আমাদের বিশ্বকাপ দলটি বেটার নাকি বর্তমান দলটি বেটার? সম্ভবত সবারই উত্তর হবে বর্তমান দলটি। পার্থক্যটা আসলে গড়ে দিয়েছে একজন - নাসির হোসেন। এই মানের একজন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের খুব প্রয়োজন ছিল যার দায়িত্ব হবে তামিম ও সাকিবের মধ্যে একটা সেতুবন্ধন তৈরী করা। এছাড়া মাশরাফিও সামান্য পার্থক্য তৈরি করেছে নিঃসন্দেহে। ওয়ানডাউনে জহুরুলও ঠিক আছে; দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করছে সে। তথাপি সেরা একাদশ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট নই কয়েকটি যুক্তিসঙ্গত কারনে। মূলত দুইটি বিষয়ে আমার আপত্তি আছে।
প্রথম আপত্তিটা ওপেনিং ব্যাটসম্যান নিয়ে। আমি বিশ্বাসই করতে পারি না, আমাদের এই বেস্ট দলটাতে নাজিমুদ্দিনের মত লো-স্ট্যান্ডার্ডের একজন ব্যাটসম্যান ওপেন করবে! নেপাল ক্রিকেট টিমে হয়তো তার জায়গা হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশ টিমে কিভাবে তার জায়গা হলো কিছুতেই আমার মাথায় ঢুকছে না। তার কোন ফুটওয়ার্ক নেই, বল বিচার করে খেলার যোগ্যতা নেই; শুধু আন্দাজে ব্যাট চালাতে পারে। হ্যাঁ, একটা টিপিক্যাল শট তার আছে বটে – মিডল-লেগ স্ট্যাম্পের হাফভলি বলগুলোকে কদর্যভাবে স্কোয়ার লেগ দিয়ে উড়িয়ে মারা। যারা বিপিএল ফাইনাল দেখেছেন তাদের পরিষ্কার মনে থাকার কথা, কবির আলীর এক ওভারেই (সম্ভবত পর পর তিনে বলেই) তিন-তিন বার সে একই শট খেলে স্কোয়ার লেগ বাউন্ডারীতে ক্যাচ দিয়েছিল, যদিও গর্দভ ফিল্ডারটি একটিও ধরতে পারে নাই! এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচেও উমর গুলের বলে যে ছক্কাটি মেরেছিল, তা-ও একই শট। তার সৌভাগ্য যে, ফিল্ডারটি বাউন্ডারি থেকে সাত-আট গজ ভেতরে থাকায় সেটা আর ক্যাচ হয় নি, বাউন্ডারীর দড়িতে চুমু খেয়ে ছক্কা হয়ে যায়। বোঝাই যাচ্ছে, তাকে আউট করা একজন বুদ্ধিমান বোলারের (অথবা ক্যাপ্টেনের) ক্ষেত্রে কোন ব্যাপারই না। এছাড়া আমি তার বড় আরেকটি দূর্বলতা খুঁজে পেয়েছি। আমি যদি বিপক্ষ দলের ক্যাপ্টেন হতাম, তাহলে কাভার এবং শর্ট এক্সট্রা কাভার রেখে বোলারকে অনুরোধ করতাম সমানে ফিফথ স্ট্যাম্প বরাবর বল করতে। নাজিমুদ্দিন কাভার-ড্রাইভ করতে গিয়ে সিম্পল ক্যাচ তুলে দিবে - আমি নিশ্চিত।
যাই হোক, তাহলে ওপেনিং-য়ে কাকে নেওয়া উচিত? বিপিএল পারফরমেন্স যদি ক্রাইটেরিয়া হয়, তাহলে মনে করি জুনায়েদকে নেওয়া উচিত ছিল। সে তার হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে বলেই মনে হলো। আর বিপিএল পারফরমেন্স যদি ক্রাইটেরিয়া না হয়, তাহলে ইমরুল কায়েস বা শাহরিয়ার নাফিসকে (সে অবশ্য স্কোয়াডেই নাই) রাখা উচিত। মোদ্দা কথা এই তিনজনের যে কাউকে নিলেই হবে, তবে কোনক্রমেই নাজিমউদ্দিনকে নয়!
দ্বিতীয় আপত্তি মূলত ফাস্ট বোলারদের নিয়ে। রুবেলকে কেন স্কোয়াডে রাখা হয় নি, তার যুক্তিসঙ্গত কোন কারন খুঁজে পাচ্ছি না। শাহাদাতের চেয়ে রুবেল অনেক বেটার বোলার, ডেথ ওভারে সে অনেক ভাল বল করে, তার রিভার্স সুইংগুলোও খুব কার্যকর।
শফিউল প্রসঙ্গেঃ শফিউল বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচটি জিতিয়েছিল, এবং সেজন্যে তার প্রতি আজীবন কৃ্তজ্ঞ থাকবো; তথাপি কিছু কটু কথা না বলে পারছি না। শফিউলের যে শারীরিক গঠন, তাতে সে আর বড়জোর দুই-তিন বছর ফাস্ট বল করতে পারবে বলেই বিশ্বাস করি। আমি ভবিষ্যৎবানী করতে পারি, আজ থেকে বেশ কয়েক বছর পরে ঘরোয়া লীগে আমাদের শফিউলকে স্পিন বল করতে দেখা যাবে!......(নট জোকিং)......সে মেধাবী বোলার এতে কোন সন্দেহ নাই, কিন্তু বর্তমানে বিশ্বের সবচাইতে দূর্বল শারীরিক গঠনের ফাস্ট বোলার কে, এই প্রশ্নের জবাব হচ্ছে শফিউল। এই পেসে বোলিং কন্টিনিউ করে গেলে খুব সহজেই সে কঠিন ইনজুরিতে আক্রান্ত হবে (অবশ্য বেচারা গত ম্যাচে ফিল্ডিং-য়ের সময় ইনজুরিতে পড়েছে, এবং সম্ভবত বাকী ম্যাচগুলো খেলতে না-ও পারে)।
যাই হোক, এটা জাস্ট আমার ভাবনা। হয়তো নিকট ভবিষ্যতেই আমি ভুল প্রমানিত হতে পারি; কিন্তু সম্ভাব্যতা যাচাই করলে আমার আশংকাগুলোই সত্য প্রমানিত হওয়ার চান্স বেশী। অবশ্য বর্তমানের উইনিং কম্বিনেশন ভাঙ্গার কথা আমি বলছি না, অফিসিয়ালরা চাইলে এদের দিয়েই বাকী টুর্নামেন্ট খেলাতে পারে। আমি শুধু এটাই দেখাতে চাচ্ছি যে, এই তিনটি ভাইটাল পজিশনে যদি উপযুক্ত রিপ্লেসমেন্ট করানো হয়, তাহলে আমাদের দল বিশ্বের যেকোন দলকে যেকোন দিন হারানোর সক্ষমতা অর্জন করবে!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




