প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলাম আর নয় ভালবাসা-বাসী কিন্তু কলেজে প্রবেশ করিয়া আগুন দেওয়া তোপের ন্যায় আমার প্রতিজ্ঞা ধ্বংসই নয় বরং বিলুপ্ত হইয়া গেল। সিনিয়রদের মেশা-মিশি ঠেলা-ঠেলি দেখিয়া আমার সংস্কারের বাধ রাতের অন্ধকারে বানের পানির মত ভাসাইয়া নিল। যাহাতে কিছুই অবশিষ্ট থাকিল না।কিন্তু চার মাইল পথ সাইকেল হাকাইয়া ধুলা বালি ঘামে গোছল করিয়া নিজেকে স্মার্ট প্রমানে বার বার ব্যর্থ হইলাম। মনে মনে বলিতাম বাড়ির কাছে হইলে দেখাইয়া দিতাম। অবশেষ দেখায়তে পারিলাম।
আমাদের কলেজের সুন্দরীদের তালিকার এক জন আমাদের গ্রামের তবে অন্য পাড়ার। তাহাতে গর্ব কম কিসে। মনে মনে আল্লাহ কে ডাকিতাম মিলাইয়া দাও মিলাইয়া দাও। একমাত্র ও বাদে। একই গ্রামের তাই প্রেমের বাজারে সমস্যা হইতে পারে। কিন্তু না। একদিন কলেজে যাইতেছি পথে ও দাঁড়িয়ে আছে, পরিবহন সংকট। ওর পিতা আমাকে অনেকটা অনুযোগ করেই বলে তোমরা একই কলেজে একই সাথে পড় তো এক সাথে যাও না কেন। তাকে সাইকেলে চড়াইয়া কলেজে যাত্রা করিলাম। বলা বাহুল্য আমি এতে মোটেই খুশি হয় নাই। কারণ তার কৃপন পিতা পরিবহন খরচ বাচাতে আমার সাইকেলে তাহাকে চাপাইয়া দিয়াছে। ক্লাস শেষ হইলে কিছু বলার প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করিয়া সে আমার সাইকেলে বসে পড়ে। যা প্রত্যহ চলিতে লাগিল। কলেজে দেখিলাম আমার মুল্যায়ন হঠাৎ বাড়িয়া যাইতেছে। ভাবিলাম একে দিয়ে আমার ফুলসিরাত পার হওয়া সম্ভব। পরদিন হইতে কানের কাছে গুনগুন শুরু করিলাম
একটা প্রেম করা দরকার.............
আর কিছু ভাল লাগে না........
আর থাকতে পারছি না.........
আর কত দিন..........
তোরা তো তাকিয়ে দেখিস না.......
আমার একটা প্রেম করিয়ে দে.......ইত্যাদি এবং ইত্যাদি
ও প্রথম মুচকি হাসতো পরে মৃদু আপত্তি প্রেম খুব খারাপ কাজ তারপরে প্রেম জরুরী না তবে দরকার আছে তারপর আমি আর কাকে ঠিক করে দেব। কাকে বলবো। অবশেষ আবিষ্কার করলাম ও আমাকেই ভালবাসে ওর ইচ্ছাতেই এই সাইকেল যাত্রা। যা হোক আমাদের ভালবাসার তরী দিচক্র যান সাইকেলে ভর করিয়া প্রেম সাগরের গভীর থেকে গভীরতর স্থানে গমন করিল। আমরা এর বহিঃ বৈশিষ্ট হিসাবে ক্লাসে ফাঁকি দিয়া সিনেমা দেখা। নির্দিষ্ট নামকরা কুখ্যাত গাছ তলায় কাছাকাছি বসে গল্প করা।আর্থিক চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া। বাদাম নির্ভর খাদ্য ব্যবস্থা, আনমনা হওয়া, ঘনঘন সুরত দর্শন, সব সময় ফিট ফাট থাকার চেষ্টা আরো কত কি।
