আমার মা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী ছিলেন। সেই সুবাদে, অথবা নিজ আগ্রহেই গড়ে তুলেছিলেন বিশাল এক ব্যাক্তিগত লাইব্রেরী। ছোটবেলা এই লাইব্রেরীর বই আমার জন্য নিষিদ্ধ ছিল। সে সময় আমার "গল্পের বই" পড়ার উপর নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা আরোপিত ছিল। তবে খুব ছোটবেলায়, মনেও নেই কত আগে, আমার বই পড়ার নেশার সূচনা। আর তার কিছু পরেই আমি মায়ের লাইব্রেরী থেকে বই চুরি করে পড়তে শুরু করলাম। এখন মনে পরছে, খুব সম্ভবত ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় সুনীল গঙ্গোপধ্যায়ের "রাধা-কৃষ্ণ" বই হাতে ধরা পরেছিলাম। কি লজ্জা যে সেবার পেলাম! আবার বেশ কিছু সুখ-স্মৃতিও রয়েছে, মনে পড়ছে, বইমেলা শেষে খুব রাতে (ছোট আমার হিষেব মত) ছোট কাকু-মা আর আমি বেবী-ট্যাক্সির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি, এক-একজন জ্ঞানের ভারে নিমজ্জিত
একটা সময় আমরা সবাই (মা, বোন, আমি) বাবার সাথে বসবাসের জন্য তার কর্মক্ষেত্র আরবদেশে চলে গেলাম। পেছনে রয়ে গেল মায়ের বইয়ের অমৃতভান্ডার। যাদের উপর দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন, তারা বছরের পর বছর সব তালাবদ্ধ রেখেই সব কর্তব্য শেষ করেছেন। বইয়েরাও এত অবহেলা সইবে কেন, ম্রিয়মান হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
তার বেশ কয়েক বছর পর, আমার ও' লেভেল পরীক্ষা শেষে লম্বা ছুটিতে দেশে বেড়াতে এলাম। বড় মানুষী বড় মানুষী ভাব, বই সব পুনোরুদ্ধারের চেষ্টা চালালাম, আর সেই সাথে সাথে অসাধারন কিছু বই হাতে পেলাম। তেমনই একটি বই সত্যেন সেনের "পুরুষ মেধ"। বইটি আধা-আধি পড়ার পর কোনো একটি দাওয়াতে দিন-দুয়েকের জন্য দাদা-বাড়ির পাশের গ্রামে যেতে হয়েছিল। বইটি খুব নাজুক অবস্থায় থাকায় সাথে নিলাম না। এবং যথারিতী বইটি হাড়িয়ে গেল। তারপর থেকে কত যায়গায়, কতজন কে যে এই বইয়ের কথা জিজ্ঞেস করলাম তার হিসেব নাইবা দিলাম।এখনও অপেক্ষায় আছি, যদি কোনোদিন বইটি পুনঃপ্রকাশ পায়। আবার এও ভাবি যে "পাঠকের মৃত্যু"র পুনারবৃত্তি আবার না হয়
কত অজানারে জানাইলে তুমি, কত ঘরে দিলে ঠাঁই
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০১