শুনলাম বিজয় দিবসের উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। এ নিয়ে কয়েকদফা বৈঠকও নাকি হয়েছে বা হচ্ছে।
এ কোন বিজয়ের কথা হচ্ছে? কোথায় বিজয় দিবস উদযাপনের কথা বলা হচ্ছে? যেখানে একজন মানুষের আগুনে ছাই হওয়ায় দয়াপরবশ হয়ে সরকার বা পোশাকশিল্পের মালিকেরা জনপ্রতি জীবনের মূল্য ৫০ হাজার, কি এক লাখ টাকা নির্ধারণ করে দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেতে চায়; “গার্মেন্টস শিল্প বাংলাদেশের সোনার ডিম পাড়া হাঁস, উন্নয়নের চাবিকাঠি” – একথা বলতে বলতে আমাদের নেতারা মুখে ফেনা তুলে ফেলে; অথচ জীবনের সুখ-শান্তি-আসা-ভালবাসা মাটি চাপা দিয়ে সেই হাঁস যারা লালন করে আসছে দিনের পর দিন- বছরের পর বছর; সরকার এবং মানুষ রূপি পশু মালিক পক্ষ তাদের নুন্যতম নিরাপত্তা দিতে যেখানে অস্বীকৃতি জানায়; যেখানে ফ্লাই ওভার এর গার্ডার ভেঙ্গে নিমিষেই ১৫/২০ টি তাজা প্রান নিঃশেষ হয়ে যায়, আর তদন্ত কমিটি করে সরকার নিজেদের দায়িত্ব শেষ বলে মনে করে। আর তারাই আবার দাবি করে, আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী! এ কোন মুক্তির কথা বলে তারা?
সম্প্রতি বাংলাদেশে গার্মেন্টস ও বস্তিতে আগুন লেগে এবং ফ্লাইওভার এর গার্ডার ভেঙ্গে আমরা যত জন ভাই বোনকে হারিয়েছি, কয়েক হাজার মাইল দূরের যে ফিলিস্তিনকে নিয়ে আমরা এত মাতামাতি করি পত্রিকা, ফেইসবুক বা ব্লগে কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের হ্যারিকেন স্যান্ডি যা কিনা আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল পুরো বিশ্বে সেখানে কত জন মরেছে আমরা কি তার খবর নিয়েছি? হয়ত অনেকে বলবে এরা শ্রমিক; এরকম সোনার বাংলার কিছু সোনার ছেলের মৃত্যুতে কি আর এমন হবে যে বিশ্ব বাসী আলোচিত হবে? যে দেশকে তারা মায়ের মত জানে - মা মা বলে ডাকে, সেই মা কে বিশ্ব দরবারে উঁচু আসনে বসানোর জন্যে আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছে, সেই মা কি পেরেছে তার সোনার সন্তানকে পরম মমতা দিয়ে আগলে রাখতে? এর কোনও সদুত্তর দিতে পারছিনা বলেই হয়ত তাঁরা আজ এত অবহেলিত সবার কাছে, সমগ্র বিশ্বের কাছে । আর বিশ্ববাসীর দোষ দিচ্ছি কেন? আমাদের প্রশাসনইতো পারলে তা অস্বীকার করে! লাশের সংখ্যা নিয়ে যেভাবে লুকুচুরি খেলছে কিংবা এত মানুষের মৃত্যুর পরও যেখানে সরকারের এতটুকু টনক নড়েনি; তাদের কাছে কি আর আশা করা যায়? আর যাদেরকে বলছি এর বিচার করার জন্যে, তারাইতো এদেরকে লেলিয়ে দিয়েছে। তারাই সুযোগ করে দিচ্ছে। তাই এ ঘটনার চাকা চলতেই থাকবে। হয়ত কে জানে কোনও একদিন এ চাকায় আমরাও পিষ্ট হয়ে শিরোনাম হয়ে যাব।
এটাতো একটা স্বাধীন দেশের বিজয়ের চেতনা হতে পারেনা? যে বিজয় আমার খেটে-খাওয়া, সাধারন কাজ করা- অসাধারন মানুষগুলোর জীবনের নুন্যতম নিরাপত্তা দিতে পারেনা, সে বিজয় আমি চাইনা। আমি আজ কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি! কান্নার নুন্যতম ভাষা টুকুও হারাতে বসেছি! আজ আমি কাউকে সান্তনা দেয়ার এতটুকু সাহসও করিনা! শুধু এইটুকু মনে করতে পারছি, সেই আসাধারন মানুষগুলোর লাশের উপর দাঁড়িয়ে আমি বিজয়ের গান গাইতে পারবনা, এ গান শুনতেও যেন কেউ আমায় না ডাকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




