প্রতি বছর অক্টোবর এলেই আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। প্রায় দুই যুগের বঞ্চনার শেষ কোথায়?
ক্ষমতায় আসার দেড় বছরের কম সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সম্পাদিত হয় ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি। পাহাড়ে বন্ধ হয় দীর্ঘদিনের সন্ত্রাস। নেমে আসে শান্তির ধারা। এই শান্তিচুক্তি দেশে-বিদেশে সর্বত্র বহুল প্রশংসিত ও আলোচিত হয়। বস্তুত ১৯৯৭ সাল থেকেই আমরা আশা করেছিলাম মানবতার নেত্রী, মাদার অফ হিউম্যানিটি, শেখ হাসিনা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাবেন। কিন্তু দেশি-বিদেশি কুচক্রীদের কারণে আমাদের আশা পূর্ণ হয় না। চক্রান্তকারীদের চক্রান্তে নোবেল পেয়ে গেল সুদখোর রক্তচোষা ব্যক্তি। রক্তচোষা সুদখোর এই ব্যক্তি কোথায় কোন জায়গায় কোন শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আমাদের জানা নেই। তবে আমরা জানি কোন কোন জায়গায় চিপস স্যান্ডউইচ আর হোয়াইট ওয়াইন খেলে নোবেল পুরস্কার পাওয়া সম্ভব। চোরের সাক্ষি গাঁটাকাটা, এই সুদখোরের লবিইস্ট ছিলেন আরেক বদমাশ লুচ্চা যিনি আমেরিকান কংগ্রেস দ্বারা ইমপিচড হয়েছিলেন।
আমাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য এই যে সত্য যত সহজ হোক না কেন দেওয়ালে লেখা থাকলেও আমরা ততক্ষণ তা গ্রহণ করতে পারি না যতক্ষণ না কোনও সাদা চামড়ার লোক আমাদের বিষয়টা মনে করিয়ে দিয়ে যায়। নোবেল নিয়ে ষড়যন্ত্রের কথা পত্রিকায় প্রকাশের পর দেশের স্বাধীনতা বিরোধী অপচক্র ঐ সংবাদের সমালোচনা করেছিলো। সম্প্রতি আমেরিকার ৩০ কোটি মানুষের নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন নোবেল পুরস্কার কর্তৃপক্ষ স্বচ্ছতার সঙ্গে নোবেল দেয় না। এরপরেও কি অন্ধদের চোখ খুলবে না? নোবেল নিয়ে এই ষড়যন্ত্রের শেষ কোথায়? বিগত নির্বাচনে আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী পেয়েছেন প্রাপ্ত আসনেরর ৯৮% (একজন জনপ্রিয় নেতা বলেছিলেন নৌকায় ভোট দেয়া মানে শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়া, কাজেই পুরো ভোট শেখ হাসিনা পেয়েছেন এই হিসাবই করা হয়েছে) । ২৩ কোটি ভোটারের দেশ আমেরিকায় ২০১৬র নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভোট পান মোট প্রায় ছয় কোটি ত্রিশ লাখ। তিনি দাবি করেন তিনি আমেরিকার সবচেয়ে সফল, সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট। অপরপক্ষে মাত্র সাড়ে দশ কোটি ভোটারের দেশে শেখ হাসিনার দলের প্রাপ্ত ভোট ট্রাম্পের প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে বেশি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ আসনে ৯৯%এর বেশি ভোট পেয়েছেন (কিছু ভোট ভুল জায়গায় ছাপ মারার কারনে নষ্ট হয়, না হলে এটা প্রায় ১০০% হবার কথা )। জনপ্রিয়তার হিসেবে শতকরা ভোট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার চেয়ে এগিয়ে আছেন মাত্র একজন নেতা --তিনি উত্তর কোরিয়ার প্রাণ পুরুষ কিম জং উন। দলীয় হিসাবে পৃথিবীতে ভোটের সংখ্যার দিক থেকে শেখ হাসিনার দলের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে আর মাত্র একটি দল -- মহান ভারত মাতার অবিসংবাদিত নেতা নরেন্দ্র মোদির দল, তবে নিছক ভারতের জন সংখ্যা বেশি বলেই এমন হয়েছে, মোদিজী নিজের আসনে পেয়েছেন মাত্র ৭০% এর মতো ভোট)।
মহান নেত্রী শেখ হাসিনা এর মধ্যে পেয়েছেন বিভিন্ন এওয়ার্ড, মানবতার মা সহ বিভিন্ন উপাধি। নিচে এই সব এওয়ার্ডের কয়েকটি মাত্র উল্লেখ করা গেল--
ইউনেস্কো প্রদত্ত ফিলিক্স হুফুয়ে বনি (Félix Houphouët-Boigny) শান্তি পুরস্কার (১৯৯৮)।
অল ইন্ডিয়া প্রেস কাউন্সিল প্রদত্ত মাদার তেরেসা অ্যাওয়ার্ড (১৯৯৮)।
গান্ধী ফাউন্ডেশন নরওয়ে প্রদত্ত এমকে গান্ধী আওয়ার্ড (১৯৯৮)।
ফাও (FAO) প্রদত্ত সিরিয (Ceres) মেডেল (১৯৯৯)।
