somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"দুঃখজনক একটি বাস্তব ঘটনা "

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের সমাজে মুখোশধারী মানুষগুলোর সংখ্যা যেন দিনদিন বেড়েই চলেছে, কিছুদিন আগে আমিও তেমন একটা ঘটনার মুখোমুখি হলাম।
ঘটনাটি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছে হলো বলেই এই পোষ্ট টা দিলাম।

কিছুদিন আগে আমার মায়ের সাথে বেড়াতে গিয়েছিলাম আমাদের এক ফ্যামিলি ফ্রেন্ডের বাসায়। ঐবাসার আঙ্কেল , আন্টির বেপারে অনেক কথা শুনেছিলাম , তারা দুজনেই নাকি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক : দূস্থ্য, এতিম , মানসিক ভারসাম্যহীন শিশুদের জন্যে,নারী উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িত । ভদ্রমহিলা কোনো একটা সোস্যাল অরগানাইজেশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যেখানে অটিস্টিকদের নিয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হয়। আমরা আগেই শুনেছিলাম তাদের তিন সন্তান এবং সবচেয়ে বড় মেয়েটি মানসিক ভারসাম্যহীন।
এই কথাটা শোনার পর আমরা সবাই হয়তো ভাববো নিশ্চই মেয়েটি মা বাবার কাছে তাদের বাকী দুই সন্তানের মতই আদরের,কিন্তু বাস্তবতাটা বড়ই নির্মম। যা হয়তো সচক্ষে না দেখলে আমারো বিশ্বাস হতোনা ।যারা সারাদিন এমন শিশু নির্যাতন রোধ,মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের নরমাল মানুষ ভাবতে শেখার শ্লোগান দিয়ে বেড়ান , তারাই দিনের পরদিন তাদের নিজেদের অটিস্টিক মেয়েটির উপরে চালাচ্ছে নির্মম অত্যাচার । মেয়েটির অসহায় চোখের দিকে তাকালে আপনারা যে কেউ বুঝতে পারবেন কতটা নিরূপায়, কতটা অবহেলিত সে তার এই নিজের মা বাবা ভাইবোনের কাছে। মাত্র বারো বছর বয়স মেয়েটার,ডান হাতটা দিয়ে ঠিকমতো কিছুই করতে পারেনা, তবু তাকে দিয়েই বাসার প্রায় কাজই করানো হয় , খেতে চাইলে ঠিকমতো খেতে দেয়না, সবাই খাওয়ার পর কিছু বেচে গেলে সেটুকু দিয়েই ওকে বসিয়ে দেয়া হয়, ওকে ঘুমাতে দেয়া হয় কাজের বুয়ার সাথে। আমরা যেদিন তাদের বাসায় গেলাম সেদিন দেখলাম ওর হাতের অনেকটা অংশ কাটা । মহিলা বললেন খেলতে গিয়ে নাকি হাত কেটে গেছে ,কিন্তু ওর মা অন্যরুমে চলে যাওয়ার পর মেয়েটি আমাদের বললো "আমাকে একটু মিট্টি(মিষ্টি) দিবা ? " মার কাছে চাইলে আবার হাত কেটে দিবে বলেছে । একথা শোনার পর আমরা সবাই হাত কাটার ব্যপারটা বুঝলাম।
ওর বাবা বাসায় ফেরার সময় সেদিন ২ ছেলেমেয়ের জন্যে দুটো আইসক্রিম নিয়ে এলেন, মেয়েটি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলো ওর বাবার দিকে,বাবা তাকিয়েও দেখলেননা ওর দিকে। ওর মা বললেন যে, ওর ঠান্ডা লেগে যাবে বলেই ওকে আইসক্রিম দেয়া হয়নি । মহিলার এই কথাটি বলার পেছনে হয়ত আমাদের সন্দেহজনক দৃষ্টিই কাজ করেছিলো ।
ওর জন্যে কখনো দুই ঈদেও নতুন জামা কেনা হয়না । কিন্তু বাকী দুজনের জন্যে কোনো কিছুর অভাব নেই। ভদ্রমহিলা নিজের প্রয়োজনে মেয়েটিকে নিয়ে যখন বিভিন্ন প্রোগ্রামে যায় , তখন তার গায়ে জড়ানো হয় অনেক দামী পোশাক,যা পেয়ে মেয়েটি খুশীমনে পরে হাসতে হাসতে চলে যায় মায়ের হাত দুটি ধরে। হয়তো সে তখন ভাবে এটাই বুঝি তার মায়ের ভালোবাসা ,কিন্তু তাকে তার নিজের মা এভাবে ব্যবহার করছে তাতো বোঝার ক্ষমতাটাও আল্লাহ তাকে দেয়নি। বিভিন্ন প্রোগ্রামে মেয়েটিকে সাথে নিয়ে যেয়ে তারা বলেন "আমাদের নিজেদের আল্লাহ এমন সন্তান দিয়ে ধন্য করেছেন ,আমাদের অরগানাইজেশনের সব শিশুই আমার নিজের সন্তানের মতই প্রিয়" । এসব বড় বড় কথা বলে তারা তাদের ফান্ডের ওজন বাড়ায়। আরো অনেক কিছু আমরা জানতে পারলাম মহিলার নিজের মায়ের মুখ থেকে, যা সত্যিও নিষ্ঠুরতার চরম পর্যায়কেও হার মানায়।
আমার এখনো এটা ভাবতে অবাক লাগছে কিভাবে পারে তারা নিজেদের এমন অসহায় শিশুটির সাথে এমন আচরন করতে ! যারা নিজের এমন অসহায় সন্তানটিকে ভালোবাসতে পারেনা , তাদের দ্বারা সমাজের হাজার হাজার এতিম,অটিস্টিক শিশুদের জন্যে কিছু করার মিথ্যে প্রয়াসটা কি হাস্যকর নয়!!!
এমন লোক দেখানো সমাজসেবীবেশী ভন্ড মানুষগুলোকে আমরা হয়তো কখনোই বদলাতে পারবনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০২
৮৬টি মন্তব্য ৮১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×