somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা ৩০ লাখ থেকে সরে গেল সরকার :|:|:|

০৯ ই জুন, ২০১১ সকাল ৯:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা প্রসঙ্গে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন বলেছে, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৮ই জানুয়ারি লন্ডনের ক্লারিজ হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা ‘লক্ষ লক্ষ’ (মিলিয়নস) উল্লেখ করেছিলেন। তিনি ত্রিশ লাখ বলেননি।’ B:-) B:-) B:-)
লন্ডনের প্রভাবশালী দৈনিক গার্ডিয়ান পত্রিকায় এবারে নতুন করে এ বিতর্কের সূত্রপাত করেন সাংবাদিক আয়ান জ্যাক। গার্ডিয়ান পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক আয়ান জ্যাক অক্সফোর্ড একাডেমিক শর্মিলা বোসের বই ‘ডেড রেকনিং: মেময়ার্স অব দ্য বাংলাদেশ ওয়ার’ সূত্রে উল্লেখ করেন যে, একাত্তরের যুদ্ধকালে সকল পক্ষে নিহতের সংখ্যা ৫০,০০০ থেকে ১ লাখের মধ্যে হবে। আয়ান বলেন, শর্মিলার বই অনেক প্রতিবেদনের সত্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছে। যেমন একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আট হাজার হিন্দু হত্যার কথা বলা হলেও সেখানে সম্ভবত শুধুই ১৬ জনের মৃত্যু ঘটে। গত ২১শে মে গার্ডিয়ানে প্রকাশিত নিবন্ধের শুরুতেই আয়ান উল্লেখ করেন, ‘অজ্ঞতা এমন একটি বিষয় যার সঙ্গে সহজেই বসবাস করা সম্ভব। আর সম্ভবত সে কারণেই এটা একটা মামুলি ব্যাপার।’:((:((
৩০ বছরের বেশি সময়ের আগে আয়ান তার বাংলাদেশ সফরের স্মৃতিচারণ করেন। খুলনায় তিনি তার এক জন্মদিনে একটি চাইনিজ রেস্তরাঁয় খাওয়ার তথ্যও দেন। ‘আমার সঙ্গে একজন আলোকচিত্রী ছিলেন। সে সময় অনেকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। কিন্তু স্মরণ করতে পারি না যে, কেউ মাত্র আট বছর আগের গণহত্যা সম্পর্কে আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছিল।’ এরপর আয়ান বলেন, ‘অন্য অনেক বাঙালির মতো শর্মিলাও কলকাতায় বেড়ে ওঠেন একথা শুনে যে, একাত্তরের যুদ্ধে বাংলাদেশে ত্রিশ লাখ লোক প্রাণ হারিয়েছিল।
আয়ান এরপর বলেন, একাত্তরের ১৮ই জুন লন্ডনের সানডে টাইমস পত্রিকায় অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাসের একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন ছাপা হয়। তাতে বিশ্ব পাকিস্তানি নৃশংসতার কথা জানতে পারে। ম্যাসকারেনহাসকে তার করাচির বাসা থেকে পাক আর্মি ঢাকায় নিয়ে যায় তাদের ভাল কাজের ওপর প্রতিবেদন লেখাতে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি গণহত্যার বীভৎস রূপ প্রত্যক্ষ করেন। তিনি ঢাকা থেকে লন্ডনে এসে সানডে টাইমসের সম্পাদক হ্যারল্ড ইভান্সের সঙ্গে দেখা করেন। ইভান্সের অটোবায়োগ্রাফি অনুযায়ী ম্যাসকারেনহাস- আর্মি অফিসাররা তাকে বলেছিলেন যে, দরকার হলে দুই মিলিয়ন বা বিশ লাখ লোককে হত্যা করে হলেও তারা পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদ জনমের মতো স্তব্ধ করে দেবেন। তারপর তারা উপনিবেশ হিসেবে শাসন করবেন ত্রিশ বছর। আয়ান লিখেছেন, এই যে হুমকি সেটাই পরে ‘তিন মিলিয়নে’ উন্নীত হয়, যা আজও বাংলাদেশ ও ভারতে স্বীকৃত তথ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়ে চলেছে। আয়ান বলেন, বাংলাদেশের গণহত্যা সম্পর্কে এ পর্যন্ত অল্প কিছু ইতিহাসবিদ ও গবেষক সত্য ও সঠিক তথ্য দেখিয়েছেন।
উল্লেখ্য, আয়ান জ্যাকের এই লেখা ছাপা হওয়ার পর গার্ডিয়ানে অন্তত দু’টি চিঠি ছাপা হয়। বিবিসি বাংলা সার্ভিসের সাবেক উপপ্রধান সিরাজুর রহমান গত ২৪শে মে লিখেছেন, পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ৮ই জানুয়ারি ১৯৭২ আমিই প্রথম বাংলাদেশী যিনি স্বাধীনতার নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। হিথরো থেকে তাকে ক্লারিজে নিয়ে এসেছিলেন ভারতের তৎকালীন হাইকমিশনার অপা ভাই পান্থ। আমি হিথরোতে তার পরপরই ছুটে যাই। মুজিবকে যখন মি. পান্থ ‘ইয়োর এক্সিলেন্সি’ বলেছিলেন তখন মুজিব খুবই অবাক হন। তিনি প্রায় শকড হন। তখন আমি তাকে বলি যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এবং আপনার অনুপস্থিতিতে আপনাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি করা হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান থেকে তিনি যেন এ ধারণা পেয়ে এসেছিলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন মেনে নেয়া হয়েছে। ওইদিন আমি এবং অন্যরা তাকে পুরো ঘটনার বিবরণ দেই। আমি তাকে বলি যে, মোট কতজন নিহত হয়েছেন তার সঠিক সংখ্যা আমরা জানি না। তবে আমাদের অনুমান ‘তিন লাখ’ হতে পারে। পরে আমি মারাত্মক বিস্ময়ের সঙ্গে জানতে পারি যে, তিনি ডেভিড ফ্রস্টকে ‘থ্রি মিলিয়নস অব মাই পিপল’ অর্থাৎ ত্রিশ লাখ লোক মারা গেছে মর্মে উল্লেখ করেন। তিনি ভুল অনুবাদ নাকি ভুল বুঝেছিলেন আমি জানি না। তবে অনেক বাংলাদেশী এখন বিশ্বাস করেন যে, ত্রিশ লাখ সংখ্যাটি অবাস্তব এবং অবিশ্বাসযোগ্য।
লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন গার্ডিয়ানের কাছে সিরাজুর রহমানের বক্তব্যের বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা প্রেরণ করেছে। এতে সিরাজুর রহমানের হিথরোতে উপস্থিতি এবং মুজিবের সঙ্গে তার কথোপকথনের বিষয়টি খণ্ডন করা হয়। ২রা জুন প্রকাশিত এই ব্যাখ্যায় বলা হয়, বঙ্গবন্ধু তখন ড. কামাল হোসেনের কাছ থেকেই ব্রিফড হয়েছিলেন। লন্ডনের ভারতীয় হাইকমিশনের রেকর্ডপত্র থেকে দেখা যায়, ওই সময়ে লন্ডনের ভারতীয় হাইকমিশনার পান্থ কিংবা তাদের কোন কর্মকর্তা তাকে অভ্যর্থনা জানাতে হিথরোতে যায়নি। বাংলাদেশী কূটনীতিকরা তাকে অভ্যর্থনা জানান।
এখানে লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশ হাইকমিশনের এ ব্যাখ্যায় ‘ত্রিশ লাখ’ বিষয়ে শর্মিলা বোস ও আয়ান জ্যাকের মন্তব্যের বিষয়ে কোন মন্তব্য নেই। বরং তারা বলেছে, বঙ্গবন্ধুকে তখন বাংলাদেশের পক্ষে ব্রিফ করা হয় যে, যুদ্ধে ‘মিলিয়নস অব পিপল’ মারা গেছেন। আর ক্লারিজ হোটেলের সংবাদ সম্মেলনে মুজিব বলেন, ‘মিলিয়নস অব পিপল ডায়েড... থাউজেন্ডস অব ভিলেজেস হ্যাভ বিন বার্ন্ট।’ বঙ্গবন্ধু যে ‘ত্রিশ লাখ’ বলেননি তা প্রমাণ করতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এমনকি ওই সময়ের ভিডিও ইউটিউবে পাওয়া যাওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করে।
বাংলাদেশ হাইকমিশন কার্যত প্রমাণ করেছে যে, ত্রিশ লাখের সংখ্যাটি বঙ্গবন্ধু মুজিব বলেননি। হাইকমিশনের পক্ষে রাশেদ চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশে আসার আগেই তিনি অবহিত হন যে, একাত্তরের যুদ্ধে ‘মিলিয়নস’ মারা গেছেন। ভিডিও সেটাই প্রমাণ করে।’’ ডেভিড ফ্রস্টের সাক্ষাৎকার বিষয়ে হাইকমিশন অবশ্য কোন মন্তব্য করেনি।
৪২টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত/ শিবির কারনামা-১✅

