somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কল্পকাহিনী

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ৮:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লুভ্রনং
মিজানুর রহমান

রাহুল আর সাকিব দু‘ জনে হাসানের চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলো। হঠাৎ অল্প বয়সী কয়েকটি ছেলে এসে রাহুলের বাম পাশে বসে থাকা লোকটিকে এলোপাতাড়ি কোপনো শুরু করলো। ওদের সবার হাতেই চাইনিজ কুড়াল ছিল। আশে- পাশের সবাই এদিক ওদিক দৌঁড়ে পালালো। রাহুলও পালালো তবে বেশি দূরে গেলোনা। কারণ সাকিব যে, ওখান থেকে উঠবেনা এবং মার খাবে এ ব্যাপারে রাহুল প্রায় নিশ্চিত ছিল। ঘটলও তাই। র্বদ্র ওদের একজনকে বললো, তোমরা লোকটিকে মারছো কেন? সাকিবের কথা শেষ হতে না হতেই একজন সপাত করে কোপ বসিয়ে দিল ওর বাম হাতের কব্জি বরাবর। আরও একজন কোপ মারবে এমন সময় নেতা গোছের এক জন বললো, পাগল মেরে সময় নষ্ট করিসনা, দ্রুত পালা।
ওরা চলে যাওয়ার পর রাহুল এগিয়ে গেলো। পকেট থেকে রুমালমালটা বের করে কাটা স্থান ভাল করে বেঁধে দিয়ে বললো, চল আর এখানে থাকা যাবে না, পুলিশ এসে গেলে বিপদে পড়ে যাবি। আমার কথাটা শুনে সাকিব রেগে একবারে অগ্নি মুর্তিধারন করে বললো, স..স..সব সালারা স্বাথপর ।রেগে গেলে সাকিব এভাবে তোতলায়ে কথা বলে।

কিছুক্ষনের মধ্যে অনেক লোক জড় হয়ে গেল। লোকটি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কেউ কেউ বলছে মারা গেছে। কেউ কেউ বলছে বেঁচে আছে। সাকিব রাহুলের দিকে চোখ বড় বড় করে বলল, তুই কিছু বলবি নাকি?
রাহুল ওর চোখের দিকে না তাকিয়ে বললো, হ্যাঁ, এখান থেকে সাকিব সরে পড়া উচিৎ।
রাহুলের কথা শোনার সাথে সাথে ওর সাদা মুখখানা অস্তমিত সূর্যের ন্যায় রক্তিম বর্ণ ধারন করলো। বিড় বিড় করে কি যেন বললো তারপর ভীড় ঠেলে বেরিয়ে একটা ভ্যান নিয়ে আসলো। লোকটাকে ভ্যানে তুলে দিতে রাহুল কয়েকজনকে সাহায্য করতে বললো। দু-তিনজন এগিয়েও আসলো। এমন সময় হন্ত দন্ত হয়ে ক্যামেরা হাতে দুই তিন জন লোক উপস্থিত হলো। ওনারা বললেন, দাঁড়ান ভাই কয়েকটা শর্ট নেব একটু পরে ওঠান। এরই মধ্যে পুলিশের গাড়ি চলে আসল। রাহুল সাকিবকে এক প্রকার টেনে হিচড়ে বাইরে বের করে একটা রিক্সা ডেকে ক্লিনিকে নিয়ে গেলো।

সাকিবের চাখ `দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে, মুখমন্ডলে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, ক্লাসে স্যার ডুকেছে তারপরও বারান্দার রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে। রাহুল সাকিবের কাছে পিঠে থাবা দিয়ে বললো,কিরে ক্লাসে যাবি না?
নারে শরীরটা বেশ ক্লান্ত, ঘুম পাচ্ছে।
তাহলে আসলি কেন?
চার পাঁচদিন আসা হয়নি,আর কাটা জায়গাটাও শুকিয়ে এসেছে, তাই ভাবলাম ঘুরে আসি।
শরীরের এ হাল কেন?
আজ দুই-তিন দিন ধরে ঘুমুতে পারছিনা। সেদিনকার দৃশ্যটা বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। সবনিক একটাই চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে , মানুষ কেন এত নির্দয় হয়। আচ্ছা রাহুল সেকেন্দার স্যারতো প্রায় বলেন আল্লাহ্‌ কাউকে খারাপ মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করেননি। তাহলে কিভাবে এরা খারাপ হয়,বলতে পারিস?
