somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আওয়ামী লীগ ফিরবে, পাহাড়সমান ভুল শোধরাবে কি?

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



স্মৃতি থেকে বলছি, সম্ভবত দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় অনেক বছর আগে সাংবাদিক নির্মল সেন তার কলামে লিখেছিলেন যে- আওয়ামী লীগের চেয়ে কংগ্রেস (ভারতের) বেশি অসাম্প্রদায়িক। তার এই কলামের জবাবে কলাম লিখেছিলেন সাংবাদিক ও লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরী, কংগ্রেসের চেয়ে আওয়ামী লীগ বেশি অসাম্প্রদায়িক এবং নির্মল সেনকে ভুল প্রমাণ করতে তিনি ইচ্ছেমতো বাক্য বিন্যাসে গরু রচনা লিখতে গিয়ে শ্মশানআখ্যান রচনা করেছিলেন! আবদুল গাফফার চৌধুরী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রসাদভোজী অন্ধ সমর্থক, ফলে যে-কোনো উপায়ে কংগ্রেসের চেয়ে আওয়ামী লীগকে অধিক অসাম্প্রদায়িক প্রমাণ করাটাই ছিল তার এজেন্ডা।

কংগ্রেস চাইলে ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র করতে পারত, সেটা তারা করেনি। ১৯৪৭ সালে যখন ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয় তখন কংগ্রেস চাইলে ভারতকে মুসলিমশূন্য করতে পারত, পাকিস্তানকে যেভাবে হিন্দু-বৌদ্ধ-শিখশূন্য করার চেষ্টা করেছে মুসলিমলীগ। সেটাও তারা করেনি। উল্টো কংগ্রেস সুলতানী ও মোগল আমলের ইতিহাস বিকৃত করে, নৃশংস মুসলিম শাসকদের মহান বানিয়ে ভারতীয়দের পড়িয়েছে। ভারতের ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায়নি, বেহাত হওয়া ইতিহাস পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেনি। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে হিন্দুবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিস্তর অভিযোগ আছে।

