somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষ ঘরে থাকতে চায় না, দায় কার?

২৫ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৯:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই যে এমন করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দিনে বাইরে বের হলে ভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃত্যু হতে পারে জেনেও অধিকাংশ মানুষ ঘরে থাকতে চাইছে না, ঘরে মন বসছে না, এর দায় কার? শুধুই কি ব্যক্তি মানুষের নাকি এর জন্য রাষ্ট্র-রাজনীতি-সমাজব্যবস্থাও দায়ী? জন্মের পরই তো একটি শিশু বহির্মুখী হয় না, শিশু যত বড় হয় তাকে তত বহির্মুখী করে গড়ে তোলা হয়। বেশিরভাগ বাবা-মা তাদের সন্তানকে পাখিকে বুলি শেখানোর মত শেখায়-ভাল করে লেখাপড়া করতে হবে, বড় চাকরি করতে হবে, অনেক টাকা রোজগার করতে হবে ইত্যাদি। কয়জন বাবা-মা তাদের সন্তানকে ভাল গান শুনতে, ভাল বই পড়তে, ভাল সিনেমা দেখতে এবং আত্নমগ্ন নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে শেখায়? আপনি বলতে যাবেন, তারা পাল্টা প্রশ্ন করবে আপনাকে-এসব করে লাভ কী? এই লাভ-ক্ষতির ভেতরেই আটকে গেছে জীবন! অথচ এই বাবা-মা-ই বৃদ্ধকালে আশা করে সন্তান তাদেরকে সময় দেবে! কেন সময় দেবে, আপনি কি সেভাবে তৈরি করেছেন আপনার সন্তানকে? সন্তান বড় হয়ে যখন লেখাপড়া শেষ করে চাকরিতে ঢোকে, তখন তার জীবন নিঙড়ে নেয় চাকরিদাতারা, আট ঘণ্টার জায়গায় দশ-এগারো ঘণ্টা বা আরো বেশি সময় খাটায়, রাস্তার জ্যামে আটকে থাকে আরো তিন-চার ঘণ্টা। বাড়িতে এসে খাওয়া-দাওয়ার পর বউয়ের পাশে বসে একটু সিরিয়াল দেখতে না দেখতেই তার চোখে ঘুম নেমে আসে, ঘুমিয়েও পড়ে, পরদিন রাত পোহালেই আবার ছুটতে শুরু করে? এত ছুটেও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল থাকতে পারে কতজন মানুষ? অনেককেই বাড়তি রোজগারের ধান্দায় অন্যকিছু করতে হয়, নইলে মাস শেষের দিনগুলো যে চলে না, সন্তানের স্কুলের বেতন বাকি পড়ে থাকে, বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ওষুধ কেনা হয় না টাকার অভাবে!

বেশিরভাগ মানুষের জীবন রেসের ঘোড়ার মত; কেবলই ছুটে চলো, ছুটে চলো আর ছুটে চলো….! কিসের জন্য এই ছোটা? শুন্য হাতে ফিরতে হবে জেনেও মানুষকে ছুটে চলতে হচ্ছে, ছুটতে বাধ্য করছে বিশ্বের রাষ্ট্রব্যবস্থা, রাজনীতি এবং সমাজব্যবস্থা। গুটিকতক মানুষের হাতে রয়েছে সম্পদ, তাদের শারীরিক-মানসিক সুখের জন্য, তাদের ভোগ-বিলাস আনন্দ-স্ফুর্তির জন্য সমাজের বিরাট অংশের মানুষকে কলুর বলদের মত খাটতে হয়। উদয়াস্ত পরিশ্রমের কথাটি এখন সেকেলে, এখন পরিশ্রমের জন্য কোনো সময় নির্ধারিত নেই, চব্বিশ ঘণ্টাই এখন কাজের সময়! মোটাদাগের দাসপ্রথা বিলুপ্ত হলেও চলছে সুক্ষ্ম দাসপ্রথার দিন।

