশ লাগে। কানাডার অন্যান্য স্থানগুলোর মধ্যে ক্যালগেরিতে উইন্টার দীর্ঘ। আর তাই স্প্রিংয়ের বুকেও মাঝে মাঝে চেপে বসে বরফের শরীর। এই তো গত সপ্তাহেও বারো সেন্টিমিটার বরফ ঝরেছে। অথচ ক্যালেন্ডার মাফিক স্প্রিংয়ের মাঝামাঝি সময়ে এমনটি হবার কথা নয়। দু'দিন পরই আবার রোদের খেলা। আকাশ জুড়ে নীলের মেলা। লম্বা উইন্টারে হিটারের উত্তাপে ঘরবন্দী থাকার পর এমন ঝলমলে রোদ্র-স্নাত দিনে কার মন বসে ঘরে? যদিও বাতাসে কোনো কোনো দিন থাকে ঠান্ডার ছোবল। তবে তা সহনীয়।
প্রতিদিনই ভোরবেলা শয্যা ছাড়ে অনল। বেলা করে বিছানায় পড়ে থাকার অভ্যাসটা নদীরও একেবারে নেই। বলা যায়, ওরা দু'জনেই ভোরের পাখি। আকাশ ভালো থাকলে আর আবহাওয়া অনুকূল হলে এ সময়টাতে প্রায়ই ওরা দু'জনে বেরোয় কাঁচা সকালের আমেজ গায়ে মাখতে। হাত ধরাধরি করে ফুটপাত ধরে হাঁটে। কোনোদিন হয়তো গাড়িতে ছোটে। ঠান্ডার মতিগতি বুঝে পরে নেয় প্রয়োজনীয় পোশাক।
সকালের এই স্নিগ্ধ সতেজ পরিবেশে কাঁচা রোদের ক্যানভাসে সদ্য ঘুম থেকে ওঠা নদীকে দে‍খতে বেশ লাগে অনলের। যেনো সদ্য ফোটা রজনীগন্ধা। ওর শরীরের গন্ধটাও তখন বুকের গভীর পর্যন্ত টেনে নেয় সে। কাঁধের ওপর; ঠিক কানের নিচের অংশের চুলগুলো সরিয়ে সেখানে নাক রেখে বড় শ্বাস টানে।
নদী ঝামটা মারে, হয়েছে। এবার ছাড়ো।
গতকালও বেরিয়েছিলো ওরা। তবে হেঁটে নয়, গাড়ি চালিয়ে হাইওয়ে ধরে গিয়েছিলো অনেক দূর। প্রায় আশি কিলো। হাইওয়ের ওপর আছড়ে পড়া রোদের শরীর ছিলো খানিকটা শীত মেশানো পাখির পালকের মতো নরম আর মোলায়েম। তবে একেবারে স্বচ্ছ আর ঝকঝকে। ছুটির দিন। চনমনে মন। গোটা সপ্তাহ কাজ করে হাঁপিয়ে ওঠা মনটাতে এমন সকাল যেনো এক বলবর্ধক টনিক।
গাড়ি চালাচ্ছিলো অনল। পাশের সিটে নদী। বাঁ হাতটা স্টিয়ারিংয়ে রেখে অনল থেকে থেকে ডান হাতের মুঠোয় তুলে নিচ্ছে নদীর একটা হাত। কখনো হাতটা ওর কাঁধে রেখে ওকে যথাসম্ভব টেনে আনছে নিজের দিকে। নদীও বেশ উপভোগ করছে সময়টাকে। গাড়ির সিডি প্লেয়ারে লো-ভল্যুমে বাজছে জগগিৎ ও চিত্রা সিংহের গান। পরম ভালোলাগা সময়।
পথে এক স্থানে নদী বললো, এই, এই, এখানে একটু থামবে?