“গতকাল ক্লাসে সেকেন্দার স্যার বলেছিলেন মানুষের মস্তিষ্কে চারটি লোব আছে। এদের মধ্যে টেম্পোরাল লোবের সেলগুলো বেশি কাজ করলে নাকি মানুষ খারাপ কাজে প্রলুদ্ধ হয়। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এই সেলগুলো উজ্জীবিত হয় আর তখনই মানুষ খারাপ কাজে লিপ্ত হয়। ক্লাস না করে এখানে দাড়িয়ে কথা বলাটা ঠিক হচ্ছেনা চল লাইব্রেরীতে যাই ওখানে কথা বলা যাবে।
খুব ছোট বেলা থেকে ওদের বন্ধুত্ব। সাকিবের বাবা মা মারা যাওয়ার পর রাহুলের মা বাবা সাকিবকে নিজের ছেলের মত আদর করতো। সেই থেকে ওদের ঘনিষ্ঠতা আরও বেড়ে যায়। হাঁটতে হাঁটতে ওরা লাইব্রেরীতে গেল। একটি টেবিলে মুখোমুখি হয়ে বসল দু‘জনে।
সাকিব কিছুক্ষন কি যেন ভাবলো তারপর রাহুলকে বললো, আচ্ছা টেম্পোরাল লোবের সেলগুলো নষ্ট করা যায় না?
“আমি কি করে বলব বল? তোরতো ধৈর্য আছে লাইব্রেরী থেকে কিছু বিজ্ঞান বিষয়ক বই নিয়ে যা, গবেষণা করে দেখ কিছু আবিষ্কার করা যায় কিনা?
তারপর নিরবতায় কেটে গেল কিছুক্ষন। রাহুলের চোখ পানিতে টলমল করছে। ছোখের পাতা বারবার ওঠানামা করছে। তার পরও ঠেকাতে পারলোনা, চোখ বেয়ে টপ টপ করে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
সাকিবের নজর পড়তেই রুমাল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে রাহুল বললো,অনেকদিন চাপা রেখেছিলাম তুই কষ্ট পাবি বলে বলিনি। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে না বলে চলে যাওয়াটা ঠিক হবেনা।
চলে যাবি মানে! কিছুইতো বুঝতে পারছিনা।
হ্যাঁ চলে যাব। তুইতো জানিস আমার বাবা আমেরিকা থাকে। আমি আর মা কাল আমেরিকা চলে যাব। যাওয়ার আগে হয়তো আর দেখা হবেনা। মা ফোন দিচ্ছে। আমি চলে গেলাম। ভাল থাকিস।
রাহুলের কথা শুনে নির্বাক হয়ে গেল সাকিব। কোন কথাই বের হলো না ওর মুখ দিয়ে। মুর্তির মতো বসে রইল। হাত নাড়িয়ে বিদায় জানানোর শক্তিটুকুও যেন হারিয়ে ফেললো সাকিব।

সন্ধ্যার সাথে সাথে আজ বাসায় ফিরলো সাকিব । রান্না সেরে গোছল করলো। দুপুরে খাওয়া হয়নি তাই তাড়াতাড়ি খেয়ে নিল। ঘরের মধ্যে কিছুক্ষন হাঁটা হাঁটি করে পড়ার টেবিলে বসলো। গতকাল লাইব্রেরী থেকে আনা বিজ্ঞান বিষয়ক বইগুলো একে একে পড়তে লাগলো। ইতি মধ্যে দু‘টি বই পড়া হয়ে গিয়েছে। তিন নম্বর বইটা হাতে নিল। অনেক্ষন ধরে বসে আছে সাকিব। মেরুদন্ডের হাড়ে ব্যথা করছে। চেয়ার থেকে দাড়িয়ে হায় তুলতে গিয়ে নজর পড়ল দেওয়ালের ঘড়ির দিকে। রাত তিনটা বেঁজে গেছে। ঘুম আসছেনা। ঘরের বাতাস বেশ গরম হয়ে উঠেছে। একটু ফ্‌্েরস বাতাসে ঘুরে আসলে ঘুম আসতে পারে। তাই রুম থেকে বেরিয়ে সাকিব স্কুল মাঠে গিয়ে বসলো। দূর আকাশের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে কি যেন ভাবছে সাকিব, একান্ত নিবিষ্ট মনে। হঠাৎ মাঠের দক্ষিন দিক হতে একটি খোলা জীপ এসে ওর পাশে এসে দাঁড়াল। জীপটি খুব বড় নয়। আয়তাকার জীপটিতে বড় জোর চালক সহ দুজন বসতে পারবে। জীপটির ডিজাইন প্রচলিত গাড়ির মত নয়। গাড়িটির পেছনের পাশের উপরের অংশ খোলা। গাড়ির পিক পিক হর্ণে হতচকিত হয়ে ওঠে সাকিব। এত রাতে গাড়ি ! ভয় পেয়ে গেল। দৌড়ে পালাবে কিনা ভাবছে। “পালাবেনা কিন্তু দ্রুত গাড়িতে ওঠ”গাড়ির ভেতর থেকে কে যেন বেশ চড়া মেজাজে বললো। সারা শরীর হিম শীতল হয়ে গেল পা দুটো যেন পাথর হয়ে গেল ওর। দৌড় তো দূরে থাক সর্ব শক্তি প্রয়োগ করে এক পাও সামনে বাড়াতে পারল না। গাড়ির দরজা খুলে গেল। সাকিব উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করল কে কথা বলছে। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলনা। পুলিশের গাড়ি না, এটা বোঝা গেল। কিন্তু গাড়িটি কোথা থেকে কীভাবে এলো? চালক বিহীন গোয়েন্দা বিমান আছে পত্রিকা পড়ে জেনেছে। কিন্তু চালক বিহীন গাড়ী আছে তাও আবার বাংলাদেশে ! কিছুই ভাবতে পারছেনা সাকিব জিন ভুত নয়তো ! ছোট বেলায় দাদা দাদীর কাছে গল্প শুনেছে জিন ভূতদের নাকি মাটিতে ছায়া পড়েনা। সাকিব বেশ ভাল করে দেখল গাড়ির তো ছায়া পড়েছে। আর যাই হোক এটা যে জিন ভূত নয় এ ব্যাপারে নিশ্চিত হল ও। পা দু‘টোও হালকা হয়ে গেল। দৌড় দেবার কথা ভাবছে। ঠিক যে মুহুর্তে দৌড় দেবে সেই মুহুর্তে গাড়ি থকে আবার কথা ভেসে আসল, “বন্ধু ওঠ চল তোমাকে বাড়িতে রেখে আসি।। বন্ধু শব্দটা ওর ভয়-ভীতি কিছুটা দূর করে দিল। মনে সাহস সঞ্চার হল। পালানোর চিন্তা বাদ দিল। যা হয় হবে উঠেতো বসি তারপর দেখি কী করে? মনে মনে বলল সাকিব। ধীরে ধীরে পা বাড়িয়ে গাড়ীতে উঠে বসল । গাড়ীতে কেউ নেই অথচ চলছে ঠিক ঠাক। কিছুক্ষনের মধ্যে গাড়ীটি ওদের বাড়ীর উঠোনে গিয়ে থামল। গাড়িতে বসে কয়েকবার চিমটি কেটে দেখেছে স্বপ্ন দেখছে কিনা। চিমটিটা একটু জোরেই দিয়ে ফেলেছে যার কারনে বাম হাতের কব্জী এখনও জ্বলে যাচ্ছে। ঘটনাটা যে জাগরিত অবস্থায় ঘটছে তা বুঝল সাকিব। ভয়ে ভয়ে গাড়ী থেকে নামল এবং খুব ভালো করে মাটির দিকে তাকাল। কিন্তু কোথাও কোন ছায়া দেখল না। প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেল। সাহেব চাচার কলাবাগানের মড়মড় শব্দ কানে আসছে। ঘরের চালে কে যেন ঝাঁটা দিয়ে ঝাড় দিচ্ছে। সাকিবের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। পানি খেতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে বাড়ির বড় কলসটার এক কলস পানিতেও পিপাসা মিটবেনা। হাত পা ক্রমেই নিথর হয়ে আসছে। পাশের বাড়ীর সাহেব চাচার নাক ডাকার শব্দ কানে আসছে। সাহেব চাচা সাহেব চাচা বলে জোরে ডাক দিল কিন্তু জোরে শব্দ বের হল না কারন ওর দু‘পাটি দাঁত এক হয়ে গেছে। শরীর ভারী হয়ে আসছে আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছে না এখুনি হয়তো মাটিতে লুটিয়ে পড়বে। তারপর গাড়ীটা ওর দেহের ওপর দিয়ে চলে যাবে। শেষ হয়ে যাবে এ জগতের অধ্যায়। কেউ কোন দিন জানতেও পারবেনা সাকিবের মৃর্ত্যু কিভাবে হলো। পুলিশ টের পেলে হয়তো থানায় নিয়ে পোষ্টমর্টেম করবে তারপর সাহেব চাচা অথবা এলাকার অন্য কেউ থানায় কিছু টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনবে। তারপর মাটিচাপা। দম বন্ধ হয়ে আসছে সাকিবের। কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।
বন্ধু মিছেই ভাবছ তুমি, বিশ্বাস কর আমি জিন ভূত কিছুই নই, আমি লুভ্রনং, তোমার বন্ধু হতে চাই।”গাড়ীটি হতে কথা ভেসে আসলো।
কথাটা প্রচন্ড জোরে ওর কানে গিয়ে বাঁজল। শরীরে একটা ঝাকুনি হল। এক সাথে লেগে থাকা দু‘পাটির দাঁত গুলোও খুলে গেল। একটু স্বাভাবিকতা ফিরে আসল ওর ভিতর। তারপর সাকিব প্রশ্ন করল, তাহলে কে তুমি? কেনই বা বন্ধু হতে চাও?
- আমি তোমাদের পৃথিবীর কোন জীব নই। আমি এসেছি দূর গ্রহ ভেনাকাস থেকে। আর বন্ধু হতে চাই কেন তা বলব?
- হ্যাঁ বল।
- তুমি মাঠে বসে ভাবছিলে গুটি কয়েক লোক সমাজে অন্যায় অনাচার করে। আর তাদের জন্য সমাজ তথা দেশ অশান্তির যাঁতাকলে পিষ্ঠ। বিজ্ঞানের এমন কোন আবিস্কার দিয়ে যদি এদের মস্তিষ্কের খারাপ কাজে উদ্দীপনা যোগানো টেম্পোরাল লোরের সেল গুলো নষ্ট করে দেওয়া যেত,তাহলে দেশে আর কোন খারাপ মানুষ থাকতোনো। বিশৃঙ্খলাবিহীন দেশটা তখন কতই না সুন্দর হত। কি ঠিক বলেছি না?