অন্যদিকে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানের চার মূলনীতির একটি রেখেছিলেন- ধর্ম নিরপেক্ষতা, কারণ বাংলাদেশের জন্ম পাকিস্তানের মতো ধর্মের ভিত্তিতে হয়নি, বরং ধর্মীয় শোষণ থেকে মুক্তি পেতেই বাংলাদশের জন্ম। যে রাষ্ট্রের চার মূলনীতির একটি- ধর্ম নিরপেক্ষতা, সেই রাষ্ট্র কিভাবে ওআইসির মতো একটি সাম্প্রদায়িক সংস্থার অধিবেশনে যোগদান করে এবং সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়! আওয়ামী লীগ যে কংগ্রেসের চেয়ে অসাম্প্রদায়িক নয়, তা প্রমাণের জন্য বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ইসলামের খেদমত বিষয়ে অন্তত দশটি তথ্যপ্রমাণ দেওয়া যায়, তবে এই একটি যথেষ্ট। কিন্তু অন্ধ আওয়ামী লীগ সমর্থক আবদুল গাফফার চৌধুরী একজন মুসলমান, আর দিনশেষে একজন মুসলমানের প্রজ্ঞার মৃত্যু হয় ধর্মের কাছে, ফলে বঙ্গবন্ধুর এই ভয়ংকর সিদ্ধান্তটি খুব স্বাভাবিক মনে হয়েছে আবদুল গাফফার চৌধুরীর কাছে। সময়ের কী নির্মম পরিহাস, আবদুল গাফফার চৌধুরী তার জীবদ্দশায় দেখে গেছেন যে তার অসাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগ কী করুনভাবে নতজানু হয়েছে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর কাছে- ভোটের লোভে কতকগুলো ইসলামী দলকে জোটে নিয়েছে, ২০১৩ সালের মে মাসে ঢাকা শহরে ভয়ংকর ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালানোর পরও হেফাজতে ইসলামকে কোলে তুলে নিয়ে নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে, কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাকে সরকারি সনদ দিয়েছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কওমী জননী উপাধি গ্রহণ করেছেন, হেফাজতের পরামর্শে পাঠ্যপুস্তক ইসলামীকরণ করেছে, ৫৬০ টি উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ করেছে, দেশের আনাচে-কানাচে ব্যঙের ছাতার মতো মাদ্রাসা গজিয়ে উঠতে দিয়েছে, ওয়াজের মতো ভাইরাস সারাদেশে ছড়াতে দিয়েছে কিন্তু কোনো লাগাম পরানোর চেষ্টা করেনি, হিন্দু-বৌদ্ধ-আদিবাসীদের ওপর নিপীড়ন হয়েছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও এই নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত! আর জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধেও যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তা যে ফাঁপা ছিল তা তো আমরা এখন দেখতেই পাচ্ছি। এই যে আজকে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ধ্বংস করল জঙ্গিরা, ধ্বংসের পর ঈদের আনন্দ উদযাপন করল, গণমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে এসে বিকৃত বয়ান ও অপ্রকৃতস্থ আচরণ করল, এই বিষবৃক্ষের বীজটি তো বঙ্গবন্ধু-ই নিজ হাতে রোপন করেছিলেন সেই ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিয়ে এবং বাংলাদেশকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। সে-দিনই বাংলাদেশের সুন্নতে খৎনা সম্পন্ন হয়েছিল, হাজাম স্বয়ং বঙ্গবন্ধু-ই।
নির্মল সেন নির্ভুল এবং সত্য প্রকাশে নির্ভীক ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা পিতার ভুল থেকে শিক্ষা নেননি, ফলে তাকে আজকে এই দিনগুলো দেখতে হলো, প্রাণ বাঁচাতে ভারতে আশ্রয় নিতে হলো। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িকতার যে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়েছিল, বারবার সুযোগ পেয়েও শেখ হাসিনা সেই গড্ডালিকা প্রবাহ থেকে বাংলাদেশকে টেনে তুলতে পারেননি। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি বাহাত্তরের সংবিধান ফেরাননি, সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করেননি। বরং তিনি তার দলকে ওই গড্ডালিকায় ভাসিয়ে টিকে থাকতে চেয়েছিলেন। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘বাস্তবতার নিরিখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ বাস্তবতা কী? তিনি মোল্লাদের ক্ষ্যাপাতে চাননি। একথা খালেদা জিয়া বললে মানা যেত, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যার মুখে, একজন শিক্ষিত রাষ্ট্রনেতার মুখে মানায় না। তার অদূরদর্শীতার কারণেই তিনি বুঝতে পারেননি যে অন্য দলগুলো সাম্প্রদায়িকতার গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে বিপদমুক্ত থাকতে পারলেও আওয়ামী লীগের পক্ষে সেটা কখনোই সম্ভব নয়। কেন সম্ভব নয়, সেটা আমি অনেকবার লিখেছি। ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই ফেইসবুকে লেখা ‘আওয়ামী লীগও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও সংস্কৃতিবিমুখ মৌলবাদী সমাজ নির্মাণের কারিগর’ নামক প্রবন্ধের একটি অংশ উদ্বৃত করছি-
‘মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও সংস্কৃতিবান্ধব রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা না করে আওয়ামী লীগ হেফাজতে ইসলামের সাথে আপোস করেছে। মুসলমানদের খুশি করতে ৫৬০ টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করেছে। এসবই এখন বুমেরাং হয়ে আওয়ামী লীগের দিকেই ফিরে আসতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের এই সহজ হিসাবটি বোঝা উচিত ছিল যে- তারা বিপুল সংখ্যক মানুষের অনিচ্ছা সত্ত্বেও পাকিস্তানের সাথে লড়াই করেছে, স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। একাত্তরে দেশের সব মানুষ রাজাকার-আলবদর হয়নি। রাজাকার-আলবদর না হওয়া মানুষের বিরাট অংশ পাকিস্তানের সাথেই থাকতে চেয়েছিল। ফলে ইসলামী রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ কখনোই বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতের সাথে পারবে না। কারণ, তাদের গায়ে পাকিস্তান ভাঙার গন্ধ লেগে আছে। আওয়ামী লীগের হাঁটা দরকার ভিন্ন পথে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে সংস্কৃতিবান্ধব সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণের পথে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেই পথে না হেঁটে ইসলামী রাজনীতির দিকে হেঁটেছে। আওয়ামী নেতৃত্ব কি জানে যে হাটে-মাঠে-ঘাটে সর্বত্র মোল্লা ও ওয়াজকারীরা তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষদের ক্ষেপিয়ে তোলে? কে জানে! আওয়ামী লীগের আমলেই মানুষ সবচেয়ে বেশি সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করতে গেলে প্রশাসন অনুমতি দিতে চায় না, আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও বাধা দেয়। যদিবা অনুমতি দেয় তো চাঁদা চায়। যাত্রা, পুতুলনাচ, পালাগান, সার্কাস করতে গেলে হয়রানি হতে হয়। অথচ রাতভর ওয়াজ চলে বিনা বাধায়। তৃণমূলের সংস্কৃতিকর্মীরা আক্রমণের শিকার হন। বাউলরা প্রহৃত হন। আওয়ামী লীগ সরকার দেখেও দ্যাখে না। ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মানিকগঞ্জের গোবিন্দল গ্রামের মতো ইসলামী গ্রাম গড়ে উঠেছে- যেখানকার প্রায় সব ছেলেমেয়ে মাদ্রাসায় পড়ে, কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হয় না। আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে যে- এই দেশে সংস্কৃতি না টিকলে, আওয়ামী লীগও টিকবে না। কারণ তারা মুসলমানের পেয়ারের পাকিস্তান ভেঙেছে!
এই দেশে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত হয়ে, মোল্লাতন্ত্রের যত বিস্তার ঘটেছে, আওয়ামী লীগের ভোট তত কমেছে।’