-আরে বাবা, এটা হাইওয়ে। অনল বলে।
-সে তো জানি, তবুও....। ইমার্জেন্সি লাইট জ্বালিয়ে দেবে। নদীর কন্ঠে জেদ ঝরে পড়ে।
অনল পথের পাশে গাড়ি থামিয়ে ইমার্জেন্সি লাইট জ্বালিয়ে রাখলো।
-এবার বলো, কেনো থামতে বললে? জানতে চায় অনল।
-ছবি তুলবো।
অনল দেখলো, লোকেশানটা সত্যিই অসম্ভব সুন্দর। পশ্চিমে বহুদূরে বরফের টোপর পরা রকি মাউনটেনের চূঁড়া দেখা যাচ্ছে। শুভ্র বরফে শরীরে পিছলে যাচ্ছে রোদের শরীর। রাস্তার ঢাল থেকে শুরু হয়ে সামনে সু-বিস্তৃত মাঠ। ক'দিন পরেই এই মাঠে ভুট্টার চাষ হবে।
সামারের প্রারম্ভে ভুট্টা গাছের সবুজ রঙে সয়লাব হয়ে থাকবে এই সুবিস্তৃত প্রান্তর। তখন সে সবুজের বুকে চোখ রাখলে প্রাণ জুড়িয়ে যাবে।
পেছনে জগত-সেরা রকি মাউনটেনকে রেখে নদীর বেশ ক'টা ছবি তুললো অনল। এরপর ওরা আরো অনেকটা পথ ছুটলো। পথের পাশে একটা টীমহর্টনস কফিশপে নাস্তা সারলো। ফিরলো বেশ বেলা করে।
আজও ছুটির দিন। নদী এখনো বিছানা ছাড়েনি। রাতে অনলের কাছ থেকে বোধ হয় একটু বেশীই সোহাগ আদায় করে নিয়েছে। সে সোহাগের আবেশ এখনো কাটেনি।
অনল জানালার কাছ থেকে আবার বলে, এই নদী, আরে বাবা ওঠো না! চলো না, ঘুরে আসি মার্টিনডেলের ফুটপাত ধরে কিছুটা পথ।
-উহুঃ। ছোট্ট শব্দ করে নদী।
-জানো, কালকের চেয়ে আজকের সকালটা আরো বেশী সুন্দর। চলো না। আজ অনেক বেশী ভালো লাগবে।
-সেটা কি গত রাতে তোমার সোহাগের চাইতেও সুন্দর? চোখ বুজে ঘুম জড়ানো আবেগভরা কন্ঠে বলে নদী।
-অফকোর্স।
-তা হলে তো উঠতেই হবে।
নদী বিছানা ছাড়ে। মেঝেতে দাঁড়িয়ে আড়মোড়া ভাঙ্গে, এরপর পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অনলকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধের ওপর দিয়ে জানালার বাইরে আছড়ে পড়ে থাকা রোদের শরীরে চোখ রাখে। এরপর বেশ উৎফুল্ল কন্ঠে বলে ওঠে, ওয়াও! সত্যিই তো!

আধ ঘন্টার মধ্যে রেডি হয়ে ওরা বেরিয়ে পড়লো। বাইরে বেরিয়ে হাতে হাত রেখে হাঁটতে থাকে কপোত-কপোতি। হাঁটতে হাঁটতে ঘাড় বাঁকিয়ে নদী ঠোঁট উপচানো হাসি ছড়িয়ে বলে, জানো আমার কানের কাছে এখন বাতাস একটা গানের সুর বয়ে নিয়ে যাচ্ছে....
-কোন গানটা?
-এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলো তো....
গানের রেশ টেনে অনল উচ্চস্বরে হেসে বলে,....বেশ ভালোই হতো নদী, তুমি জানো তো....।
খিল খিল করে হেসে ওঠে নদী।
ওরা হাঁটে ঘন্টা খানেক।
-এবার চলো বাসায় ফেরা যাক। অনল বলে।
-না, আমার ফিরতে ইচ্ছে করছে না।
-তার মানে, ছুটির এই দিনটা রাস্তাতেই কাটিয়ে দেবে?
-না হয় তাই দিলাম।
-সকালের রোদ তো, তাই ভালো লাগছে। দুপুরের রোদটা কিন্তু এতো ভালো লাগবে না। মনে হবে উনুনের তাপ।
-এই চল না মলে যাই। নদী প্রস্তাব করে, দুপুরে ফুডকোর্টেই কিছু খেয়ে নেবো। রান্নার ঝামেলা থেকে তো মুক্তি মিলবে।
-যথার্থ মহারাণী। আপনি যাহা বলিবেন তাহাই হইবে। হাসতে হাসতে বলে অনল।

হাঁটতে হাঁটতে ওরা আবার ফিরে আসে মার্টিনডেলে ওদের বাসার সামনে। এবং উঠে বসে বাসার সামনে পার্ক করা নিজেদের গাড়িতে।
অনলের গাড়ি ছুটে চলেছে সানরিজ মলের উদ্দেশে। কিলো দশেক পথ।
গাড়ি চালাতে চালাতে রাস্তার ওপর চোখ রেখে আবেগ জড়ানো কন্ঠে অনল ডাকে, নদী।
-বলো।
-আমার পাশে চিরদিন এভাবে থাকবে তো?
