যুদ্ধাপরাধ বিচার পাশ্চাত্যের সতর্ক মনোভাব
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ২৯ জুলাই ‘বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারে প্রশ্ন তোলার অধিকার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নেই’ বলে যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে পাশ্চাত্য দেশগুলো ও বাংলাদেশের মহাজোট সরকারের মধ্যে মতানৈক্যের সুস্পষ্ট স্বীকৃতি দিলেন। সরকারের কোনো মন্ত্রী ইত:পূর্বে কোনো পাশ্চাত্য সরকারের মনোভাব সম্পর্কে এমন কঠোর বক্তব্য দেননি। আইনমন্ত্রী তার বক্তব্যে এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকারের অধিকার বা এখতিয়ারকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেন!
সিপিবি আয়োজিত আলোচনা সভায় মন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে বলে দিতে চাই, ৩৯ বছর আগে যখন এ দেশে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হলো, দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত নেয়া হলো, এক কোটি মানুষকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হলো তখন আপনাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল? সে দিন কি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়নি? সেই ঘটনার বিচার করলে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার কারোই নেই।’
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে পাশ্চাত্য দেশগুলোর সক্রিয় সহযোগিতার পরিবর্তে শীতল সতর্ক দৃষ্টি রাখার মনোভাব, সরকারি দলের মধ্যে উগ্রপন্থী ও মধ্যপন্থীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যবধান ও সর্বোপরি ব্যাপক জনসমর্থন জাগাতে ব্যর্থতা, সরকারকে যুদ্ধাপরাধের বিচারে একধরনের লক্ষ্যহারা বিভ্রান্ত অবস্খায় ফেলেছে। এর লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে সরকারি দলের নেতানেত্রীদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যগুলো প্রকাশের মধ্যে।
আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ১৭ জুলাই বলেছেন, ‘চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের’ চলতি বছরের মধ্যেই বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তিনি আরো বলেন, ‘পঞ্চম সংশোধনী রায় বাতিলের মাধ্যমে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে।’ ২২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হাতে নিয়েছি’ বলে অভিহিত করে ঘোষণা দিলেন, ‘জামায়াতকে আমরা নিষিদ্ধ করব না। সবার রাজনীতি করার অধিকার আছে।’ সম্ভবত, তার এ বক্তব্যকে যুদ্ধাপরাধী বিচারের ব্যাপারে তার উৎসাহে ভাটার প্রকাশ বলে ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে মর্র্মে উপদেষ্টিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী ২৩ জুলাই সাতক্ষীরায় আইলা-দুর্গতদের মধ্যে অর্থ সাহায্য বিতরণ অনুষ্ঠানে বললেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এ বছরই হবে।’ দরিদ্র জনগণকে সাহায্য বিতরণকালে যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রসঙ্গ আসে কেন? এর কারণ, প্রধানমন্ত্রীর যুদ্ধাপরাধী বিচারের উদ্যোগে যে ভাটা পড়েনি, তা প্রথম সুযোগেই জাতির কাছে ব্যক্ত করার জরুরি তাগিদ।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও স্খানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ২২ জুলাই রাজশাহীতে যুবলীগের সমাবেশে বললেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে জামায়াত যত না বেশি কথা বলে, তার চেয়ে এক শ’ ভাগেরও বেশি কথা বলে বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়া। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় বেগম জিয়া মরিয়া হয়ে উঠেছেন।’ ইত:পূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার প্রকাশ্য বক্তব্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্য বেগম জিয়া আন্দোলনে নেমেছেন বলে অভিযোগ তোলেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