পার্ল এস বাক অ্যাওয়ার্ড (২০০০)।
ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার (২০০৯)।
ইউনেস্কো পিস ট্রি আওয়ার্ড।(২০১৪)।
ইউ এন পরিবেশ পুরস্কার (২০১৫)।
ঠাকুর শান্তি পুরস্কার (২০১৯)।
গ্লোবাল ডাইভার্সিটি অ্যাওয়ার্ড (দুবার, ২০১১ ও ২০১২)।
নেতাজি মেমোরিয়াল আওয়ার্ড (১৯৯৭)।
প্লানেট ফিফটি ফিফটি চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড (২০১৬)।
এজেন্ট অফ চেঞ্জ আওয়ার্ড (২০১৬)।
সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড (দু বার- ২০১১ ও ২০১৩)।
আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড (২০১৫)।
ডাবলু আই পি গ্লোবাল ফোরাম অ্যাওয়ার্ড (২০১৪)।
চ্যাম্পিয়ন্স অফ আর্থ অ্যাওয়ার্ড (২০১৫)।
(নিন্দুকেরা বলবে সব অ্যাওয়ার্ডই তিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় পেয়েছেন, ক্ষমতার বাহিরে যখন ছিলেন তখন কিছু পাননি। জবাবে বলতে হয়, যখন তিনি ক্ষমতায় ছিলেন না, সে সময়টুকু তিনি পুরোপুরি ব্যয় করেছেন দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য, গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য।)
নোবেল কতৃপক্ষের একদেশদর্শিতা বিপক্ষে রাজনীতিবিদ বা সুশিল সমাজের নীরবতা পীড়া দেয়। সুশিল সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে একমাত্র প্রয়াত সাংবাদিক শ্রদ্ধাভাজন গোলাম সারোয়ার ছাড়া এই বিষয়ে কাউকে কলম ধরতে দেখি নি (তাঁর কবর নোবেলের আলোয় আলোকিত হউক)। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতিবিদদের মাঝে শুধু শেখ ফজলুল করিম সেলিম সাহেবকেই এই বিষয়ে মুখ খুলতে দেখলাম (ওনার উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি)।
পদ্মাবতীর রূপ বর্ণনা করতে যেয়ে আলাওল লিখেছিলেন 'তাম্বুল রাতুল হইল অধর পরশে'। কেউ কেউ পুরস্কার পেয়ে গর্বিত হন, কোন কোন ক্ষেত্রে পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তির গুণের ছটায় পুরস্কার মহিমান্বিত হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নোবেল দেওয়া হলে নোবেল মহিমান্বিত হবে বলে আমি মনে করি ।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নোবেল দিতে নোবেল কতৃপক্ষের অনীহা কোথায় জানতে চাই। এটি মানতে হবে যে আমাদের নেত্রী রক্তচোষা সুদখোরদের মতো হোয়াইট ওয়াইন খেতে পারবেন না; কিন্তু চিপস বা স্যান্ডউইচে আমাদেরতো আপত্তি নেই। কাজেই নোবেলের দুই তৃতীয়াংশের উপর তো আমাদের বৈধ দাবি আছে। নোবেল কতৃপক্ষ যদি একান্তই একক ভাবে তাঁকে নোবেল দিতে না পারে, তবে যৌথভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প, কিম ইল জং, নরেন্দ্র মোদি এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে নোবেল দেওয়া হোক।
আগামীকাল শুক্রবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হবে। এবারও যদি আমাদের অনুভূতি নিয়ে খেলা করা হয় তবে আমরা ছেড়ে দেবো না; নোবেল কমিটির সবাইকে আমরা অবাঞ্চিত ঘোষনা করবো, এদের দেশে বিদেশে যেখানে যেখানে দেখবো প্রতিহত করবো এবং নোবেলের পাল্টা হিসেবে সায়েরা খাতুন শান্তি পদক চালু করবো যার আর্থিক মূল্য নোবেলের অন্তত পাঁচ গুন হবে।
** আপডেট- ১১ অক্টোবর রাত আটটা দশ
যা আশঙ্কা করেছিলাম তাই সত্য হলো। ইরিত্রিয়ার জনসংখ্যা ৩৫ লাখ।আমাদের চিটাগাং সিটি কর্পোরেশন এর জনসংখ্যাও এর চেয়ে বেশি। ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রীর নাম পৃথিবীর কয় জন জানতো ? কি বিবেচনায় নোবেল কর্তৃপক্ষের এসব লোকদের পুরস্কার দেয় জানিনা। মন চায় নোবেল কর্তৃপক্ষ লোকদেরকে ঢাকায় দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসে ঢাবি বা বুয়েটের হলে রেখে আপ্যায়ন করি।
আপডেট ১৩ অক্টোবর সকাল ১২টা ৪৪ মিনিঃ
ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তি চাই।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১২:৪৪