"ফেরা"
পাশের গ্রাম তখন দাউ দাউ করে জ্বলছিল। নোয়াব আলী দশ বছরের ঈদন ও আট বছরের লেদনকে জঙ্গলে কাঁটাল গাছটার বিরাট খোরলে লুকিয়ে রেখে ঘরে গিয়েছিল স্ত্রী ও সম্বল কিছু আনতে আজ এ গ্রামেও আগুন দিতে পারে। তা ছাড়া মুক্তি বাহিনীকে সে অন্ন যুগিয়েছে গত দু রাত।
ঈদন ও লেদন জড়াজড়ি করে ভয়ে কাঁপছিল। মধ্যিখানে গুলির শব্দ এক দুই। সন্ধ্যা গড়িয়ে গাল। কিন্তু মা-বাবাতো তাদের ফিরিয়ে নিতে এলো না। ক্ষিধেয় পেট চোঁ চোঁ করছে। শেষ পরযন্ত ঈদন খোরল থেকে মাথা বাড়িয়ে ভয়ে ভয়ে দেখলো। সব নিস্থব্দ। ছোট ভাইটিকে নিয়ে বের হল। বাড়ীর কাছে এলো। কিন্তু কোথাই তাদের ঘর? মা-বাবাই বা কোথাই ? কেবল এখনো কিছু কাঠকয়লা দ্গ দগ করে জ্বলতেছে। ঈদনের বুকটা ছ্যাঁৎ করে উটলো। লেদন নিরবাক। মধ্যিখানে একবার বলেছিল , “ক্ষিদে লাগছে ভাইয়া”এদিকে ওদিকে খুঁজে পাওয়া গেল না বা-জানকে, মা-কে। পুকুর থেকে পেট ভরে পানি খেল দু ভাই। তরপর ঘুমিয়া পরলআম গাছ তলাই। তারপর স্রোতের টানে শহর-বন্দর-গ্রাম। উচ্ছিষ্ট খাদ্য।
তারপর ১৬ই ডিসেম্বর, একাত্তর সাল। তারপর বাড়ি ফেরা। তারও পর পাহাড় থেকে লাকড়ি কাটা, বিক্রি করা, ঘর বাঁধা, বিয়ে করা। তারপর স্বাথের কারনে বিবাদ; লেদেনের লাঠির ঘায়ে ঈদনের মাথা ফাটা। তারপর গ্রেফতার, এবং তারপর এই হাজত।
হাজত ঘরের গভীর অন্ধকারে বসে কাঁঠাল গাছের খোরলের সেই স্মৃথি মনে উদয় হল লেদেনের। চোখ দিয়ে পানি গড়াল। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো, বিবাদ সে আর কখনো করবে না। ভাইয়ের সাথে তো নয়ই। সৌজন্যে------
হিরণ্ময় চক্রবতি ( অধ্যাপক সীতাকুন্ড ডিগ্রী কলেজ)