কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার অভিবাসন কর্মী মো. শফিকুল ইসলামের প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, বর্তমানে জাতীয় আয়ের অন্যতম রেমিট্যান্স হলে ও এদিক থেকে এখনো পিছিয়ে আছে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে শিল্প কারখানা নিমাণ হলেও এ বিভাগ ২টি এখনো পশ্চাদপদ। ব্যাপক জনসংখ্যা, সম্ভাবনাময় শ্রমশক্তি থাকা সত্বেও দেশের ব্যাপক দরিদ্র মানুষের বাস এ বিভাগ ২টিতে। অপরদিকে বিদেশ গমনের ক্ষেত্রেও এ বিভাগ ২টি আছে অনেক পিছিয়ে। ২০০৫ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানীর তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে এই সময়ে মোট ৫১ লাখ ১২ হাজার ৩৪০জন কর্মী বিদেশ গেছেন। (সূত্রঃ বিএমইটি)
বিএমইটির এ সময়ের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে সবচেয়ে বেশী শ্রমিক গিয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে, এ বিভাগ থেকে মোট ২১ লাখ ৩ হাজার ৩৩৩ জন বিদেশ গেছেন যা দেশের ৪১.১৬%। দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা বিভাগ থেকে গেছেন ১৭ লাখ ৪২ হাজার ৭০২ জন যা দেশের ৩৪.৫% । তৃতীয় অবস্থানে সিলেট বিভাগ থেকে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৭৭৭ জন যা দেশের ৭.২%। চতুর্থ অবস্থানে খুলনা বিভাগ থেকে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৫৩১ জন যা দেশের হারে ৬.২৫%। পঞ্চম অবস্থানে রাজশাহী বিভাগ থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৬৪ জন যার হার ৫.৭৯%। ষষ্ঠ অবস্থানে বরিশাল বিভাগ থেকে ২ লাখ ৫১৪ জন যার হার ৩.৯১%। সব থেকে পিছিয়ে সপ্তম অবস্থানে আছে রংপুর বিভাগ। এ বিভাগ থেকে মাত্র ৮০ হাজার ৯১৯ জন বিদেশ গেছেন যার হার ১.৫৮%। দেশের মোট জনসংখ্যার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে সবচেয়ে বেশী লোক বাস করে ঢাকা বিভাগে মোট ৪ কোটি ৯৩ লাখ ২১ হাজার ৬৮৮জন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা চট্টগ্রামে ২ কোটি ৯৫ লাখ ৫৩ হাজার ৮৫৭ জন, তৃতীয় স্থানে রাজশাহী বিভাগে ১ কোটি ৯২ লাখ ২৫ হাজার ৯০৯ জন, চতুর্থ স্থানে রংপুর বিভাগে ১ কোটি ৬৪ লাখ ১২ হাজার ২৮৭ জন, ষষ্ঠ স্থানে খুলনা বিভাগে ১ কোটি ২ লাখ ৯৬ হাজার জন এবং বরিশাল বিভাগে ৮৬ লাখ ৫২হাজার ৩২৪ জন লোক বাস করে।
জনসংখ্যার ভিত্তিতে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ তৃতীয় ও চতুর্থ হলেও বিদেশে কর্মী যাওয়ার ক্ষেত্রে পঞ্চম ও সপ্তম। কোন জেলা থেকে কত শ্রমিক বিদেশে গেছে তালিকার ভিত্তিতে সাজালে দেখতে পাইযে ১ম স্থানে কুমিল্লা থেকে সবচেয়ে বেশী শ্রমিক বিদেশ গেছেন। এ জেলা থেকে ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৯৮৬ জন, ২য় স্থানে চট্টগ্রাম জেলা থেকে ৫ লাখ ৯ হাজর ৩১০ জন, ৩য় স্থানে ব্রাহ্মনবাড়িয়া থেকে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৬৭৬ জন। এভাবে পর্যায়ক্রমে ৪র্থ স্থানে টাঙ্গাইল, ৫ম স্থানে ঢাকা, ৬ষ্ঠ স্থানে চাদপুর, ৭ম স্থানে নোয়াখালী, ৮ম স্থানে মুন্সিগঞ্জ, ৯ম স্থানে ফেনী, ১০ম স্থানে নরসিংদি, ১১তম স্থানে লক্ষিপুর, ১২তম স্থানে নারায়নগঞ্জ, ১৩তম স্থানে সিলেট, ১৪তম স্থানে গাজীপুর, ১৫তম স্থানে কিশোর গঞ্জ, ১৬তম স্থানে মানিকগঞ্জ, ১৭তম স্থানে ময়মনসিংহ, ১৮তম স্থানে মৌলভীবাজার, ১৯তম স্থানে ফরিদপুর, ২০তম স্থানে হবিগঞ্জ, ২১তম স্থানে বরিশাল, ২২তম স্থানে শরীয়তপুর, ২৩তম স্থানে মাদারীপুর, ২৪তম স্থানে যশোর, ২৫তম স্থানে বগুড়া, ২৬তম স্থানে সুনামগঞ্জ, ২৭তম স্থানে পাবনা, ২৮তম স্থানে কক্সবাজার, ২৯তম স্থানে চাপাইনবাবগঞ্জ, ৩০তম স্থানে কুষ্টিয়া, ৩১তম স্থানে ভোলা, ৩২তম স্থানে ঝিনাইদহ, ৩৩তম স্থানে জামালপুর, ৩৪তম স্থানে সিরাজগঞ্জ, ৩৫তম স্থানে রাজবাড়ী, ৩৬তম স্থানে মেহেরপুর, ৩৭তম স্থানে নওগা, ৩৮তম স্থানে