somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জোনাক রাত্রি

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৫:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত বাড়লে তরু চুপ করে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায়। নিচে রাস্তায় টুং টুং শব্দে রিকশা চলে, গাড়িগুলো উজ্জ্বল হেডলাইটের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে দেয় পথচারীদের। দু'একজন দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে যায়- তরু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। নিজেকে তার হঠাৎ হঠাৎ পথের মত মনে হয়। পথ- যার উপর দিয়ে লাখো মানুষ পার হয়ে যায় প্রতিদিন। অথচ কেউ তাতে দাঁড়াতে চায় না। পথের বুকে সবার স্থান, কারো বুকে পথের স্থান নেই.........
...........................................................
জানালায় দাঁড়িয়ে তরু চাঁদ দেখে। শহরের মানুষ শুক্লপক্ষ কৃষ্ণপক্ষের হিসাব রাখে না, তরু রাখে। সে কৃষ্ণপক্ষের রাতগুলো ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রাস্তা দেখে। শুক্লপক্ষে রাস্তা দেখে না সে, চাঁদ দেখে। তার চাঁদটা মুক্ত না। তার চাঁদটা দাগকাটা, তার আকাশটাও অবারিত না, তার আকাশ এক টুকরো, এক জানালা। গ্রীলের দাগকাটা আকাশ আর চাঁদ দেখেই সে অভ্যস্ত।
তরু বেশ কয়েক মাস আগে তার নানাবাড়িতে গিয়েছিল, প্রথম ঢাকার বাইরে। ছাদে উঠে সে আকাশ দেখেছিল। তাতে বিশাল চাঁদ। হঠাৎ তরু যেন একটা স্ফুলিঙ্গ চট করে জ্বলে নিভে যেতে দেখেছিল। আরো অনেকক্ষণ ছাদে থেকে সে অপেক্ষা করল বিষয়টা আবার ঘটে কিনা দেখার জন্য। কিন্তু আর ঘটল না। তার উত্তেজিত বিবরণ শুনে সবাই হেসেই খুন- সে নাকি জোনাকী পোকা দেখেছে। তরু বহুবার জোনাকীর কথা বইয়ে পড়েছে, কখনো দেখেনি। জোনাকী কি পোকা! যে ছোট্ট প্রাণীটা তার শরীরে আলো নিয়ে ঘোরে তাকে পোকা বলা মানুষকে কতটুকু সাজে?
যেটাই হোক, তরু মুগ্ধ হয়েছিল। বাড়ি ফিরে ডায়রিতে সে তার জোনাকী দেখার পুরো বিষয়টি লিখে রাখল। তার দুর্ভাগ্য না সৌভাগ্য কে জানে, সে আর কখনো জোনাকী দেখেনি।

তরু ঢাকার আকাশে যে দু' একটা তারা জানালার ফাঁক গলে দেখতে পায় তাদের সাথে তার দেখা জোনাকীটার আলোকে মিলিয়ে দেখে। জোনাকীটাই বোধহয় বেশি সুন্দর ছিল। রাতে ঘুমাতে যাবার আগে আকাশ দেখার সময়টা তরু কি মাঝে মাঝেই একঝাঁক তারার পরিবর্তে একটা উড়ন্ত জোনাকীর জ্বলে ওঠা দেখার আশা করে না?
করে।
কিন্তু ঢাকার আকাশে জোনাকী দেখা যায় না।
..........................................................
আজ রাতে কোন একটা কারণে তরুর খুব মন খারাপ। তরু খুব চাইছিল সে একটা জোনাকী দেখবে আজ রাতে। আলতো হাতে জানালার পর্দা সরিয়ে সে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। টুং টুং শব্দে রিকশা চলে। রাস্তার নিয়ন আলোয় অন্ধকার আরো জমাট বেঁধে থাকে। গাড়িগুলো শাঁ শাঁ শব্দে ছুটে যায়। হঠাৎ দু' একটা গাড়ির মন্দগতি দেখে তার মনে হয় গাড়িটা সত্যিই হয়ত তাদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে যাবে। সেখান থেকে অতিপ্রিয় কোন একজন মানুষ বেরিয়ে আসবে। তাকে জানালায় দেখে হেসে হাত নাড়বে.........
কেন জানি কথাটা ভেবেই তরুর মনটা আরো বিষন্ন হয়ে ওঠে। চোখে পানি চলে আসে তার। ঝাপসা চোখে সে গাড়িটার ধীরে চলে যাওয়া দেখে........ কেউ বেরিয়ে এসে বলে না,'দেখেছ তরু, কি চমৎকার রাত আজ! চল, দূরে কোথাও ঘুরতে যাই।'
এই দূরে কোথাওটা যে ঠিক কোথায় তরু জানে না........ কেবল মনে হয় অ-নে-ক দূরে। এতটাই দূরে যতটা দূরে গেলে এই ব্যস্ত শহরটাও মায়ার শহর হয়ে ওঠে। এই শহরের হেডলাইটের আলোগুলো যেখান থেকে জোনাকীর মত ছোট্ট দেখায়, ততদূরে.......

তরু যাবে, তত দূরেই যাবে। একদিন এই শহর থেকে অনেক দূরে......... বহু দূরে। যেখানে কারো হাত ধরে গাড়ি থেকে নেমে বিশাল উপুড় করা আকাশে তারার মেলা দেখা যায়। না, তরু সেদিন আকাশে তারা দেখবে না, সে দেখবে জোনাকী, শত শত জোনাকী সেখানে বার বার জ্বলে উঠবে.......
ফিরে এসে তরু জোনাকীর ছবি আঁকবে, অনেকবার চেষ্টায়ও যেটা সে করতে পারেনি। জোনাকীর মত তার ছবিতে স্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠবে.......
তরু ভিজা চোখে দু'হাতে বালিশ জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।
রাতে সে স্বপ্ন দেখল।
অদ্ভুত একটা স্বপ্ন ........... সে একটা জায়গায় ঘুরতে গিয়েছে। নির্জন আধা গ্রাম- আধা শহর ধরনের জায়গাটা। গাড়ি করে আসেনি, রিকশা করে এসেছে। তার পাশে কে একজন অচেনা মানুষ। তরুকে সে বলছে,'তরু জোনাকী দেখবে না? এসো আমার সাথে....'
তরু তার পিছন পিছন হাঁটছে... তাল রাখতে কষ্ট হচ্ছে তার... তবু হাঁটছে......একটা অদ্ভুত জায়গায় এসে ছেলেটা থেমে যায়। তরু ছেলেটার মুখটা দেখার চেষ্টা করে, কিন্তু ছেলেটা যেন নিজেকে লুকাচ্ছে.....
তরু অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে ঝোপে ঝোপে জোনাকী জ্বলছে, উড়ে বেড়াচ্ছে জোনাকীরা। শত শত জোনাকী। টিপ টিপ করে জ্বলছে, হাত বাড়ালেই তাদের আলোটা ছুঁয়ে দেয়া যায়। তরু কি একটা কথা বলার জন্য ফিরে দেখে ছেলেটা নেই!
গেল কোথায়! তরু একঝাঁক জোনাকীর মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। জোনাকীর আলোয় যতদূর দেখা যায় তরু দেখতে চেষ্টা করে, ছেলেটাকে দেখা যায় না..................

সাথের মানুষটা নেই বলে তরুর বেশ একটু খারাপই লাগে, থাকলে তাকে জোনাকী ধরে দেয়া যেত। তরু একটা জোনাকী হাতে ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে...........
জোনাকীটা তরুর হাতে জ্বলছে, নিভছে।
এটা সেই মানুষটার জন্য একটা ছোট্ট উপহার, যে তাকে জোনাকীর দেশে নিয়ে এসেছে.........
এটা তার জন্য.........
কেবলই তার জন্য...........
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:০৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×