ধর্মীয় অনুভতিতে আঘাতের অভিযোগে বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্ঠী ও তাদের সমমনারা বিভিন্ন সময়ে ব্লগারদের একাধিক তালিকা প্রকাশ করে। ব্লগারদের একাধিক তালিকা সংখ্যা প্রায় ৮০ থেকে ১০০ জন। আংশকার কারণ হলো, লিস্টগুলোতে যাদের নাম ছিল তাদের কয়েকজনকে হত্যা করেছে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীরা ।গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ সরকার আইন, তথ্য ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে নয় সদস্যের একটি কমিটি করে। বিভিন্ন মহল থেকে প্রায় শতাধিক ব্লগারের একটি তালিকা কমিটির কাছে আসে। ৩১ মার্চ ব্লগারদের একটি তালিকা দেয় হেফাজতে ইসলাম। আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত নামে আরেকটি সংগঠন ৫৬ জনের একটি তালিকা দেয়। ফেসবুক গ্রুপ ‘বাঁশের কেল্লা’ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্টের একটি তালিকা প্রকাশ করে। সরকার এই সময় নিজে একটি তালিকা করে ,কয়েক টি অভিযান চালিয়ে ওই তালিকায় থাকা পাঁচ ব্লগারকে গ্রেফতারও করা হয়।অনেক ব্লগারকে সতর্ক করা হয়। একই বছর অক্টোবর মাসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান পরিচয় দেওয়া মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীকে গ্রেফতারের পর তার কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে ৮৪ জনের নামের একটি হিটলিস্ট পায় পুলিশ। ‘হিট লিস্ট’ অনুসারে হত্যার ঘটনা ঘটলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এ ঘটনাগুলোতে এখন পর্যন্ত তদন্তের তেমন কোনো অগ্রগতি করতে পারেনি। মামলার মতো মামলা হচ্ছে কিন্তু তদন্তের অগ্রগতি হচ্ছে না। এ সকল ঘটনার মধ্যে শুধু ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যায় অংশ নেওয়া দুজন ছাড়া আর কাউকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তাও এ ঘটনায় যে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের জনসাধারণ বিশেষ করে একজন হিজড়া সহায়তা করেছিলেন। এমনকি লিস্টে যাদের নাম রয়েছে তাদের নিরাপত্তার জন্যও তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে। অভিযোগ আছে সদ্য খুন হওয়া ব্লগার পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চাইতে গেলে পুলিশ তার আবেদন প্রত্যাখান করে, বিদেশে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তালিকাটি থাকলেও ব্লগারদের নিরাপত্তায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। বর্ং , অভিজিৎ রায় খুনের পর সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে গোয়েন্দাদের কিছু ব্লগ নজরদারির নির্দেশনা দেয়া হয়। এমনকি উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এসব ব্লগারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি অভিযান চালাতেও বলা হয়েছে গোয়েন্দাদের। তাই একদিকে জঙ্গীদের হত্যার পরোয়ানা অন্যদিকে গ্রেফতার আতঙ্কে তালিকায় থাকা অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। যারা যাননি, তারা আছেন কার্যত স্বেচ্ছাগৃহবন্দী। সংগঠনগুলোর দেওয়া এ তালিকাগুলোতে মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও লেখক অভিজিৎ রায়, মুক্তমনা