(পূর্বের অংশ)
আমি যখন গ্রামে কৃষিকাজ করি তখন অন্যের আইল চাপি। যখন ব্যবসা করি তখন ওজনে কম দেই, পণ্যে ভেজাল দেই, অবৈধ মজুত করি। যদিও ওজনে কম দেয়া, পণ্যের দোষ গোপন রাখা, দাম বাড়ানোর জন্য মজুত করা ইসলাম সম্মত কাজ নয় ।
শ্রমিক হলে মালিকের সম্পদ চুরি করি, আর মালিক হলে শ্রমিকের পারিশ্রমিক।
আমি যখন প্রাপ্তবয়ষ্ক হয় তখন থেকেই প্রেম প্রেম খেলা খেলতে থাকি। অবৈধ মেলামেশা করতে থাকি। যদিও আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন-
(হে নবী,) তুমি মু’মিন পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি (নিম্নগামী ও) সংযত করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানসমূহকে হেফাযত করে; এটাই (হচ্ছে) তাদের জন্য উত্তম পন্থা; (কেননা) তারা (নিজেদের চোখ ও লজ্জাস্থান দিয়ে) যা করে, আল্লাহ্ তায়ালা সে সম্পর্কে পূর্ণাংগভাবে অবহিত রয়েছেন। (হে নবী,) একইভাবে তুমি মু’মিন নারীদেরও বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নিম্নগামী করে রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানসমূহের হেফাযত করে, তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে না বেড়ায়, ----- । (সূরা আন নূর : ৩০-৩১)
আমি এতটাই অধুনিক হয়ে গেছি যে হাফপ্যান্ট পড়ে ঘুরে বেড়াই, এ ক্ষেত্রে আল্লাহ্ এবং তার রাসূলের আদেশের তোয়াক্কা করি না ।
আমি যখন বিয়ে করতে যাই তখন মেয়েকে মোহর দাওয়ার পরিবর্তে যৌতুক নেই। বউকে চাকুরী বা অর্থ উপার্জনে লাগিয়ে দেই। বউ তার উপার্জিত অর্থ সংসারে খরচ না করলে তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে দেই। অথচ ভুলে যাই অর্থ উপার্জনের দায়িত্ব আমার, আর সে তার উপার্জিত অর্থ তার ইচ্ছামত খরচ করার অধিকার রাখে।
বাপ যদি আগে মারা গিয়ে থাকে তাহলে আমি আমার বোনদের প্রাপ্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত করি, বলে থাকি তোমার জন্য আমি অনেক কষ্ট করলাম। অথচ ভুলে যাই বোনদের দেখাশোনা করার সম্পুর্ণ দায়িত্ব আমার আর এজন্য তাদেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না।
আমি যখন পিতা তখন সন্তানকে নৈতিক শিক্ষা দেই না বা দেয়ার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করি না । অথচ বিচারের ময়দানে সেই সন্তানরাই যদি জাহান্নামে যাওয়ার উপযুক্ত হয়ে যায় তখন আমাকে দলিত করে যাওয়ার জন্য আবেদন করবে।
আমার পিতামাতার প্রতি আমি কোন দায়িত্ব পালন করি না। অথচ অনেক সময় বউয়ের পিতামাতা, ভাইবোন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ব্যস্ত থাকি।
আমি বিভিন্ন ধরনের সমিতি, সংগঠন, দলের সাথে যুক্ত। ইসলামী কোন সংগঠন বা দলের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করি না। ইসলামী সংগঠন নয় এরকম দল বা তার নেতাদের জন্য আমি সবকিছু করতে এমন কি জীবন পর্যন্ত দিতে প্রস্তুত থাকি। অথচ আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন-
তোমাদের মধ্যে থেকে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা (মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকবে, সত্য ও) ন্যায়ের আদেশ দেবে, আর (অসত্য ও) অন্যায় কাজ থেকে (তাদের) বিরত রাখবে; (অতপর যারা এই দলে শামিল হবে) সত্যিকার অর্থে তারাই সফল্যমন্ডিত হবে। (সূরা আলে ইমরান : ১০৪)
