somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রামীন ব্যাংক : রক্তচোষা না সেবামূলক?

১৫ ই মে, ২০১১ দুপুর ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্রামীন ব্যাংকের ঋণের সুদের হারটি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক চলছে; অথচ বেশীরভাগ আলোচক, সমালোচক বা বিশেষজ্ঞই ব্যাপারটা আচ করতে পারছেন। ডঃ ইউনুসের সমালোচকরা বলছেন ৩০%, সমর্থকরা বলছেন ২০% বা তারও কম। সহজ হিসেবে প্রকৃত সুদের হার হচ্ছে ৪০-৪৪%। আসুন দেখি কিভাবে।

১৯৮০-র দশকের শুরুতে আমাদের এলাকায় আসে গ্রামীন ব্যাংক। শুনতাম ২০% হারে ঋণ দিচ্ছে গ্রামের নিঃস্ব মানুষকে। মনে হতো বেশ "বদান্যতামূলক" একটা উদ্যোগ। অন্যান্য ব্যাংকও ঋণ দিচ্ছে প্রায় একই হারে, তবে কেবল উচু-স্তরের মানুষকে, নিঃস্ব মানুষকে নয়। গ্রামীনকে বদান্যতামূলকই বলতে হবে। এবং বিশ্ব-জোরা ডঃ ইউনুস গ্রামীনকে সে পরিচিতিই দিয়েছেন, যার বদৌলতে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কারও পর্যন্ত পেয়েছেন।

তবে ১৯৯৫ সালে যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হব, তখন একদিন আমার মাথায় এল যে, গ্রামীন ব্যাংকের স্বল্পহারে ঋণ দানের সুদটা আসলে স্বল্প নয়। আসল সুদের হার দাঁড়ায় ৪০%-এর উপরে। গোমরটা এখানেঃ

কেউ ১০০ টাকা ঋণ নিয়ে মোট ১২০ টাকা ফেরত দিচ্ছে এক বছর পর। কিন্তু সাপ্তাহিক কিস্তি ফেরত দেওয়া শুরু হয় "০" (শুণ্য) দিন থেকে। তার মানে ঋণ-গ্রহীতা পুরো ১০০ টাকা খাটাচ্ছে ছয় মাসেরও কয়েকদিন কম। সুতরাং সুদের হার সরাসরি ৪০%-এর উপরে পরে যাচ্ছে।

এখানেই শেষ নয়! তার সাথে যোগ করতে হবে সাপ্তাহিক কিস্তিতে সুদে-আসলে ঋণ পরিশোধের ব্যাপারটি। সাপ্তাহিক কিস্তি সুদের ব্যাপারটি (অর্থাৎ চক্রবৃদ্ধি হার) যোগ করলে প্রকৃত সুদের হার দাঁড়াবে ৪৪%-এর উপরে।

অর্থাৎ গ্রহীতাকে কাগজে-কলমে দেখানো হচ্ছে সুদের হার মাত্র ২০%, কিন্তু ব্যাংক আসলে আদায় করছে ৪৪%। ব্যাপারটি আমার মাথায় আসতে সময় নিয়েছে প্রায় ১৫ বছর। আর দেশ-বিদেশের সর্বোচ্ছ শিক্ষিত বুদ্ধিজীবিদের মাথায় এ সাধারণ হিসেবটা আজও ঢুকছে না। ২৯ মার্চ (২০১১) আমেরিকার মিশিগানের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের "অর্থনীতির" প্রফেসর আব্দুল্লাহ আ, দেওয়ান ঢাকার Daily Sun পত্রিকায় "Demystifying Grameen Bank’s interest rates" শীর্ষক এক সম্পাদকীয়তে ব্যাখ্যা করে গেলেনঃ কীভাবে সমালোচকরা গ্রামীনের সুদের হারকে ৩০% বলে অতিরঞ্জিত করছেন, যদিও প্রকৃত সুদের হার ২০%। "সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট"-এর উর্ধতন গবেষক ডেভিড রুডম্যানের তথ্যের ভিত্তিতে (দেখুন এখানেঃ Click This Link) তিনি লিখেন, ডঃ ইউনুসের সমালোচকরা প্রকৃত সুদ ২০%-এর সাথে আরও ১০% যোগ করছেন গ্রহীতা প্রতি সপ্তাহে ঋণের কিস্তি পরিশোধে যে সময় ব্যয় করে তার বিনিময় মূল্য হিসেবে। আশ্চর্যের বিষয় যে, ঋণ-গ্রহীতার অপচয়কৃত সময়ের বিনিময়মূল্য বাদ দিলেও গ্রামীন ব্যাংকের প্রকৃত সুদ আদায়ের হার দাঁড়ায় ৪৪%-এর বেশী, যা আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের "অর্থনীতির" প্রফেসর বা "সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট"-এর উর্ধতন গবেষকের মাথায়ও খেলছে না।