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:৪১



জামাত শিবির ২০০১ নির্বাচনের পরে নাজিরহাট বাজারে চল্লিশ জনের নামের তালিকা ঝুলিয়ে দিয়েছিল । যাদের হত‍্যা করবে তাদের নাম। বাবা কথাগুলো বলছিল মাকে, আমি ওখানেই ছিলাম। মা রান্না করছিলো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিঝুম মজুমদার: সত্যের পক্ষে এক নির্ভীক কণ্ঠ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪

নিঝুম মজুমদার: সত্যের পক্ষে এক নির্ভীক কণ্ঠ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন যত দ্রুত বদলাচ্ছে, তত দ্রুতই বদলে যাচ্ছে সত্যের রূপ—কেউ লুকিয়ে ফেলতে চায়, কেউ বিকৃত করে, কেউ আবার নিজের স্বার্থে তা ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার মাঈনউদ্দিন মইনুলকে ১৩ বছর পুর্তি উপলক্ষে অভিনন্দন।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৭



সামুর সুসময়ের আদর্শ ব্লগারদের মাঝে মাঈনউদ্দিন মইনুল হচ্ছেন একজন খুবই আধুনিক মনের ব্লগার; তিনি এখনো ব্লগে আছেন, পড়েন, কমেন্ট করেন, কম লেখেন। গত সপ্তাহে উনার ব্লগিং;এর ১৩ বছর পুর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিয়তির খেলায়: ইউনুস ও এনসিপিনামা

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৪



২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া আমেরিকান চলচ্চিত্র 'আনব্রোকেন' একটি সত্যি ঘটনার ওপর নির্মিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, আমেরিকান বোমারু বিমানের কিছু ক্রু একটি মিশন পরিচালনা করার সময় জাপানিজ যুদ্ধ বিমানের আঘাতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কা দেখে ভোট দেওয়া সমর্থন করা যায় কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০১



মার্কার লোকটি অযোগ্য হলে তিনি তাঁর এলাকার সঠিক প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন কি? ভোটার মার্কা না দেখে যোগ্য লোক দেখে ভোট দিলে সমস্যা কি? যোগ্য লোকেরা কি তাঁর দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×