১। প্রভাতের গভীর প্রদেশ
...........................
সকালের মৌনতা থেকে উঠে আসা
একটা ভাবনা খুব দুলছে মধুর হাওয়ায়,
নিঃশব্দে।
অপার্থিব।
যে দেখেছে, জানে না কি-
এ শুদ্ধতার জন্যই কিনা কাঙ্খিত পীড়ন, মনে।
ক্রমাগত ধাবমান সূর্যকিরণ তাকে
অযাচিত পৃথিবীমুখী করে দেয়।
তবে সেই হাওয়া, সেই জনহীন অপার চরাচরে
তরঙ্গে কেবল তরঙ্গ
বাতাসে, মেঘে ও মন্দিরে, শালে ও শিশিরে...
ধীরে ধীরে ফুরায় যে কেন!
হ্যা শব্দ, দিনের ক্যাচাল
আমি চাই সকালের মধ্যে
প্রভাতের গভীর প্রদেশে, এই ভোরে
সময়ের মৃত্যু
পৃথিবীর কিমাশ্চর্য প্রলয়!
২। ভোরের গান
................
খুব ভোরে ঘুম থেকে জাগা ভালাে
তাতে চুপচাপ সকালে
মেয়েলী কণ্ঠে পাখিদের কিচিরমিচির
যেহেতু মেয়েলী কণ্ঠ; ভালে লাগে।
সূর্যের আলোতে শিশুর গালের কমনীয়তা,
বাতাসে অপরিচিত যাজক নারীর ফিল
ভালো লাগে।
পথ ফাঁকা, মানুষের জঞ্জালহীন।
শুধু গাছ-
গাছ শুধু হাত নেড়ে কথা বলে ইশারায়,
আর চারপাশে আম গাছের পাতারা আজব
নিশাকে নকল করে
গুনগুন করে গান গায়!
চাঞ্চল্য উসকে দেয়, ভালােতো লাগেই!
৩। নিজ রক্ত স্রোতে
...................
বুকের ভেতর নাচে নাচে কাঁচের ময়ূর
তাতে খুলে পড়ে খান-খান কাঁচের পেখম
শব্দ নেই লব্ধ জ্ঞানে ধাঁধাঁ, এহেন ভাংচুর
ভয়- নাচে শিখা, তার সাখে যৌথযন্ত্রে মোম।
শিখার প্রখর বোধ, কম্পপ্রাণে ষড়যন্ত্র জ্ঞান
ময়ূর নাচিছে কাঁচে, কাঁচ নাচে ময়ূরে ময়ূরে
কান নেই; ধমনীতে শোনে শিরা কাঁচের আজান
তা শুনিয়া অন্তঃপ্রাণ রক্ত ছুটে নদী রূপ ধরে।
ও নদীতে কে-রে ওই নৌকা বায়, ধরে ভাটিয়ালি
নিজ রক্ত স্রোতে ভেসে বাজি গান, কাটা ফালি ফালি!
৪। যৌথ জীবন
....................
নদী নাকি মারনাস্ত্র-
কে রাতে ডেকেছে নিষ্ঠায়!
মাত্রতো জন্ম নিলাম
এরই মধ্যে নর্তকি নিশান তুলে
বৈঠকে বসেছে বয়স!
মৃত্যুর রুমালে ফুল তুলছে ধোয়া
আধশোয়া ভঙ্গিতে নির্দেশ করছে প্রতিবিম্ব,
আয়নার তাতে আছে সহমত।
আর সে পাকা চুল খুঁজতে এসে
পরে নিচ্ছে নথ স্বেচ্ছায়।
নদী নাকি মারনাস্ত্র, কে ডাকে-
তাতে সাড়া দিয়ে যৌথ জীবন গড়ায় ধুলায়
পৌর এলাকায়!
৫। চিরতা
..........
কমলালেবু হাতে পেলেই আমি
পৃথিবী ভেবে কচলাতে থাকি
ভুবন তাতেই তিতা লাগেরে চিরতা!
৬। অলস দিন
...............
বিকেলের দিকের বাতাসের সাথে
সকালের বাতাসের পার্থক্য বিষয়ে
ভাবতে গেলে আলগোছে রাত নেমে আসে।
আমি বসে থাকি, বসেই থাকি
বারান্দায় বসে থাকতে থাকতে
থাকতে থাকতে শেকড় গজায় পায়ে,
শরীর ডালপালা-
ডালে ডালে ঝিরঝিরে পাতা।
রাতের পৃথক বাতাস আসেন-
আমার শরীর,
শরীরের ডালে ডালে পাতারা
তাতে শরশর করে বাজে!
৭। সদরঘাট
....................
এই ধুলার প্লাবন-
খররৌদ্র, ঘোড়ার গাড়ি।
সেলুনে ক্ষুরের নিচে
ক্যাজুয়ালি হিন্দি গান শুনতে থাকা
রাংতা যুবক।
দুপুরে শ্যাওলা চোখ
ফুটপাতে চশমা বিক্রেতা,
হকারের সাঁঝিতে কৃষকের প্রতিনিধি।
সিনেমা হলের নিচে, টিকেট, টিকেট-
বাইরে মেকাপ মলিনমুখ নারী
মুখে বিক্রির বিজ্ঞাপনি ইমো।
ওই যে নদী অভিসুখে দাঁড়ানো অসুখ
বাতাসে দুলছে জামা, নাকি পাল!
