পুলকের রুমমেট একদিন পুলকের সর্বক্ষনের সাথী বলে পরিচিত ওর ডায়রীটা ফাজলামি করে চুরি করে এবং যতটা সম্ভব পড়ে ফেলে,ব্যস যা ঘটার তাই হলো-পরের দিন ক্যাম্পাসে এসে সে রিমিতা সহ আরো অনেককেই জানালো,কিন্তু রিমিতা ওর কথায় পুরোপুরি বিশ্বাস না করায় পুলকের রুমমেট ডায়রীটা রিমিতাকে দিলো-প্রমান হিসেবে।রিমিতা কাউকে কিছু না বলেই ডায়রী নিয়ে বাসায় চলা গেলো।
রিমিতা দুদিন ধরে ডায়রীটাই পড়ে যাচ্ছে,ক্লাসেও যায়নি আর,অবাক এবং মুগ্ধ হয়ে ও শুধু পুলকের ভালোবাসা প্রকাশের ভাষাগুলোই পড়ে যাচ্ছিলো আনমনে।
ডায়রীর সব লেখাগুলো প্রকাশ সম্ভবনা বলে আমি কিছু লাইন এখানে শেয়ার করছি-
" তোমাকে পাবার ইচ্ছে আমার অনেক বার হয়েছিলো,কিন্তু চাইবার দুঃসাহস করার মত সাধ্য আমার নেই,হয়ত কখনো হবেওনা,আসলে আমি তোমাকে পেতে চাইওনা,কারন তোমাকে হয়ত আমি তোমার মত করে রাখতে পারবোনা কখনোই।নিজেকে নিজের কাছেই খুব ছোট মনে হয় যখন ভাবি আমি কোন দুঃসাহসে তোমাকে ভালোবাসলাম"।
"আমি চাইনা কখনো কেউ জানুন আমি তোমাকে ভালোবাসি,হয়ত এটা জানলেও তোমার সম্মানে আঘাত লাগতে পারে,এটা ভেবে যে -এমন একটা অযোগ্য ছেলে তোমাকে ভালোবাসে!!"
"আমার মত এত কুৎসিত একটা ছেলের ভেতরে এমন একটা মেয়েকে ভালোবাসার মত একটা মন দিয়ে আমাকে সারাজীবনের জন্যে লজ্জিত করে দিয়েছেন বিধাতা"
রিমিতা ডায়রীটা পড়ে নিজের চোখের পানি সামলে রাখতে পারেনি সেদিন আর,এত ভালো কি কেউ কাউকে বাসতে পারে!! ডায়রী পড়ার পর ৬টা দিন ও আর ক্যাম্পাসে যায়নি,ওর বিয়ের তারিখও ঘনিয়ে আসছে।বাবা মা অনেক খুশি ওর বিয়ে নিয়ে,এখনতো কিছু নতুন করে ভাবার সময়ও নেই,কি করবে ও ঐছেলেটার জন্যে,একদিনের মধ্যে ছেলেটা পুরোপুরিই ওর চিন্তশক্তিকে আচ্ছন্ন করে রেখছে শুধুমাত্র ডায়রীতে কিছু কলমের ভাষা লিখে।
একসপ্তাহ পরে রিম ক্যাম্পাসে গেলো,গিয়েই পুলকের খোঁজ করছিলো,কিন্তু কোথাও নেই পুলক,কারন ডায়রীটা রিমিতার হাতে পৌছে গেছে সেটা ও জানতে পেরেছে,সেদিনের পর থেকে নাকি পুলকও আর আসেনি ক্যাম্পাসে।হলেই নাকি চুপচাপ বসে থাকে,কারন এইকয়দিনে বন্ধুদের কাছ থেকে অলরেডী অপরিমেয় লাঞ্চনা ওর কপালে জুটেগেছে।
পরদিন সকালে উঠে রিমিতা বন্ধুদের নিয়ে হাজির পুলকের হলে,ওকে নিচে ডেকে আনা হলো,ও ঠিক মাথাটা নিচে নামিয়ে রেখেছিলো এমনভাবে যেনো রিমের সাথে ওর চোখ না মেলাতে হয়।সাংঘাতিক রকমের অপমান এখন তাকে সহ্য করতে হবে জেনে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে পুলক,রিমিতা বলল চলো আমার সাথে কাজ আছে ,সাথের সবাই একটু ভাবনায় পরে গেলো,কেউ কিছুই ভাবতে পারছেনা ,কারন রাগের মাথায় রিম কিযে করবে সেটা সবার ধারনার বাইরে ছিলো।
সেদিন রিম পুলককে জোড় করে নিয়ে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেছিলো,পুলক কিছুতেই রাজী হচ্ছিলোনা,শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হলো।পুলকের সাথে অবশ্য আমরাও খুব অবাক হয়েছিলাম রিমের কান্ড দেখে।
আসলে ভালোবাসা হয়ত এমনই,কখন কিভাবে কার মনে কার জন্যে জায়গা তৈরী হয়ে যায় তা কেউ জানেনা।মুখে একটা কথা না বলেও পুলক শেষ পর্যন্ত রিমিতার ভালোবাসা পেয়েই গেলো।
বাবা মা যদিও এটা মেনে নিতে পারেনি এবং আজ পর্যন্ত মেনেও নেয়নি বিয়েটা,তবু ওরা খুব কষ্ট করে হলেও নিজেদের একটা ছোট সংসার বানাতে সক্ষম হয়েছে।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো ,বিয়ের ঠিক তিন বছর পর্যন্তও বেকুব ছেলেটা রিমকে জানায়নি যে কিডনীটা গোপনে সে নিজেই রিমিতাকে দিয়েছিলো।রিম এব্যাপারে কিছুই জানতোনা,কারন পুলক ডায়রীতে এটা নিয়ে কোনো কথাও লিখেনি কোনোদিন।ওদের প্রথম সন্তানের জন্মের সময় যখন রিমকে হাসপাতালে নেয়া হয় তখন ওদের ফ্যামিলি ডাক্তার রিজভীর কাছ থেকে ব্যাপারটা জানতে পারে রিমিতা।
ওদের হ্যাপী ফ্যামিলি এখন ওদের বন্ধু মহলের আদর্শ জুটি,খুব ভালো আছে ওরা ,এখনো
মনে হয় যেনো জাস্ট মেরীড কাপল।
"শুধুমাত্র ভালোবাসা দিয়েই হয়ত ভালোবাসা পাওয়া সম্ভব"
পুলকের ডায়রী এবং .. "রিমিতা "---শেষ পর্ব
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৪৯টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !
বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।
আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব
সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=
©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন
পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!
আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!
কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন