somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাটকঃ শোধবোধ (অখণ্ড)

০৩ রা এপ্রিল, ২০১১ রাত ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম দৃশ্য (মেস)
(সকাল সাতটা খোরশেদের ঘর। খোরশেদ বিছানা ছেড়ে নেমে আড়মোড়া ভাঙ্গছে। নেপথ্যে মনিরের উত্তেজিত কণ্ঠ শুনা যাবে।)

মনির : রাবিশ! এই মেসের একটাও কাজের না। সবক'টা অকর্মার ঢেঁকি। সময় জ্ঞান কিছুই এদের মাঝে নেই (খোরশেদের ঘরে প্রবেশ। তার পরনে লুঙ্গি, গায়ে গামছা) মেসের দুই দুইটা টয়লেট প্রতিদিন সকালে থাকে এনগেজড্। তা-ও আবার পাঁচ দশ মিনিট নয়- আধঘণ্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট। আরে বাবা টয়লেটে এত কাজ কি? টয়লেট তো আর অফিস ঘর না। সব শালা কোষ্ঠ কাঠিন্য রোগী এসে জুটেছে এই মেসে। (খোরশেদের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে) তোমার ঘুম ভাঙ্গল? অফিসে যাবে না-কি?
খোরশেদ : (মাথা চুলকে) জ্বি যাব।
মনির : গিয়ে কি করবে? মাছি মারবে?
খোরশেদ : (অপ্রতিভ) জ্বী?
মনির : বি.এ পাস করে শহরে এসেছিলে ব্যবসা করতে, বাপের পঞ্চাশ হাজার টাকা খুঁইয়ে এখন চাকরি করছ অখ্যাত একটা মাসিক পত্রিকার সহকারী সম্পাদকের যেটি গত তিন মাস থেকে বাজারেই আসছে না। চার মাস হল কোন বেতন পাচ্ছ না। তার পরও প্রতিদিন গিয়ে অফিস করছ। সেখানে মাছি মারা ছাড়া তোমার আর কোন কাজ আছে?
খোরশেদ : সামনের মাস থেকেই পত্রিকা আবার চালু হবে মনির ভাই।
মনির : এই একই কথা বলেতো গত চার মাসে আমার কাছ থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা ধার নিয়েছ। এগুলো কখন শোধ করবে?
খোরশেদ : সামনের মাসে বেতন পেলেই সব টাকা শোধ করে দেব।
মনির : শোন, তোমাকে একটা পরামর্শ দিই। এসব পত্রিকার চাকরি ছেড়ে দিয়ে গ্রামের ছেলে গ্রামে ফিরে যাও; গিয়ে হাল চাষ কর। তুমি বি.এ পাস করা একটা অপদার্থ ছেলে, হাল চাষেই তোমাকে ভাল মানাবে। আর তোমার এই মোবাইল ফোনটা আমাকে দিয়ে দাও। আমি আমার সাড়ে চার হাজার টাকার দাবি ছেড়ে দেব। তোমার মত লোকের কাছে মোবাইল থাকা বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। (খোরশেদ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে। তপন আসবে। তার পরনে থাকবে লুঙ্গি, গামছা দিয়ে মাথা মুছছে।)
তপন : মনির ভাই, আপনি প্রতিদিন সকালে একই ঝামেলা করেন, তাও একটা বিশ্রী ব্যাপার নিয়ে।
মনির : (রাগত স্বরে) ঝামেলা করি মানে? প্রত্যেক দিন সকালে তোমরা টয়লেট দখল করে বসে থাক। তোমাদের জন্য আমার অফিসে যেতে লেট হয়।
তপন : আপনার অফিস সাড়ে ন'টায়। এখন সাতটা বাজে। লেট হবে কেন?
মনির : তুমি একটা বেয়াদব ছেলে। বড়দের সাথে মুখে মুখে তর্ক করা তোমার একটা বদ অভ্যাস। (মনির চলে যাবে)
তপন : খোরশেদ তোমার মোবাইলটা দাওতো। একটা জরুরী কল আছে। আমার মোবাইলে টাকা নেই।
খোরশেদ : (লজ্জিত কণ্ঠে) মোবাইলে শুধু মিসকল দেয়ার মত টাকা আছে।
তপন : টাকা নাই! তাহলে তিথির সাথে এত কথা কিভাবে বল? (খোরশেদ লজ্জায় মাথা নিচু থাকবে) হুমম! বুঝেছি। তুমি মিসকল দাও- আর সে-ই কলব্যাক করে। আচ্ছা খোরশেদ প্রেম করতে পকেটে পয়সা লাগে তুমি জান না? এই যে তিথির সাথে তুমি প্রেম করছ, কখনো তাকে কিছু দিয়েছ? সে তো তোমাকে অনেক কিছুই গিফট করেছে। এই মোবাইলটাও তার দেয়া। কিন্তু তুমি? তোমার পকেটে একট পয়সাও থাকেনা। প্রেমিকাকে মিসকল দাও- সে কলব্যাক করে, দুজনে রেষ্টুরেন্টে বসে চিকেন স্যান্ডউইচ খাও- সে বিল দেয়...।
খোরশেদ : আমাদের চিকেন স্যান্ডউইচ খেতে কখন দেখলে?
তপন : গত পরশু দেখলাম, শান্তা ফাস্ট ফুডে, মজাসে খাচ্ছ। (আলনা থেকে একটা শার্ট নিয়ে) তোমার টিউশনির কি খবর?
খোরশেদ : খারাপ, খুব খারাপ।
তপন : (ভুরু কুঁচকে) মাসে বারদিন, দেড় হাজার টাকা। খারাপ কিসের?
খোরশেদ : সমস্যাটা হল ছাত্রী। সব সাবজেক্টে ভাল কিন্তু অংকে গাধা। এ রকম গাধা আমি আমার জীবনে দেখিনি। একটা অংক বুঝতে তার তিনদিন লাগে, চারদিনের দিন সেটিও গিলে বসে থাকে। ছাত্রীর মা'র ধারণা ফার্স্ট টার্মে মেয়ে অংকে ভাল করবে। আমি ভয়ে ভয়ে আছি, যদি ফেল করে তাহলে মনে হয় আমার টিউশনিটাই যাবে।
তপন : (মাথা চুলকে) খোরশেদ, কিছু টাকার ব্যবস্থা কর। খুব সমস্যায় আছি।
খোরশেদ : (লজ্জিত কন্ঠে) আমি বুঝতে পারছি তপন। তোমাদের কাছ থেকে অনেক টাকাই ধার নিয়েছি কিন্তু শোধ করতে পারছি না। আজ মাসের পাঁচ তারিখ, টিউশনির টাকাটা হয়তো পেতে পারি, চেষ্টা করব সেখান থেকে তোমাকে কিছু দিতে।

