১) আবেগ দ্বারা তাড়িত না হয়ে যুক্তি দ্বারা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
সামহোয়্যারইন ... ব্লগ এর অ্যালেক্সা র্যাংকিং এর দিকে তাকালে বোঝা যায় ব্লগের ভিজিটর উল্লেখযোগ্য পরিমানে কমে গেছে, কাজেই অ্যাড থেকে আয় ও কমে গেছে। যতদিন ব্লগের প্রতিষ্ঠাতারা নিজের পকেটের টাকা দিয়ে ব্লগ চালাবেন ততদিন চলবে। ব্লগ চালাতে টাকা কেন লাগে? ২য় পরিচ্ছদে সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করা গেল। ব্লগে যারা লেখালিখি করেন অনেকেরই সংশয়, তাদের পোস্টের কি হবে? কিভাবে সেভ করা যাবে? ৩য় অনুচ্ছেদে তা বলার চেষ্টা করলাম। ব্লগের অর্থনৈতিক অবস্থার বিষয়ে আগ্রহ না থাকলে সোজা ৩য় পরিচ্ছেদে চলে যেতে পারেন।
২) ধরা যাক আপনি একটি কোচিং সেন্টার ভাড়া করবেন। সাইন বোর্ড লাগানোর জন্য কিছু খরচ আছে। ওয়েব সাইটের ক্ষেত্রে এটাকে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন বলা হয়। আগেই কেউ রেজিস্ট্রেশন করেছে এমন বিশেষ স্পেশাল নাম হলে খরচ অনেক, না হলে খরচ খুব কম (বছরে ১০ ডলারের মতো), তবে বছর বছর নবায়ন করাতে হয়। এর বাইরে যে বাড়ি ভাড়া দিতে হবে এটাই হলো সার্ভার ভাড়া। কোচিং সেন্টার ভাড়া নেওয়ার আগে আপনাকে জানতে হবে আপনি কি পরিমান ছাত্র প্রত্যাশা করছেন। অতিরিক্ত বড় বা অতিরিক্ত ছোট বাসা হয়ে গেলে সমস্যা। একই ভাবে সার্ভার ভাড়া নেওয়ার সময় আপনাকে জানতে হবে কত জন ইউজার এই ওয়েবসাইট ব্যবহার করবে। সেই অনুপাতে সার্ভার এর স্পিড বা ব্যান্ডউইথ হতে হবে। ব্যান্ডউইথ কম হলে ইউজারদের ওয়েবসাইটে ঢুকতে কষ্ট হবে আবার বেশি হয়ে গেলে অহেতুক খরচ বেড়ে যাবে। এর বাইরে আর একটি খরচ আছে। তা হলো সিকিউরিটি গার্ড এর খরচ। বাড়িওয়ালা নিজেই সিকিউরিটি গার্ড রেখে দিতে পারে যার খরচ ভাড়ার অন্তর্ভুক্ত। অথবা চুক্তির অন্তর্ভুক্ত না থাকলে ভাড়াটিয়াকে নিজের খরচে গার্ড রাখতে হবে। সামহোয়্যারইন ব্লগে লেখা পড়ার জন্য কোন রেজিস্ট্রেশন করতে হয় না। কিন্তু মন্তব্য করতে বা লেখা পোস্ট করতে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। ইউজারদের রেজিস্ট্রেশন ইমেইল এবং পাসওয়ার্ড যাতে নিরাপদ থাকে এই জন্য সাহোয়্যারইন... ব্লগ কে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে এস এস এল সার্টিফিকেট ব্যবহার করতে হয়। এটার জন্য আলাদা পয়সা দিতে হয় এবং এটা বছর বছর নবায়ন করতে হয়। গত মার্চের শেষের দিকে প্রথম এসএসএল সার্টিফিকেটের মেয়াদ শেষ হবার কারণে সমাহোয়ার ইন ... ব্লগে অসংখ্য ইউজার ঢুকতে পারেননি। একই ঘটনা ঘটে মে মাসের শেষের