- হ্যাঁ ঠিক বলেছ। তবে তুমি কিভাবে জানলে !
- পৃথিবীতে আসার আগে আমার মাথায় একটি বিশেষ সফটওয়ার লোড দেওয়া হয়েছে। যার দ্বারা পৃথিবীর মানুষের ভাবনা গুলো আমি জানতে পারি। আমাকে পাঠানো হয়েছে তোমার ভাবনার বাস্তবায়ন করতে। আমাদের ভিক্টর একবার পৃথিবীতে এসেছিলেন। তিনি তোমাদের এই খারাপ মানুষ গুলোর আচরনে প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছিলেন। আর তাই অনেক গবেষণার পর আবিস্কার করেন মেলরিন রশ্মি , যা অনেকটা তোমাদের বিজ্ঞানীদের আবিস্কার করা লেজার রশ্মির মত।
-বন্ধু ভিক্টরটা আবার কে?
-উনি ভেনাকাসের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।
-ও আচ্ছা বুঝেছি। হ্যাঁ মেলরিন রশ্মি সম্পর্কে কি যেন বলছিলে?
-আমাদের মেলরিন রশ্মি তৈরী ইরিলিয়াম নামক এক প্রকারের ধাতু দিয়ে। এতে বিশেষ পদ্ধতিতে প্রস্তুত একটি মটরের সাহায্যে নির্গত হাইড্রোজেনের প্রজ্জ্বলিত আলোক উৎস ব্যাবহার করা হয়। মটরের সাহায্যে এক ফোঁটা পানি থেকে অসংখ্য হাইড্রেজেন পরমাণু তৈরী করা সম্ভব। যার কারনে এ যন্ত্র থেকে একটানা রশ্মি নির্গত করা যায়। তোমাদের লেজার রশ্মি দিয়ে বড় জোর সূক্ষ অপারেশন করা যায। কিন্তু আমাদের মেলরিন রশ্মি দিয়ে তোমাদের মাথার নিউরন সহ বিভিন্ন কোষের কার্যকলাপও নিয়ন্ত্রন করা যায়। এই রশ্মি প্রয়োগ করে দুষ্টু মানুষ গুলোর টেম্পোরাল লোবের সেলগুলো নিস্ক্রিয় করে ভালো মানুষে পরিণত করা সম্ভব।
আবেগে আপ্লুত হয়ে সাকিব বললো,তুমি সত্যি সত্যি টেম্পোরাল লোবের সেলগুলো নষ্ট করতে পারবে?
লুভ্রনং.বললো, হ্যাঁ। কেন নয়? এটা আমাদের কাছে খুব মামুলী একটা ব্যাপার।
কথা বার্তা শেষে গাড়ীর মধ্যে কয়েক বার খট খট শব্দ হল। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে ওটা একটি ব্রিফকেসের আকার ধারন করল। তারপর সাকিবকে উদ্দেশ্য করে লুভ্রনং বলল, বাম পাশের এই বোতামটিতে চাপ দাও। সাকিব বোতামে চাপ দিতেই একটি হাতল বের হয়ে আসল। এবার আমাকে ঘরে নিয়ে যাও, বললো লুভ্রনং। সাকিব ওকে ঘরে নিয়ে গেল।

রাতের পরিকল্পনা অনুযায়ী সাকিব ব্রিফকেসটি হাতে নিয়ে শহরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল। শহরের সবচেয়ে বিলাস বহুল শাহী মার্কেটের মধ্য দিয়ে হাঁটার সময় ব্রিফকেস হতে মাঝে মাঝে চিঁ চিঁ শব্দ বের হতে থাকে।
বিষ্ময়ভরা নেত্রে সাকিব লুভ্রনং এর দিকে তাকলো তারপর জিজ্ঞাসা করল “এটা কিসের শব্দ বন্ধু? ”
লুভ্রনং বললো, এই মার্কেটে কিছু সংখ্যক দুষ্টু মানুষ ঘোরা-ফেরা করছে। তারই সংকেত এটা।
বেশ উৎকন্ঠিত হয়ে সাকিব বললো, তাহলে আর দেরী কেন শুরু কর।
“বন্ধু এমন লোকের সংখ্যা অনেক। আর এরা খুব বেশি ভয়ংকর নয়। আমাদের টার্গেট তারা যারা এদেরকে নিয়ন্ত্রন করে। কাজেই সামনে এগিয়ে যাও।” বললো লুভ্রনং।
সাকিব হাঁটতে হাঁটতে একটি পাঁচতারা হোটেলের কাছে পোঁছাতেই ব্রিফকেস হতে আবার চিঁ চিঁ শব্দ বের হতে লাগলো এবং পিট পিট করে লাল বাতি জ্বলতে থাকলো। “বন্ধু আমরা যাদেরকে খুজঁছি তারা এই হোটেলেই আছে। কাজেই অপারেশন এই হোটেল থেকেই শুরু করা যায়” ফিস ফিস করে বললো লুভ্রনং।
দেশের বিশিষ্ট্য রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী ও শুধী সমাজের আনাগোনা আছে এই হোটেলে। মি.হুসাইন,ড.প্রিন্স, ড.আকাশ, মি.সম্রাট, ড.আসিফ, মি.শান্ত, মি.রাও মি. রাহুল মি. কাকন, মিস তিথি ,মিস সিথিদের মত বিশিষ্ট্য ব্যক্তিবর্গ বছরে একটি করে কনফারেন্স করেন এই হোটেলে। আজ তাদের বাৎসরিক কনফারেন্স চলছে হোটেলের তৃতীয় তলায়। এই কনফারেন্সে নেয়া হয় পরবর্তী এক বছরের নীল নকশা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা। এরা সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার উর্দ্ধে।

