somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ৭:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভালবাসা ফান্ড
মিজানুর রহমান
অনিকদের পথকলি ঈদ ফান্ডে দশ হাজার টাকা জমা হয়েছে। মনিরা ও জনি সব থেকে বেশি টাকা (দুই হাজার) দিয়েছে। যে শাপলা, বন্ধু মহলে কৃপন হিসেবে পরিচিত সেও পাঁচ‘শ টাকা দিয়েছে। রোহান, সোহান, অভি,পিথু ,মিলা,র্ববি,আনিশা ওরা প্রত্যেকে দু‘শ করে টাকা দিয়েছে। এই টাকা ওরা গত পাঁচ মাস ধরে জমিয়েছে। ওদের মহৎ উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করতে অনিকের মামাও ওদের সাথে শরীক হয়েছে। মূলত মামার অংশগ্রহণ-ই ফান্ডকে এত সমৃদ্ধ করেছ। ফান্ডে সব টাকা জমা হওয়ার পর ওরা একটা মিটিং ডাকলো। মিটিং-এ সভাপতিত্ব করলেন অনিকের মামা রাব্বি। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল এই টাকা ব্যায় করবে রেল স্টেশনের ছিন্নমূল শিশুদের জন্য। আইডিয়াটা যেহেতু অনিকের মাথা থেকে এসেছে তাই দায়িত্বটা ওর ঘাড়ে এসে পড়লো।

অনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদের আগের দিন মোবারকগঞ্জ রেলস্টেশনে গেল। স্টেশনে পৌঁছতেই বাচ্চাদের হই চৈ শুনে অনিক ওদের কাছে এগিয়ে গেল। ওদের মধ্য থেকে ছোট্ট একটা বাচ্চা অনিকের কাছে ছুটে এলো। পশ্মিম আকাশের দিকে আঙ্গুল তুলে হাঁফাতে হাঁফাতে বললো, বাইজান ঐ দেহেন চাঁদ ঠিক হামার আঙ্গুল সই কইরা দেহেন। তারপর চাঁদ উঠেছে, চাঁদ উঠেছে,কি মজা! কাল ঈদ,কাল ঈদ বলতে বলতে ছেলেটি আবার ওদের সাথে মিশে গেল। অনিক ওদের সাথে যোগ দিলো। যে ছেলেটি ওকে চাঁদ দেখিয়েছে তাকে কাছে টেনে জিজ্ঞাসা করলো, “এবার ঈদে কি কি কিনেছ?” অনিকের কথা শুনে মুহুর্তের মধ্যে বাচ্চাটার মুখ কাল হয়ে গেল। কিছুৰন আগেও যে মুখে ছিল পূর্র্ণিমার আলোকছটা সে মুখ এখন অমাবস্যার কালো অন্ধকারে ঢেকে গেল। অন্য সময় হলে অনিক খুব কষ্ট পেত কিন্তু আজ কষ্ট পেলনা। কারণ আজ ওদের মূখে হাসি ফোঁটানের জিনিস অনিকের কাছে আছে। কিছুৰন পরে অনিক ওদের মধ্যকার চটপটে দেখে দু‘জনকে ডাকলো। ওদের নাম বিলু ও লাবু। অনিক যে,ওদের সবার জন্য ঈদের জামা কাপড় এনেছে তা বিলু আর লাবুকে বললো। বিলু আর লাবু মূহুর্তের মধ্যে সবাইকে এক যায়গায় ডেকে আনলো। বিভিন্ন বয়সের ছেলে-মেয়েদের ঈদের কাপড়-চোপড় তুলে দিলো অনিক। একটি কাপড়ও কম হল না। সবাইকে ঈদের নতুন জামা কাপড় দিতে পেরে অনিক আকাশের দিকে চেয়ে আলৱাহর কাছে শুকরিয়া জানাল। মামাকে ধন্যবাদ জানাতে ভুললোনা অনিক। মামার সাথে কথা বলে বুঝতে পারল জামা-কাপড়ের নির্ভুল হিসেবের আসল রহস্যটা। মামা সপিং করার আগে স্টেশনে এসে বাচ্চাদের সঠিক ডাটা কালেকশন করেছিল। মামার প্রতি অনিকের শ্রাদ্ধাবোধ আরো বেড়ে গেল। ছেলে-মেয়েরা নতুন জামা-কাপড় পেয়ে দৌঁড়ে মাকে দেখাতে গেল। কেউ কেউ মাকে ধরে আনলো অনিকের সাথে পরিচয় করানোর জন্য। বিলু আর লাবু অনিকের সাথেই ছিল। অনিক বিলুর কানে কানে বললো, “আমি তোমাদের সাথে ঈদ করব”। বিষ্ময় ভরা চোখে বিলু অনিকের দিকে তাকিয়ে বলল, সত্যিকথা বাইজান।
-হ্যাঁ সত্যি। তোমাদের সাথে থাকব বলেই ব্যাগে করে কাপড়-চোপড় নিয়ে এসেছি। এবারের ঈদ তোমাদের সাথে কাটাব। অনিকের কথা শুনে বিলু আর লাবু যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল। গলা ফাটিয়ে সবাইকে ডেকে এক যায়গায় জড় করলো। সবার উদ্দেশ্যে বিলু বলল,অনিক বাইজান আমাদের সঙ্গে ঈদ করলে কেমন হইব? সবাই একযোগে বলে উঠল, খুব মজা হইব। এরপর সবাই অনিককে ঘিরে আনন্দে মাতয়ারা হয়ে উঠলো। পরে অনিক বিলু ও লাবুকে নিয়ে প্রতিটি পরিবারে সেমাই, চিনি ও দুধ দিল। সেমাই চিনি দেওয়ার সময় বিলুর মা, বলল বাপ ক্যামেরা আন নাই। লাবুর বাবা বললো বাপ ভিডিও ওয়ালা কই ভিডিও করবানা? সবুরার মা জিজ্ঞেস করলো বাপজান সাংবাদিক আহে নাই ? কাল তাইলে আমাগো ছবি পত্রিকায় বুঝি আর দ্যাহন যাইবো না? কেউ কেউ বললো, বাচ্চা পোলাডা এত কিছু দিলো নির্ঘাত এইডা ইত্যাদিতে দেখাইবো। বিভিন্ন জন বিভিন্ন রকমের মন্তব্য করতে থাকলো।

