somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশান্তর-ই বাংলাদেশের অমুসলিমদের ভবিতব্য

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজনের পোস্ট ভেসে এলো ফেইসবুকে, যারা ৪৩ তম বিসিএস এ সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, জঙ্গিবাদী অবৈধ ইউনুস সরকার তাদেরকে বাদ দিয়ে নতুন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। জঙ্গি সরকার ক্ষমতা দখলের পর দুই দফায় ২৬৭ জনকে বাদ দিয়েছে। বাদ পড়াদের মধ্যে কতজন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কিংবা আদিবাসী, তা হয়ত জানা যাবে শীঘ্রই। এর আগে পুলিশের এসআই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে ৯৩ জন হিন্দু, ২ জন বৌদ্ধ ও ১ জন খ্রিষ্টানকে। এই বাদ পড়াদের একটি অংশ অমুসলিম। আরেকটি অংশ মুসলিম, যাদের বেশিরভাগই হয়ত নিজে অথবা পরিবারের কেউ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল অথবা আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিল।

জঙ্গি সরকারের টার্গেট অমুসলিম সম্প্রদায়, বিশেষত হিন্দুরা। হিন্দুরা বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানদের চেয়ে সংখ্যায় বেশি, তাদের নিয়োগের সংখ্যাও বেশি, ফলে যে-কোনো উপায়ে হিন্দুদেরকে সরকারি চাকরি থেকে দূরে রাখা জঙ্গি সরকারের উদ্দেশ্য। শুধু সরকারি নয়, মৌলবাদী অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও হিন্দুদের নিয়োগ দেয় না। ৫ আগস্টের পর জঙ্গি ছাত্রদের চাপে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অমুসলিম কর্মীদের ছাঁটাই করেছে।
শুধু চাকরির ক্ষেত্রেই নয়, এবার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাতেও বড় ধরনের জালিয়াতি হবে। অমুসমিদের বাদ দেওয়া হবে, তাদের জায়গায় সুযোগ দেওয়া হবে মাদ্রাসার জঙ্গি ছাত্রদের।

এই ধারা অব্যাহত থাকবে। ফলে বেশিরভাগ অমুসলিমরা ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাবে না, তাদের মধ্যে বেকারত্ব বাড়বে। তরুণদের মধ্যে হতাশা বাড়বে, পরিবারের গলগ্রহ হবে, আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়বে। অমুসলিম সম্প্রদায়ের বহু পরিবার দারিদ্রসীমার নিচে চলে যাবে, পারিবারিক কলহ বাড়বে। ঠান্ডা মাথায় কৌশলে অর্থনৈতিকভাবে অমুসলিমদের পঙ্গু করে দেওয়া হবে, যাতে তারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। এই কৌশলের ব্যাপক প্রভাব পড়বে আরও পাঁচ-দশ বছর পর থেকে। এই ধরনের কৌশল কিছুটা বাস্তবায়ন করা হয়েছিল সামরিক শাসনামলে এবং ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত। এরপর আরও ব্যাপকভাবে এই কৌশল বাস্তবায়ন করা হয় ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। এই কৌশল অবলম্বনের উদ্দেশ্য একটাই- যাতে অমুসলিমরা বাংলাদেশ ত্যাগ করে। এই কৌশলের সুফল পেয়েছিল শাসকগোষ্ঠী, ১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-০৬ সময়ে বিপুল সংখ্যক হিন্দু দেশত্যাগ করে। অবশ্য এই কৌশলের সঙ্গে এই সময়টাতে ভয়ানকভাবে হিন্দু নির্যাতনও হয়েছিল।

বর্তমান অবৈধ ইউনুস সরকার ক্ষমতা দখলের প্রথম একশো দিনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৮৬ হাজার ২৭৭ জনকে নিয়োগ দিয়েছে, আপনার সমাজে, আপনার আশপাশে কতজন অমুসলিম নিয়োগ পেয়েছে, সেই সংখ্যাটার দিকে তাকালেই বৈষম্যের চিত্রটি পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে। সঙ্গত কারণেই, এই দেশে ভবিষ্যৎ নেই বুঝে অমুসলিমরা দলে দলে ভারতে চলে যাবে।

আগামীতে হিন্দু জনগোষ্ঠীর বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার চাপ নিতে হবে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরাকে, এরই মধ্যে অনেকে দেশ ছাড়তে শুরু করেছে। অনেকে অপেক্ষায় আছে। হিন্দুরা এই মুহূর্তে অনেকটা ঢাল হয়ে আছে অন্যান্য অমুসলিম জনগোষ্ঠীর, যেহেতু হিন্দুরা সংখ্যায় বেশি, তাই প্রথম টার্গেট হিন্দুরা, তাদের ওপর নির্যাতনের হার বেশি। হিন্দুরা কমে গেলেই বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানদের ওপর নির্যাতন আরও ভয়ানক আকার ধারণ করবে। বস্তুত, এই ভূখণ্ডে অমুসলিমরা কখনোই শান্তিতে থাকতে পারবে না। কোনো মুসলিম দেশেই অমুসলিমরা শান্তিতে থাকতে পারে না। ফলে দু-বেলা দুটো ডাল-ভাত খেয়ে হলেও এতটু শান্তিতে থাকার জন্য তারা দেশান্তর হবে। দেশান্তর-ই বাংলাদেশের অমুসলিমদের ভবিতব্য! ২১০০ সালের মধ্যে এই বাংলাদেশ পাকিস্তানের মতো প্রায় অমুসলিমশূন্য হবে, এক বা দুই শতাংশে গিয়ে ঠেকবে, যদি না ভূ-রাজনীতিতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন হয়। এটাই হবে বাস্তব চিত্র; কাল্পনিক সাম্যবাদী ইতিহাস শুনিয়ে, ভারসাম্যের আবেগী সাহিত্য-সংগীত দিয়ে, বামপন্থী যুক্তির তুলির আঁচড় দিয়েও এই নির্মম চিত্র আড়াল করা যাবে না। পাকিস্তানেও আড়াল করা যায়নি।

কয়েক কোটি জনসংখ্যার চাপ নিতে ভারত প্রস্তুত তো?

৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪



* বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে অনুযায়ী দেশে এখন হিন্দু বা সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের সংখ্যা ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:২১
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

NVR (No Visa Required) এর জন্য জেনে রাখা দরকার

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৯
×