somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিরিক্ত গরম ও স্বাস্থ্যসমস্যা ও করনীয়

১৩ ই জুন, ২০১২ দুপুর ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্রীষ্মকাল সমাগত। চলছে চৈত্র, আসছে বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ, প্রচণ্ড গরমে চারদিক অস্থির। সেই সঙ্গে রয়েছে আর্দ্রতা। ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত। বাড়ছে গরমের স্বাস্থ্যসমস্যা, রোগব্যাধি। ঘামাচি কিংবা পানিস্বল্পতার মতো সমস্যা প্রায় প্রত্যেকেরই হচ্ছে। আবার কেউ কেউ হিটস্ট্রোকের মতো মারাত্মক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। এর সঙ্গে হতে পারে অবসাদ, অ্যালার্জি, সূর্যরশ্মিতে চামড়া পুড়ে যাওয়া, হজমের অভাবে বমি বা ডায়রিয়াজনিত রোগ ইত্যাদি।
গরমের কারণে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা হয়, তা হলো পানিস্বল্পতা। প্রচুর ঘামের কারণে পানির সঙ্গে সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণও বেরিয়ে যায়। ফলে শরীরের রক্তচাপ কমে যায়, দুর্বল লাগে, মাথা ঝিমঝিম করে। পানিস্বল্পতা গরমের খুব সাধারণ সমস্যা হলেও অবহেলা করলে তা মারাত্মক হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তি এবং যাঁরা বাইরে কাজ করেন ও প্রয়োজনমতো পানি পান করার সুযোগ পান না, তাঁরাই মারাত্মক পানিস্বল্পতায় আক্রান্ত হন বেশি। এ ক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং কিডনির সমস্যা হওয়াও বিচিত্র নয়।
পানিস্বল্পতা ছাড়াও গরমের কারণে ত্বকে ঘামাচি ও অ্যালার্জি হতে পারে। গরমে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হয়, যার চাপে ঘর্মগ্রন্থি ও নালি ফেটে যায়। ফলে ত্বকের নিচে ঘাম জমতে থাকে। এটাই ঘামাচি। অনেক সময় ঘাম ও ময়লা জমে ঘর্মনালির মুখ বন্ধ হয়ে যায় এবং সেখানে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে। এতে ঘামাচি ও অ্যালার্জি বেড়ে যায় এবং ঘামে প্রচুর গন্ধ হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া ছাড়াও ঘাম ও ময়লার কারণে ছত্রাকজনিত রোগও এ সময় বেশি হয়।
গরমে যাঁরা সরাসরি সূর্যের আলোর নিচে বেশিক্ষণ থাকেন, তাঁদের ত্বক পুড়ে যেতে পারে। এতে ত্বক লাল হয়ে যায়, জ্বালাপোড়া করে, চুলকায় ও ফোসকা পড়ে। মূলত সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিই এর জন্য দায়ী। যারা একটু ফরসা বা যাদের ত্বক নাজুক, তাদের এই সমস্যা বেশি হয়।
গরমে সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যা হলো হিটস্ট্রোক। শুরুতে হিটস্ট্রোকের আগে হিট ক্র্যাম্পে দেখা দেয়, যাতে শরীর ব্যথা করে, দুর্বল লাগে এবং প্রচণ্ড পিপাসা লাগে। পরবর্তী সময়ে হিট ইগজোসশন দেখা দেয়, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়, মাথাব্যথা করে এবং রোগী অসংলগ্ন আচরণ করতে থাকে। এ অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে শরীরের তাপনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় এবং শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফা. ছাড়িয়ে যায়। একে হিটস্ট্রোক বলে। এর লক্ষণগুলো হলো তাপমাত্রা দ্রুত ১০৫ ডিগ্রি ফা. ছাড়িয়ে যায়, ঘাম বন্ধ হয়ে যায় এবং ত্বক শুষ্ক ও লাল হয়ে যায়, নিঃশ্বাস দ্রুত হয়, নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ ও দ্রুত হয়, রক্তচাপ কমে যায়, খিঁচুনি হয়, মাথা ঝিমঝিম করে এবং রোগী অসংলগ্ন ব্যবহার করতে থাকে। রোগীর প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়, অজ্ঞান হয়ে যায়, এমনকি শকেও চলে যেতে পারে।