ব্লগের আরেক ব্লগার, লেখক ও ব্যাংকার অনন্ত বিজয় দাশ, গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ও অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন এবং নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়ের নাম ছিল। তবে অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবুর নাম এ লিস্টে ছিল না। তালিকায় কয়েকজন ব্লগার হলেন— আসিফ মহিউদ্দিন,ফরহাদ উদ্দিন স্বপন, মমতা জাহান, রাতমজুর, কৌশিক, মেঘদূত, স্বপ্নকথক, প্রায়পাস, আহমেদ মোস্তফা কামাল, লুকার, নুহান, সোজাকথা, ট্রানজিস্টার, দিওয়ান, রিসাত, আমি এবং আধার, অরণ্যদেব, কেল্টুদা, আমি রোধের ছেলে, ভিন্ন চিন্তা, আউটসাইডার, প্রণব আচার্য্য, , আবুল কাশেম,দূরের পাখি, রাস্তার ছেলে, আরিফুর রহমান, মনির হাসান, বৃত্তবন্দি, সবাক, শয়তান, মনজুরুল হক, কখগ, রাসেল,খাদক, লোটাস, নাস্তিকের ধর্মকতা, আরিফুল হক তুহিন, তিতি আনা, নাজিম উদ্দিন, আলমগীর কুমকুম, ফরহাদ উদ্দিন স্বপন, দস্যু বনহুর,মনু আউয়াল , ফারহানা আহমেদ, ঘনাদা, রাহান, অন্যকেউ, পাপী০০৭, হোরাস, প্রশ্নোত্তর, ভালোমানুষ, ভুপীর, বৈকুণ্ঠ, সত্যান্বেষী, শুভজিৎ ভৌমিক, সুমিত চৌধুরী, সৈকত বড়ুয়া, সুব্রত শুভ, সুশান্ত দাস গুপ্ত,পড়ুয়া, হাল্ক (সানাউল), বিপ্লব০০৭, ঘাতক, বিশাল বিডি, সাহোশি ৬, লাইটহাউজ, মমতা জাহান, রাতমজুর, কৌশিক, মেঘদূত, স্বপ্নকথক, প্রায়পাস, আহমেদ মোস্তফা কামাল, লুকার, নুহান, সোজাকথা, ট্রানজিস্টার, দিওয়ান, রিসাত, আমি এবং আধার, অরণ্যদেব, কেল্টুদা, আমি রোধের ছেলে, ভিন্ন চিন্তা, আউটসাইডার, প্রণব আচার্য্য,জলবেশ্যা, আসিফ মহিউদ্দিন, আবুল কাশেম, আলমগীর হোসেন, আশীষ চ্যাটার্জি, বিপ্লব কান্তি দে, দাঁড়িপাল্লা ধমাধম (নিতাই ভট্টাচার্য), ইব্রাহীম খলিল সবাগ (সুমন সওদাগর), কৌশিক আহমেদ, নুরনবী দুলাল, পারভেজ আলম, রতন (সন্ন্যাসী), সৈকত চৌধুরী, শর্মী আমিন, সৌমিত্র মজুমদার (সৌম্য), আল্লামা শয়তান (বিপ্লব), সৈয়দ কামরান মির্জা, তাহসিন, তন্ময়, তালুকদার ও জোবায়ের সন্ধি। তালিকাগুলোতে যাদের নাম রয়েছে তাদের অনেকেই ছদ্মনামে পরিচিত।অনেকের সামাজিক যোগযোগ সাইট ও হাইড করা । কিন্তু আশ্চার্য জনক হলে ও সত্যি উগ্র জঙ্গি সংগঠন গুলো স্লিপার সেল দিয়ে তাদের সঠিক পরিচয় ,ঠিকানা বের করে ঠান্ডা মাথাই হত্যাকান্ড পরিচালনা করছে । হত্যাকান্ডের জন্য স্লিপার সেলের সদস্যদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।এর মধ্যে আনসারুল্লাহর স্লিপার সেল সক্রিয় থাকায় কাউকে টার্গেট করলে দ্রুতই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে তারা। গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছে ব্লগার বাবু হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার জিকরুল্লাহ ও আরিফুল। তারা দুই জনই চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র।শুধু ব্লগার নয়, ধর্মীয় মতাদর্শগত বিরোধের কারণেও খুন করে ওরা। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ধর্মীয় বিষয়ে টিভি উপস্থাপক নূরুল ইসলাম ফারুকী এবং গোপীবাগে ইমাম মাহাদীর প্রধান সেনাপতি দাবিবার লুত্ফর রহমানসহ ৬ জনকে জবাই করে হত্যা করে তারা।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৩০