তার চেয়ে উত্তম কথা আর কোন ব্যক্তির হতে পারে যে মানুষদের আল্লাহ্ তায়ালার দিকে ডাকে এবং সে (নিজেও) নেক কাজ করে এবং বলে, আমি মুসলিমদেরই একজন । (সূরা হা-মীম আস সাজদা : ৩৩)
সময়ের শপথ, মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে (নিমজ্জিত) আছে, সে লোকগুলো বাদে, যারা (আল্লাহ্ তায়ালার ওপর) ঈমান এনেছে, নেক কাজ করেছে, একে অপরকে (নেক কাজের) তাগিদ দিয়েছে এবং এরা একে অপরকে ধৈর্য ধারণ করার উপদেশ দিয়েছে । (সূরা আল আসর)
তুমি (একান্ত বিনয়ের সাথে) বলো, অবশ্যই আমার নামায, আমার ইবাদত, আমার জীবন, আমার মৃত্যু- সব কিছুই সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহ্ তায়ালার জন্য। (সূরা আল আনআম)
অন্যের সঙ্গে কোন বিরোধ বাঁধলে আমি তা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিধান অনুযায়ী ফয়সালা করি না বা করার ইচ্ছাও প্রকাশ করি না। ইসলামের সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় বিধানকে অকার্যকর মনে করি, ইসলামের বিধান চাওয়াকে মৌলবাদ বা পশ্চাতপদ মনে করি। অথচ আল্লাহ্ তায়ালা বলেন-
হে ঈমানদার মানুষেরা, তোমরা আল্লাহ্র আনুগত্য করো, আনুগত্য করো (তাঁর) রাসূলের এবং সেসব লোকদের, যারা তোমাদের মাঝে (বিশেষভাবে) দায়িত্বপ্রাপ্ত, অতপর তোমাদের মাঝে যদি কোনো ব্যাপারে মতবিরোধের সৃষ্টি হয়, তাহলে সে বিষয়টি (ফয়সালার জন্য) আল্লাহ্ তায়ালা ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও, যদি তোমরা (সত্যিকার অর্থে) আল্লাহ্র ওপর এবং শেষ বিচারের দিনের ওপর ঈমান এনে থাকো! (তাহলে) এই পদ্ধতিই হবে (তোমাদের বিরোধ মীমাংসার) সর্বোৎকৃষ্ট উপায় এবং বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহের ব্যাখ্যার দিক থেকেও (এটি) হচ্ছে উত্তম পন্থা। (সূরা আন নিসা : ৫৯)
--------; যারা আল্লাহ্র নাযিল কারা আইন অনুযায়ী বিচার-ফয়সালা করে না, তারাই (হচ্ছে) কাফির। ----------; আর যারাই আল্লাহ্র নাযিল করা বিধান অনুযায়ী বিচার-ফয়সালা করবে না, তারা (হচ্ছে) যালিম। -------; যারাই আল্লাহ্র নাযিল করা আইনের ভিত্তিতে বিচার করবে না তারাই ফাসিক। (সূরা আল মায়েদা : ৩৮-৫০)
--- আমিই (এতে বর্ণিত বিধানসমূহ) ফরয করেছি, আমিই এতে পরিষ্কার করে (আমার) আয়াতসমূহ নাযিল করেছি, যাতে করে তোমরা (এর থেকে) শিক্ষা গ্রহণ করতে পারো, (এ বিধানসমূহের একটি হচ্ছে,) ব্যভিচারিণী নারী ও ব্যভিচারী পুরুষ (সংক্রান্ত বিধানটি, এদের ব্যাপারে আদেশ হচ্ছে), তাদের প্রত্যেককে তোমরা একশ’টি করে বেত্রাঘাত করবে, আল্লাহ্র দ্বীনের (আদেশ প্রয়োগের) ব্যাপারে ওদের প্রতি কোনো রকম দয়া যেন তোমাদের (মনে) না আসে, যদি তোমরা আল্লাহ্ তায়ালা ও পরকালের ওপর ঈমান এনে থাকো, --- (সূরা আন নূর : ২)
তবুও আমিই মুসলিম। আমিই মু’ ইসলাম পরিপূর্ণ ইসলাম পালনকারী। মাঝে মাঝে নামাযও পড়ি। যদিও আল্লাহ্ তায়ালা বলেন- হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা পুরোপুরিই ইসলামে(-র ছায়াতলে) এসে যাও এবং কোন অবস্থায়ই (অভিশপ্ত) শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না; কেননা শয়তান হচ্ছে তোমাদের প্রকাশ্যতম দুশমন! (সূরা আল বাকারা : ২০৮) তবুও সমাজে শান্তি না আসার কারণে আমি ইসলামকে দোষারোপ করি।
আমার দাবীতে কোন অন্তঃসারশূন্যতা নেই, আমি আত্মপ্রবঞ্চকও নই।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৫:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