দিকে। আমার জানামতে এসএসএল সার্টিফিকেট এক বছরের জন্য নবায়ন করতে হয় অথবা দুবছরের জন্যও নবায়ন করা যায় (খরচ কম পড়ে) কিন্তু কোন ভাবে সামু ব্লগ কর্তৃপক্ষ মাত্র দু মাসের জন্য এসএসএল সার্টিফিকেট নবায়ন করতে পেরেছিল। মে মাসের শেষে যদি আবারো শুধু দু মাসের জন্যই এসএসএল সার্টিফিকেট নবায়ন করা হয়ে থাকে তবে ২০১৯ এর জুলাইয়ের শেষের দিকে আবার এই একই সমস্যা দেখা দেবে। সর্বশেষ ২৯ জুন যে সমস্যা দেখা দেয় তার সম্ভবত সার্ভারের রেজিস্ট্রেশন ফি (বাড়ি ভাড়া) সংক্রান্ত সমস্যা। ব্লগের এডমিন এই কন্ট্রাক্ট মাস হিসেবে রিনিউ করেছেন না বাৎসরিক হিসেবে করেছেন জানি না, মাস হিসেবে করা হলে ২৯ জুলাই আবার একই সমস্যা দেখা দেবে। বছর হিসেবে পেমেন্ট করা হলে ২০২০ সালের ০৩ জুলাই আবার সমস্যা দেখা দেবে। ব্লগের অ্যাডমিন থেকে ব্লগারদেরকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়েছে বলে আমার জানা নেই, কাজেই শুধু অনুমানই করতে পারি। উল্লেখ্য, মেয়াদ শেষ হবার আগে সেবা দান কারি সংস্থা (বাড়ি ওয়ালা, সিকিউরিটি গার্ড সরবরাহ কারি প্রতিষ্ঠান) পর্যাপ্ত নোটিশ দিয়ে থাকে, কাজেই ব্লগ বন্ধ হওয়া ব্লগের অ্যাডমিনদের কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ছিল না। ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে বা ব্লগ বন্ধ হয়ে গেলে ব্লগ কতৃপক্ষ আগে থেকে ব্লগারদের জানিয়ে দেবে এমন আশা করতে পারছি না।
ব্লগের ব্যয়ের বিপরীতে আয় ও আছে। ব্লগে ঢুকলে কিছু বিজ্ঞাপন দেখেন। এখান থেকে ব্লগ আয় করে। এই আয় নির্ভর করে ব্লগের ভিজিটর সংখ্যার উপর। গত ১৭ ফেব্রুয়ারির পর এই আয় অনেক কমে গেছে। ব্লগে একটি 'donate now' বাটন যুক্ত করলে সমস্যা সমাধান করা সহজেই সম্ভব হতো।
ব্লগ চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলে আপনার পোস্টগুলোর কি হবে? অনেকেই হয়তো ব্লগে লেখার পাশাপাশি ফেসবুক বা অন্যান্য প্লাটফর্মে লিখেন । তাদের লেখাগুলো বিভিন্ন জায়গায় সংরক্ষণ করা আছে । অনেকে নিজের লেখার ব্যাক আপ রাখেন। কাজেই ব্লগ বন্ধ হয়ে গেলে তাদের ব্যাকআপ সংক্রান্ত কোন সমস্যা হবার কথা না। । কিন্তু যারা এই ব্লগের বাইরে অন্য কোথাও লেখেন না বা কোন ব্যাকআপ রাখেন নি, তাদের তাদের অনেকেই তাদের লেখার ব্যাকআপ রাখতে চাইবেন। ব্লগের লেখা অটোমেটিক ব্যাকআপ করার কোন সুযোগ ব্লগে নেই। । এক্ষেত্রে নিচের পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে ।