গোপালগঞ্জ, ৩৯তম স্থানে পিরোজপুর, ৪০তম স্থানে রাজশাহী, ৪১তম স্থানে নাটোর, ৪২তম স্থানে সাতক্ষিরা, ৪৩তম স্থানে চুয়াডাঙ্গা, ৪৪তম স্থানে মাগুরা, ৪৫তম স্থানে বাঘেরহাট, ৪৬তম স্থানে খুলনা, ৪৭তম স্থানে নেত্রকোণা, ৪৮তম স্থানে গাইবান্ধা, ৪৯তম স্থানে পটুয়াখালী, ৫০ তম স্থানে নড়াইল, ৫১তম স্থানে বরগুনা, ৫২তম স্থানে ঝালকাঠি, ৫৩তম স্থানে রংপুর, ৫৪তম স্থানে দিনাজপুর, ৫৫তম স্থানে জয়পুরহাট, ৫৬তম স্থানে শেরপুর, ৫৭তম স্থানে কুড়িগ্রাম, ৫৮তম স্থানে নীলফামারী, ৫৯তম স্থানে ঠাকুরগাও, ৬০তম স্থানে খাগড়াছরি, ৬১তম স্থানে লালমনির হাট, ৬২তম স্থানে রাঙ্গামাটি, ৬৩তম স্থানে পঞ্চগড় এবং সবশেষে ৬৪তম স্থানে বান্দরবান।
উপরের সমীক্ষা থেকে জানা যায়, ১০ হাজারের নিচে যে ৯টি জেলা থেকে বিদেশে কর্মী যায় তার ৫টি জেলাই হচ্ছে রংপুর বিভাগের যথা কুড়িগ্রাম ৯ হাজার ৬৫২ জন, নীলফামারী ৮ হাজার ৪৮ জন, ঠাকুরগাঁও ৬ হাজার ২১৮ জন, লালমনির হাট ৩ হাজার ৮৬১ জন এবং পঞ্চগড় থেকে ২ হাজার ৮৮০ জন। অপর ৪টি জেলা হচ্ছে শেরপুর, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবান। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে উপরের ৪টি জেলার লোকসংখ্যা মিলে রংপুর ্ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জেলার নিচে। অপরদিকে বিদেশ গমনের হারে পিছিয়ে থাকলেও দরিদ্রের হারে এগিয়ে আছে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ।দেশের সবচেয়ে বেশী দরিদ্র মানুষের বসবাস রংপুর বিভাগে।এ বিভাগে দরিদ্রের হার ৪২.৩%। এ বিভাগের কুড়িগ্রাম জেলাই হচ্ছে দেশের সবচেয়ে দরিদ্র জেলা। এখানে দরিদ্রের হার ৬৩.৭%। দরিদ্রের অবস্থানে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বরিশাল বিভাগ যার হার ৩৯.৪%,তৃতীয় অবস্থানে রাজশাহী বিভাগে ৩৫.৭%,চতুর্থ স্থানে খুলনা বিভাগে ৩২.১%, পঞ্চম স্থানে ঢাকা বিভাগে ৩০.৫%.৬ষ্ঠ অবস্থানে সিলেট বিভাগে ২৮.১%এবং সপ্তম স্থানে চট্টগ্রাম বিভাগের দরিদ্রের হার ২৬.২%।
উপরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যে বিভাগ বা জেলা থেকে বেশী শ্রমিক বিদেশে গিয়েছে সে বিভাগ বা জেলাতে দরিদ্রের হার অনেক কম। বিদেশ গমনের শীর্ষে চট্টগ্রাম বিভাগ এই জন্য এ বিভাগে দরিদ্রের হার সবচেয়ে কম অপরদিকে সবচেয়ে কম কর্মী যায় রংপুর বিভাগ থেকে এ জন্য এ বিভাগে দরিদ্রের হার সব্বোর্চ। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ থেকে অনেক শ্রমিক ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে কাজ করার জন্য যায় তারা ওইসব বিভাগে অর্ন্তভুক্ত হ্ওয়ায় তাদের দরিদ্রের হার বেড়েছে কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ওইসব ব্যক্তিদের নিজ জেলায় অর্ন্তভুক্ত করলে এই ২ বিভাগে দরিদ্রের হার আরো বেড়ে যাবে। কৃষি হচ্ছে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের মানুষের প্রধান পেশা। এখনো এ বিভাগ ২টিতে শিল্প কারখানা বা কর্মক্ষেত্র না থাকার কারণে এ বিভাগ ২টিতে সবচেয়ে বেকারের পরিমাণ বেশী। তাই এ বিভাগ থেকে প্রতিদিন শ্রমিকরা দেশের অন্যান্য বিভাগে কাজ করার জন্য যায়। এক মাত্র কুড়িগ্রাম জেলা থেকে প্রতিদিন ১২৭টি বাসে লোক জন দেশের অন্যান্য এলাকায় যায়। এই বিভাগ ২টিতে বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে যদি অগ্রাধিকার দেয়া হতো বা সরকারি ও বেসরকারি সুযোগ সুবিধা থাকতো তা হলে বিদেশে কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে অন্যতম জোন হতো এই ২ বিভাগ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে যদি রেমিট্যান্স পাঠাতো তা হলে এই এলাকার গোটা চিত্রই আমুল পরিবর্তন ঘটতো। উর্ব্বর কৃুষি জমি, সম্ভাবনাময় শ্রমশক্তির সাথে রেমিট্যান্স মিলে সবচেয়ে অর্থনীতিতে এগিয়ে থাকতো এই ২ বিভাগ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৫ সকাল ৯:৩৫