দেশ-বিদেশের অনেকেই ডঃ ইউনুসের নোবেল পুরস্কার অর্জনে উৎফুল্ল; সেটা তার মহান ও বদান্যতামূলক গ্রামীন ব্যাংক প্রকল্পের ন্যায্য পুরস্কার। কিন্তু প্রশ্ন হলোঃ ৪০-৪৪% হারে ঋণ নিয়ে ক'জন লাভবান হতে পারবেন; আর ক'জন পথে বসে যেতে পারেন?

দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষিত ও বুদ্ধিমান ব্যক্তিরাও গ্রামীনের দেওয়া উচ্চহারে ঋণ নিয়ে লাভবান আশা করতে পারবে না। অথচ গ্রামীনের ঋণ যাচ্ছে গ্রামের সবচেয়ে অশিক্ষিত মহিলাদের কাছে।

এরূপ হারে ঋণ নিয়ে খুব কম লোকই লাভবান হতে পারেন। বেশীর ভাগ গ্রহীতা কঠোর পরিশ্রম করে যা লাভ করবেন, তার পুরোটা বা সিংহভাগ গ্রামীনকে ফেরত দিতে বাধ্য হবে। যারা লাভবান হতে পারবেন না, তারা এটা-সেটা বিক্রি করে ঋণটা পরিশোধ করবেন নতুন ঋণের আশায়। এভাবে অনেকটা জুয়া খেলার মত সহায়-সম্পত্তি হারাবেন কেউ কেউ। গ্রামীনের মত এন.জি.ও. গুলোর ঋণ নিয়ে দারিদ্র মোচন করতে পারবেন খুব কম লোকই।

তাহলে গ্রামীনের ঋণ-প্রকল্পের ফলাফল কি? ফলাফল হলঃ হত-দরিদ্র জনগনের কঠোর পরিশ্রমের ফসল প্রায় পুরোটা বা সিংহভাগটা যাচ্ছে ঋণ-দাতার হাতে, গড়ে উঠছে গ্রামীনের মত বড় বড় সংস্থা। প্রকৃত লাভবান হচ্ছেন ঋণদাতা ও বেশকিছু শিক্ষিত মানুষ, যাদের কর্ম-সংস্থান হচ্ছে। যাদের হারভাঙ্গা পরিশ্রমে এসব এন.জি.ও.-র পুজি বাড়ছে, সেসব নিঃস্ব গ্রহীতারা সামগ্রিকভাবে আদৌ লাভবান হচ্ছেন না।

২৩শে মার্চ ঢাকার আমেরিকান-আন্তর্জাতিক স্কুলে এক আয়োজনে ডঃ ইউনুস দাবী করেনঃ ক্ষুদ্রঋণ ও অক্ষুদ্রঋণ ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটা পার্থক্য নির্ধারন করতে হবে যে - এদের একটি সমাজসেবামূলক, অপরটি পয়সা কামানোর জন্য। গ্রামীনের মত প্রতিষ্ঠানগুলো যে কতটা "সেবামূলক" আর কতটা পয়সা কামানোর জন্য - সেটা এ আলোচনায় স্বচ্ছ হয়ে উঠবে সবার কাছে।

গ্রামীন গরীবের রক্তচোষণকারী বলা ঠিক না হতে পারে, তবে এরূপ একটা প্রকল্পকে মহানুভব, বদান্যতা ও সমাজসেবামূলক হিসেবে তুলে ধরতে ডঃ ইউনুসের এ প্রচেষ্টা বা দাবী মূলত অনৈতিক। শুধু দেশের ভিতরেই নয়, বাইরেও তিনি সেটা করেছেন নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির খায়েসে। ৪৪% হারে সুদ আদায় করে সেটাকে ২০% দেখিয়ে ডঃ ইউনুস গোল খাইয়েছেন দেশের নিঃস্ব মানুষকে; সে গোল তিনি খাইয়েছেন নোবেল কমিটিকেও।

(লেখাটি ৩১ মার্চ ২০১১-তে লেখা হয়েছিল)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১১ দুপুর ১২:১৬
১১টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×