somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাঁটাই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাংকিং খাতে

১২ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিভিন্ন ব্যাংক থেকে গত ছয় মাসে চাকরিচ্যুত হয়েছেন পাঁচ হাজারের মতো কর্মী। ব্যয় সংকোচনের অংশ হিসেবে এ কার্যক্রম এখনো অব্যাহত। এতে ছাঁটাই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাংককর্মীদের মধ্যে।

ঋণ নীতিমালায় অবাধ ছাড়ের পরও মুনাফা করতে ব্যর্থ হয়েছে কয়েকটি ব্যাংক। তবে মুনাফায় ফেরার চাপ রয়েছে এসব ব্যাংকের ওপর। আর মুনাফায় থাকা ব্যাংকগুলো চাইছে প্রবৃদ্ধিটা বাড়িয়ে নিতে। এসব কারণে ইউসিবিএল, ব্র্যাক, দ্য সিটি, ন্যাশনালসহ কয়েকটি ব্যাংক এরই মধ্যে বেশকিছু কর্মকর্তা ছাঁটাই করেছে। ছাঁটাই হয়েছেন বিদেশী স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) কর্মকর্তাও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, মন্দ ঋণ, বাড়তি প্রভিশনিং, শেয়ারবাজারে মন্দাভাব ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি অনুকূল না থাকায় ব্যাংকের মুনাফা কমে গেছে। কর্মীপ্রতি আয়ও কমে গেছে এতে। নতুন ব্যাংক আসায় প্রতিযোগিতাও আগের চেয়ে বেড়েছে। এতে কমে আসছে মুনাফা। এটা ঠেকাতেই কর্মী ছাঁটাইয়ের কৌশল বেছে নিয়েছে ব্যাংকগুলো, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রয়োজনে কর্মীদের প্রশিক্ষিত করে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও বিষয়টিতে নজর দেয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যাংকিং খাতে কর্মিসংখ্যা বাড়লেও কমে গেছে কর্মীপ্রতি আয়। ২০১০ সালে ৬৮ হাজার ৭২০ জন কর্মীর বিপরীতে বেসরকারি ব্যাংকের নেট মুনাফা ছিল ৬ হাজার ৩২ কোটি টাকা। ২০১১ সালে কর্মিসংখ্যা বেড়ে হয় ৭৫ হাজার ৬৪৯। এর বিপরীতে মুনাফা দাঁড়ায় ৬ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। ২০১২ সালে এ সংখ্যা আরো বেড়ে হয় ৮১ হাজার ৯৪৪। অথচ মুনাফা কমে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। এখনো সে ধারায়ই রয়েছে খাতটি। ব্যয় কমাতে তাই কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটছে ব্যাংকগুলো।

বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে সম্প্রতি সরে যেতে হয় শীর্ষস্থানীয় তিন কর্মকর্তাকে। এর মধ্যে দুজন অন্য দুটি ব্যাংকে যোগ দিলেও একজন এখনো কোনো ব্যাংকেই যোগদান করেননি। শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ব্যাংকটির মধ্যম সারির আরো ৫০ জনের মতো কর্মকর্তাকেও পরিস্থিতির কারণে চাকরি ছাড়তে হয়েছে।
একইভাবে ইউসিবিএলের প্রধান কার্যালয় থেকে শাখাপর্যায়ের প্রায় ২০০ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। ব্যাংকটির মানবসম্পদ বিভাগের তৈরি প্রধান মূল্যায়ন সূচকে (কেপিআই) যাদের স্কোর এভারেজ ও এর নিচে, তাদের এ তালিকায় রাখা হয়েছে। বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো কর্মকর্তাদের দেয়া হয় ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’। এসব কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যরা ব্যাংকে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন বলে জানিয়ে দেয়া হয়।

ইউসিবিএলের এমডি মোহাম্মদ আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, ব্যাংকে প্রতিনিয়ত নতুন জনবল নিয়োগ হচ্ছে। পাশাপাশি কর্মকর্তাদের মূল্যায়নও চলছে। মূল্যায়নে যারা এভারেজ ও এর নিচে রয়েছেন, তাদের বাদ দেয়া হচ্ছে। ব্যাংকের সব কর্মকর্তার ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য।

একইভাবে ন্যাশনাল, দ্য সিটি, ব্র্যাকসহ কয়েকটি ব্যাংকেও কর্মী ছাঁটাই চলছে বলে জানা গেছে। ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, একটা সময় পরিচালকদের ইচ্ছামতো মাত্রাতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দেয়া হয়। এখন মুনাফায় চিড় ধরায় কর্মী ছাঁটাইয়ের দিকে যেতে হচ্ছে। এছাড়া আগে নিয়োগপ্রাপ্ত অনেকেই এখন আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারছেন না। মুনাফা কমে যাওয়ায় এখন তাদের বাদ দেয়ার পথে হাঁটতে হচ্ছে।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি ছাঁটাই আতঙ্কে ভুগছেন বিদেশী ব্যাংকের কর্মীরাও। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক সম্প্রতি ঝুঁকি পরিচালন বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাসহ অন্য বিভাগের আরো একজনকে ছেড়ে দিয়েছে। ব্যাংক ছেড়ে যেতে বলা হয় আরো কয়েকজন কর্মকর্তাকে। নতুন পদ্ধতিতে ব্যাংক পরিচালনার কারণেই অনেককে চাকরি ছাড়তে হয়েছে বলে জানান স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা।

ব্যাংকটির করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান বিটপী দাস চৌধুরী এক ই-মেইলবার্তায় জানান, গত ১ এপ্রিল থেকে বিশ্বব্যাপী ব্যাংকটির পরিচালনায় পরিবর্তন এসেছে। আগে হোলসেল ও কনজিউমার ইউনিট থাকলেও এখন থেকে শুধু বিজনেস ইউনিটের মাধ্যমে ব্যাংক পরিচালিত হবে। তবে এজন্য ব্যাংকের জনবলে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।

বাংলাদেশে জনবল কমিয়ে দিয়েছে হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনও (এইচএসবিসি)। নতুন ধারায় ব্যবসা শুরুর কারণেই এমনটি করতে হয়েছে ব্যাংকটিকে। আগে সব ধরনের গ্রাহককে সেবা দিলেও এখন তা নির্দিষ্ট করে ফেলেছে এইচএসবিসি। গুটিয়ে ফেলা হচ্ছে রিটেইল ব্যাংকিং সেবা। এ কারণে সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় ২৫ জন কর্মকর্তা ব্যাংক ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

সুত্রঃ সাকিব তনু | ২০১৪-০৬-১২ ইং,দৈনিক বণিক বার্তা
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×