-এমন করে বলছো কেনো?
-মাঝে মাঝে কেমন যেনো ভয় হয়। কানাডা এসে চেনা-জানা অনেকেরই তো সংসার ভেঙ্গে গেছে; কারো কারো সংসারের বাঁধন হয়ে গেছে ঢিলে-ঢালা।
-এই সুন্দর সকালে তোমার মনে হঠাৎ আবার কিসের ছায়া পড়লো? দেখছো না, আকাশটা কতো স্বচ্ছ আর সুনীল! এমন সুন্দর একটি আকাশের নিচে থেকে তোমার মনের আকাশে কেনো কালো মেঘ জমলো?
নদীর কথা যেনো অনলের কানে গেলো না। সে সংশয়াচ্ছন্ন কন্ঠে বলে, জানো, মাঝে মাঝে মনে হয়, কখনো হয়তো তোমাকে হারিয়ে ফেলবো।
-ধ্যাৎ, কি যে বলো না! বাজে চিন্তা বাদ দাও। নদী ধমক দেয়।
জেদি কন্ঠে অনল বলে, আহা, আমার প্রশ্নের উত্তরটা দাও না।
অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে নদী বলে, তুমি তো জানো অনল, আমি যা বলি, এ জীবনে তার কোনো নড়নড় হয় না। তোমাকে তো বলেছি, আজও বলছি, আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবো না। সুখে-দুখে সব সময়ই তোমার পাশে আছি, এবং থাকবো।
নদীর কথার পিঠে অনল কাব্যময় কন্ঠে বলে, তুমি যদি আমার পাশে এভাবে থাকো, তবে প্রতিদিনই আমি তোমাকে দেবো এমন একটা করে চমৎকার সকাল।
খিল খিল করে হেসে নদী বলে, তুমি কি সকাল গড়ার কারিগড়, যে ইচ্ছে করলেই গড়তে পারো একটি করে চমৎকার সকাল!
-পারি।
-কিভাবে?
অনল বলে, যদি আমার নদীর মুখটা সদা থাকে শরতের সদ্য ফোটা শিউলির মতো; আর ঠোঁট উপচানো হাসির সাথে যদি গালের ওপর থাকে সিঁদুরে আভা। এর সাথে বুক জুড়ে অবশ্যই থাকতে হবে এই বান্দার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা।
-তা হলেই বুঝি তুমি সুন্দর সকাল বানাতে পারবে?
-হ্যাঁ। আর সে সকালটা শুধু তোমার জন্য।
-গুল মেরো না, সকাল কি তোমার হাতে মোয়া যে, শব্দের গাঁথুনি দিয়ে ইচ্ছে মতো গড়ে তুলবে এক রোদেলা কবিতা! কিংবা সকাল কি এমন কোনো কাঁচামাল যে, দোকান থেকে কিনে এনে নিজেই তৈরী করে ফেলবে নিজের মতো করে সুন্দর একটি শো-পিস! কি করে তুমি প্রতিদিন এমন একটি করে সকাল গড়বে, বলবে কি আমায় হে কারিগড়? একটু থেমে ফিক করে হেসে নদী বলে, যদি আকাশ মেঘলা থাকে, কিংবা ধরো স্নো পড়ছে, অথবা ঝরছে বৃষ্টি?