২য় দৃশ্য
(খোরশেদের মেস থেকে বের হবে। হাঁটবে। পেছন থেকে বদরুল ডাকবে।)

বদরুল : (উঁচু স্বরে) খোরশেদ সাহেব! এই যে খোরশেদ সাহেব! (খোরশেদ ঘুরে দাঁড়াবে। বদরুল এগিয়ে আসবে)
খোরশেদ : আস্সালামু আলাইকুম বদরুল ভাই। ভাল আছেন?
বদরুল : আমাদের আর ভাল থাকা! তা যাচ্ছেন কোথায়?
খোরশেদ : এই একটু অফিসে যাচ্ছি।
বদরুল : অফিসে! তিন মাস থেকে যে পত্রিকার দেখা নাই সেটার আবার অফিস কি?
খোরশেদ : না... মানে... এই কিছু টুকটাক কাজ আছে, সেগুলো করতে হয়। তাছাড়া সামনের মাস থেকেই আমাদের পত্রিকা আবার নিয়মিত বের হবে।
বদরুল : হলেই ভাল। আপনার চার মাসের ভাড়া আটকে আছে। যদি দেন তাহলে গরীব বেঁচে যাই। বুঝতেই তো পারছেন, অভাবের সংসার।
খোরশেদ : (লজ্জিত কণ্ঠে) আমাকে আর লজ্জা দেবেন না। সামনের মাসেই আপনার সব টাকা পাই পাই করে শোধ করে দেব ইনশাআল্লাহ।

৩য় দৃশ্য (বশির মিয়ার রেষ্টুরেন্ট)
(বশির মিয়া ক্যাশ কাউন্টারে বসে চা খাচ্ছে। খোরশেদ রেষ্টুরেন্টের পাশ দিয়ে দ্রুত হেঁটে যাবে।)

