তবে কি শেখ হাসিনা!
বিশেষ প্রতিবেদক, হার্ডনিউজ২৪.কম :
রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর রাজনৈতিক অঙ্গণে সবচাইতে আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে। বিষয়টি এখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আবারো গভীর সংশয়, উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা সৃষ্টি করেছে। কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি এর উপর শুধু ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতি ও আসন্ন নির্বাচনে দলটির রাজনৈতিক ভবিষ্যতই নির্ভর করছে না, বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির ভবিষ্যত এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও সরকার গঠন প্রক্রিয়াকেও ওতপ্রোতভাবে প্রভাবিত করবে।
তাই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয়টি দেশে এবং দেশের বাইরের রাজনৈতিক বোদ্ধারা অত্যন্ত মনোযোগের সাথে পর্যবেক্ষণ করছেন। জাতীয় সংসদে বেশ শক্তিশালী অবস্থানে থাকায় এ বিষয়টি যদিও এখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিজস্ব দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়, কিন্তু এই সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন তা দেখেশুনে বিরোধী দলগুলো বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে তাদের পরবর্তী রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ করবে। এমতাবস্থায় সরকারও বিভিন্নদিক বিবেচনা করে অত্যন্ত সতর্কতা ও কৌশলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে এগুচ্ছে।
স্পিকার আবদুল হামিদ সংবিধানের ৫৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বুধবার রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান মারা যাওয়ার পর থেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। তাকেই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও বিভিন্ন দিক থেকে দক্ষতা সম্পন্ন বলে তিনি সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য। এই বিবেচনায় আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেটকে রাষ্ট্রপতি করার সম্ভাবনা বেশী।
তবে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নিয়ে রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন অঙ্গনে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সংবিধান মোতাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর আগামী ৯০ দিনের মধ্যে অর্থ্যাৎ আগামী ১৯ জুনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সংবিধান অনুযায়ী পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন আগামী পাঁচ বছরের জন্য। ইতোমধ্যেই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন-অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ডা. এস এ মালেক, জাতীয় সংসদের উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবং জাতীয় সংসদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব এম. ইদ্রিস আলী, প্র
বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য এবং প্রবীণ রাজনীতিক হিসেবে ডা. এস এ মালেকের নাম বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে। ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল তখন ডা. এস এ মালেক তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংকটময় মুহূর্তে বিশেষ করে ১৯৭৫ পরবর্তী ও ২০০৭ সালের ১/১১ পরবর্তী সময়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেছেন। তিনিও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য এবং শেখ হাসিনার আস্থাভাজন। এছাড়া আলোচনায় সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব ইদ্রিসের কথাও শোনা যাচ্ছে।
আবার কয়েকটি সূত্রের মতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের প্রতি দলীয় হাইকমান্ডের বাড়তি বিশ্বাস ও আগ্রহ রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এবং যার ওপর তিনি নির্ভর করতে পারবেন এমন ব্যক্তিকেই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি করা হবে সে বিষয়টি নিশ্চিত।
সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে এবং জাতীয় সংসদের সদস্যদের ভোটে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন।
এদিকে আগামী দিনের রাজনৈতিক গুরুত্বের বিবেচনায় এবং বিরোধীদলের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলনের বিষয়টি মাথায় রেখে জাতীয় রাজনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি করা যায় কি না সে বিষয়ে দলের নেতাকর্মী ও নীতি নির্ধারকরা সক্রিয় চিন্তা ভাবনা করতে শুরু করেছেন বলেও একটি সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রটির মতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও প্রেসিডেন্ট পদের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী।
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী একটি প্রভাবশালী সূত্রের বরাতে জানা গেছে, আগামী দিনের বিরোধী দলের আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলন ও যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় এবং এর পক্ষে বিপক্ষে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করে সেনাবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব নেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।
সে ক্ষেত্রে আগামীদিনের রাজনৈতিক আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নে বিরোধী দলকে অনেক সতর্কতার সাথে এগুতে হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এদিকে, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশ গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের উপর জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে পরোক্ষ চাপের বিষয়টি এখন সুস্পষ্ট। এছাড়া আগামী দিনগুলোতে এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নর্ডিক কান্ট্রিজ, বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোসহ আঞ্চলিক পরাশক্তি চায়নার আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালনের সম্ভাবনা রয়েছে।
ইতোমধ্যেই জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হতে হবে।
এছাড়া বিগত ১৭ মার্চ একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বর্তমান চারদলীয় জোটের অন্যতম শরীক জাতীয় পার্টির চ্যেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এ অবস্থায় জাতীয় পার্টি নির্বাচনে গেলেও তা দেশ বিদেশে এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। তাই বর্তমান সরকারের অধীনে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে কি না সে বিষয়ে আমাদেরকে আরো ভাবতে হবে।
ঢাকায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি ফর পলিটিক্যাল এফেয়ার্সের এক ঝটিকা সফরে বাংলাদেশে গমন এবং এ সময়ে সরকার ও বিরোধী দলের সাথে বাংলাদেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলনের সাথে পরিপূরক ছিল।
এমতাবস্থায় সকল দলের নিশ্চিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকার ও এখন চিন্তাভাবনা করছে, যদিও এর স্বরূপ ও প্রকৃতি নিয়ে সরকার এখনো দোদুল্যমান। এরই ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক সংলাপে বসার বিষয়ে যখন একটি পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চলছিল, তখন রাষ্ট্রপতির মৃত্যুর ফলে পুরো রাজনীতির হিসেব নিকেষ আবার নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বিএনপি রাষ্ট্রপতির মৃত্যুপরবর্তীকালীন সময়ে যথেষ্ট গঠনমূলক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং আগামী দিনগুলোতেও এই ধারা অব্যাহত রাখবে।
সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে, সরকার অবশেষ ত্বত্তাবধায়ক সরকার বা এ জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পথে গেলে এবং সরকারের শেষ দিনগুলোতে বিরোধী দলের নেতিবাচক কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে অস্থিতিশীল করার সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় তখনকার পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সেনা বাহিনী মোতায়েনসহ নিরংকুশ ক্ষমতা প্রয়োগের সুবিধা এবং সর্বোপরি শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত আগ্রহের কথা বিবেচনায় রেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রপতি হওয়ার বিষয়টিকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
ঘটনা এমন দাঁড়ালে জাতীয় সংকট আরো ঘনীভূত হবে সন্দেহ নেই।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




