প্রশ্নঃ তথাকথিত সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গীবাদকে ইসলাম থেকে হঠাবেন কেমনে? তারাও তো টেক্সট ধরে এগুলারে জায়েজ করছে। আর কোন ধর্মকে কে কিভাবে গ্রহন করবে তার সাথে স্থান-কাল ইতিহাসের সম্পর্ক বিদ্যমান। উত্তরঃ বিষয়টি মিস-কোটেশান বা কোটেশান আউট অব কন্টেকস্ট সম্পর্কিত। ইসলামকে যদি ‘‘পুরো-ইসলামের আলোকে না দেখা হয় তাহলে বিভ্রান্তি হবেই। পুরো-ইসলাম বা বাস্তব-ইসলাম হলো সেই ব্যক্তির জীবন, যার কাছ হতে মানুষ ইসলাম জেনেছেন। বলা বাহুল্য তিনি হচেছন মুহাম্মদ (সঃ)। তিনি কিভাবে এই টেকস্ট বাস্তবায়ন করেছেন, তাঁর অনুসারীরা কিভাবে সেগুলো বুঝেছেন- সেটি জানতে ও বুঝতে হবে। ইসলামকে অনুসরণ করতে হবে নবী’র আচরিত পন্থায়। তাই, কোন কাজের রেফারেন্স কোরআনে থাকলেই হবেনা, রাসূল এ ব্যাপারে কি করেছেন সেটি আমাদের জানতে হবে। কোরআন হলো হেদায়াত তথা অনুপ্রেরণার উৎস। ইসলামের কাঠামো হলো মুহাম্মদ (সঃ)এর নবুওতী জীবন তথা হাদীসে রাসূল। কোন বিষয়ে তৎসংক্রান্ত সকল প্রাসঙ্গিক রেফারেন্স-এর প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অতএব, কোন রেফারেন্স সঠিক হলেই সেই কাজ করা বৈধ হতে পারেনা। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য রেফারেন্সসমূহকে এবং মুহাম্মদ (সঃ)্র নবুওয়তী জিন্দেগীর ধারাবাহিকতার প্রেক্ষিতকে অবশ্যই বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে। ইক্বমতে দ্বীনের অন্তর্গত ধারাবাহিকতা বা লাইন অব কন্সিসটেন্সীকে বাদ দিয়ে পড়লে সমগ্র কোরআন (নাউজু বিল্লাহ) পরস্পর বিরোধী কিছু কথা-বার্তা ছাড়া আর কিছু মনে হতে পারে না। আবার কনট্কেস্ট-এর ধূয়া তুলে ইসলামের যেসব বিষয় সুবিধাজনক মনে হচ্ছেনা সেগুলোকে তৎকালীন আরব সংস্কৃতির বিষয় বলে ব্যবহারিকভাবে বাতিল করে দেয়াটাও সমর্থনযোগ্য নয়। নিছক তৎকালীন আরব সংস্কৃতির অংশ হিসাবে রাসূল যা কিছু করেছেন তা সুন্নাতে রাসূল(সঃ) হিসাবে পরিগণিত নয়। হাদীস শাস্ত্রে সেসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে।
জঙ্গীবাদের আদি গোষ্ঠী হলো খারেজী সম্প্রদায়। ড. আবদুল্লাহ জাহাঙগীরের এতদসংক্রান্ত ভাল একটি বই আছে। বাংলায়। আমার পড়া বইগুলোর মধ্যে ড. ইউসুফ কারযাভি’র ইসলামিক এওয়েকেনিং বিটুইন রিজেকশান এন্ড এক্সট্রিমিজম খুব ভাল একটি বই।
প্রশ্নঃ ‘‘দর্শনের যুক্তি প্রমান যে কনচেপচুয়াল খোদার কথা বলে সে কি ধর্মের খোদা। না আলাদা?
উত্তরঃ দর্শনের যুক্তি প্রমান যে কনচেপচুয়াল খোদার কথা বলে তা ধর্মীয় অর্থে খোদা বলতে যা বোঝায় তা নয়। আলাদা। ধর্মী য় ঈশ্বর ব্যক্তিগত ঈশ্বর। ব্যক্তিমানুষ ও তার জীবন এই ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল ও ব্যক্তি এই ঈশ্বরের কাছে দায়বদ্ধবোধ করে। আর দার্শনিক খোদা হচ্ছেন তার বাইরে। তিনি জগতের অতিবর্তী, সৃষ্টিকর্তা। মানুষ সাধারনভাবে চরম, পরম, অসীম ধরনের গুণাবলী এই সত্ত্বার প্রতি প্রয়োগ করে। গড, ঈশ্বর, খোদা এই ধরনের শব্দাবলী এই চরম, পরম ও অসীম সত্ত্বার বোঝাতে ব্যবহার করেনা। মানুষের বাস্তব, বিশেষকরে ব্যক্তিজীবন এই দার্শনিক ঈশ্বরের সাথে কোনভাবেই সংশ্লিষ্ট নয়। এই ঈশ্বর প্রকৃতঃই কনছেপচুয়্যাল গড, যাকে আমি বলেছি ফিলোসফিক্যাল গড। সমাজে নাস্তিক হিসাবে নিজেদের পরিচয় দানকারীরা একে বলে প্রকৃতি। বৈশিষ্ট্যগতভাবে এই ফিলোসফিক্যাল বা কনছেপচুয়্যাল গডের সাথে প্রকৃতি’র কোন পার্থক্য নাই। তাই নাস্তিক হলো তাঁরা যারা ব্যক্তি-ঈশ্বরে বিশ্বাস করেনা।
ইসলামের খোদা বিশ্বাসে ব্যক্তিগত ও ফিলোসফিক্যাল উভয় অর্থ প্রযোজ্য।
ইসলাম প্রচলিত অর্থে ধর্ম নয়। তৎকালীন প্রচলিত ধর্মের অনেক কিছুকে ইসলামে বাতিল করা হয়েছে। ইসলামে ধর্মের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে তবে ইসলাম ধর্ম নয়। এটি একটি মতাদর্শ। জীবনাদর্শ। যদিও বর্তমানে কেউ কেউ না বুঝে কেউ কেউ ইনটেনশনালি ইসলামকে ধর্ম হিসাবে ট্রিট করছে, বলছে, লিখছে ...। ইসলাম প্রচলিত অর্থে ধর্মের কি কি বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করেছে; কেন ইসলামকে ধর্ম বলাটা যুক্তিসংগত নয় - এ বিষয়ে স্বতন্ত্রভাবে লেখার ইচ্ছা আছে।