somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এভাবেই...

১৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইদানীং খেয়াল করেছি লাঞ্চ সারার ঘণ্টাখানেক পর অফিসে বেশ ঝিমুনি আসে। আর এ সময়টায় কাজের চাপও তেমন থাকে না এটা একটা কারণ হতে পারে । তবে ঝিমুনি আসলেও ইমরানের দেয়া এক কাপ কফির সুঘ্রাণে সেটা খুব একটা সুবিধা করতে পারে না। এই অফিস বয়টা নতুন জয়েন করেছে আমাদের এখানে। বেশ ইম্প্রেসিভ, ঘণ্টায় ঘণ্টায় এসে খোঁজ খবর নিয়ে যায়।

ম্যাডাম চা খাবেন না কফি?
চা'য়ে আদা দিবো?
ম্যাডাম আপনার বোতলের পানি শেষ হয়ে যায় নি তো ?
ম্যাডাম কিছু লাগবে?

খাতির যত্নের শেষ নেই ইমরানের পক্ষ থেকে। এতো যত্ন আত্তি করে বলেই মাঝে মাঝে নিজের মোবাইলে টাকা রিচার্জ করতে পাঠালে ওকেও পঞ্চাশ বা একশো টাকা ধরিয়ে দেই ওর নিজের মোবাইলে টাকা রিচার্জ করে নিতে। অন্য অফিস বয় দুটোর মতো এখনো এই নতুন ছেলেটি ফাঁকিবাজি রপ্ত করে উঠতে পারেনি। কফির কাপে চুমুক দিয়ে এ সময়টায় শরীরের অলস কলকব্জাগুলোর আড়মোড়া ভাঙতে ভালোই লাগে। আমার বসের বাসা অফিসের কাছে হওয়াতে সে লাঞ্চে গেলে একটু আরাম আয়েশ করে ফেরে বলে আমিও বেশ রিলাক্স ভাব নিয়ে নেটে ব্রাউজিং করতে পারি। এখন ফেসবুকে ঢুকেই দেখি ইনবক্সে পাঁচটা মেসেজ আর সবগুলোই জামিলের। ওর মেসেজগুলো পড়ে সত্যিই মাঝে মাঝে দ্বিধান্বিত হয়ে যাই ও কি ফান করেই বলে নাকি অভিমান, অভিযোগের ঘনঘটাও থাকে সেসব মেসেজে।

" কি ব্যাপার হঠাৎ করে লগ অফ হলে কেন?
কারো ফোন এসেছিলো তোমার মোবাইলে?
তার মানে আমার চেয়েও ইম্পরট্যান্ট কেউ আছে নাকি তোমার যে আমার কাছে বিদায় না নিয়েই তোমার দৌড় দিতে হলো ?
আমি মাইন্ড খাইলাম!!! "

উফফ এই জামিলকে নিয়ে আর পারি না। জামিলের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ও নিজেকে যথেষ্ট জ্ঞানী ভাবে সব ব্যাপারে। পৃথিবীতে ওই একমাত্র ব্যক্তি যার সব কথায় আর কাজে যুক্তি আছে এবং এই কারণেই অন্যদের যুক্তি ওর কাছে অযৌক্তিক লাগে। আর ওর এই জ্ঞানী ভাবটাই আমার খুব অপছন্দের। নাহ্‌ আজ বাসায় গিয়ে এর একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে। বিয়ের পর ভেবেছিলাম চাকরীটা ছেড়েই দিবো যদিও বেতনটা বেশ ভালোই। কিন্তু জামিলের জেদেই আর ছাড়া হয়ে ওঠেনি।

" কী দরকার ঘরে শুধু শুধু বসে থাকার। ঘরে থাকলে রাজ্যের যত সব উল্টাপাল্টা চিন্তা মাথায় আসবে আর আমার কাজের সময়ে কারণে অকারণে আমাকে জ্বালাবে। এর চেয়ে ঘরে একা একা বোর হবার চেয়ে চাকরী করো এইই ভালো ।"

জামিলের মুখ থেকে এ কথা শোনার পর তো আমার আর ঘরে বসে থাকার মানেই হয় না। আর একবার কোনো নারী অর্থ উপার্জনের রাস্তা পেয়ে গেলে সে কী সহজে চায় অন্যের উপরে মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে? হোক না সে স্বামী!