অনল বলে, যেদিন আকাশ মেঘলা থাকবে, কিংবা স্নো পড়বে, অথবা বৃষ্টি ঝরবে সেদিন তোমার দু'চোখের অসম্ভব ঐ উজ্জ্বলতার সাথে মেশাবো তোমার পাতলা ঠোঁট জোড়ার হৃদয় জুড়ানো হাসি। সাথে নেবো গালের ওপর লজ্জা মেশানো সিঁদুরে আভা, আর সব কিছু মিলিয়েই বানাবো আমি তোমার জন্য একটি চমৎকার সকাল।
-তাই নাকি! ইন্টারেস্টিং তো! মুচকি হাসে নদী।
অনল আবেগ জড়ানো কন্ঠে বলে, আর তোমার বুকটা হবে আমার বানানো সেই মনোরম সকালের বিস্তৃত জমিন। যেখানে রূপ ছড়াবে সেই নরম রোদেলা সকাল।
খলবলিয়ে হেসে ওঠে নদী, বেশ বলেছো! প্রেমিকার চোখের উজ্জ্বলতা, ঠোঁটের হাসি আর গালের সিঁদুরে আভা দিয়ে যে সকাল তুমি বানাবে তাতে টীমহর্টনসের এক কাপ ধোঁয়ায়িত কফি মিলবে তো, জনাব।
-এই বান্দা সেটারও ব্যবস্থা করবে, জনাবা।
-অনেক ধন্যবাদ। তা হলে এবার চলো আগে সানরিজের টীমহর্টনসে। ব্রেকফার্স্ট, তারপর কফি, এরপর মলে....
সানরিজ টীমহর্টনসে ওরা ব্রেকফার্স্ট সারলো। এরপর গেলো সানরিজ মলে। ক্যালগেরির একটি শপিং সেন্টার। অনল ও নদী ঘুরলো, ফিরলো। টুকটাক কেনাকাটা করলো। ফুডকোর্টে লাঞ্চ সেরে যখন ফিরলো বেলা তখন হেলে পড়েছে পশ্চিমে।

ছয় মাস পর......
সকাল। বেডরুমের জানালার পর্দাটা সরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নদী। জলসিক্ত আঁখিযুগল। জবাফুলের মতো লা‌ল। পুরু স্বচ্ছ গ্লাসের ওপাশে তুষার ঝরছে। সে তুষারিত পৃথিবীর বুকে ওর চোখ দুটো স্থির। থেকে থেকে বড় বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বুকটা হালকা করার চেষ্টা করছে। এবার উইন্টার এসেছে আগেভাগেই। আর এই উইন্টারই ওদের স্বামী-স্ত্রীর জীবনে বয়ে নিয়ে এসেছে এক ভয়াবহ অভিশাপ। মুহূর্তের এক দুর্ঘটনায় তছনছ হয়ে গেছে ওদের স্বাভাবিক জীবন প্রবাহ। সংসার, কর্ম সব একেবারে ওলোট-পালোট। কুলকুল সুর তুলে বয়ে চলা চঞ্চলামতি নদীর গতিপ্রবাহ অতর্কিত আটকে দিয়েছে একটা কঠিন বাঁধ। আটকে গেছে জীবনের সকল স্রোত। অন্যদিকে প্রদীপ্ত, সদা হাস্যোজ্জ্বল আলোকিত অনল আজ নিভু নিভু লন্ঠন। তলানির তেল যেনো ফুরিয়ে গেছে। সলতের তেলে কোনোভাবে জ্বলছে জীবন-শিখা।
মানুষের ভাগ্যে যে কখন কি ঘটে; সেটা আগাম কেউ বলতে পারে না।
দিন সাতেক আগের কথা। মঙ্গলবার। বিকেল। দু'দিন টানা স্নো ঝরার পর এদিন আকাশটা ছিলো বেশ পরিস্কার। তবে তাপমাত্রা ছিলো বাতাসের আর্দ্রতাসহ বত্রিশ। হীম ঠান্ডায় জমে আগের দু'দিনের ঝরে পরা স্নো রূপ নিয়েছিলো শক্ত বরফে। হয়ে উঠেছিলো ভীষণ পিচ্ছিল। বাসার সামনের ফুটপাতের বরফ পরিস্কার করা হয়নি। এদেশে যার যার বাসার সামনের বরফ তাকেই পরিস্কার করতে হয়। দু'দিন অনল একেবারেই সময় পায়নি। ইচ্ছে ছিলো এদিন বাসায় ফিরে পরিস্কার করবে। জমাটবদ্ধ পিচ্ছিল হয়ে ছিলো ওদের বাসার সামনের ফুটপাতের অংশটুকুতে জমে ওঠা বরফ। অফিস থেকে ফিরে গাড়ি পার্ক করে সে ফুটপাতে পা রাখতেই পিছলে পড়ে গিয়ে মাথার পেছনের অংশে প্রচন্ড আঘাত পায় অনল। অ্যাম্বুলেন্স ডেকে নদী ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আঘাত অত্যন্ত গুরুতর ছিলো। মস্তিস্কের অভ্যন্তরে বেশ রক্তক্ষরণ হয়েছে। টানা ছ'দিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। এর মাঝে দু'দিন অজ্ঞান ছিলো।