বশির : (উঁচু স্বরে) কি খোরশেদ ভাই, আজকাল মনে হয় আমাদেরে চোখে টোখে পড়ে না?
খোরশেদ : (দাঁড়িয়ে, লজ্জিতের হাসি হেসে) কি যে বল বশির মিয়া! অফিসে দেরি হয়ে যাচ্ছে, তাই তাড়াহুড়া করে যেতে হচ্ছে।
বশির : তা আমার টাকাগুলা কখন দিতেছেন?
খোরশেদ : দিয়ে দেব সামনের মাসেই।
বশির : (কঠিন স্বরে) এই একই কথা আপনে আগেও কয়েকবার বলেছেন, কিন্তু দেন নাই। আপনারে ভাল মানুষ মনে করতাম, কিন্তু এখন দেখতেছি আপনে বিরাট এক ঠক। আপনারে এখন থাইকা বাকীতে খাওয়ানো বন্ধ। বাকীতে খাইতে আইলে ঘাড় ধইরা বাইর কইরা দেব। আর একটা কথা, দশ দিনের মধ্যেই আমার সব টাকা শোধ দেবেন; নইলে কিন্তু আপনার খবর আছে। (খোরশেদ মাথা নিচু করে চলে যাচ্ছে, অনুচ্চ কণ্ঠে) কুত্তার বাচ্চা, ঠক কোথাকার।

৪র্থ দৃশ্য (খোরশেদের অফিস)
(খোরশেদ অফিসের বারান্দায় হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অফিসের দরজার একটা তালা ঝুলছে। দরজায় আঠা দিয়ে একটা কাগজ সাঁটা। কাগজে লেখা 'বৈদ্যুতিক গোলযোগ ও প্রিন্টিং মেশিনের ত্রুটির কারণে পত্রিকা প্রকাশনার সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। সমস্যা উত্তরণের পর সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজে যোগ দেয়ার কথা জানানো হবে।'

৫ম দৃশ্য (টিসাদের বাসা)
(খোরশেদ ডোরবেল টিপে দাঁড়িয়ে আছে। টিসা দরজা খুলল)

টিসা : স্যার আপনি? এখন কেন এসেছেন?
খোরশেদ : এইতো, তোমার আম্মুর সাথে একটু দেখা করতে এলাম। (ঘরে ঢুকে সোফায় বসতে বসতে) তুমি স্কুলে যাওনি?
টিসা : না যাইনি। সকালে বমি হয়েছে তো, তাই আম্মু যেতে দেয়নি?
খোরশেদ : হঠাৎ বমি হবে কেন? পেট খারাপ করে নি তো?
টিসা : (খোরশেদের খুব কাছা কাছি এসে ষড়যন্ত্রীদের মত নিচু স্বরে) না, পেট ঠিকই আছে। সত্যি সত্যিতো আর বমি হয় নি, মিথ্যে মিথ্যি হয়েছে।
খোরশেদ : ( অবাক) মিথ্যে মিথ্যি বমি আবার কি রকম?
টিসা : (ডান হাতের তর্জনি মুখ গহ্বরে ঢুকিয়ে ) এই ভাবে।
খোরশেদ : (দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে) কেন এটা করলে?
টিসা : (দুই হাত দুুই দিকে প্রসারিত করে) গত কাল ভ্যাম্পায়ার মিস এ..ত গুলো হোম ওয়ার্ক দিয়ে বলেছেন যদি না করে আসি তাহলে পুরো পঁয়তাল্লিশ মিনিট ক্লাসে নীল ডাউন করে রাখবেন।
খোরশেদ : ভ্যাম্পায়ার মিস কে ?
টিসা : আমাদের ম্যাথের মিস। ইয়া বড় বড় চোখ, চোখা চোখা দাঁত। দেখলেই মনে হয় ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘাড় ভেঙ্গে সব রক্ত খেয়ে ফেলবে। (খোরশেদের কাছা কাছি এসে নিচু স্বরে) স্যার, আপনি কিন্তু অম্মুকে এসব বলবেন না, নইলে আমাকে মারবে।
খোরশেদ : ঠিক আছে বলব না। এখন যাও, তোমার আম্মুকে একটু ডেকে নিয়ে এস।
(টিসা ভেতরের ঘরে চলে যাবে। খোরশেদ একটা ম্যাগাজিন নিয়ে চোখ বুলাবে। টিসার মা আসবে, সঙ্গে টিসা। খোরশেদ উঠে দাঁড়াবে।)
খোরশেদ : স্লামালেকুম ম্যাডাম ।
টিসার মা : অআলাইকুম। বসেন। (খোরশেদ বসবে। টিসার মা খোরশেদের মুখোমুখি অন্য একটা সোফায় বসবে।)
টিসার মা : (টিসাকে ) টিসা যাও, ভেতরে যাও। (টিসা চলে যাবে। খোরশেদকে) আজকে আপনার অফ ডে না ?
খোরশেদ : জ্বি। (লজ্জিত কণ্ঠে) আসলে খুব অভাবের মধ্যে আছি। কিছু টাকার দরকার।
টিসার মা : আপনার ছাত্রী ফার্স্ট টার্মে গণিতে কত পেয়েছে জানেন?
খোরশেদ : রেজাল্ট হয়েছে না কি?
টিসার মা : না হয়নি। টিসার স্কুলের গণিতের মিস আমার পরিচিত। তার কাছ থেকেই আজ ফোন করে জেনেছি।
খোরশেদ : (ভয়ে ভয়ে) কত পেয়েছে?
টিসার মা : মাত্র আটারো। (একটু থেমে তীক্ষè দৃষ্টিতে তাকিয়ে) মার্কস এত কম পেল কেন খোরশেদ সাহেব?
খোরশেদ : (আমতা আমতা করে) আসলে... ম্যাডাম টিসা অংকে বেশ দুর্বল....
টিসার মা : অংকে দুর্বল বলেইতো আপনাকে রেখেছিলাম। আপনি কি করলেন? (খোরশেদ মাথা নিচু করে বসে থাকবে। টিসার মা উঠে দাঁড়িয়ে খোরশেদের হাতে পাঁচশ টাকার চারটা নোট দেবে। খোরশেদ উঠে দাঁড়াবে।)
টিসার মা : এখানে দুহাজার টাকা আছে। দেড় হাজার আপনার বেতনের, আর বাকী পাঁচশ আপনি অভাবে আছেন বলেছেন সে জন্য দিলাম। কাল থেকে নতুন টিচার আসবেন টিসাকে পড়াতে।
খোরশেদ : আমি আর আসব না?
টিসার মা : আমি কোন প্রয়োজন দেখছি না। (টিসার মা চলে যাবে। খোরশেদ হতবিহ্বলের মত দাঁড়িয়ে থাকে।)