এদের কথার আগা-মাথা কিছুই বুঝে উঠলো না অনিক। বিলুর কাছ থেকে পরে জানা যাবে তাই ঐ সম্পর্কে ওদের কাছে কিছুই জানতে চায়লো না।। সেমাই চিনি বিলির পর বিলু অনিককে বললো, বাইজান ওনারা যা কইছে তার তো কিছুই বুঝবার পারেন নাই। এহন আমি বুঝাইয়া কই, মাঝে মধ্যে আমাগো এহানো বিভিন্ন এনজিও,বিভিন্ন পার্টির মানুষ আহে। হেরা দু‘টাহার টুনি বিস্কুট আর এক কেজি চাইল দিতে আইলেও হেগো লগে থাহে ছোড বড় কয়েক রকমের ক্যামেরা। সাংবাদিকও আহে হেগো লগে, কি কি যেন লেইখ্যা নিয়া যায়। ঐ গুলান দেওনের পর একখান ব্যানার ধইরা আমাগো মত পিচ্ছি পোলাপানগরে এক যায়গায় গোল করে বহায়। আর বড়গের পেছনে খাড়াইতে কয় তার পর আমাগরে বিস্কটুট আর মুরব্বিগরে চাইলের প্যাকেট উচুঁ কইরা ধরতে কয়। এর পর ফটাফট কয়েকটা ছবি লয়। পরের দিন বিভিন্ন পত্রিকায় ঐ ছবি ছাপা হয়। ওনারা ঐ সব কথায় কইতাছিল।

রাতে সব বাচ্চারা বললো, বাইজান আমরা সবাই এক লগে আইজ ঘুমাবো। অনিক রাজি হলো। এরপর ওরা পৱ্যাটফর্ম পরিষ্কার করে শুয়ে পড়লো। অনেকৰণ গল্পের পর ওরা ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু অনিকের ঘুম হলো না। মশার কামড়ে ওর ঘুম আসছে না। সারারাত ওকে নির্ঘুম কাটাতে হলো। এদিকে অনিকের বাবা-মা ছেলের চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠলে মামা তাদেরকে শান্ত করালো।
সকালে স্টেশনের পুকুরে গোসল সেরে লাবু আর বিলুদের ঘরে সেমাই খেলো অনিক। এরপর ওরা ঈদগাহে নামাজ পড়তে গেলো।