আওয়ামী লীগ নিজ দলের মধ্যে সাম্প্রদায়িক নেতা-কর্মীদের লালন-পালন করেছে। এই লালন-পালনের দায়ভার অবশ্যই সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক হিন্দুদের ‘মালাউন ’ বলেছিলেন, সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি শেখ হাসিনা। কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার হিন্দুদের দূর্গাপূজা নিয়ে কটুক্তি করেছিলেন, শেখ হাসিনা তার বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় রাজনৈতিক দল এবং যে দলটির হাত ধরে দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, সেই দলটির নিজের ইমেজের চেয়ে একজন ছায়েদুল কিংবা একজন বাহারের গুরুত্ব এত বেশি? এই দুই আসনে এই দুজনের বিকল্প কেউ ছিল না? না থাকলে তাহলে কী কচুর রাজনীতি করলেন আপনারা! আর থাকলে আপোস কেন করলেন?

বঙ্গবন্ধুর জীবনে রাহু ছিল শেখ মণি। এই বদমাশ স্বাধীনতাযুদ্ধের নয় মাস ভারতে বসে ভোগ-বিলাস-কামুকতায় ভেসেছে আর তাজউদ্দিনকে বিরক্ত করেছে। শেখ হাসিনার জীবনে রাহু তার বোন শেখ রেহানা এবং পদ-পদবী পাওয়া তার অন্যান্য আত্মীয়রা। আওয়ামী লীগ যদি নিজের ভালো চায়, তাহলে শেখ হাসিনার এই আত্মীয়দের বর্জন করে ফিরতে হবে।

যতই রাষ্ট্রের স্থপতি হোন, একজন ব্যক্তি বা একটি পরিবারের সদস্যদের নামে শত শত স্থাপনার নামকরণের স্বৈরসিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে। মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে, কোটি টাকায় মনোনয়ন বা পদ কিনলে, দুর্নীতি আর চাঁদাবাজি বন্ধ হবে না।

