আজ সারাদিন মন কেড়ে নেয়া ঝিরঝির বৃষ্টি। ঢাকা ছেড়ে চলে আসার পর থেকে বৃষ্টি খুব মিস করছিলাম। নিজের চির পরিচিত বেডরুমের রহস্যময় গ্লাসডোরটার কথা মনে এলেই মন এলোমেলো হয়ে যায়। কত নির্জীব দিন রাত পার করা মুহূর্ত, কে তার হিসেব রাখে। কখনোকি ভেবেছিলাম, একদিন আমি আমার বৃষ্টি দেখা নিয়ে ভাবনার তলিয়ে যাবো? নাহ, কখনই তা’ ভাবিনি। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছি আজ সারাদিন একটু পর পর। যেন পরিচিত মুখ খুজে বেড়াচ্ছি। বাচ্চার হাত শক্ত করে ধরে বসে থাকা রিকশায় মায়ের মুখ, ফেরিওয়ালা, ভেজা পলিথিন মাথায় দিয়ে খালিগায়ে রাস্তার পানিতে পা ডুবিয়ে হেটেচলা ছোট ছোট ছেলেমেয়ের দল, দুপাশে ঢেউয়ের মত পানি সরিয়ে অবহেলায় ওয়াইপার নাড়তে নাড়তে গাড়ির চলে যাওয়া, তাতে কে ভিজলো, কে ডুবলো কার কি এসে যায়? নাহ কারো দেখা মেলেনি আজ।
এখানে স্কুল বাস মহা মূল্যবান বাহন। সকালে বৃষ্টি দেখতে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমার জানালায়, দেখলাম রাস্তায় একটা স্কুল বাস একটা বাচ্চাকে পিকআপ করার জন্য দাড়ালো, তার পিছনে কিছুক্ষনের মধ্যেই ৬-৭ টা গাড়ির লাইন পরে গেল …কোন শব্দ নেই, স্কুল বাসকে ওভারটেক করা যাবে না, হর্ণ বাজানো যাবে না, কারো মাঝে কোন ব্যস্ততা নেই – অলস পায়ে ফুটফুটে একটা বাচ্চা ছেলে রেইনকোট সামলে, রাস্তায় জমে থাকা পানি কাটিয়ে বাসে উঠলো…মুখটা হাসি খুসি, বাচ্চার মা তাকে হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে গেটের ভেতরে ঢুকলো। বাসটা চলতে শুরু করলো, সাথে সাথে পেছনের গাড়িগুলো। মন চলে গেলো দেশে, একদিন বৃষ্টি্র দিনে রাস্তার গাড়ি স্কুলড্রেস নষ্ট করে দেয়ার বাড়ি ফিরে এসেছিলাম। পরে ছুটির এপ্লিকেশনে লেখা হয়েছিল ঠান্ডা লাগায় স্কুলে যেতে পারিনি। একটু মুচকি হাসলাম। এইতো সেদিনের কথা… দেশে আজকের মায়েরাও কি একই এপ্লিকেশন লিখে? এমন একটা সমাজ কেন যে হলনা দেশে যেখানে বাচ্চাকে স্কুলে পৌছানো মায়ের জন্য টেনশন না হয়ে আনন্দের মুহূর্ত হবে?
আমার ছাদের গাছে কি লিলিফুল ফুটেই যাচ্ছে এই বরষায়? কে জানে? একদিন যদি গিয়ে দেখে আসা যেত। শিউলী গাছটাকি প্রস্তুতি নিচ্ছে পূজার আগেই ফুল ফোটাবার? কে জানে? কাকে প্রশ্ন করি? এসব প্রশ্ন করলে অনেকেই হাসে। ঘোর বরষায় আমার আরেকটা প্রিয় কাজ ছিল গরম চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে চা খাওয়া। বৃষ্টির পানি আর আমার ভাবনার বিন্দু কখন যে মিলে মিশে চায়ের কাপে পড়তো খেয়াল করতাম না… তার সাথে কখনো কখনো যোগ দিত একলা চাঁদ। আমরা খুব আড্ডা দিতাম গোপনে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




