somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবার ছোঁয়া

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এবার ফাইনাল পরীক্ষার আগে ক্লাস পার্টিতে গিয়ে একটু মন খারাপই হয়েছিলো আমার। আবির, ফুয়াদ, রুপম, অভিজিত সবাই পার্টিতে ব্লেজার পরে এসেছিলো। একমাত্র আমি বাদে। এমন না যে আমার ব্লেজার নেই। সুন্দর একটা ব্লেজার কদিন আগেই আম্মু আমাকে কিনে দিয়েছে। ব্ল্যাক কালার, তবে সেটা জ্যাকেটের সিস্টেমে। কিন্তু ক্লাস পার্টিতে পরে আসবো ঐ চিন্তা করে কিনি সেটা। পার্টির ছবিগুলো দেখলাম আমাদের অফিস রুমের নোটিশ বোর্ডে লাগানো হয়েছে। আমার ছবি গুলো খুব একটা হাসি খুশী আসেনি। আমি অফ হোয়াইট এর সাথে স্কাই স্ট্রাইপ শার্ট আর জিন্স পরে গিয়েছিলাম। ঐদিন ক্লাসের স্যার আর মিসেরাও আমাদের সাথে অনেক আনন্দ করেছিলো। খাওয়া দাওয়া, নাচ, কৌতুক বলা, ফাইনাল পরীক্ষা শেষে কে কোথায় বেড়াতে যাবো এসব প্ল্যান নিয়ে বেশ মজাই করেছিলাম আমরা। অভিজিতটা বারবার বলছিলো ," ফাইয়াজ তুই ব্লেজারটা পরে আসলেই পারতিস দোস্তো!" বারবার এক কথা শুনতে আমার মেজাজটা খারাপ লাগছিলো। কিন্তু ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছিলো না ওকে বলেছিলাম- বাদ দে তো ! আমার যেদিন পরীক্ষা শেষ হবে তার দুদিন পর বাবা আসবে ওন্টারিও থেকে। ঐ ব্লেজারটা আমি এয়ারপোর্টে পরে যাবো, এটা আর আমার ফ্রেন্ডদের বলিনি। বাবা ওখানে থাকলেও অনেকেই ওন্টারিও নামটা শুনলে চেনে না দেশটা কোথায়। তাই আমার বাবা কানাডা থাকে বলতে হয়।

আমি এবার ক্লাস ফোর থেকে ফাইভে উঠবো। বাবা জিজ্ঞেস করেছিলো আসার সময় কী নিয়ে আসবে নতুন ক্লাসে ওঠা উপলক্ষ্যে। কী কী চাইবো বলে যা ভেবে রেখেছিলাম,তার কিছুই আমি বাবাকে বলতে পারিনি। আমি প্রাণপণে মনে করার চেষ্টা করছিলাম আর আমতা আমতা করছিলাম। বাবা আমার অবস্থা দেখে ফোনের ওপাশে হাসছিলো। এরপর আমি ভেবেছি আমি এসব লিখে রাখবো কাগজে না হয় মোবাইলে এস এম এস করে দেবো। কিন্তু আমি জানি আমি না চাইলেও বাবা আমার পছন্দের জিনিসগুলো নিয়ে আসবে। সবচেয়ে ভালো হতো আমি ওখানে গিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখে শুনে কিনলে। বাবা বলেছে এবার দেশে আসলে আমাদের জন্য নাকি একটা সারপ্রাইজ আছে। কী সারপ্রাইজ ভাবতে গেলে আমার চিন্তাভাবনা এলোমেলো হয়ে যায়। আম্মুকে কয়েকবার জিজ্ঞেস করতে গিয়ে বকা খেয়েছি যদিও। বলেছে - তোমার বাবাকেই জিজ্ঞেস করো না গিয়ে! সারপ্রাইজ যদি জেনেই যাই তাহলে এটা কী আর সারপ্রাইজ থাকলো, বাবা এমনটা বলেছে। আমার ধারণা এবার আমরা অনেক জায়গায় ঘুরতে যাবো। গত বছর আমরা মালয়শিয়া ঘুরতে গিয়েছিলাম। এবারো এমন হবে হয়তো কিংবা আমি বাবাকে বলেছিলাম সোনার গাঁ জাদুঘর, পানাম নগরীতে ঘুরতে যাবো, গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পিকনিক করবো, সেসবও হয়তো আমার জন্য সারপ্রাইজ হতে পারে। বাবা শীতের সময়টায়ই বাংলাদেশে বেড়াতে আসে কারণ ওদেশে নাকি খুব ঠাণ্ডা থাকে ডিসেম্বর মাসে। তাপমাত্রা মাইনাসে চলে যায়। এতো ঠাণ্ডা আর তুষারপাত নাকি হয় যা আমরা বাংলাদেশে থেকে কল্পনাই করতে পারবো না। নাহ্‌, আমি এতো কিছু ভাবতে পারছি না। ভাবতে গেলেই একটার উপর একটা ভাবনা চলে আসে, এলোমেলো লাগে সব। এমনিতেই কদিন ধরে রাতে ভালো ঘুম হচ্ছে না। আর একটা পরীক্ষা বাকি আছে আমার। ১৫ তারিখ পরীক্ষা শেষ হবে আর বাবা আসবে ১৭ তারিখ রাত নয়টার ফ্লাইটে। আমি, আম্মু আর ফুপি যাবো এয়ারপোর্টে বাবাকে আনতে।

ইদানীং ফুপি একটু বেশিই ক্ষেপাচ্ছে এই বলে যে, তোর বাবা আসবে বলে তুই যে পার্ট নিচ্ছিস, সেটা ছবি তুলে বাঁধিয়ে রাখার মতো জানিস? আর কারো বাবা যেন দেশে বেড়াতে আসে না। হুহ্‌! মিলি ফুপি এসব বলে আর আম্মুর সাথে মিটিমিটি হাসে। আমি এখন পোশাকআশাকে টিপটপ থাকি, বেশি বেশি পড়ি, ইংরেজিতে আমি এমনিতেই ভালো তবুও এটা ভালমতো প্র্যাকটিস করি, কথা কম বলি, দুষ্টুমিও কম করি -- এসবই নাকি পার্ট নেয়া। কী অদ্ভুত কথা যে এই ফুপিটা বলতে পারে! গতকাল খাবার টেবিলে আম্মুর সামনেই বললো -

" কি রে তোর মা'কে দেখাইছিস সাদিয়া তোকে কী গিফট দিলো জন্মদিনে! "

আম্মুকে বাসায় ফেরার পর বলার সুযোগ পাইনি যে সাদিয়া আমাকে একটা বার্থ ডে মগ আর এক প্যাকেট ক্যান্ডি দিয়েছে। আম্মু শুনে বললো - তাই নাকি? কই দেখি তো! কিন্তু ফুপিটা এতো জ্বালাতন শুরু করলো যে আমি লজ্জায় আর কথাই বলতে পারছিলাম না।

বুঝলে ভাবী, ছেলে তোমার বড় হচ্ছে, আজকাল বান্ধবীরাও তাকে গিফট করে আবার ছেলে সেটা গোপনও রাখে তোমার কাছে। এবার ভাইয়া দেশে এলে ছেলেকে বিয়ে করিয়ে বৌ ঘরে এনো। বলে আবার হিহিহি করে মিলি ফুপি হাসতে থাকে। এই ফুপিটা না যাচ্ছে তাই। আমি যদি গোপনই করতাম তাহলে কী ফুপিকে বলতাম। সাদিয়া আর অভিজিত আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু আম্মুর কাছে সাদিয়ার কথা আমি ওরকম ভাবে বলিনি কখনো। আর আম্মুও জানি কেমন, মিলি ফুপির সাথে তাল মিলিয়ে মিলিয়ে হাসছে। বাবা আসলে এটা নিয়েও আমাকে ক্ষেপাবে কিনা কে জানে! বাবা আমার জন্য এত্তো এত্তো চকলেট নিয়ে প্রতিবার, আমার বন্ধুদের দিয়েও খেয়ে আমি শেষ করতে পারি না। ইশ আমারও যদি অভিজিতের মতো ছোট আরেকটা ভাই থাকতো কিংবা সাদিয়ার মতো আমারও যদি ছোট আরেকটা বোন থাকতো, দুজনে মিলে মজা করে চকলেট খাওয়া যেতো আর গেমস খেলা যেতো। গতবার বাবা একটা পিএইচপি এনেছিলো। ওটার মাঝে অনেকগুলো গেমস আছে। সবগুলো গেমস আমার খেলা শেষ। ফুপি বলেছে আগের গেমস ডিলিট করে নতুন গেমস মেমোরি কার্ডে ভরে দিবে।

আমি আর ফুপি এক রুমেই থাকি। কিন্তু আলাদা আলাদা বিছানা। আমি শুয়ে খালি এপাশ ওপাশ করছিলাম। ফুপি বললো - কিরে, তোর বাবা তো আসবে আগামীকাল রাতে আর আজকেই তোর ঘুম চলে গেলো!

- না। এমনি। দুপুরে ঘুমিয়েছি না! এজন্য ঘুম আসছে না

- হুম হয়েছে। আর মিথ্যে বলতে হবে না। আমি বেশ জানি তুই তোর বাবা আসবে এই উত্তেজনায় ঘুমাতে পারছিস না। বলে ফুপু হাসতে থাকে।

বড়রা যে কীভাবে বুঝে ফেলে সবকিছু! আসলেই সত্যি। আমি বাবার জন্য অপেক্ষা করছি। বাবা প্রতিবছরই দেশে আসে বেড়াতে। কী নাকি এক প্রজেক্ট নিয়ে বাবাকে অফিস থেকে ওন্টারিওতে পাঠানো হয়েছে। আমার সব ফ্রেন্ডদের বাবা-মা বাংলাদেশে থাকে। খালি আমার বাবাটাই এখানে থাকে না।আমার ভীষণ খারাপ লাগে। গতবার বাবা এসেছিলো অনেক রাতে, আমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম বাবার জন্য অপেক্ষা করতে করতে। সকালে ঘুম ভেঙে দেখি আমার বিছানায় বাবাও শুয়ে আছে। আমার ঘুম ভেঙেছে এটা টের পেতেই বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার পেটে কাতুকুতু দিতে শুরু করলো। আমার এমনিতেই অনেক সুড়সুড়ি। কিন্তু সুড়সুড়ি লাগার পরেও আমার অনেক ভালো লাগছিলো। বাবার গায়ের গন্ধটা কতদিন পরে পেলাম! আমার কেমন কান্না পেয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু মুখে এসব বলতে আমার খুব লজ্জা লাগে। এসব ভেবে ভেবে কখন যে রাতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম মনে পড়ছে না।

সকালে ঘুম ভাঙার পর দেখি বাসায় কেমন ফুর্তি ফুর্তি একটা ভাব। আমার বড় মামা এসেছে, সাথে মামাতো ভাই বোন গুলোও, দাদী এসেছে মেজো চাচার সাথে। আমার বাবাই তার সব ভাই বোনের মাঝে বড়। মিলি ফুপিই শুধু আমাদের সাথে থাকে, অনার্সে পড়ে সিটি কলেজে। রাতে ভালো ঘুম হয়নি বলে সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়েছে। আম্মুকে অনেক খুশী খুশী দেখে আমার খুব ভালো লাগছিলো। আম্মু ইদানীং অনেক অসুস্থ হয়ে গেছে। ঠিকমতো খেতে পারে না, খালি নাকি তার মাথা ঘোরায়। অফিস থেকে ছয় মাসের ছুটি নিয়েছে। আচ্ছা এতদিন অফিস থেকে ছুটি নিলে কী কারো চাকরী থাকে ! এটা আম্মুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। আম্মু শুধু হাসে আর ফুপি বলেছে -

বড় হয়ে নে। তখন বুঝবি চাকরী থাকে কি থাকে না। বলেই সে কী হাসি। এই ফুপিটা শুধু শুধু হাসে। এর মাঝে হাসির কী আছে কে জানে! আচ্ছা এই বয়সে কী মানুষ শুধু শুধুই হাসে? তাকে মাঝে মাঝে শুনি কার সাথে যেন ফোনে নিচু স্বরে কথা বলে। কথা বলতে বলতেই আবার আমাকে ধমক দেয় - এই পাকা ছেলে, আমার কথায় কান পাতলে কিন্তু চকলেট দিবো না আর। বলেই আবার ফোনে কার সাথে যেন হাসতে থাকে। ভারী আমার বয়েই গেছে তার চকলেট খেতে। আমার বাবাই এতো এতো চকলেট আনে। তোমার ইচ্ছে হলে তুমিই খেও, ফুপিকে বলি আমি।

বাসায় আজ অনেক অনেক মজার খাবার রান্না হয়েছে। পোলাও, রোস্ট, কাবাব আমার খুব পছন্দের। বাবা মাছ খেতে পছন্দ করে। মা অন্যদিন রান্না ঘরে এতো সময় থাকে না কিন্তু আজকের ব্যাপারটা অন্য রকম। মিলি ফুপিকে কখনো দেখিনি রান্না করতে শুধু চা বানানো ছাড়া। কিন্তু ফুপি কোত্থেকে যেন জর্দা বানাবার রেসিপি শিখে এসেছে। আজ ফুপি জর্দা রান্না করবে। গতকালই জর্দায় দেয়ার ছোট ছোট মিষ্টি কিনে এনেছিলো। কিনে আমাকে বলেছিলো - এই মিষ্টি ধরবি না কিন্তু খবরদার। তুই তো পেটুক, চুরি করে খাস না যেন! উফফ এই ফুপি খালি খালি আমাকে ক্ষেপায় আর কি যে মজা পায় কে জানে। বাবা এলে বলতে হবে তাকে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিতে। তখন আর আমাকে ক্ষেপাতে পারবে না। আজকে আমার কাজিনদের সাথেও আমার খেলতে ইচ্ছে করছিলো না। বারবার ঘড়ি দেখছিলাম। রাস্তায় কতো জ্যাম পড়ে, সন্ধ্যে সাতটা বাজতে চললো কিন্তু কেউ এয়ারপোর্ট যাবার নাম করছে না। একটু আগেও আমি ঘ্যান ঘ্যান করছিলাম বড় মামার কাছে কখন যাবো আমরা বাবাকে আনতে। ফুপি সবকিছুতেই কথা বলে। আমাদের বাসা থেকে এয়ারপোর্ট যেতে তো এক ঘণ্টাও লাগবে না, তুই জ্বালাচ্ছিস কেন এতো ?


- কেন একটু আগে আগে গেলে কী হয়? পরে জ্যামে আটকে গেলে যদি আমাদের যেতে দেরী হয় আর বাবা এসে দাঁড়িয়ে থাকে! এই কথাগুলো আমাদের বাসার কেউ মনে হয় আজকে বুঝতেই পারছে না। আম্মুও কেমন শুয়ে আছে বিছানায়। জিজ্ঞেস করলাম আম্মু, যাবে না তুমি? রেডি হচ্ছো না কেন। দাদী বললো - তোমার মা যাবে কীভাবে, দেখো না শরীর খারাপ। সারাদিন কতো রান্না করেছে! কই আম্মুর তো জ্বরও আসে নি তাহলে কীসের শরীর খারাপ আবার? কী জানি আজকে কী আমাদের যাওয়া হবে না? কখন যাবো, কে কে যাবে বাবাকে এয়ারপোর্ট থেকে আনতে এসব চিন্তায় আমার ভালো লাগছিলো না। আমি সেই কখন আমার নতুন ব্লেজার টা পরে রেডি হয়ে আছি। নতুন কেডসটাও পড়েছি। বাবাকে যে কখন দেখাবো এসব! সময়টা পার করতে যে আমার কতো কষ্ট হচ্ছে কেউ বুঝতে পারছে না। সবাই জানি কেমন করছে আমার সাথে। আমার কান্না পাচ্ছে।


অবশেষে আমরা বাসা থেকে বের হলাম। আমরা মানে আমি , বড় মামা, মেজো চাচা। গাড়িতে জায়গা ছিলো কিন্তু বাবা যাতে আরাম করে আসতে পারে তাই মিলি ফুপি আর আমার মামাতো ভাই বোন গুলোকে আমরা আনিনি। আম্মুর মাথা ঘোরাচ্ছিল তাই আম্মুও আসেনি। ক্যান্টনমেন্ট এর রাস্তায় আমরা যখন জ্যামে পড়লাম, দশ মিনিটের বেশি হয়ে গেলেও জ্যাম ছুটছিল না আমার ভীষণ ভয় করছিলো। যদি জ্যামটা আরও বাড়ে, আমরা যদি আধা ঘণ্টা, চল্লিশ মিনিট আটকে থাকি, তখন কী হবে! আমি মনে মনে আল্লাহকে বারবার বলছিলাম আল্লাহ জ্যামটা সরিয়ে দাও, আমার বাবা আসবে। আমরা যেন তাড়াতাড়ি এয়ারপোর্ট যেতে পারি। বড় মামা আর চাচার গল্প গুজব শুনতেও রাগ লাগছিলো, বড়রা কেন যে এতো বেশি কথা বলে! খালি দেশের মারামারি আর দল নিয়ে কথাবার্তা বলে। উফফ! এয়ারপোর্টে পৌঁছাবার পর ঘড়ি ধরে পুরো এক ঘণ্টা বারো মিনিট পর বাবা ফোন দিলো চাচার মোবাইলে। লাগেজ পেতে নাকি দেরী হয়েছিলো। আমি বড় মামা আর চাচার সাথে দৌড়ে দৌড়ে ওয়েটিং লাউঞ্জের সামনে যাই। ঐ তো বাবাকে দেখা যাচ্ছে, আমার দৌড়ে গিয়ে বাবার কোলে উঠতে ইচ্ছে করছে। উফফ মামা আমার হাত ছাড়ো তো, বলে আমি বাবার দিকে যেতে থাকি। লজ্জা লাগছে আমার কিন্তু তারপরেও আমি বাবাকে দুই হাত দিয়ে তার কোমরে জড়িয়ে ধরি। আমার গা কাঁপছে কেমন করে যেন আর খালি কান্না পাচ্ছে। বাবাও আমাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খায়, কোলে তুলে নেয়।

