somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চৈনিক চমক: প্রস্রাবে সেদ্ধ ডিম স্বাস্থ্যকর!

৩০ শে জুন, ২০১২ রাত ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চীনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর ডংইয়াং –এর এক বিকেল। স্থানীয় স্কুলগুলোর সামনে বাচ্চাদের নিতে আসা অভিভাবকদের মাঝে শুরু হয়ে গেছে নিজের শিশুটিকে নিয়ে ঘরে ফেরার ব্যগ্রতা। তবে এই সময়টা ডংইয়াং শহরটা যে প্রদেশে অবস্থিত, সেই উপকূলবর্তী ঝেজিয়াং প্রদেশে শত শত সেদ্ধডিম বিক্রেতার ব্যস্ততা শুরুর লগ্নও বটে।

প্রস্রাবে সেদ্ধ করা এই ডিম বসন্তকালে দক্ষিণ চীনে বেশ জনপ্রিয় ‘স্বাস্থ্যকর’ খাবার হিসেবে পরিচিত। এসব ডিম শুধুমাত্র বালকদের, আরও পরিষ্কার করে বলতে গেলে ১০ বছরের কম বয়েসি বালকদের প্রস্রাব দিয়ে সেদ্ধ করতে হয়। তবে গপাগপ খায় ছেলে-বুড়ো সবাই।

শতাব্দী ধরে চলে আসা এই রীতির পেছনে কি কারণ আছে তা জানা যায়নি। এমনকি শুধু বালকদের এবং ১০ বছরের নিচের বালকদের প্রস্রাবই কেন এতে দরকারি- এরও কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারেনি।

তবে এই ডিম হটকেকের মত বিক্রি হয়। বালকদের প্রস্রাবে ডিম জাল দেওয়ার জন্য লিটার লিটার প্রস্রাব সংগ্রহের জন্য স্থানীয় স্কুলগুলোর সামনে ছুটির সময়ে বড় বড় গামলা আর বালতি হাতে ভিড় লেগে যায় ডিমওয়ালাদের। তারা স্কুলগুলোর টয়লেট থেকে মূত্র সংগ্রহ করে।

ডংইয়াংয়ের রাস্তা-ঘাট আর মোড়গুলোতে ফেরিওয়ালারা যখন প্রস্রাবভর্তি পাত্রে ডিম সেদ্ধ করতে থাকেন তখন পথচারীদের নাকে এর যে গন্ধটা লাগে তা নিশ্চয়ই ভোলার নয়। তবে এ ব্যাপারে রয়েছে ভিন্নমত।

‘এই ডিম সুগন্ধিযুক্ত। এটা খেলে আপনি হিট-স্ট্রোকে আক্রান্ত হবেন না।’ বলেন গি ইয়াওহুয়া নামের ৫১ বছর বয়সী ফেরিওয়ালা। তিনি ডংইয়াং শহরে ‘ভর্জিন বয় এগস’ নামে পরিচিত বেশ জনপ্রিয় ‘মূত্র-সেদ্ধ’ ডিম বিক্রির অসংখ্য স্টলের একটির মালিক।

তিনি আরও বলেন, ‘এই ডিম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আমার পরিবার প্রতিবেলা খাবারের সঙ্গে এগুলো খায়। ডংইয়াংয়ের প্রতিটি পরিবার এ জিনিস পছন্দ করে।’


এই বিশেষ রেসিপিতে ডিম সেদ্ধ করতে পুরো একটি দিন লেগে যায়। প্রথমে ডিমগুলো প্রস্রাবে ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর পানির বদলে প্রসাবভর্তি পাত্রে সেই ডিম হার্ড-বয়েল করা হয়। পরে চুলা থেকে নামিয়ে ডিমগুলোর খোসা ছাড়ানো হয়। এরপর খোসা ছাড়ানো ডিমগুলো ফের প্রস্রাব ভর্তি পাত্রে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেদ্ধ করা হয়। এসময় ফুটতে থাকো পাত্রে ডিমগুলো যাতে পুড়ে বা ভেঙ্গে না যায় সেজন্য একটু পরপর নতুন করে প্রস্রাব ঢালা হয় এব আগুনের আঁচও নিয়ন্ত্রণ করা হয় যত্নের সঙ্গে।

গি আরও জানান, তাজা ও নোনতা স্বাদের জন্য স্ন্যাক্স হিসেবে জনপ্রিয় এই ডিম বিক্রি করছেন তিনি ২০ বছরেরও অধিক সময় ধরে। প্র্রতিটি ডিম বিক্রি হয় দেড় ইউয়ানে (০.২৪ ডলার)। এই দর একটি সাধারণ ডিমের দুই গুনেরও কিছুটা বেশি।
ডংইয়াংয়ের অনেক বাসিন্দাই জানালেন, পুরুষানুক্রমে তারা বিশ্বাস করে এসেছেন- বালকদের মূত্রসিদ্ধ ডিম শরীরের বাড়তি তাপ নিয়ন্ত্রণ করে, রক্ত সঞ্চালন নির্বিঘ্ন করে এবং শরীরের বলবর্ধক হিসেবে কাজ করে। গি’র কাছ থেকে ২০টি মূত্রসেদ্ধ ডিম ক্রয়কারী লি ইংঝেনকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, ‘এই ডিম খেলে কোমড়, পা আর হাড়ের জোড়ার কোনও ব্যথা থাকেনা। এছাড়া কাজের সময়ে বাড়তি শক্তি পাবেন।’

জনপ্রিয় এই ডিম শুধু রাস্তার দোকানেই বিক্রি হয় না- প্রতিটি পরিবারে প্রস্রাবে সেদ্ধ করে ‘স্বাস্থ্যকর’ ডিম খাওয়া হয়। এজন্য বালকদের মূত্র সংগ্রহে পেশাদার ডিম বিক্রেতাদের সঙ্গে স্কুলগুলোতে লাইন দেন গেরস্থরাও।

এই অদ্ভূত কায়দায় প্রক্রিয়াজাত ডিমের বিষয়ে ঝেজিয়াং প্রদেশের প্রশাসনও ভালোই অবগত। তারা জনগণের এই ‘ভার্জিন বয় এগস’ খাওয়ার বিষয়টিকে তাদের এক ‘দুরধিগম্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

তবে চীনাদের সবাই যে মূত্রসেদ্ধ ডিমের অন্ধ ভক্ত তা নয়। চীনা স্বাস্থ্যবিদরা এর স্বাস্থ্যগত সুবিধার বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা প্রস্রাবে ডিম সেদ্ধ কালে জীবাণু সংক্রমণ বিষয়ে কিছু সাবধানতার কথা বলেছেন। এছাড়া ডংইয়াংয়ের কিছু বাসিন্দা জানিয়েছেন- তারা এভাবে ডিম খাওয়াটাকে ঘৃণা করেন।
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×