নদী ওকে গতকাল হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে এসেছে। এ যাত্রা প্রাণে বেঁচে গেলেও, অনল বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে; এবং একই সাথে --স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে। ডাক্তার বলেছে, দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসায় ভালো হলেও হতে পারে, তবে নিশ্চত করে কিছু বলা যায় না।
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে নদী। আর বিছানায় শুয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে অনল। বাকহীন শূণ্য দৃষ্টি। নদী জানালার ওপর থেকে চোখ সরিয়ে এনে অনলের ওপর রাখে। অনলের শূণ্য চোখে প্রশ্ন। কিছু একটা বলার চেষ্টা করে সে, কিন্তু পারে না। চোখের কোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে ফোঁটায় ফোঁটায় অশ্রু।
নদী যেনো বুঝতে পারে অনলের মনের ভাষা, সে জানালার পর্দাটাকে আরো সরিয়ে দিয়ে ভারী কন্ঠে বলে, দেখো অনল, বাইরে স্নো ঝরছে।
অনল স্থির চোখ ফেলে কিছুক্ষণ দেখে জানালার কাঁচের ওপাশে স্নো ঝরা সকাল। এরপর সে চোখ রাখে নদীর মুখের ওপর।
অনলের সে দৃষ্টির মুখে দুমড়ে-মুচড়ে যায় নদীর হৃদয়। মনটা ব্যথায় নীল হয়ে যায়। দু'চোখে নেমে আসে জলের ধারা। সে ধীর পায়ে এসে অনলের সামনে দাঁড়ায়, এরপর বাস্পরুদ্ধ কন্ঠে বলে, বলেছিলে না, যেদিন আকাশ মেঘলা থাকবে, কিংবা স্নো পড়বে, অথবা বৃষ্টি ঝরবে সেদিন আমার দু'চোখের উজ্জ্বলতার সাথে মেশাবে আমার পাতলা ঠোঁটের হাসি, গালের ওপর থেকে নেবে লজ্জা মেশানো সিঁদুরে আভা, আর সব কিছু মিলিয়েই বানাবে আমার জন্য একটি চমৎকার সকাল? বলেছিলে না? এরপর সে কান্নাভরা কন্ঠে চিৎকার করে বলে, এই তো আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়েছি, দেখো, আমার চোখ দুটো কতো উজ্জ্বল! অনল, বলো, কতো উজ্জ্বলতা চাই তোমার? দেখো, আমার গালের ওপর জমেছে কতোটা সিঁদুরে আভা! নাও তোমার যতো ইচ্ছে, আর এই যে আমি হাসছি! প্রাণ খুলে হাসছি, কতো হাসি চাই তোমার? নাও এই হাসি। সব মিলিয়ে হে কারিগড়, আজ তুমি বানাও তোমার সেই সোনালি সকাল। আমার যে আজ বড্ড বেশি প্রয়োজন একটি ঝকঝকে সোনালি সকাল। এবং সেই সকালটাকে ছড়িয়ে দাও আমার অন্ধকারাচ্ছন্ন বুকটাতে.....
কথাগুলো বলে অনলের বুকের ওপর মাথা রেখে বাঁধভাঙ্গা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে নদী।
অনল নদীর মাথায় হাত রাখে। ওর চোখে অশ্রুর বেগ বাড়ে।
কাঁচের জানালার ওপর তখন আছড়ে পড়তে শুরু করেছে তুষারমিশ্রিত বাতাস। তার মানে, শুরু হয়েছে স্নো-স্টর্ম।

মাহাবুবুল হাসান নীরু
[email protected]
২০ এপ্রিল ২০১৩, ক্যালগেরি, কানাডা।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৪:০১
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×