পরিশ্রান্ত মানুষ যখন ঘরে ফেরে, তখন তার হাতে খুব বেশি সময় থাকে না, নিজেকে সে কী সময় দেবে, সে তো স্ত্রী-সন্তানকেই সময় দিতে পারে না! এই পরিশ্রমী মানুষদের বিরাট অংশটি যদিবা একটু বিনোদন খোঁজে তা ওই-টেলিভিশন সিরিয়ালে, ইউটিউবের ওয়াজে, টিকটকে, শাকিব খানের সিনেমায় আর গান শোনে-‘মাইয়ারে মাইয়ারে তুই অপরাধী রে! ক্ষুদ্র একটি অংশ কবিতা পড়ে, আবার এই ক্ষুদ্র অংশের বড় অংশটি কোনো প্রকৃত কবির কবিতা নয়, পড়ে অভিনেতা কবির কবিতা; গল্প-উপন্যাস পড়ে খবরের কাগজে যাদের ছবি দ্যাখে তাদের।

সঙ্গত কারণেই এখন দীর্ঘ ছুটি পেয়ে এই মানুষদের বাসায় ভাল লাগছে না, হাঁফিয়ে উঠছে, কেউ গ্রামের বাড়িতে ছুটছে কিংবা অকারণে বাইরে বের হচ্ছে। আত্মমগ্ন হওয়া বা নিজেকে সময় দেওয়া দূরের কথা, বেশিরভাগ মানুষ সংগীত শুনতে জানে না, বই পড়তে জানে না, সিনেমা দেখতে জানে না, কোনো সৃজনশীল কাজ করতে জানে না।

তারপরও সংখ্যায় নগন্য হলেও কিছু মানুষ নিজেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখে ভাল সংগীত শুনছেন, ভাল বই পড়ছেন, ভাল সিনেমা দেখছেন। স্যালুট তাদের প্রতি।

যারা বাইরে বেরনোর জন্য ছটফট করছেন, তাদেরকে আমি একটা ব্যক্তিগত তথ্য দিই-আমি যখন বেকার ছিলাম, তখন টানা দেড় বছর আমি বলতে গেলে বাইরের জগত থেকে দূরে ছিলাম, কোনো আড্ডায় যেতাম না, সারা মাসে পাঁচ মিনিটের বেশি ফোনে কথা হত না, প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা পড়তাম (পাঠ্যপুস্তক নয়, দীর্ঘসময় পাঠ্যপুস্তকে ডুবে থাকার ধৈর্য্য এবং রুচি আমার কোনোকালেই ছিল না) আর লিখতাম, দেড় বছরে বেশ কিছু গল্প-প্রবন্ধ ছাড়াও একানব্বই হাজার শব্দের একটি উপন্যাস লিখেছিলাম। এখনো পুরো একটা দিন বাসায় থাকলে আমার খুব আনন্দ হয়, মনে হয় আজ কিছু করতে পারলাম। রাষ্ট্র, রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা সবসময়ই সাধারণ মানুষের প্রতিকূলে। তবু এর ভেতর থেকেই প্রকৃত মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হয়, নিজেকে এবং পরিবারকে সময় দিতে হয়।

চাইলে আপনিও নিজেকে কোনো সৃষ্টিশীল কাজে যুক্ত করতে পারেন। এখন গুগল-ইউটিউবে সব পাওয়া যায়, গুগল-ইউটিউব অনেক বড় শিক্ষক, আমি শিক্ষকদের কাছ থেকে যা শিখছি তার চেয়ে অনেক বেশি শিখেছি গুগল-ইউটিউব থেকে। ইউটিউব দেখে বাচ্চাদের সঙ্গে বসে ছবি আঁকুন, বাচ্চাকে গল্প শোনান, কাগজ দিয়ে নানা কিছু তৈরি করুন, খেলনা তৈরি করুন, স্ত্রীকে রান্নায় সাহায্য করুন, দিনলিপি লিখে রাখুন। আর হল-ই বা আপনাদের অনেকদিন বিয়ে হয়েছে, প্রেম কি কিছুই অবশিষ্ট নেই? ইচ্ছাশক্তি থাকলে মানুষ অবশ্যই নিজেকে কিছুটা উন্নত শ্রেণিতে উন্নীত করতে পারে। আপনি ধ্যানমগ্ন নন কিংবা ঘর আপনার ভাল লাগে না; এর দায় অবশ্যই রাষ্ট্র, রাজনীতি, সমাজব্যবস্থার; কিন্তু কিছুটা আপনারও নয় কি?

ঘরে থাকুন, আনন্দে থাকুন।

ঢাকা
২৫.০৩.২০২০
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×