হোটেলের তৃতীয় তলায় ওঠার পর লুভ্রনং সাকিবকে থামতে বলে এবং কনফারেন্স রুমের দরজার সামনে ওকে রাখতে বললো। লুভ্রনং এক ধরনের রশ্মি নির্গত করে দরজার নিচের অংশ বিশেষ কেটে ফেললো। অতঃপর কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করল। লুভ্রনং একে একে সবার ওপর মেলরিন রশ্মি প্রয়োগ করে খারাপ কাজে প্ররোচনা যোগানো টেম্পোরাল লোবের সেলগুলো নষ্ট করে দিলো। প্রায় আধা ঘন্টা পরে মি.রাও ও মিস সিথি কনফারেন্স রম্নমে প্রবেশ করলো কিন্তু লুভ্রনং এদের ওপর মেলরিন রশ্মি পয়োগ করতে পারলোনা। কারন মটর হাইড্রোজেন সাপ্লাই দিতে পারছেনা,পানির প্রয়োজন। লুভ্রনং বাইরে এসে সাকিবকে ডেকে একটু পানি দিতে বললো। ফ্লোরের আশে পাশে কোথাও পানির ব্যবস্থা না থাকায় সাকিব পানি আনতে নিচ তলায় হোটেলের ক্যান্টিনে যায়। ক্যান্টিনে ভিড় থাকায় পানি আনতে বেশ সময় লাগল ওর।

এদিকে মি.রাও ও মিস সিথি হলে প্রবেশ করল এবং চেয়ার টেনে বসে মি.রাও ।স্বভাবজাত ভঙ্গীতেই বললেন, সভাপতি সাহেব আপনার কথা দু্রত শেষ করুন। আমাদের তাড়া আছে। সভাপতি মি.হুসাইন প্রচন্ড ক্ষেপে গেলেন। বক্তব্যের মাঝেই মি.রাওকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “আপনি আগে একজন বিজ্ঞানী তারপর রাজনীতিবীদ। রাজনীতিবিদরা জনগনকে যখন তখন থামতে বলে। কিন্তু একজন বিজ্ঞানী হিসেবে এ ধরনের আচরণ আপনাকে মানায় না। আপনার কোন কথা থাকলে আমার বক্তব্য শেষে অনুমতি নিয়ে পেশ করবেন।” সভাপতির বক্তব্য শেষ হলে রুমের সকলে করতালি দিয়ে অভিন্দন জানালো। সভাপতির বক্তব্য শুনে মি.রাও ও মিস সিথি আশ্চার্য হয়ে গেল। মি. রাও সিথির দিকে তাকিয়ে বললেন,“মিস সিথি এরা এত ভাল মানুষ হল কবে থেকে?” একটা দীর্ঘাশ্বাস ছেড়ে মিস সিথি বললেন“কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা মি. রাও।” তারপর মি.রাও ও মিস সিথি নিজেরা কিছুড়্গন কি যেন আলাপ করলো অতঃপর সভাপতিকে লক্ষ্য করে মিস সিথি বললো,“ কাল সীমান্তে মি. রড হুক পঞাশ কেজি হিরোইন ও পাঁচ‘শ কেজি গোল্ড নিয়ে আসছে। প্রশাসন কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে কাজেই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দরকার। এছাড়াও আপনি জানেন, সাদ্দাম ও জুবায়ের আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। ওরাও পতিমধ্যে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে সুতরাং এটা নিয়ে ভাবা প্রয়োজন ।”মিস সিথির কথা শেষ হতেই মি. রাও বললেন, আমাদের প্রতিপক্ষের ক্যাডার শামীম, আবিদ ও সৌরভকে খুব দ্রুত না সরালে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। কাজেই এদের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। আর এবারের টেন্ডার গুলোর সঠিক কমিশন আমাদের ফান্ডে আসেনি সু ত রা ং - - সভাপতি মি. রাওকে থামিয়ে দিয়ে বললেন “ মি.রাও ও মিস সিথি আপনারা আসার আগে আমরা সবাই মিলে ভাল কাজ করার শপথ নিয়েছি। জীবনে অনেক খারপ কাজ করেছি , অন্যায় করেছি আর নয় চলুন জনগনের সেবা করি। ” মি.হুসাইন সামনে বসা সবার উদ্দেশ্যে বললেন আপনারা কি বলেন? - “ জ্বি আমরা সবাই একমত।” এক যোগে বলে উঠল সবাই।
কি এমন হলো যে এরা সবাই এক যোগে ভাল মানুষ হয়ে গেল, কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা ওরা। মি. রাও রাগ করে উঠে পাশের রুমে চলে গেল। রুমে থাকা ল্যপটপটা ওপেন করতে না পেরে মিস সিথিকে ডেকে তার ল্যাপটপটা ওপেন করতে বললেন কিন্তু ওটাও কাজ করছে না। সকল প্রোগ্রাম ডিলিট হয়ে গিয়েছে। মি.রাও দ্রুত পায়ে হোটেলের অফিস রুমে গেল। খোজঁ নিয়ে জানলো এক ঘন্টা ধরে তাদের কম্পিউটার গুলোও কাজ করছেনা। মি.রাও ফিরে এসে ফিসফিস করে বললেন - মিস সিথি সাবধান! আমরা মনে হয় বিপদে আছি। সিথি আপনার মনে আছে নিশ্চয় এক কর্মশালায় চা বিরতির ফাঁকে বিজ্ঞান কেন্দ্রের সভাপতি ভিনগ্রহের আগন্তুক সম্পর্কে বলতে গিয়ে সবার হাসি ঠাট্টার পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। “হ্যাঁ হ্যাঁ আমার মনে আছে। উনি বলেছিলেন বিকট শব্দ করে একটি জন্তুকে ওনার বাড়ীর সামনের বাগানে নামতে দেখেন। ঘরে ঢুকে তিনি কম্পিউটার ওপেন করে বিজ্ঞান কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কম্পিউটার ওপেন করতে না পেরে ক্যামেরা নিয়ে এসে বেশ কিছু ছবি তোলেন। কিন্তু একটি ছবিও হয়নি। সে দিন কিন্তু আমি বিশ্বাস করেছিলাম। মিস সিথি আমি নিশ্চিত, হোটেলে ভিন গ্রহের কেউ আছে এবং আমরা ওদের তার্গেটে আছি, মি. রাও কথাগুলো বেশ দৃঢ়তার সাথে মিস সিথিকে বললেন। দুজ‘নে কিছুক্ষন ফিসফিস করে কি যেন বললেন তারপর মি.রাও ও মিস সিথি হোটেলের গোপন সিঁড়ি দিয়ে দ্রম্নত ছাদে উঠে সিঁিড়র দরজা বন্ধ করে দিল। মিস সিথি সর্বশক্তি দিয়েও ল্যপটপটি হাতে ধরে রাখতে পারলোনা। হাত কাঁপতে কাঁপতে ওটা ছাদের ওপর আছড়ে পড়লো। মি.রাও সিথিকে ল্যাপটপটি ওপেন করতে বললেন।
“মি.রাও ল্যাপটপ কাজ করছে।”
“ খুব দ্রুত বিজ্ঞান কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন” কাপাঁ কাপাঁ কন্ঠে বললেন মি. রাও।
মিস সিথি বাংলাদেশ বিজ্ঞান কেন্দ্রের সভাপতিকে হোটেলের ভিন গ্রহের আগন্তুকের উপস্থিতির সন্দেহের কথা খুলে বলল। সভাপতি বিষয়টিকে অত্যানত্ম গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করলেন। সভাপতি বিজ্ঞান কেন্দ্রে উপস্থিত বিজ্ঞানীদের নিয়ে জরুরী মিটিং করলেন।


কিছুক্ষনের মধ্যে হোটেলের চারপাশ পুলিশ ঘিরে ফেললো। বিজ্ঞান কেন্দ্রের বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা সবাই হাজির হয়ে গেল। প্রতিটি প্রবেশ পথে মেটাল ডিটেক্টর বসানো হল। বিবর্ধক লেন্স নিয়ে সতর্ক অবস্থান নিল কয়েকজন বিজ্ঞানী। পাশের কয়েকটি মাকের্টের উপর দূরবীণ নিয়ে প্রস্তুত হল কয়েকজন। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার সাথে সংযোগ স্থাপন করতে বড় এন্টিনা বসানো হলো। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পৌঁছে গেল। কিছুক্ষনের মধ্যে অপারেশন শুরু হবে। সবাই সভাপতির নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছে। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার সাহায্যে ভিনগ্রহের আগন্তুককে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
এদিকে সাকিব পানি এনে দু’ফোঁটা দিলো লুভ্রনংকে। পানি নেওয়ার পর ও ভিতরে প্রবেশ করলো। কিন্তু মিস সিথি ও মি. রাওকে কোথাও খুঁজে পেলনা। কনফারেন্স রুম থেকে বাইরে আসার সাথে সাথে লুভ্রনং - এর সারা শরীর থেকে লাল আলোক রশ্মি রের হতে লাগলো এবং বিরতিহীন ভাবে চিঁচিঁ শব্দ হতে থাকলো। উৎকন্ঠিত সাকিব জিজ্ঞেস করলো লুভ্রনংকে “বন্ধু হোটেলে ওদের সংখ্যা কি অনেক? ওদের হাতে আমরা ধরা পড়ে যাব নাতো?