৩) যাদের পোস্ট সংখ্যা খুব কম তারা ম্যানুয়ালি প্রতিটি পোস্ট আলাদা আলাদা করে সেভ করতে পারেন । এক্ষেত্রে ব্লগে লগইন করার পর আপনাকে আপনার পাতায় যেতে হবে, পোস্টের নিচের এডিট বাটনে ক্লিক করার পরে মাউস দিয়ে পোস্ট কপি করে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা অন্য কোন এডিটরে পেস্ট করে সেভ করতে হবে।
এভাবে কপি করার সুবিধা হলো যা লেখা আছে তা হুবহু কপি করে ফেললেন ওয়ার্ড ডকুমেন্ট হিসেবে এবং এখান থেকে অন্য কোন ব্লগ বা ফেসবুকে পোস্ট করতে চাইলে কোন এডিট ছাড়া পেস্ট করা সম্ভব । অসুবিধা হলো কমেন্ট গুলো বাদ পড়ে যাবে। কমেন্ট কপি করতে চাইলে পুনরায় প্রত্যেকটা কমেন্ট আলাদা আলাদা করে কপি করতে হবে। এভাবে কপি করার সময় সাপেক্ষ তবে যাদের পোষ্টের সংখ্যা কম তারা এভাবে করতে পারেন।
ব্লগে সাধারণ ভাবে মাউসের রাইট বাটন ক্লিকের মাধ্যমে কপি করা ডিসেবল করা আছে। তবে ২৩ নম্বর মন্তব্যে ব্লগার জুন যেমন বলেছেন শিরোনাম সহ সব কপি করতে চাইলে শিরোনামের উপরে মাউস ধরে কপি করা যায়।
২৮ নম্বর মন্তব্যে ব্লগার নীল আকাশ বলেছেন পাফিন ব্রাউজার দিয়ে যে কোন জায়গা থেকে কপি করা যায়।
১৮ নম্বর মন্তব্যে ব্লগার হাসান কালবৈশাখী বলেছেন ''পিসিতে মোবাইল ভার্শানে Ctrl+A দিয়ে সব কপি করে ফেলুন।
এরপর ওয়ার্ড ফাইলে সেভ। কমেন্ট সহ সেভ হবে।'' আমার কাছে এটা সবচেয়ে সোজা মনে হয়েছে।
বিকল্প উপায় হিসেবে https://convertio.co/html-docx/ এখানে যেয়ে দেখতে পারেন। এখানে একবারে একাধিক পেজ সেভ করার সুযোগ আছে এবং ডকুমেন্ট ফাইল হিসেবে কপি করার সুযোগ আছে।
ছবির শিকল চিহ্ণিত স্থানে ( নীল কালিতে মার্ক করা) ক্লিক করুন। যে উইন্ডো আসবে তাতে ওয়েব অ্যাড্রেস পেস্ট করে সাবমিট করলে পেজ ওয়ার্ড হিসেবে সেভ হবে। এখানে একের পর এক লিংক যুক্ত করে ব্যাচ প্রসেসিং করা যাবে।
ওয়ার্ড হিসেবে সেভ না করে চাইলে পিডিএফ হিসেবে আপনার পোস্ট সেভ করতে পারেন। অসংখ্য সার্ভিস আছে যারা ওয়েবসাইটকে পিডিএফ হিসেবে সেভ করতে সুযোগ দেয়। যেমন এই ওয়েবসাইটে যেতে পারেন https://pdfmyurl.com/ ।
এখানে নির্দিষ্ট জায়গায় (হলুদ মার্কিং) আপনার ওয়েব সাইটের লিংকটি পেস্ট করুন এবং সেভ এজ পিডিএফ এ ক্লিক করুন।
সমস্ত কমেন্টসহ ওয়েব পেজটি সেভ হয়ে যাবে। এর সুবিধা হল কমেন্ট সহ সবকিছু সেভ করতে পারছেন। অসুবিধা হল পরবর্তীতে এখান থেকে কপি করে অন্য কোথাও পেস্ট করতে চাইলে পিডিএফ এডিটর দরকার হবে। তাছাড়া প্রতিটি পেজ আলাদা আলাদা করে সেভ করতে হয় বলে এটি অনেক ধীর গতির হবে।