৬ষ্ঠ দৃশ্য
(খোরশেদ উদভ্রান্তের মত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে)

৭ম দৃশ্য (পার্ক)
(খোরশেদ একটা বেঞ্চে বসে আছে। তিথিকে মিস কল দিচ্ছে। তিথি কলব্যাক করবে)

খোরশেদ : হ্যালো, তিথি?
(অন্য প্রান্তে তিথিকে দেখা যাবে)
তিথি : কি ব্যাপার? তোমার গলা এরকম শুনাচ্ছে কেন?
খোরশেদ : তুমি একটু পার্কে আসবে? তোমার সাথে কথা আছে।
তিথি : তোমার সাথেও আমার কিছু কথা আছে।
খোরশেদ : তোমার আবার কি কথা?
তিথি : এলেই শুনবে, রাখি।
(তিথি লাইন কেটে দেবে। খোরশেদ চিন্তিত মুখে বসে থাকবে। কিছুক্ষণ পর রিক্সা করে আসবে তিথি। রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে খোরশেদের দিকে এগিয়ে আসবে)
তিথি : কি ব্যাপার? তোমাকে এরকম বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে কেন? মনে হচ্ছে কারও পকেট মারতে গিয়ে পাবলিকের হাতে ধোলাই খেয়েছো। (খোরশেদ হাসবে, তিথি তার পাশে বসবে) এবার বল তোমার কি কথা।
খোরশেদ : তুমি না বললে তোমারও কি কথা আছে? তোমারটাই আগে শুনি।
তিথি : (একটু ভেবে) বলব?
খোরশেদ : হ্যাঁ বল।
তিথি : চাচা-চাচি আমেরিকা থেকে সপরিবারে দেশে বেড়াতে এসেছেন। (তিথি থামল। খোরশেদ অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল) তাদের ইচ্ছে আমাকে তাদের একমাত্র ছেলের বউ করে নেবেন।
খোরশেদ : তুমি আমার সাথে ঠাট্টা করছ?
তিথি : কী আশ্চর্য! ঠাট্টা করব কেন? আজ সকালেই চাচা-চাচি আব্বু আম্মুকে প্রস্তাবটা দিয়েছেন।
খোরশেদ : তুমি রাজী?
তিথি : রাজী হব না কেন? এত ভাল একটা প্রস্তাব। আব্বু আম্মু তো দারুন খুশি।
খোরশেদ : (হতবিহ্বল, বিস্ময়ে বিমূঢ়) তোমার আমার এতদিনে সম্পর্ক.....
তিথি : আরে, তুমি আমাকে বিয়ে করার চিন্তা করছ না কি? (খোরশেদ হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে) দেখ খোরশেদ, তুমি তোমার অবস্থানটা একবার চিন্তা কর। তুমি একটা মাসিক পত্রিকায় চাকরি কর। যে সামান্য ক’টা বেতন পেতে তাও গত তিন চার মাস থেকে পাচ্ছ না। তোমার পকেট চলে টিউশনির সামান্য কিছু টাকা দিয়ে। তোমার মেস ভাড়া কয়েক মাসের বাকী। খাচ্ছ ধারে বাকীতে। আমাকে বিয়ে করে রাখবে কোথায়? খাওয়াবে কি?
খোরশেদ : এসব কথাতো তুমি আগেও জানতে, তারপরও আমার সাথে সম্পর্ক রাখলে কেন?
তিথি : আমাদের সম্পর্কটাকে তুমি বন্ধুত্ব হিসেবে ধরে নাও খোরশেদ। মনে কর তুমি আর আমি দুই বন্ধু। (খোরশেদ নিশ্চল হয়ে বসে আছে। তিথি ঘড়ি দেখল।) আমাকে এখন উঠতে হবে। বাসায় মেহমান আসবেন। তোমার যেন কী কথা ছিল?