” ভয় পাবার কিছু নেই, তবে ওদের অবস্থান নিশ্চিত বুঝতে পারছি না যে ওরা ভিতরে না বাহিরে? ”
কিছু সময় নিঃশব্দে অতিক্রান্ত হলো। সাকিবের হার্ট বিট বেড়ে গেল। ধরা পড়ে গেলে ওরা মেরে ফেলবে, না বাঁচিয়ে রাখবে। বাঁচিয়ে রাখলেও হয়তো সারা জীবন জেলখানার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বাকি জীবন কাটাতে হবে। যদি জেলে থাকি তাহলে বন্ধুরা কি আসবে দেখতে! সাহেব চাচার অসুখ হলে কে ওনাকে ডাক্তার দেখবে? আরও কত শত ভাবনায় ভাবনায় ডুবে গেল সাকিব।
লুভ্রনং তার শরীরের চার পাশ দিয়ে কয়েকটি চকচকে পাত বের করলো। একটি পাত এসে সাকিবের পায়ে আঘাত করায় ভাবনার রাজ্যে আর বেশিক্ষন ঘোরা হলো না। “ বন্ধু ক্যামেরার নিচের প্রান্তের সুইচটি চাপ দিয়ে আঙ্গুলটা চারিদিকে ঘোরাও,বললো লুভ্রনং। গত রাতে লুভ্রনং সাকিবের বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে ক্যামেরাটি সেট করে দিয়েছিল। চারিদিকে ছড়ানো পাতগুলোর একটির মাথায় ছোট একটি কম্পিউটার আছে। বেশ কিছুক্ষন ধরে লুভ্রনং কম্পিউটারটিতে কি যেন দেখলো। তারপর পাতগুলো আবার ভেতরে ঢুকিয়ে ফেললো। “বন্ধু শত্রু পক্ষ আমাদেরকে ঘিরে ফেলেছে। ভয় পেওনা দেখছি কিভাবে বের হওয়া যায়। কথাটা বলেই একটা ড্রয়ার সামনের দিকে বের করে লুভ্রনং বললো, এখানে একটা জাম্পসুট আছে ওটা পরে নাও। জাম্পসুট পরে নিল সাকিব। নাক, মুখ আর চোখ দুটোর যায়গায় ছোট ছোট ছিদ্র আছে। পোশাকটা ওর গায়ের সাথে এঁটে গেল। সাকিবেক দেখতে অনেকটা কল্পচিত্রের এলিয়ানের মতো মনে হচ্ছিলো।
এ দিকে বাহির হতে হ্যান্ড মাইকে হোটেলের সবাইকে নিজ নিজ রম্নমে দরজা বন্ধ করে থাকতে বলা হচ্ছে। এরই মাঝে হটাৎ একটি ক্রেন ওয়ালেরগ্লাস ভেঙ্গে সাকিবকে যেই ধরতে গেল সেই লুভ্রনং এক ধরনের রশ্মি প্রয়োগ করে ওটাকে বাঁকা করে দিল। যার কারনে সাকিবের গায়ে না লেগে ওটা পাশের দেওয়ালে আঘাত করলো। আমরা তোমাকে চর্তুদিক থেকে ঘিরে ফেলেছি পালানোর চেষ্টা করে লাভ নেই। যদি সেচ্ছায় ধরা দাও তাহলে আমরা তোমার ক্ষতি করবোনা। আর যদি সেচ্ছায় ধরা না দাও তাহলে আমরা কঠিন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো। বিজ্ঞান কেন্দ্রের সভাপতি ড. প্রিন্স হ্যান্ড মাইকে কথাগুলো বার বার বলছে। আমাদের খুব দ্রুত পালাতে হবে বলেই লুভ্রনং সাকিবকে ছাদে উঠতে বললো।
সাকিব ও লুভ্রনং হোটেলের গোপন সিঁড়ি পথে দ্রুত ছাদের দিকে উঠতে লাগলো। সিঁড়ির মাথায় একটি লোহার দরজা আছে। সাকিব হাতল টেনে খোলার চেষ্টা করলো কিন্তু খুলতে পারলোনা। লুভ্রনং দরজার চারিদিকে এক প্রকার হলুদ কালারের রশ্মি ফেলতে লাগলো। কিছুক্ষনের মধ্যে দরজা কেটে পড়ে গেল। ছাদে ওঠার সাথে সাথে একটি রোবট সাকিবকে জাপটে ধরলো। রোবটটি দড়ি দিয়ে হেলিকপ্টারের সাথে বাঁধা ছিল। মুহুর্তের মধ্যে সাকিবকে হেলিকপ্টারে তুলে ফেললো।