জ্ঞানীরা বলেন প্রেম নাকি স্বর্গীয়। তাই এর ঘ্রান ও অনেক বেশী। আল্লাহ তাহাকে ঢাকিবার কোন ব্যবস্থা স্বর্গ থেকে প্রেরণ করেন নাই ফলে আমাদের প্রেম রাতের হাস্নুহেনার সৌরভের ন্যায় তার খসবু ছড়াইতে ছড়াইতে তা কখন খশবু থেকে গন্ধ হয়ে দুর্গন্ধে পরিনত হইয়া তা সকলের গোচর হইলো তবে নাসিকাতে নয় কর্নে। আমাদের মেলামেশা প্রথমে সন্দেহ তার পর সিদ্ধান্তের সীমানা পেরিয়ে চোখাচোখি কানাকানি করিয়া ওর বাড়ি তো গেলই আমার বাড়িতেও বন্যার পানির মত প্রবেশ করিল। যাহা শুনিলাম তা স্বপ্নের মত লাগিল। আমরা নাকি বিবাহ করিয়াছি,কে বা কারা আমাদের কাজী অফিস গমন করিতে দেখিয়াছে তাহার চাক্ষুষ সাক্ষী ও হাজির করা যাবে।। সারা দিন ত্রাসের মধ্যে থাকিলাম কখন কি হয়। না কিছুই হইলো না। রাত্রে খাইতে বসিলাম, না তখনো কিছু হইলো না। পরম নিশ্চিন্তে ঘরে পড়তে বসেছি। হঠাৎ দেখিলাম আমার শ্রদ্ধেও বড় ভাই আমার ঘরের দরজা বন্ধ করছে। তারপর..................
তারপর একটানা সাতদিন জ্বর, সারা গায়ে ব্যথা আর নড়াচড়া করতে পারি না। সপ্তম দিবসে ভাবিলাম গোছল দিব কিন্তু সর্বদুসংবাদ বহনকারী আমার এক সাহাবী আসিয়া জানাইলো বাড়ির বাহিরে পেলে ওর বড় ভাই আমাকে পিটাইয়া তক্তা বানাইয়া সেই তক্তাই ফার্নিচার তৈয়ার করিয়া তার বোনের শ্বশুর বাড়ি গিফট পাঠাইবে। আরো জানাইলো তার বডি ৪২ ইঞ্চি মাসল১৬ ইঞ্চি। যা শুনিয়া আমার জ্বর আবার জাকাইয়া ফিরিয়া আসিল। অন্য বন্ধু দের মাধ্যমে নিশ্চিত হইলাম ওই পাড়াই আমাকে পেলে পা ভাঙিয়া কাটিয়া হাতে ধরাইয়া ভ্যান গাড়িতে চড়াইয়া পুর্ব পাড়া আমার বাড়িতে না পশ্চিম পাড়া দিয়া সদর হাসপাতালে পাঠাইয়া দিবে। ইহার দিন দুয়েকের মধ্যে জানিলাম ওর বিবাহ স্থির হইয়াছে আজ দিবসেই তা সম্পন্ন হইবে। আরো জানিলাম আমার সাহাবীদের জানানো হয়েছে আজ তারা ও পাড়াই গেলে কাউকে আস্ত ছাড়বে না। বিবাহ হইয়া গেল। সে চলিয়া গেল। তাদের বিবাহের চলন্ত গাড়ীর পিছনে উড়ন্ত ধুলায় মিশে থাকলো আমাদের ভালবাসা। পথের ভালবাসা।
সারা রাত্রি ঘুমাইতে পারলাম না বালিশে মুখ গুজে অদ্ভুত ভোতা অনুভুতিহীন সময়ের সাথে সন্ধি করে থাকলাম। আমার অজান্তে চোখের জল বালিশের একাংশ ভিজাইয়া ফেলিল। সকালে দরজা খুলতেই মা ঘরে ঢুকে বালিশ নিয়ে রৌদ্রে শুকাইতে দিল। রাত্রে আর তাহাতে আমার অশ্রুর নিশানা পাইলাম না।
সেখানে কখনোই একফোটা অশ্রু শিশির হয়েও ঝরে পড়েনি।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৬ ভোর ৪:৫৩