আরে আমার বাবাটা দেখি কতো লম্বা হয়ে গেছে! দেখি ফাইয়াজ মুখ তুলে তাকাও দেখি!

আমার চোখে পানি। বাবার দিকে তাকাতে অনেক লজ্জা লাগছিলো। তাই আমি বাবার গলা ধরে আমার মুখ গুঁজে থাকি সেখানে।

আর বলো না মোস্তাক, তোমার ছেলের জন্য কী আর ঘরে বসে থাকার জো আছে আমাদের। সেই দুপুর থেকে বলছে এয়ারপোর্ট চলো, এয়ারপোর্ট চলো। বাবাকে আনতে যাবো। বড় মামা বলতে বলতে হাসে। বাবা আমাকে কোলে নিয়েই হাঁটতে থাকে যেখানে আমাদের গাড়িটা পার্কিং লটে রাখা।

ভাইয়া এবার কী তুই ভাবি আর ফাইয়াজকে নিয়ে একবারেই যাবি কানাডা, মেজো চাচা বাবাকে জিজ্ঞেস করে।

শুনি আমি তড়াক করে লাফিয়ে উঠি। বাবাকে বলি - এবার আমরাও তোমার সাথে যাবো? সত্যি বাবা!

বাবা হাসে। বলে - হ্যা, তোমাকে বলেছিলাম না সারপ্রাইজ দিবো? এটাই সেই সারপ্রাইজ! হ্যা রে শিমুল, ভাবছি শম্পাকে আর ফাইয়াজকে নিয়ে যাবো। পেপারস সব তো রেডিই হয়ে গেছে। আর তোর ভাবীর জন্যই এবার তাড়াতাড়ি এলাম। পরের বেবি টা ওখানেই হোক।

বাবা কীসের বেবি? বাবা আমার কথার উত্তর দেয় না, শুধু হাসে। মামা বলে - এটাও তোমার জন্য সারপ্রাইজ। হাহহাহা

আমার কেন যেন খুব আনন্দ লাগতে থাকে এক অজানা কারণে। সবাই কেমন রহস্য করছে আমার সাথে। একবার মনে হয় আমি বুঝতে পারছি আবার মনে হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না অনেক কিছু। বুঝে কিংবা না বুঝে হলেও আমার অনেক আনন্দ লাগতে থাকে। বাবা তার হ্যান্ড ব্যাগ টা খুলে আমাকে একটা প্যাকেট দেয় হাতে। একটা ছোট ট্যাব, গেমস খেলার জন্য। বললো - বাসায় গিয়ে খুলো, কেমন?

গাড়িতে আমি বাবার কোল ঘেঁষেই বসি। বাবার গা থেকে এক অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ আসছে পারফিউমেরে গন্ধ ছাপিয়েও। এই গন্ধ আমি আর কারো গা থেকেই পাই না কখনো। আমার মায়ের গায়েও সুন্দর একটা গন্ধ আছে। আচ্ছা পৃথিবীর সব বাবা-মায়ের গায়েই কী এমন সুন্দর গন্ধ থাকে! আমি বাবাকে আস্তে আস্তে বলি - আজ আমি কিন্তু তোমার সাথেই ঘুমোবো। তোমার আর আম্মুর মাঝখানে আমি শোবো, আমাকে অনেক গল্প শোনাবে। ঐ যে ওন্টারিওর সেই বোট হাউজের গল্পটা। বাবা আমার চুল বিলি কেটে দিতে থাকে। বাবার গায়ের গন্ধ আর বাইরের ঝিরিঝিরি বাতাসে আমার কেমন ঘুম পেতে থাকে।

সমাপ্ত

উৎসর্গ -আজ বাবুইয়ের জন্মদিন। এই গল্পটা আমার বাবুই_পাখিকে এবং ওর বয়সী সব শিশুদের।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪৮
৩৯টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×