রোবটটি ধরার সাথে সাথেই সাকিব জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে আবিস্কার করলো হাত পা বাঁধা অবস্থায় একটি একটি বদ্ধ রুমের মধ্যে। সাকিব একটা ট্রলিতে শুয়ে আছে। ও যে রুমের মধ্যে আছে, সেটি বেশি বড় নয়, তবে যন্ত্রপাতিতে ঠাসা। ট্রলিটা সামনে এগিয়ে একটা যন্ত্রের নিচে গিয়ে থামলো। ওর সারা শরীরে বিভিন্ন যায়গায় অসংখ্য ক্লিপ লাগানো। ভয়ে আঁতকে উঠলো সাকিব। ওঠার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। যন্ত্রটি হতে তীব্র আলোর ঝিলিক বের হলো। আলোর ঝিলিকে চোখে তারাবাজি ছাড়া কিছুই দেখতে পারছেনা। হঠাৎ রুমটা বেশ আলোকিত হয়ে গেল। সাকিব মাথাটা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে কিছু দেখার চেষ্টা করলো। মাথাটা বাম দিকে ঘোরাতেই দেখলো কাঁচের গস্নাসে ঘেরা পাশের রুমের কয়েকজন কম্পিউটার নিয়ে কাজ করছে। হঠাৎ ট্রলিটা আবার চলতে শুরু করলো। দেওয়ালের সাথে দুটি লোহার প্লেট লাগানো আছে। পা দু‘টো প্লেটে স্পর্শ করিয়ে ট্রলিটি স্থির হলো। ভয়ে সাকিবের নিঃশ্বাস বন্ধের উপক্রম হলো। হার্টবিট বেড়ে গেল। সারা শরীর ঘামতে শুরু করলো। মুখের ঘাম গড়িয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় ট্রলিতে পড়ছে তার শব্দ শুনতে পাচ্ছে সাকিব। মাথার উপর কয়েকটি বাল্বসজ্জিত একটি প্লেট সেট করা হলো সাকিব মাথাটা ডান দিকে কাত করতেই দেখলো সেই রোবটি প্লেটের স্ট্য্রান্ড ধরে দাড়িয়ে আছে। রোবটটি এমনভাবে জাপটে ধরেছিলো সে কথা মনে পড়তেই জ্ঞান হারানোর উপক্রম হলো ওর। রোবটটি ধীরে ধীরে দেওয়ালে লাগানো সুইচ বোর্ডের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ভয়ে চোখ বন্ধ করলো সাকিব। হঠাৎ প্রচন্ড জোরে বিল্ডিং কাঁপতে লাগলো। ট্রলিটা কাঁপতে কাঁপতে দেওয়াল থেকে দূরে সরে গেল। সাকিব চোখ মেললো। হয়তো ভূমিকম্প হচ্ছে বাঁচতে হলে বাইরে যেতে হবে। কিন্তু তা তো সম্ভবনা। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রকৃতির বিভৎস ধ্বংশলীলা দেখতে সাকিব চোখ দু‘টো মেলে থাকলো। দেয়ালের কাঁচগুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়তে পড়ছে। কম্পিউটার গুলো কাঁপতে কাঁপতে টেবিল থেকে নিচে পড়ছে তার শব্দ কানে আসছে সাকিবের। রুমে থাকা লোকগুলো বাঁচাও বাঁচাও বলে দিক-বিদিক ছুটতে লাগলো। সব কিছুই দেখছে এবং শুনছে আর মনে মনে দোওয়া দুরুদ পড়ছে। এরই মধ্যে সাকিবের শরীরে বাঁধা রশিগুলো খুলে গেল। সাকিব উঠে বসলো। “এই উঠে বসলে কেন? এসব ঘটনা আমিই ঘটাচ্ছি। শুয়ে থাকো। আমি ট্রলিটিার নিচেই আছি।” কণ্ঠটা যে লুভ্রনং এর তা বুঝতে দেরি হলো না সাকিবের। নতুন জীবন পাওয়ার আনন্দে লুভ্রনংকে জড়িয়ে ধরতে প্রবল ইচ্ছে হচ্ছে রম্নদ্রর। কিন্তু তার আগে এই দোজখখানা হতে বের হওয়া দরকার মনে মনে বললো সাকিব। আবেগভরা কন্ঠে সাকিব বললো “ বন্ধু দ্রুত এই দোজখখানা থেকে বের করে নিয়ে যাও। একেবারে অসহ্য লাগছে এখানে।”একটু অপেক্ষা কর লেজার বিম রশ্মি দিয়ে রুমের দেওয়ালটা উড়িয়ে দিই তার পর বের হয়ে যাব, বললো লুভ্রনং। গুম গুম শব্দে দেওয়াল ভেঙ্গে পড়লো। মুহুর্তের মধ্যে ধোঁয়া আর ধুলো-বালিতে অন্ধকার হয়ে গেল রুমটা। আতঙ্কে চোখ বন্ধ করলো সাকিব। সাকিব যখন চোখ খুললো তখন দেখলো শূন্যে ভাসছে ও।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ৮:৪৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×