খোরশেদ : (নিলিপ্ত কণ্ঠে) কর্তৃপক্ষ পত্রিকা অফিস বন্ধ করে দিয়েছে। টিউশনিটাও নেই।
তিথি : তা-ই না কি? তাহলে তো তুমি বিরাট ঝামেলায় পড়েছ। টাকার দরকার?
খোরশেদ : না।
(তিথি উঠে দাঁড়াবে। তার দেখাদেখি খোরশেদও উঠে দাঁড়াবে। পার্কের পাশের রাস্তা দিয়ে একটা খালি রিক্সা যাচ্ছে)
তিথি : এই রিক্সা! যাবেন? (রিক্সওয়ালা দাঁড়াবে। খোরশেদকে।) আসি। যদি টাকার দরকার হয় আমাকে বল।
(তিথি রিক্সার উঠে বসবে। খোরশেদ রিক্সার পাশে এসে দাঁড়াবে।
খোরশেদ : বিয়ে কবে?
তিথি : সেটাতো বলতে পারছি না। আজকেই মাত্র কথা হল। এমাসেই হয়তো হয়ে যাবে। (রিক্সাওয়ালাকে) এই যে ভাই, চলেন।
(রিক্সা চলে যাচ্ছে। খোরশেদ সে দিকে তাকিয়ে থাকবে।)

৮ম দৃশ্য
(খোরশেদ আগের সেই বেঞ্চে বসে দুই হাতে মুখ ঢেকে কিছুক্ষণ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদবে, তারপর বেঞ্চে শুয়ে পড়বে। একটা মোটর সাইকেল রাস্তা দিয়ে চলে যেতে দেখবে। কিছু দূর গিয়ে সেটা আবার ফিরে আসবে। দুই আরোহী মোটর সাইকেল থেকে নেমে খোরশেদের দিকে এগিয়ে আসবে। একজন বেঁটে, অন্যজন লম্বা)

বেঁটে ; ভাই সাহেব ভাল আছেন?
খোরশেদ : (উঠে বসে) আপনাদেরতো ঠিক চিনলাম না?
বেঁটে : (পকেট থেকে একটা চাকু বের করে) চেনার কোন দরকার নেই। আপনার কাছে টাকা আছে? টাকা?
খোরশেদ ; (চাকুটার দিকে তাকিয়ে তোতলাতে তোতলাতে) টা-টা-টাকা, ন্-না নেই।
বেঁটে : নেই? সত্যি বলছেন?
খোরশেদ : স-স সত্যি বলছি।
বেঁটে : (লম্বাকে) গুড্ডু হাত লাগা।
(লম্বা খোরশেদের শরীর তল্লাশী করল। দুই হাজার টাকা ও মোবাইল বের করে আনল)
লম্বা : মোবাইল আর দুই হাজার টাকা সবুজ ভাই। একটা কলমও আছে, নেব?
বেঁটে : কলমের দরকার নাই। শালা মিথ্যা কথা কেন বলল, সেজন্য একটা চড় লাগা।
লম্বা : দাঁড়ান। আগে শালার শার্টটা খুলে নিই। নীল শার্ট আমার গায়ে খুব ভাল ফিট করবে।
বেঁটে : তাহলে জুতোটাও নিয়ে নে। পুরনো হলেও বেশ টেকসই মনে হচ্ছে। আমার জুতো আবার দু'দিন পর পর ছিড়ে যায়।
লম্বা : (খোরশেদকে) জুতো আর শার্ট খুলে ফেল তো চাঁদু।
(খোরশেদ জুতো খুলে এক জায়গা রাখল। শার্ট খুলে লম্বার হাতে দিল)
লম্বা : (শার্ট বেঁটের হাতে দিয়ে) এটা ধরেন।
(লম্বা খোরশেদের গালে প্রচন্ড একটা চড় বসিয়ে দেয়। খোরশেদ ছিটকে পড়ে। লম্বা জুতো জোড়া তুলে নেয়। দুজনেই চলে যায়। খোরশেদ ঘাসের উপর পড়ে থাকে। সে বাম গালে হাত বুলাতে থাকে, চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।)

৯ম দৃশ্য (খোরশেদের মেস)
(সন্ধ্যা। খোরশেদ তার ঘরে ঢুকবে। মনির বিছানায় বসে পত্রিকা পড়ছে।)

মনির : (পত্রিকা থেকে চোখ সরিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে) কি ব্যাপার? তোমার একি অবস্থা? কি হয়েছে?
খোরশেদ : কিছু না মনির ভাই।
মনির : কিছু না মানে? পায়ে জুতো নেই, গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জি- আর বলছ কিছু না? (খোরশেদ চুপ) কথা বলছ না কেন? বিক্রি করে দিয়েছ না কি? (খোরশেদ চুপ) ও বুঝেছি। তা প্যান্টটা বাকী রেখেছ কেন? ওটাও বিক্রি করে দিতে।
খোরশেদ : (শীতল কণ্ঠে) আমি কিছুই বিক্রি করিনি।
মনির : (টিটকিরির সুরে) তাহলে কি হয়েছে? ছিনতাই?
খোরশেদ : হ্যাঁ।
মনির : কি? ছিনতাই হয়েছে?
(তপন আসবে)
তপন : (অবাক কণ্ঠে) কি ব্যাপার খোরশেদ? তোমার এ অবস্থা কেন? কি হয়েছে?
মনির : খোরশেদ আজ ছিনতাইকারীর হাতে পড়েছিল, ছিনতাইকারীরা দয়াপরবশত ওর প্যান্টটা রেখে বাকী সব কিছু নিয়ে গেছে।
তপন : (খোরশেদকে) সত্যি ছিনতাই হয়েছে?
খোরশেদ : (মাথা নেড়ে) হ্যাঁ। টিউশনির টাকা, মোবাইল, সব কিছু নিয়ে গেছে।
মনির : ছিনতাইকারীরা হয়তো বুঝতে পেরেছিল তুমি অপদার্থ, নইলে তোমাকেও নিয়ে যেত।
তপন : (মনিরকে) মনির ভাই আপনি এর সাথে এরকম ব্যবহার করছেন কেন?
মনির : কি রকম ব্যবহার করব? মিষ্টি মিষ্টি কথা বলব? আমার সাড়ে চার হাজার টাকা হজম করে বসে আছে- দেয়ার নাম গন্ধ নেই। আজ সকালেই বলেছি মোবাইলটা আমাকে দিয়ে দাও, আমি সাড়ে চার হাজার টাকার দাবী ছেড়ে দেব- দেয়নি। এখন কি হল? ছিনতাই হয়ে গেল। এর সাথে আমি কিভাবে ভাল ব্যবহার করব?
তপন : (খোরশেদকে) অফিসে বেতন কবে দেবে কিছু বলেছে?
খোরশেদ : অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। আজ গিয়ে দেখি সেখানে তালা ঝুলছে।
মনির : (বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে নেমে উত্তেজিত কণ্ঠে) কি বললে? অফিস বন্ধ হয়ে গেছে? তার মানে চাকরিটাও নেই? ভাল, খুব ভাল। এখন তাহলে কি করবে? একটা থালা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়। ভিক্ষে করলে ভাল রোজগার করতে পারবে।
(খোরশেদ হত বিহ্বল দৃষ্টিতে মনিরের দিকে তাকিয়ে থাকবে।)
তপন : খোরশেদ সারাদিন খেয়ছ কিছু? (
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ২:২০
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×