তৃতীয় পদ্ধতি ব্যাচ প্রসেসিং করা (অর্থাত এক এক ব্যাচে অনেক গুলো পাতা সেভ করা)। আপনি একটি কোড লিখে আপনার পছন্দের পেজগুলিকে সহজেই পিডিএফ হিসেবে সেভ করতে পারেন। তবে কোড লেখা সকলের পক্ষে সহজ না বলে অনুমান করি। ফ্রী ব্যাচ প্রসেসিং এর জন্য অনেকগুলো ওয়েবসাইট আছে। এক্ষেত্রে আমরা এই ওয়েবসাইটটি কথা বলছি https://www.weenysoft.com/free-html-to-pdf-converter.html এখান থেকে এইচটিএমএল টু পিডিএফ কনভার্টার এই সফটওয়্যার টি ডাউনলোড করে নিন। ইনস্টল করে রান করুন।
উপরের ছবির মতো উইন্ডো আসবে। এরপরে উইন্ডোর উপরের বাম কোনার অ্যাড ইউ আর এল বাটনে ক্লিক করুন। প্রতি লাইনে একটি করে ওয়েবপেজের এড্রেস লিখুন । এন্টার দিয়ে পরের লাইনে যান । আবার নতুন একটি করে ওয়েবসাইটের এড্রেস লিখুন । এভাবে যতগুলি পারেন লিখুন । এরপরে নিচের ডান দিকের কর্নারে কনভার্ট নাও বাটনে ক্লিক করুন। কিছুক্ষণ পর আপনার ওয়েবপেজ গুলো পিডিএফ হিসেবে সেভ হয়ে যাবে। পদ্ধতির সুবিধা হল একসঙ্গে অনেকগুলো পেজ সেভ করতে পারবেন। । অসুবিধা হলো পিডিএফ হিসেবে সেভ হবে, কাজেই এখান থেকে কিছু কপি করে কোথাও পেস্ট করতে চাইলে আবার পিডিএফ এডিটর লাগবে। এই সফটওয়্যারের আরেকটি অসুবিধা হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে ব্যবহার কঠিন হবে। আপনি যখন লিংক পেস্ট করেন তখন এই সফটওয়্যার টর না হয়ে আপনার মেশিনের ইন্টারনেট কানেকশন ব্যবহার করে ঐ পেজ অ্যাকসেস করার চেষ্টা করে। যেহেতু স্বভাবিক ভাবে বাংলাদেশ থেকে ব্লগে ঢোকা যায় না , কজেই ভিপিএন না থাকলে বাংলাদেশ থেকে এটা ব্যবহার করতে পারবেন না (ব্লগের জন্য পারবেন না, অন্য ওয়েব সাইট যা সরকার ব্লক করে নি তা কপি করা সম্ভব)।
ম্যাক ব্যবহারকারীদের জন্য অনুরূপ সফটওয়্যার আছে (পয়সা লাগবে) , ব্যবহার করতে পারবেন। আপনি যদি লিনাক্স ব্যবহারকারী হন বা ভার্চুয়াল মেশিন ব্যবহার করেন তবে এই পোস্টে যা আছে আপনি তার চেয়ে অবশ্যই অনেক বেশি জানেন, এই পোস্ট আপনার কোন কাজে লাগবে না।
মোবাইল ব্যবহার কারিদের জন্য ব্যাচ প্রসেসের সুবিধা সহ অ্যাপ আছে বলে আমার জানা নেই, তবে ওয়েব পেজ থেকে পিডিএফ করার অনেক অ্যাপ আছে যা প্লে স্টোর/অ্যাপ স্টোরে খুঁজলেই পাবেন।
Disclaimer: এখানে উল্লিখিত কোন সফটওয়্যার কোম্পানির কাছ থেকে আমি কোন কমিশন পাই না বা তাদের দালাল বা এজেন্ট হিসাবে আমি কাজ করি না। যে কোন সফটওয়্যার নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করবেন।
এডিট: ০৭ জুলাই ২০১৯, রাত ৯টা ২৮- মূল পোস্টের ২য় লাইনে ছিল- '' ... অ্যালেক্সা র্যাংকিং এর দিকে তাকালে বোঝা যায় ব্লগ আর দুগ্ধবতী গাভী নেই, এটি একটি লস প্রজেক্ট।'' ২৫নম্বর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এটা বদল করা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:৫৮