গত কয়দিন আসলে কোন কিছুতেই মন বসাতে পারছি না। তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনিরের মতো দুজন স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বকে এভাবে চলে যেতে হলো – এটা মানতে পারছি না কিছুতেই! উনাদের যদি স্বাভাবিক মৃত্যু হতো, তাহলেও আজকের মতোই ব্যথিত থাকতাম; কিন্তু এভাবে সড়ক দূর্ঘটনায় তাঁদের মৃত্যু দেখে ব্যথার সাথে যোগ দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ। সমগ্র সত্ত্বা চিৎকার করে বলছেঃ নিরাপদ সড়ক চাই, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই!
এটিএন নিউজ রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষনা করেছে সড়ক-দূর্ঘটনার বিরুদ্ধে। দুঃখজনক হলেও খুবই সত্য যে, শুধু যদি তারেক মাসুদ এই দূর্ঘটনায় নিহত হতেন, তাদের এতটা প্রতিক্রিয়া দেখা যেত না। তারেক মাসুদের সাথে মিশুক মুনির নিহত হওয়াতে এটিএন নিউজের সাংবাদিকগন আর কোন কিছুর পরোয়া করছে না। অবশ্য তাই বলে আমি তাদের এই ‘স্ট্যান্ড’কে দোষারোপ করছি না। তারা যেটার বিরুদ্ধে এখন যুদ্ধ ঘোষনা করেছে, সেটার বিরুদ্ধে আগেও ইলিয়াস কাঞ্চনসহ অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে নেমেছিলেন – কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় নি। হয়তো মিডিয়ার সমর্থনের অভাবে, হয়তোবা জনগনের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহনের অভাবে সেই প্রতিবাদগুলো কার্যতঃ অসফল আন্দোলনে পরিনত হয়েছিলো। কিন্তু এটিএন নিউজ চ্যানেলের কারনেই এবার পরিস্থিতি ভিন্ন – পেপার ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো মোটামুটি সাথে আছে যার নেতৃ্ত্বে আছে স্বয়ং এটিএন নিউজন; ইন্টারনেট-ব্লগ-ফেসবুকে আছে জনসাধারনের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহন। কার্যতঃ এবার যদি এ যুদ্ধে জয়ী হতে না পারি, তাহলে হয়তো আর কোনদিনই পারবো না!
আমি ব্যাপারটাকে দেখছি এভাবেঃ বুদ্ধিজীবি হত্যা দিবসে জাতির অনেক সূর্য্যসন্তানকে রাজাকারদের সহায়তায় মেরে ফেলেছিলো হানাদার বাহিনী। আর স্বা্ধীনতার পর চল্লিশ বছর ধরে অশিক্ষিত, বেপরোয়া ড্রাইভারদের সহায়তায় সরকার বাহিনী হত্যা করে চলেছে দেশের সৃষ্টিশীল সন্তানদের। গত দশ বছরে এই হত্যার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে কয়েকগুন। অনিরাপদ সড়ক এখন জাতীয় দূর্যোগে পরিনত হয়েছে বলাই বাহুল্য। আমরা যদি প্রকৃত দেশপ্রেমিক হয়ে থাকি, কেন এই দূর্যোগের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শরীক হচ্ছি না? কেনই বা এর প্রতিবাদে কোন আন্দোলন সফল হচ্ছে না?
বুঝতে হবে যে, এটা কোন সরকার-বিরোধী আন্দোলন নয়, এটা বরং সরকারকে সঠিক পথ নির্দেশনার আন্দোলন। এটি হচ্ছে এমন একটি আন্দোলন যেটাতে জয়ী হতে পারলে আমরা জনগন পাবো ‘নিরাপদ সড়ক’, সাথে বর্তমান সরকারকে দেবো ‘আগামী বিশ বছরের ম্যান্ডেট’।
জনাব ম. তামিমের একটি উপলব্ধি আমার বেশ ভালো লেগেছে। তিনি সততার সাথে বলেছেন, আগে যখনই এরকম কোন সড়ক দূর্ঘটনায় কারো মৃত্যুর খবর শুনেছি, মনটা হয়তো কিছুটা খারাপ হয়েছে, তবে কখনোই ভেতরে ভেতরে অতটা আলোড়িত হই নি। কিন্তু এবার যখন কাছের মানুষ এভাবে মৃত্যৃবরন করলো (তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনির দুজনেই তামিম স্যারের বন্ধু ছিলেন), তখন কোনভাবেই তা মেনে নিতে পারি না, বিদ্রোহী হয়ে উঠতে ইচ্ছে করে! ……জনাব তামিম স্যার বর্তমান সরকারের খুব ঘনিষ্ঠজন, সরকারের স্বার্থে উনি দেশের স্বার্থবিরোধী অনেক কিছুই করেছেন বা করছেন বলে অভিযুক্ত। তথাপি তাঁর এই কান্নাভরা উপলব্ধি নিঃশব্দে ব্যক্ত করছে - এই যুদ্ধে বিবেকের তাগিদেই তিনি বিনাস্বার্থে যোগ দিবেন। এছাড়াও বলবো জ. ই. মামুন ও মুন্নি সাহার মত জনপ্রিয় সাংবাদিকদের কথা। আওয়ামী লীগ অন্ত;প্রান হলেও তাদের পি্তৃসম মানুষ তথা প্রানপ্রিয় অভিভাবকের এহেন মৃত্যুতে তাদের চেহারায়, কান্নায়, কথাবার্তায় যে পরিমান ক্ষোভ, যন্ত্রনা ও বিদ্রোহ ফুটে উঠেছে, তাতে তারা যদি এই আন্দোলনে নিজেদেরকে সংশ্লিষ্ট না করে, নিজেদের বিবেকের কাছে কি জবাব দেবে তারা?
তাই আমার মনে হয়, সমাজের সর্বস্তরের বিবেকবান মানুষই আজ তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনিরের সড়ক-দূর্ঘটনা জনিত এই মৃত্যুতে শোকাহত, ক্ষুব্ধ এবং প্রতিবাদী। তাই বেপরোয়া, বে-আদব ড্রাইভারদের নিয়ন্ত্রন এবং হাইওয়ে-উপযোগী সড়ক নির্মান ও সংস্কারের দাবীতে আন্দোলনে নামার এখনই উপযুক্ত সময়। আসুন আমরা এটিএন নিউজের পাশে দাঁড়াই, আন্দোলনকে বেগবান করি।
আর কোন তারেক মাসুদ বা মিশুক মুনিরের মতো কীর্তিমান সন্তানদের যেন এভাবে চলে যেতে না দেই আমরা!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