নামাজে যাওয়ার আগেই শরীরটা ওর গরম গরম লাগছিলো। পেটের ব্যথাটা অনেক দিন পর আবার শুর্ব হয়েছে। ভয় পেয়ে গেল অনিক। আগের মত ব্যথা শুর্ব হলে বিপদ। তাই নামাজ শুর্ব হবার আগেই মোবাইল অন করে মামাকে পেটব্যথার কথা জানিয়ে রাখলো। আব্বা আম্মা ফোন করতে পারে ভেবে ফোনটা বন্ধ রেখে নামাজ পড়তে শুর্ব করলো। নামাজ শেষে অনিক ওদের সবার সাথে কোলাকুলি করলো। পরে গেল বিলুদের ঘরে । পলিথিনের ছাউনি দিয়ে তৈরী ওদের ঘর। কিছুৰণ বসে থাকতেই পেটের ব্যথাটা হঠাৎ বেড়ে গেলো। অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করতে লাগল অনিক। বিলুর মা অনিককে শুইয়ে দিলো। লাবুর মা গামলায় কাঁদামাটি ভরে ওটা অনিকের পেটের উপর দিলো। কিছুতেই পেটের ব্যথা কমলো না। চোখ মুখ জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। বিলুর মা মাথায় পানি দিয়ে দিচ্ছিলো। কিন্ত শরীর যেন ধীরে ধীরে নেতিয়ে পড়লো। স্টেশনের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা বিলুদের ঘরে ভীড় করলো।

কিছুৰনের মধ্যে অনিকের মামা একটা গাড়ি নিয়ে উপস্থিত হলো। স্টেশনের ছেলে মেয়েরা অনিককে গাড়িতে তুলে দিলো। অনিককে ক্লিনিকে ভর্তি করা হলো। ডাক্তার অসিত অনিকের মামার বন্ধু মানুষ। ক্লিনিকটি তার নিজেরই। দু‘জন নার্স এসে অনিককে একটা বেডে তুলে পেটের ওপর একটা যন্ত্র ধরলো। ডাঃ অসিত খুব মনোযোগ সহকারে কম্পিউটারে কি যেন দেখলো। তারপর দ্র্বত অনিককে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকালো। প্রায় এক ঘন্টা পর ডাঃ অসিত বের হলো। মামা দ্র্বত ছুটে গেলো ডাঃ অসিতের কাছে। ভাগ্নের কি অবস্থা ! বলল মামা। “ঠিক সময়ে এসেছিস আরেকটু পরে আসলে নাড়ীটা বাস্ট হয়ে যেত। অ্যাপেনডিক্সতো অনেক দিনের। এতদিন অপারেশন করাসনি কেন?” মামাকে বলল, ডাঃ অসিত। অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করা হলো অনিককে। একটি বেডে শুইয়ে দিলো ওকে। তখনও জ্ঞান ফিরেনি অনিকের।

বিলুরা প্রত্যেক ঈদে ফুল বিক্রি করে। এবার ফুল কিনলো বটে কিন্ত কেউ ফুল বিক্রি করলো না। ওরা সবাই ফুল নিয়ে ক্লিনিকে আসলো। অনিক চোখ মেলতেই দেখলো স্টেশনের সব বাচ্চারা ফুল হাতে দাঁড়িয়ে আছে। অনিক ইশারায় ওদেরকে কাছে ডাকলো। ওরা সবাই অনিককে ফুল দিলো। বিলু জিজ্ঞেস করলো, বাইজান অহন ক্যামন লাগতাছে। লাবু কান্না জড়িত কন্ঠে বললো, আমরা সবাই দোয়া করতাছি আপনে ভালা হইয়া যাইবেন। আপনের মত মানুষের কিছু অইবনা। অনিক লাবুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, কাঁদে না লাবু আমি ভাল আছি। অনিকের প্রতি ওদের এত ভালোবাসা দেখে গর্বে মামার বুক ভরে উঠলো। মামা অনিককে বললো, তোমাদের ফান্ডেরনাম পরির্তন করতে চাই। এটার নাম দিলাম ভালবাসা ফান্ড। ঐ দেখো তোমাদের ভালোবাসা ফান্ডের সদস্যরা
আসছে। আর একটু সময় সবাই একসাথে থাকো । আমি ক্যামেরা নিয়ে আসছি তোমাদের একটা গ্র্বপ ছবি তুলবো।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×