দেশের দক্ষিণ থেকে উত্তর, সমুদ্র থেকে পাহাড়, কিংবা সমতল; রাস্তাঘাট, নদী, পুকুর, লেক, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনাল, হাট-বাজার, আবাসিক এলাকার আপনি যেখানেই যাবেন, দেখতে পাবেন যত্রতত্র পড়ে আছে- প্লাস্টিকের বোতল, সিগারেটের টুকরো ও প্যাকেট, চিপস ও চকলেটের প্যাকেট, ব্যবহৃত কন্ডম ও শূন্য প্যাকেট, দেয়ালে ও রাস্তায় পানের পিক, ফুটপাতে পায়খানা ও প্রসাব। আপনি দেখতে পাবেন শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে বিপুল সংখ্যক লোক প্রকাশ্যে জনবহুল জায়গায় ধুমপান করছে আর অন্যের মুখের ওপর ধোয়া ছাড়ছে। পরিবেশ আইন না মানা কারখানাগুলোর বর্জ্য ও নানারকম রাসায়নিক পদার্থ আমাদের নদীতে মিশছে, বন্যার জলে সেইসব বর্জ্য ও রাসায়নিক পদার্থ জনপদ ও ফসলি জমিতে ঢুকছে। আমাদের জল ও মাটিতে এখন জীবদেহের জন্য ক্ষতিকর প্রচুর ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, প্লাস্টিক কণা ও সীসা পাওয়া যায়। কিন্তু আপনি এসবের বিরুদ্ধে কয়দিন প্রতিবাদ করেছেন? কয়দিন ফেসবুকে এসবের বিরুদ্ধে লিখেছেন? হেমায়েতপুরের নতুন ট্যানারি পরিবেশ আইন না মেনে ধলেশ্বরী নষ্ট করে ফেললো, আপনি প্রতিবাদ করেছেন? আর আপনিও কি উপরে বর্ণিত কোনো না কোনো পন্থায় পরিবেশ নষ্ট করছেন না? আপনি ধুপপান করে পরিবেশ নষ্ট করেন না? সবাই নিশ্চয় করে না, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই নানাভাবে পরিবেশ নষ্ট করে। আপনার পর্যাপ্ত জামা-কাপড় থাকর সত্ত্বেও ঈদ বা পূজায় নতুন জামা-কাপড় কিনছেন না? আপনার এই বাড়তি জামা-কাপড়ের যোগান দিতে কতো জল নষ্ট হচ্ছে আপনি জানেন? সেই জলের সঙ্গে রাসায়নিক পদার্থ নদীতে মিশে ফসলের মাঠে যাচ্ছে আপনি জানেন? আপনি বাহুল্য যে জিনিসটাই কিনছেন, সেই জিনিসটার নির্মাণপ্রক্রিয়া পরিবেশের ক্ষতি করছে। না আপনি বাহুল্য জিনিস ব্যবহার বন্ধ করছেন, আ আপনি এসবেরে বিরুদ্ধে কথা বলছেন। আর আজ হঠাৎ হাওরের আলপনা আঁকা দেখে আপনাদের পরিবেশবাদী চেতনা জেগে উঠেছে! চৌদ্দ কিলোমিটার আলপনা আঁকায় কী এমন ক্ষতি হবে হাওরের? জীববৈচিত্র কী এমন ধ্বংসের মুখে পড়বে? বর্ষাকালে বৈধ বালু-পাথরের ব্যবসার জন্য হাজার হাজার বাল্কহেড চলে হাওরে, পেট্রোল-ডিজেলে হওরের ক্ষতি ব্যাপক হয়। বিষটোপ দিয়ে হাওরে অতিথিপাখি শিকার করা হয়। আপনারা এসবের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন? না, বলেননি। আপনাদের এই হঠাৎ পরিবেশবাদী মুখোশের আড়ালে আছে পরিচ্ছন্ন সাম্প্রদায়িক ও সংস্কৃতিবিরোধী মনন।
আর আছেন অবোধ বামপন্থী ভাই-বোনেরা, আপনারা চিরকাল ইসলামী মৌলবাদীদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে গেলেন। বামৈস্লামিক আর অন্ধৈস্লামিক মিলেমিশে একাকার!
ধন্যবাদ বাংলালিংক, বার্জার পেইন্টস ও এশিয়াটিককে; এমন নান্দনিক উদ্যোগ নেবার জন্য। আমাদের শিল্প-সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে ও বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে কর্পেোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর এভাবেই ভূমিকা রাখা উচিত। অশুভ সাম্প্রদায়িক শক্তি, সংস্কৃতিবিরোধীদের বাধা প্রতিহত করে মাথা উঁচু করে বাঁচুক আমাদের সংস্কৃতি।
ঢাকা
নববর্ষ ১৪৩১
*আলপনার ছবি সমকাল থেকে নেওয়া
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৪২