টাকা পাচার, নিয়োগ বাণিজ্য, ঘুষ, পরিবহন খাতের দুর্নীতি, খাদ্যপণ্যের সিন্ডিকেটের দৌরাত্মে জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল। প্রতিটা অন্যায়ের যদি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তাহলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ত না। যতই রাতের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসুক, মানুষ আওয়ামী লীগকেই চাইত, কারণ দেশের যতটুকুই উন্নয়ন হোক, এর সিংহভাগ হয়েছে আওয়ামী লীগের হাতেই। আওয়ামী লীগের আমলেও মানুষের জীবনযাপনের মান উন্নত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের কাঁচাঘর পাকা হয়েছে। যারা বিএনপির শাসন দেখেছে, সততা থাকলে একথা তারা অবশ্যই স্বীকার করবে।

বর্তমানের এই অবৈধ ও হন্তারক ইউনুস সরকারের কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষের আবেগ আবার আওয়ামী লীগের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ নিশ্চয় ফিরবে, কিন্তু আয়নার সামনে দাঁড়াতে হবে, বাহুল্য মেদ ঝরাতে হবে। সমালোচনা করা মানেই বিরুদ্ধতা নয়, কেউ তাদের ভুল ধরিয়ে দিলেই সে শত্রু নয়, এটা বুঝতে হবে। আবদুল গাফফার চৌধুরীর মতো লোকেরা চাটুকারিতা করে আওয়ামী লীগকে বিপথে নিয়ে যায়, সেটা আওয়ামী লীগকে অনুধাবন করতে হবে। শুভাকঙ্ক্ষী তো সে-ই, যে ভুল শুধরে দেয়। আওয়ামী লীগকে শুভাকাঙ্ক্ষী আর প্রসাদভোজীর পার্থক্য করতে বুঝতে হবে। মিথিলা ফারজানা, ফারজানা রূপারা প্রসাদভোজী। নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে এরা আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের বিরক্তির উদ্রেক করেছে। কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক হয়েছে। আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে যে সাবান মাহমুদকে পদ দিয়ে দিল্লী পাঠাতে হয় না, তাকে দিয়ে বড়জোর চেয়ার টানার কাজ করানো যায়।

আমি, আমি, আমি…..। আমি এই করেছি, আমি সেই করেছি, আমি ওটা দিয়েছি! এই আমিত্ব দূরে রাখতে হবে। শেখ হাসিনার প্রতিটা সংবাদ সম্মেলন ছিল আমিত্বময়। গণতন্ত্রে আমি বলে কিছু নেই, আছে স্বৈরতন্ত্রে।

মাদ্রাসায় লাগাম টানতে হবে, ওয়াজ পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। মুক্তচিন্তার প্রসার ঘটাতে হবে, সংস্কৃতির প্রসার ঘটাতে হবে। গ্রামাঞ্চলের মানুষকে সংস্কৃতিমুখী করতে হবে। আর ভাবতে হবে জলপাই বাহিনী নিয়ে। এই বাহিনী ভাত খায় ভাতারের, গীত গায় নাঙের। এই বাহিনী বাংলাদেশের যত দুঃখের কারণ। এই বাহিনীর খোলসটা বাংলাদেশী, কিন্তু ভেতরটা পাকিস্তানী। এরা পাকিস্তানী আদর্শ লালন করে। প্রতিবেশিদের সঙ্গে যুদ্ধ করার সামর্থ্য আমাদের নেই, কোনোদিন হবেও না। সুতরাং কাড়ি কাড়ি টাকা ব্যয় করে এই বাহিনী পোষা সাদা হাতি পোষার মতো! বঙ্গবন্ধুর উচিত ছিল বাহাত্তর সালেই এই বাহিনীকে ভেঙে নতুন কিছু করা। করেননি। তিনি ফল ভোগ করেছেন। এখন ভাবতে হবে। ভবিষ্যতে বিএনপি-আওয়ামী লীগ যারাই ক্ষমতায় আসুক, দেশের মঙ্গল চাইলে এটা নিয়ে তাদের ভাবতেই হবে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে-ই থাকুন, দল চালানোর ক্ষেত্রে স্বজনপোষণ বাদ দিয়ে তাকে যেমনি কঠোর হতে হবে, তেমনি জনগণের প্রতি থাকতে হবে দরদ, দরদ কেবল ভাষণে থাকলে হবে না। আর অবশ্যই তার অভিধানে দুঃখিত শব্দটি থাকতে হবে, রাজনীতি করতে গেলে ভুল হবে, দেশ পরিচালনা করতে গেলে ভুল হবে, সে-জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা প্রকাশ করতে হবে। শেখ হাসিনার অভিধানে দুঃখিত শব্দটা ছিল না।

সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যেও এই মানসিকতা থাকতে হবে। কিছুদিন আগে ভারতে রিপাবলিক বাংলা টিভির টকশোয়ের একটা ক্লিপস দেখছিলাম, সেখানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে অভিনয়শিল্পী ও আওয়ামী লীগ কর্মী রোকেয়া প্রাচী। উপস্থাপক তাকে প্রশ্ন করেছিলেন আওয়ামী লীগ আমলে হিন্দুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা নিয়ে। রোকেয়া প্রাচী অবলীলায় মিথ্যা বললেন, দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া আওয়ামী লীগের আমলে হিন্দুদের ওপর হামলা হয়নি।

কী মিথ্যাবাদী নারী! এই মিথ্যাবাদী আবার অভিনয়শিল্পী! আওয়ামী লীগ আমলে একের পর এক সংঘবদ্ধভাব হিন্দু, বৌদ্ধ ও আদিবাসীদের ওপর হামলা হয়েছে। রামু, নাসিরনগর, রংপুর, পাবনা, সুনামগঞ্জ, যশোর, নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রদায়িক হামলা হয়। আর ২০২১ সালে কুমিল্লার গদা ইকবালকাণ্ডকে কেন্দ্র করে প্রায় ত্রিশটি জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। হিন্দুদের বাড়িঘর-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুটপাট, ভাঙচুর ও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ এসব নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। ব্যর্থ হয়েছে। সেই ব্যর্থতা বিনয়ের সঙ্গে স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া উচিত। অথচ রোকেয়া প্রাচী সব অস্বীকার করে মিথ্যাচার করছেন। এই মিথ্যার রাজনীতি বন্ধ করে আওয়ামী লীগ হিন্দু-বৌদ্ধ-আদিবাসীদের কাছে ভুল স্বীকার করুক। যেভাবে সংস্কৃতিকর্মীদেরকে অবহেলা করেছে, হয়রানি ও নিগ্রহের হাত থেকে সংস্কৃতিকর্মীদের রক্ষা করতে পারেনি, তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করুক। মুক্তচিন্তার লেখক-ব্লগার কাছে দুঃখ প্রকাশ করুক। আওয়ামী লীগের প্রতি তাদের হারানো আস্থা পুনরায় ফিরিয়ে আনুক।

আওয়ামী লীগ ফিরবে, আওয়ামী লীগ না ফিরলে বাংলাদেশ চিরদিনের জন্য হেরে যাবে, অবশ্যই আওয়ামী লীগ ফিরবে, বত্রিশের ভাঙা বাড়ি আবার প্রাসাদ হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, কিন্তু পাহাড়সমান ভুল শোধরাবে কি?







সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৪৯
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এয়ার এম্বুলেন্স ও তিন বারের প্রধানমন্ত্রী’কে নিয়ে জরিপে আপনার মতামত দেখতে চাই॥

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:৩০

যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডন শহরে বসবাস করছেন। সেই দলের মূল নেত্রী অসুস্থ। আর তাকে চিকিৎসার জন্যে বিদেশ যাওয়ার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিবে কাতারের আমির। বিএনপি এবং জিয়া পরিবারের কি এতটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭


ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

পহেল গাঁয়ে পাকিস্থানি মদদে হত্যাকান্ডের জন্য ভারত পাকিস্থানে আক্রমন করে গুড়িয়ে দেয় , আফগানিস্থান তেহেরিক তালেবানদের মদদ দেওয়ার জন্য, পাকিস্থান... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×