বইটার দিকে শুধু তাকিয়ে আছি। কী যে বের করেছিলাম পড়ব বলে তাও মনে করতে পারছি না। আমার পড়ার টেবিলে কালো রঙের টেবিল ক্লথ দেয়া। সবুজ পাতার বাহারি ডিজাইন। হঠাত চোখ পড়তেই দেখি সেখানে একটা ঘাসফুল! ফুল এলো কোত্থেকে! আরও অবাক করা ব্যাপার টকটকে লাল ফুল!
কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেখানে একটা শালিক এসে বসলো!
নাহ, আর পারছি না। চোখ বন্ধ করে ফেললাম। এই শালিকটাকে আমি খুব ভয় পাই। যখন খুব কষ্ট হয় শালিকটা তখনই এসে হাজির হয়। আজও হয়তোবা আমার অনেক কষ্ট। কিন্তু নদীটা কোথায়? শালিকটা আসলে নদীটাও জুড়ে বসে। আজ নদীটাকে দেখতে পাচ্ছি না। আমার অনেক একাকীত্বের সাক্ষী এই নদী। কখনোবা গাল বেয়ে আঁধার রাতে বালিশে গড়িয়ে পড়ে, কখনোবা সিগারেটের ধোঁয়া পেরিয়ে টপ টপ করে আছড়ে পড়ে পৃথিবীর বুকে।
এখনো চোখ বন্ধ। বেশ বুঝতে পারছি শালিকটা উড়ে বেরাচ্ছে ঘরের এমাথা থেকে ও মাথায়। কতদিন জানালা খোলা হয়নি জানিনা। বদ্ধ ঘরে শালিকটা ছটফট করে মরছে। হাজার বছরের ক্লান্তি। অনেক আগেও ছিল শালিকটা। বেশ কিছুদিন আগেও দেখতে পারিনি। এরকম বদ্ধ ঘরে কখনোতো কেউ আগে এভাবে বন্দি করে রাখেনি। ডানা ঝাঁপটায়, প্রতিটা দেয়ালে আছড়ে পড়ে। অনেক কষ্ট বুঝি পাখিটার।
এতক্ষনে আসলো নদীটা। চোখের কোনে সীমাহীন অভিমান নিয়ে ঢেউ খেলে যাচ্ছে। চোখ খুললেই ভাঁটার টানে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়বে। আজ হোক কাল হোক, চোখ আমাকে খুলতেই হবে। যে নদীর জন্ম বয়ে চলার জন্য, তাকে আটকাবে কে!
খুব সাবধানে তাকাইয়ে দেখি জরাজীর্ণ পাখিটা ক্লান্তির ভারে টেবিলে পড়ে আছে। ঘাসফুলটাও শুঁকিয়ে গেছে অনেক আগে। আজ প্রথম বুঝতে পারলাম, আমার ঘরে কোন জানালা নেই। চার দেয়ালে মোড়া এক বদ্ধ চাদরে পাখিটা পড়ে আছে।
দূর থেকে কানে ভেসে আসছে আযানের ধ্বনি। তাইতো, সকাল তো হয়ে গেছে! পাখিটাকে আর দেখা যায় না। ঘাসফুলটাও মিশে গেছে ভোরের আঁধারে। শুধু রয়ে গেছে নদী বয়ে চলার ছাপ। নীরবে বয়ে চলে অদৃশ্য সে নদী। দিন পেড়িয়ে মাস। মাস পেড়িয়ে বছর।