somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাপলা-শালুক স্মৃতি

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





ছোট ডল পুতুলের মত মেয়েটি অবাক চেয়ে রয়। তার তিন বছর বয়সে সে এত অপার সৌন্দর্য্যের মুখোমুখি হয়ত আর হয়নি। অথবা এই প্রথম বারের মত হয়ত তার বিশাল চোখদুটি সুন্দর বুঝতে শিখলো। তাদের ছোট ছই নৌকাটি লাল শাপলার বিস্তির্ণ বন পেরিয়ে যাচ্ছে। একটু হাত বারালেই ওর ছোট্ট মুঠিতে ধরা দেবে সুন্দর। হঠাৎ করে কালো জলে ত্বরিতবেগে হলদে ডোরাকাটা একটা সাপ ছুটে গেল। মেয়েটি আতংকে ছোটকাকুর গলা জরিয়ে ধরল। এই প্রথমবারের মত সে হয়ত ভয়কেও চিনতে শিখল।

ছইয়ের ভেতর বসে আছে মেয়েটির দাদী, দুধ-সফেদ শাড়িতে পবিত্রতার প্রতিমা। তিনি ছোট ছেলেটার উপর বেশ বিরক্ত বোধ করছেন, তার অতি আদরের নাতনীটি রোদে কষ্ট পাবে তা তিনি সহ্য করতে পারছেন না। যদিও আষাড়ি মেঘ বেশ ছায়া দিয়ে রেখেছে, তবুও ভ্যাপসা গরম অসহনীয় লাগছে। মেয়েটির অবশ্য সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, সে তার পারিপার্শ্বিক অবস্থাতে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে আছে। দাদী কয়েকবার ছেলেকে ডাকলেন, কিন্তু মেয়েটির ছোটকাকু গলা ছেড়ে গান গেয়ে চলেছেন একটার পর একটা, মাঝে মাঝে একটু থেমে মেয়েটিকে শাপলা তুলে দিচ্ছেন। ছোটকাকু গেয়ে চলেছেন ও নদীরে একটি কথাই শুধাই শুধু তোমারে...

বেশ কয়েকঘন্টা পর দুরে দেখা গেল ছোট ছোট দ্বীপ জেগে উঠেছে, আর তার তীর লোকেলোকারণ্য হয়ে আছে। কাছে যেতেই মেয়েটির ছোটকাকু তাকে দাদীর কোলে দিয়ে হাটুপানিতে নেমে মাঝিকে নৌকা টেনে নিতে সাহায্য করতে লাগলো। আরেকটু এগিয়ে যেতেই কেউ ছোঁ মেরে মেয়েটিকে দাদীর কোল থেকে তুলে নিল। সেই থেকে মেয়েটি বেশ কিছুক্ষন তীরের সব মেয়েদের কোলে কোলে ঘুরলো। দাদী অনেক বছর পর তাঁর শশুরবাড়ি এসেছেন। শশুরবাড়ির লোকেরা তাদের শহুরে বউ আর তাঁর ফুটফুটে বিলেতী পুতুলের মত নাতনীকে রাজকীয় সংবর্ধনায় বরণ করে নিলো।

সবাই একটু ধাতস্ত হয়ে এলে পরে দাদী মেয়েটিকে কাছে টেনে নিলেন। তাদের ঘিরে রইল আসেপাশের গ্রাম থেকে আসা লাতায়-পাতায় আত্মীয়তায় জরানো একরাশ কৌতুহলী মুখ। ছোটাকাকু সেই যে কোথায় গেলেন তার কোনো হদিস নেই। ভিরের মধ্য থেকে কালো কালো হাত বারিয়ে কেউ কেউ মেয়েটির সিল্কি চুল ছুঁয়ে দিচ্ছে, কেউ ফোলা গাল টিপে দিচ্ছে। মেয়েটি কিন্তু একটুও কাদঁছে না। সে এক বিহবল আনন্দ নিয়ে চারদিক উপভোগ করে যাচ্ছে।

এদিকে দুপুর গরিয়ে যাচ্ছে, গৃহকর্তা তাড়া দিচ্ছেন মধ্যাহ্নভোজ সেরে নেয়ার জন্য। বিষেশ অতিথিদের জন্য আজ কত্ত কত্ত পদের রান্না যে হয়েছে। কেউ একজন ছুটে গেল ছোটকাকু আর তার বন্ধুদের ডেকে আনতে। সব গুছিয়ে নিয়ে খেতে বসতে বসতে বেশ সময় লাগলো। বিশাল বড় চৌকিটার মাঝখানে সব খাবার সাজানো হয়েছে আর চারিদিকে গোল হয়ে বসেছে মেহমানেরা, দাদীর কোল ঘেসে বসে আছে মেয়েটি। গৃহীর মহার্ঘ সব কাসাঁর ঝকঝকে থালাবাটিতে পরিবেশন হয়েছে নানা পদের ভর্তা, মাছ, মাংস, ঝোল-তরকারী, আরও কত কি। মেহমানেরা আয়েশ করে খাবার তুলে নিচ্ছেন, দাদী এক থালাতে কিছু খাবার তুলে নিলেন মেয়েটিকে খাইয়ে দেবার জন্য। কিন্তু একি! মেয়েটি মুখ খুলছে না যে। শুরু হল সাধ্য-সাধনা, অনুনয়-অনুরোধ, কপট রাগুনি। নাহ, মেয়েটি ঠোঁট টিপে বসে আছে। এদিকে অন্যান্যদের খাওয়া মাথায় উঠলো, ছোটকাকু বেশ চড়া গলায় বকুনী দিতে গেলে, দাদী থামিয়ে দিলেন।

অবশেষে, অনেক সাধ্য-সাধনার পর মেয়েটি আংগুল তুলে দেখিয়ে দিল খাবার-দাবারের একপাশে রাখা "বদনা" সাদৃশ একটি জগের দিকে, যেটি দিয়ে কিছুক্ষন আগে গৃহকর্তী পানি ঢেলেছেন গেলাসে। কোনভাবে মেয়েটির ধারনা হয়ে গেছে যে এইরকম বস্তুটি যেহেতু সে তাদের বাথরুমে দেখছে সেহেতু এটি নোংরা আর এর আসেপাশের সবকিছুই নোংরা। ব্যাস! শুরু হল তুলকালাম কান্ড। দাদী রেগে সব ফেলে উঠে গেলেন আর বাড়ির লোকেদের ভর্তসনা করতে লাগলেন যে তাঁর নাতনীকে "বদনা" দিয়ে পানি কেন দেয়া হোলো, দাওয়াত করে কেন অপমান করা হলো। যতই গৃহকর্তা-কর্তী ক্ষমা চান না কেন তাতে কিছুই হলো না। দাদী সোজা বেরিয়ে নৌকায় চড়ে বসলেন। ছোটকাকুরা আর কি করেন, পিছু পিছু নৌকায় উঠলেন। সবার অনুরোধ উপেক্ষা করে নৌকা ফিরে চললো সেই শাপলা বনের মাঝ দিয়ে।





**কাহীনিটি গতবছর আমি আমার ছোটকাকুর কাছ থেকে শুনেছি। বলাই বাহুল্য সেই ছোট মেয়েটি আমি :P এই ঘটনার কোনোকিছুই আমার মনে না থাকলেও, মাঝে মাঝে স্বপ্নের মত মনে পরে যায় নৌভ্রমনের দৃশ্যটি।

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৪১
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×