গরমে সরাসরি প্রভাব ছাড়াও অন্য আনুষঙ্গিক সমস্যা হতে পারে। অনেকেই গরমে তৃষ্ণা মেটাতে বাইরে পানি বা শরবত খায়, যা অনেক সময় বিশুদ্ধ হয় না। ফলে ডায়রিয়া ও বমিতে আক্রান্ত হতে পারে। একই কারণে এ সময় পানিবাহিত অন্যান্য রোগ, যেমন-টাইফয়েড, হেপাটাইটিস ইত্যাদি বেশি হয়। গরমে অনেকে প্রচুর পানি পান করে, কিন্তু তাতে পর্যাপ্ত লবণ থাকে না। ফলে লবণের অভাব দেখা দেয়। গরমে অনেক সময় খাবার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ওই খাবার খেলে বদহজমসহ অনেক পেটের পীড়া দেখা দিতে পারে।
গরমের এসব সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য যা করতে হবে—
 যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে হবে।
 বাইরে বের হলে সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে টুপি বা ছাতা ব্যবহার করতে হবে। পরনের কাপড় হতে হবে হালকা, ঢিলেঢালা ও সুতি। শরীর যতটা সম্ভব ঢেকে রাখতে হবে।
 শরীরের উন্মুক্ত স্থানে সম্ভব হলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে, যা রোদে পোড়া থেকে সুরক্ষা দেবে।
 প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল পান করতে হবে। যেহেতু ঘামের সঙ্গে পানি ও লবণ দুই-ই বের হয়ে যায়, সেহেতু লবণযুক্ত পানীয়, যেমন-খাওয়ার স্যালাইন, ফলের রস ইত্যাদি বেশি করে পান করতে হবে। অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে হবে। চা ও কফি যথাসম্ভব কম পান করা উচিত।
 প্রয়োজনমতো গোসল করতে হবে এবং শরীর ঘাম ও ময়লামুক্ত রাখতে হবে।
 শ্রমসাধ্য কাজ যথাসম্ভব কম করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কিছুক্ষণ পরপর বিশ্রাম নিতে হবে। প্রচুর পানি ও স্যালাইন পান করতে হবে।
 গুরুপাক খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। সাধারণ খাবার, যেমন-ভাত, ডাল, সবজি, মাছ ইত্যাদি খাওয়া ভালো। খাবার যেন টাটকা হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নানা রকম ফল, যেমন-আম, তরমুজ ইত্যাদি এবং লেবুর শরবত শরীরের প্রয়োজনীয় পানি ও লবণের ঘাটতি মেটাবে।
 শিশু বা বয়স্ক ব্যক্তিদের বেলায় আরও বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে। বাচ্চারা স্কুলে গেলে অথবা মাঠে খেলাধুলা করতে গেলে যেখানে-সেখানে পানি বা শরবত না খায়, আজেবাজে খাবার না খায় বরং বিশুদ্ধ পানি ও পানীয় গ্রহণ করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। বয়স্ক ব্যক্তিরা অনেকক্ষণ যেন রোদে চলাফেরা বা কাজকর্ম না করে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
প্রচণ্ড গরমে কেউ যদি অসুস্থ হয়ে যায়, তবে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। রোগীকে দ্রুত শীতল কোনো স্থানে নিয়ে যেতে হবে। ফ্যান বা এসি ছেড়ে দিতে হবে, সম্ভব না হলে পাখা দিয়ে বাতাস করতে হবে। রোগীর গরম কাপড় খুলে দিতে হবে এবং ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। সম্ভব হলে গোসল করাতে হবে। রোগীকে প্রচুর পানি ও খাওয়ার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। যদি কেউ হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয় এবং অজ্ঞান হয়ে যায়, তবে দ্রুত শরীরের তাপমাত্রা কমাতে হবে। এ ক্ষেত্রে রোগীকে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে, ঘরে চিকিৎসা করার কোনো সুযোগ নেই।
গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে, বৃদ্ধ ও শিশুদের বেলায়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে দহনজনিত স্বাস্থ্যসমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×