somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন ইলিয়াস কাঞ্চন ও তার ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন

১৪ ই মে, ২০১২ রাত ৮:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দূর্ভাগ্য, বুদ্ধিজীবি দিবসে পাক হানাদার বাহিনী যেমন বিশ্বাসঘাতক রাজাকারদের সাথে নিয়ে আমাদের সুর্য্যসন্তানদেরকে হত্যা করেছিল, তদ্রুপ আমার দেশের সরকার বাহিনী গত চল্লিশ বছর ধরে অশিক্ষিত, বেপরোয়া ড্রাইভারদের যোগসাজশে হত্যা করে চলেছে দেশের সৃষ্টিশীল সন্তানদের। প্রায় প্রতিদিনই এইসব অ-প্রশিক্ষিত ড্রাইভারদের ভুলে কত প্রস্ফুটিত বা অপ্রস্ফুটিত মেধা হারিয়ে যাচ্ছে তার হিসাব নেই। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, সড়ক দূর্ঘটনায় বিখ্যাত কেউ মারা না গেলে অথবা একসাথে অনেকজনের মৃত্যু না হলে সেগুলো আর এখন পেপার-পত্রিকাতেও আসে না – এতটাই নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরকারের আন্তরিকতার যথেষ্ট অভাব দেখা যাচ্ছে এইসব দূর্ঘটনা প্রতিরোধে। মীরসরাই ট্র্যাজেডীতে প্রায় ৫০ জনের মতো ছোট ছোট বাচ্চার মুহুর্তের মধ্যে মারা যাওয়ার পরে ভেবেছিলাম এখন অন্তত সরকারের বিবেক জাগ্রত হবে। চালকের মোবাইলে কথা বলার ফলেই দূর্ঘটনাটি ঘটেছে জানা যাওয়ার পর সরকারের নির্দেশে ড্রাইভিং এর সময় মোবাইলে কথা বলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা বর্তমানে কতটুকু কার্যকর? এই নির্দেশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কতটুকু আন্তরিক, কতটুকু দায়িত্বশীল? এদিকে আশংকাজনক ব্যাপার হচ্ছে, মন্ত্রী-এমপিদের আশকারায় এই বাস-ট্রাক ড্রাইভাররা হয়ে উঠছে আরো বেপরোয়া। তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীরকে হত্যার জন্যে যে বাস ড্রাইভারটা দায়ী, তাকে ধরার পর পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলো তার মুক্তির জন্যে আন্দোলন পর্যন্ত করেছে...সেলুকাস, কোন দেশে থাকি আমরা? সেই ঘাতক ড্রাইভার কি এখন হাজতে নাকি জামিন পেয়ে দিব্যি ড্রাইভিং করে যাচ্ছে?

সমাজের বিশিষ্ট কয়েকজনের দিকেও একটু তাকিয়ে দেখিঃ তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীরের দূর্ঘটনার পর তারানা হালিম, মুন্নী সাহা, জ.ই. মামুন, জনাব ম. তামিমসহ অনেককেই দেখেছি কাঁদতে কাঁদতে অনিরাপদ সড়কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করতে। তাদের যুদ্ধের কি অবস্থা? তারা যদি তাদের সামাজিক অবস্থান থেকে আন্তরিকভাবে এই যুদ্ধ করে যেত, তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে তাদেরই আর কোন প্রানপ্রিয় বন্ধু বা পিতৃসম গুরুকে এভাবে চলে যেতে হবে না। কিন্তু কিসের কী? সবই শো-অফ আর ফাঁপা বুলি!!

তবে সবচেয়ে স্বতন্ত্র অবস্থায় আছেন আমাদের স্বনামখ্যাত চলচ্চিত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। এই পোস্টের হেডিং-এও তাই উনাকেই অলংকৃত করা হয়েছে। প্রায় বিশ বছর আগে তার স্ত্রী সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হলে তিনিই সর্বপ্রথম ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নামক একটি মহৎ আন্দোলনের সূচনা করেন। এই মহতী উদ্যোগের আজ প্রাপ্তি কি? প্রাপ্তি অবশ্যই আছে, যেকোন বড় ধরনের দূর্ঘটনার পরে টিভি ও পত্রিকার কমন দৃশ্যঃ মহানায়ক জনাব ইলিয়াস কাঞ্চন মুখচোখ গম্ভীর করে শহীদ মিনারের পাদদেশে বসে প্রতিকী অনশন/আন্দোলনে রত। এই প্রাপ্তি কতটুকু জনগনের তা বলাই বাহুল্য, তবে মহানায়কের প্রাপ্তি কিন্তু কম নয়! গত বিশ বছরে কয়টা মিডিয়ায় কয়বার করে ফারুক, ওয়াসিম, জাভেদের নামে হেডিং হয়েছে? - ক্যারিয়ার শেষ, তো স্পটলাইটও খতম! অথচ ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের সুবাদে জনাব ইলিয়াস কাঞ্চন হেডলাইনে এসেছেন বার বার; যত বেশী দূর্ঘটনা ঘটেছে, তত পাদপ্রদীপের আলোয় ভেসে গেছেন তিনি!

মূলত ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর মত মহৎ এক আন্দোলনকে তিনি সর্বক্ষন ‘লাইমলাইটে’ থাকার হাতিয়ার হিসেবেই ব্যবহার করে গেছেন, নচেৎ এত বছর ধরে চলমান একটা আন্দোলনের প্রাপ্তি কোনভাবেই শূন্যের কোঠায় থাকতে পারে না। অথচ আন্দোলন ফলপ্রসূ করার যথেষ্ট সুযোগ তার ছিল; তার অগনিত ভক্তরা তো বটেই, সমাজের জ্ঞানী-গুনী প্রায় সবাই এই উদ্যোগে অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু এতগুলো বছর পরে দুঃখজনকভাবে বলতে হচ্ছে, যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে তিনি এই আন্দোলন পরিচালনা করেননি, বরং নিজ স্বার্থেই ক্রমাগত ব্যবহার করে গেছেন।

তবে সম্প্রতি তিনি নাকি বিয়ে করেছেন - যাক ভালোই হয়েছে। সময় এসেছে এবার নিজের পরিবারের প্রতি মনোনিবেশ করার, সুখে-শান্তিতে সংসার করার! গত বিশ-পঁচিশ বছর ধরে অনেক করেছেন, অনেক সয়েছেন; এবার এই ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের লাগামটা সুযোগ্য একজনের হাতে দিয়ে আপনি ক্ষ্যামা দেন প্লিজ!
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×