আমাদের দুজনের বাসা থেকে সকালে বের হবার সময়টা এক হলেও ঘরে ফেরার সময়টা বেশীরভাগ দিনই এদিক সেদিক হয়ে যায়। তাই সারাদিনের কথা মোবাইল, এসএমএস বা ফেসবুকেই সেরে নেই। বিয়ে হয়েছে এর মানে যেমন এই না যে আমি আমার বিগত জীবনটা উপড়ে চলে এসেছি, সম্পর্কগুলো ত্যাগ করেছি। মাঝে মাঝে জামিলের টিপ্পনীতে সেরকমই মনে হয় আমার। যদিও শায়লা আপা বলেন - আরে বেশি টেনশন করো না, আমার ভাইটা ছোট বেলা থেকেই এমন। গা জ্বালানো ধরণের কথাবার্তাই বলে মতের মিল না হলে। তাও তো বিয়ের পর এখন ওর এই অভ্যাস কমেছে। কিন্তু ও নিজেও তো একটা পরিবারে থেকেছে। ওরও তো একটা নিজস্ব পরিমণ্ডল আছে, চিন্তা-ভাবনার সময় আছে। তাই প্রতিটা মানুষেরই জীবনে চলার পথের সম্পর্কগুলোকে শুশ্রূষা করতে হয়, সেটাও ওর বোঝার কথা। তারপর ওর যেমন একটা অফিশিয়াল ব্যাপারে সার্কেল তৈরি হয়েছে তেমনটা হয়েছে আমারও। ফেসবুকে জামিলকে রিপ্লাই দিতে দেরী হলে কিংবা আমাকে ফোনে ওয়েটিং পেলেই ও কেমন যেন খুব হতাশ হয়ে যায়, বিরক্তি চলে আসে খুব দ্রুতই। এ কারণেই হয়তো বলে -

" বীথি, তুমি একটা নতুন নাম্বার নাও তো! ওই নাম্বারটা শুধু আমিই জানবো কিংবা
" বীথি, তুমি কী ব্যস্ত ? এক কাজ করো, আমাকে তোমার ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে বাদ দাও। তোমার দেরীতে রিপ্লাই ভাল্লাগে না !!"

ওর এ ধরণের আচরণে মাঝে মাঝে আমিও হতাশ হই। আমারও অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করে ওকে। তবে সে সব আমার মাঝে সাময়িক সময়ের জন্য কাজ করে। তবে ভেবেচিন্তে আমি আমার মাঝে তেমন তীব্র দুঃখবোধ পাই না। একসাথে থাকতে গেলে যে কোনো সম্পর্কেই একটু ঊনিশ-বিশ হবেই, দুইয়ে দুইয়ে চার নাও মিলতে পারে। জীবনটা যেহেতু দুর্বোধ্য গাণিতিক সমীকরণ না। ছোট ছোট ব্যাপারগুলোকে তাই নিজের মাঝে না পেঁচিয়ে জটিল করে তোলাটাও ঠিক না।

ফেসবুকে ওর আজকের ম্যাসেজগুলো দেখে ভাবি ওকে আজ বাসায় গিয়ে একটা ধোলাই দিবো। বিয়ের দেড় বছর পার হলেও আসলে আমাদের প্রেমটা দিন দিন গাঢ় হচ্ছে, আমার এমনটাই মনে হয়, বিশেষ করে জামিলের ছেলেমানুষি আবেগ, আমাকে একক ভাবে অধিকার করতে চাওয়া এসব দেখে।

আমি বাসায় ফেরার ঘণ্টাদেড়েক পর আজ জামিল আসে। দরজা খুলে দিতেই দেখি ওর কেমন হাসি হাসি মুখ। ওকে ধোলাই দেবার যে প্রস্তুতি মনে মনে ছিলো সেটা মুহূর্তেই কেমন থমকে যায় আমার।

কী খুব টেনশনে পড়ে গেছিলা নাকি আমার মাইন্ড খাবার কথা শুনে? ফ্যানটা ছেড়ে ও ডাইনিং রুমের চেয়ারে বসার জন্য এগিয়ে যায়। ওর গা জ্বালানো হাসি দেখে ওর পিঠে দুই তিনটা কিল বসিয়ে দেই আমি। দুপুরে ওর ঐ ম্যাসেজটা দেখে আমার আমিটা মনের গহীন এক কোণায় নির্জীব হয়ে পড়েছিলাম। শরীরটাও কেমন নিথর হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু ও বাসায় ফেরার পর ওর হাসি, একটু খানি দুষ্টুমিমাখা কথা শুনে ওকে চেয়ারে বসতে না দিয়ে ওর পিঠের সাথে নিজের দেহটা ভাবালুতায় মিশিয়ে দেই। আস্তে আস্তে বলি -

এরকম দুষ্টুমি আর করো না। ভয় লাগে জামিল। অফিসে ইলেক্ট্রিসিটি ছিল না অনেকক্ষণ আর যে সময়ে তুমি আমাকে ফেসবুকে নক করেছিলে আমি উত্তর দেবার আগেই পিসিটা অফ হয়ে গেলো ইউপিএসের চার্জ শেষ হয়ে।

- হুম! শোনো ভয় পাও কেন এতো ! আমি মানুষটা ভালো কী মন্দ সে চিন্তা করার আগে একবার ভাবো না কেন আমিও তো শেষমেশ একজন মানুষই। খুব সাধারণ একজন মানুষ। আর দিন শেষে আমরা আমরাই তো এক সাথে থাকবো!!

রাতে খাওয়াদাওয়া করে শোবার পরে জামিলের আচরণগুলো নিয়ে ভাবি। কোথায় যেন আমার মাঝে অস্বস্তির একটা চোরা কাঁটা ফুটে থাকে। মাঝে মাঝে ও আমাকে বেফাঁস কথা বলে ফেললে কিংবা আচরণটা স্বাভাবিক না করলে, রাতে যখন বিছানায় কাছকাছি হই, ও সে ক্ষতে প্রলেপ দেয়ার চেষ্টা করে। আজকেও এর ব্যতিক্রম হলো না। টুকটাক সাংসারিক কথার ফাঁকে কাছে টেনে নিলো আমাকে। কিন্তু কেন যেন শরীরটা সাড়া দিচ্ছে না আমার। তবে ডাইনিং এ বসে জামিলের সে সময়ের কথাগুলো আমাকে এতো গভীর বন্ধনে বেঁধে রাখে যে আমি বিস্মৃত হই আমাদের বিগত সময়ে খণ্ড খণ্ড ভাবে ঘটে যাওয়া শীতল বাক্যালাপ, একে অপরের প্রতি নীরব বিতৃষ্ণার চাহনী। দুজনেই বুঝি মাঝে মাঝে চলতে গিয়ে দুজনেরই ভুল হয়ে যাচ্ছে কোথাও না কোথাও। হোঁচট খাই আমিও কিন্তু বিজ্ঞ নারীর মতো ক্ষতস্থানটা দ্রুত রিফু করে নেই সময়ের প্রয়োজনেই।

সমাপ্ত
( বইমেলা ২০১৪ এর চতুর্থ সংখ্যা গদ্য/মুক্তগদ্য " লিপি "তে প্রকাশিত )
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×