যখন কেউ বলে, এই দেশ দিয়ে কিছুই হবে না, এই দেশের জন্য চিন্তা করে কোন লাভ নেই, তখন আমি মনক্ষুন্ন হই। আমরা যারা তরুন-যুবা তারাই যদি হতাশ হয়ে পরি তাহলে এই দেশটার হাল ধরবে কে? কিন্তু আজকে আমি নিজেই যে হতাশ হয়ে পরছি। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব আমরা যাদের হাতে দিয়েছি, তারা এই দেশটাকে নিয়ে কি ভাবছে?
বুঝতে শেখার পর থেকেই দেখছি, আমার দেশে কারনে-অকারনে হরতাল হয়। এইসব হরতালের কোন যৌক্তিকতা আমি এখনও খুঁজে পাই নি। এই প্রথম আমি একটা হরতালের যৌক্তিক কারন খুঁজে পেয়েছি। আসলেই তো, যে দেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, গতবার আমি তেল-গ্যাসের এই চুক্তি করতে রাজি হইনি বলে আমি ক্ষমতায় আসতে পারি নি, সে দেশ দিয়ে কি হবে? প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার প্রশ্ন, তাহলে আপনি কি এবার দেশ বিক্রি করার চুক্তি করার শর্তে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন?
আমার দেশের জ্বালানী মন্ত্রী আগেও নাইকো’র কাছ থেকে কোটি টাকা দামের গাড়ী ঘুষ নিয়েছেন। এবার সেই ঘটনারই যে পুনরাবৃত্তি হচ্ছে তা তো দুগ্ধপোষ্য শিশুও বুঝতে পারছে। দেশের সবচেয়ে বড় স্বঘোষিত দেশপ্রেমিক(!!!) প্রধানমন্ত্রী কেনো সংবিধান অমান্য করে(বাংলাদেশের সংবিধানে বলা আছে, যে কোনো বিদেশী কোম্পানীর সাথে চুক্তি করলে তা অবশ্যই জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে) এই ধরনের একটা চুক্তি করছেন? তাকে কত টাকা ঘুষ দেয়া হচ্ছে?
কেন এই বিতর্কিত চুক্তির সকল শর্ত প্রকাশ না করেই তাড়াহুড়া করে চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে? কেন আমি আমার দেশের সম্পদ পয়সা খরচ করে কিনবো? কেন আমি সমমূল্যের টাকা খরচ করে মায়ানমার থেকে গ্যাস কিনবো না, যেখানে তারা আমার দেশ পর্যন্ত গ্যাস পৌছে দেবে?
এই চুক্তির সব শর্ত প্রকাশ করা হয়নি। যেটুকু প্রকাশ করা হয়েছে তাতেই দেশের স্বার্থবিরোধী অনেক শর্তের কথা বলা আছে।
যে চুক্তিটি করা হচ্ছে তা মডেল পিএসসি-২০০৮ নামে পরিচিত। মডেল পিএসসি-২০০৮ নথিটির উপধারা ১৫.৫.১-এর সূত্রে উল্লেখ আছে-
কোম্পানী পুরো গ্যাস্কে তরলীকরন করে সিএনজি হিসেবে রপ্তানী করতে পারবে।
উপধারা ১৫.৫.৪ এ বলা হয়েছে-
যে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাগরবক্ষের গ্যাসক্ষেত্র থেকে নিজস্ব পরিবহনব্যবস্থা(সাগরের তলে পাইপলাইন) তৈরী করে নিতে পারবে, শুধুমাত্র সেই ক্ষেত্রেই তার গ্যাস অংশ(খরচ উসুল গ্যাস ও লভ্যাংশ) নিতে পারবে, কিন্তু তার পরিমাণ কখনোই ২০% এর বেশী না।
কেন বাংলাদেশকে কনোকোফিলিপস এর প্রাথমিক বিনিয়োগকৃত টাকার তিনগুন টাকা খরচ করে বঙ্গোপসাগরের থেকে পাইপলাইন টানতে হবে? এছাড়া কনোকোফিলিপস এর অতীত ইতিহাস থেকে দেখা যায়, দূর্ঘটনা ঘটানোর ক্ষেত্রে তাদের বেশ সুনাম আছে। তারা এখানে দুর্ঘটনা ঘটালে দেশের সম্পদ, প্রাকৃতিক পরিবেশের যে ক্ষতি হবে তার ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে চুক্তিতে কিছুই উল্লেখ নেই। এর আগেও নাইকোর সাথে চুক্তি করে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে, সে কথা সরকার কিসের স্বার্থে বেমালুম ভুলে গেছে? প্রকাশ করা শর্তেরই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে যেসব শর্তের কথা প্রকাশ করা হয় নি, তার অবস্থা কি তা সহজেই অনুমেয়।
তেল-গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জাতীয় সম্পদ রক্ষা কমিটির ডাকা হরতালে কিসের স্বার্থে সরকার নির্বিচারে গ্রেফতার, লাঠিচার্জ করে? আমার দেশের মন্ত্রী যেখানে জাতীয় সংসদে আনু মহম্মদ কে মনু মহম্মদ বলে স্থূল রসিকতা করতে পারে, সেখানে এই দেশ থেকে আমরা কিই বা আশা করতে পারি?
বিরোধীদলকে আমরা সব-সময় দেখি সরকার ভাল-খারাপ, যে কোনো ধরনের আইন পাস করুক না কেন তার বিরোধীতা করতে। তারা তাদের নেত্রীর চোর পুত্র আরাফাত রহমান কোকোকে বাচানোর জন্য টানা ৪৮ ঘন্টার হরতাল করতে পারে, অথচ এত বড় একটা বিষয়ে তারা কেনো নিশ্চুপ? কোন বিদেশী লুটেরা বাহিনীর সাথে তারা আতাত করেছে?
আমার দেশের মেধাবী ছাত্র কেন বিদেশে পাড়ি জমায়, তার উত্তর তো আমি পেয়েই যাচ্ছি। মুখ বুজে অন্যায় সহ্য করার চেয়ে বিদেশে পাড়ি জমানো অনেক ভালো।
সরকার তেল-গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জাতীয় সম্পদ রক্ষা কমিটির কোন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারে নি, বরঞ্চ তারা তাদের বিরুদ্ধে চীনা মদদের অভিযোগ তুলেছে। আমার মতামত হচ্ছে যে কোন চুক্তিতেই কেউ না কেউ ব্যবসা করবে। আমার উচিৎ সেই চুক্তিটিই করা যেখানে আমার স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে।
আমরা যারা হরতালের বিরুদ্ধে কথা বলি, বলি হরতাল দেশের ক্ষতি করছে, তাদের কাছে প্রশ্ন বিরোধী দল যখন একটা চোরকে বাচানোর জন্য হরতাল দেয় তখন কি দেশের ক্ষতি হয় না? তখন তারা কেনো নিশ্চুপ থাকে?
সবার কাছে একটা আহবান, আমরা সরকারের বিরুদ্ধে আমরা যদি কিছু না বলি, তাহলে তারা দেশবিরোধী কাজ করেই যাবে। মৌনতা যেখানে দূর্বলতা প্রকাশ করে, সেখানে চুপ থাকার কোন অবকাশ নেই। এখনোই আমাদের উচিৎ প্রতিবাদ করা। দেশটা তো আমাদের মা। মায়ের সম্ভ্রম আমরা বিদেশী লুটেরাদের হাতে তুলে দেয়ার আগে একবার বিবেকের কাছে প্রশ্ন করি? এর পরও কি আমরা চুপ থাকবো?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




