আজ ১৪ জুন মাগুরছড়া দিবস। ১৯৯৭ সালের এই দিনে গ্যাস উত্তোলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টালের অদক্ষতা ও অবহেলার কারণে দেশের মৌলভীবাজার জেলার মাগুরছড়া গ্যাসক্ষেত্রের ১নং অনুসন্ধান কূপ খননকালে ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ।
পুড়ে যায় শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের বাড়িঘর, বনবাদাড় আর চা বাগান। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা, রেলপথসহ মাগুরছড়ার যাবতীয় অবকাঠামো।হুমকিতে পড়ে এলাকার প্রতিবেশ পরিবেশ। দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময়ে বিস্ফোরিত আগুনের তেজস্ক্রিয়তায় গলে যায় রেলপথ, পুড়ে ছাই হয়ে যায় কোটি কোটি টাকার বনজসম্পদ। ৮৭ দশমিক ৫০ একর জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি হাজার হাজার বন্যপ্রাণী ও পাখী মারা গিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান।
বিস্ফোরণের পর অনেক চেষ্টা করেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে এ গ্যাস কূপটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তার আগেই মাটির নিচে থাকা উত্তোলনযোগ্য প্রায় ২৪৫ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পুড়ে নষ্ট হয়। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে উদ্গীরিত গ্যাসের উৎসমুখ অবশেষে ১৯৯৮ সালের ৯ জানুয়ারি সিল করা হয়েছিল।
সেই থেকে দিনটি মাগুরছড়া দিবস হিসেবেই পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর এ দিনটিতে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে মাগুরছড়ার ক্ষতির পরিমাণ তুলে ধরা হচ্ছে।
জানা যায়, ভয়াবহ মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের পর পরই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বিদ্যুৎ , জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব মাহফুজুল ইসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এক মাসের মধ্যে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে ১৯৯৭ সালের ৩০ জুলাই মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব ড. তৌফিক ই এলাহির কাছে ২টি ভলিয়মে ৫০০ পৃষ্ঠার তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হয়। পরবর্তীকালে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিস্ফোরণের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, ক্ষতিপূরণ পাওয়া ও বিতরণের বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়।
এই দুই কমিটির তদন্তে অক্সিডেন্টালের ১৫ থেকে ১৬টি ত্রুটি ধরা পড়ে। অক্সিডেন্টালের ব্যথর্তার কারণেই এ দূর্ঘটনা ঘটেছে বলে একমত হন তদন্তের দায়িত্বে থাকা দুই কমিটিই।
বাংলাদেশী টাকায় মাগুরছড়ার মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বলে তদন্ত রিপোর্ট বিশ্লেষনে জানা গেছে।
১৯৯৯ সালে ইউনোক্যাল নামে আরেকটি মার্কিন কোম্পানির সঙ্গে তাদের ব্যবসা কার্যক্রম বিনিময় করে অক্সিডেন্টাল চলে যায়। মাগুরছড়ার ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কোনো ফয়সালা না করেই পরবর্তীকালে ইউনোক্যালের ব্যবসা গ্রহণ করেছে আরেকটি মার্কিন কোম্পানি শেভরন। এখন এ কোম্পানির কাছ থেকেই পাওনা আদায় করতে হবে।
বীমা কোম্পানির কাছ থেকে অক্সিডেন্টাল তাদের ক্ষতির পুরো টাকা আদায় করে নিলেও আমাদের গ্যাস সম্পদ, বন ও পরিবেশের ক্ষতি বাবদ ১৪ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশকে দেয়ার বিষয়ে টালবাহানা করে আসছে। তাদের সঙ্গে সম্পাদিত মুল চুক্তি পিএসসি-৯৪ অনুযায়ী ক্ষতিপুরণের টাকা অক্সিডেন্টাল, ইউনোকল ও শেভরন পরিশোধে বাধ্য।
প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ আদায় করে ওই অর্থ দিয়ে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য দেশজ কোম্পানিগুলোকে শক্তিশালী ও স্বয়ং সম্পূর্ণ করা সময়ের দাবী।