সেকি তবে ভাসছে অন্তর্লীন
ভেসে চলছে, জীবন যে দিকে যায়!
কোথাও, কোথায়!
৮। মেঘ
........
ওইসব তামার গাছ
মহিষের পাল, তুলার পাখিরা
বিকেল সাঙ্গ করে ফেরা বালকের ঝামামুখ
চুমুর আচ্ছন্নতা হাতের উল্টো পিঠে মুছে
ব্যাচে পড়ে ফেরা জোরকদম তরুণীর গতি
ছাতা মাথায় বৃদ্ধ হাটুরে
তারা সব ডানা পেয়ে ওড়ে
সন্ধ্যার আকাশে!
৯। অন্য কোনো কিছু
……………
ভাঙা সাঁকোর ওই পাড়ো থাকো
মাঝে যে নদী তার এতো স্রোত, প্রবাহট্রবাহ
কলার ভেলা নিয়ে আসবে ভাবি
আসবে তো বটেই, ভেলায় বা সাঁতরে একদিন।
কিংবা ঘুরপথে- উড়েও আসতে পারো, পারো নাকি?
শুনেছি, ভাঙা সাঁকোর ওই পাড়ে থাকো
কখনও দেখিনি!
১০। পিপাসার ফাঁদ
..............
সীমাহীন দুপুরদিনে
একটা শিরিষ গাছের নিচে এসে থেমেছে জীবন-
হাতের উল্টা পিঠে তার মুছে নিক
কালের অর্থহীনতাকে।
ডিপ ফ্রিজের বোতলে লুকানো মেরু অঞ্চল
তাতে চুমুক দিতে দেবে না আলস্যের শরীর।
ধীর,
দূরে ধীরে চলে যাওয়া নদী তাও
পিপাসার ফাঁদ পেতে রাখে!
১১। সন্ধান
............
ঘড়ির মধ্যে সর্বভুক নদীর তুফান!
নদীর ঢেউয়ে গম্ভীর গোঙায়
ভাঙনে সাবাড় ভিটাবাড়ি,
পানিকে অস্ফুটে গাল দেয় পাড়ের বটগাছ!
তাগড়া স্রোতের টান
থাবা মেরে গিলে নিলে গা’য়ের মসজিদ,
মিথ থেকে উঠে আসে আজারবাইজান।
প্রবাহের তোড়ে মাঝির নৌকা ছোটে
মাঝ দরিয়ায়, তার নির্বিকার জালে
কিমাশ্চর্য মাছ
মাছের পেটে ধীবরের পিতার কঙ্কাল ওঠে বুঝি!
সীমাহীন বুভুক্ষু নদী ডাকছে নিরন্তর
ভাবি, যাবো।
ঘড়িতে ডুব দিয়ে তুলে আনব প্রপিতামহের ঠিকুজি!
১২। সামার ভ্যাকেশন
......................
বিলের জরায়ু হাতড়ে খুঁজছে মাছ
যে ধীবর সে আবার কৃষকও।
মাছ ধরে রাখছে খালুইয়ে,
পানির নিচ থেকে না দেখেই
কিভাবে সে মাছ ধরে ফেলে
এ প্রশ্নের মধ্য থেকে
মাঠহীন এক স্কুলে পড়ুয়া বালক
তার বাসার গরাদের মতো বেলকনি,
বিষণ্ন ভিডিও গেমস রিমোট, কোচিং সেন্টারের
সিঁড়ির না আলো না অন্ধকার উঁকি মারে।
আর তার উত্তরে সাদাসিদে শরৎ মুখ ধীবরের;
দিগন্ত থেকে উড়ে আসা বাতাসে
রাখাল ঘাসের ডগার সাথে হচ্ছে বদল!
তাতে বেজে ওঠে অ্যালার্ম ঘড়ি
আর বালকের চোখের প্রশ্নবোধক ফনা ভাবে-
বাসার গরাদের মতো বেলকনি,
বিষণ্ন ভিডিও গেমস রিমোট, কোচিং সেন্টারের
সিঁড়ির না আলো না অন্ধকারের বিনিময়ে;
ওই নদী,
নদীতে মাছ ধরতে থাকা ঘাসের ডগা
ধান ক্ষেত, ক্ষেতের দখলদার বাতাস
পাওয়া যাবে কিনা!
১৩।
সন্ধ্যা
….
পৃথিবীর ধূসরতম একা সন্ধ্যা আমি দেখেছি
কতো যে শীতকালে।
১৪। রীতিমতো
......................
চাঁদ-তারা পোড়া ছাই ওড়ে
ওড়া তার অনিবার্য
শুয়ে থাকি ধুলার সাগরে
শিরধার্য
সময়ের কাজটাজ আছে
নিজেরই দাঁড়িগোঁফ না গজানো মুখ
খুঁজি নায় তার আনাচেকানাচে
প্রস্তরিত উষ্টা খেয়ে যদি, পা কাটার আগে
পাথরের কাছে দাবি ধার
রাতের পাঁজর ভেঙে ঢুকেছেন সূর্য
এই কাজ তার-
বহুদূর যাওয়ার অভিযানে
হার মেনেটেনে
আমি যাই নদীর বাগানে যাই
রীতিমতো মাছেদের সাঁতার শেখাই!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৩৭