somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম ও মার্ক্সবাদঃ আত্মার আত্মীয়?

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ সকাল ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্কুল ও কলেজ জীবনে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী ছিলাম, যদিও ইসলামে বিশ্বাসের ব্যাপারে কোন সন্দেহ মনে ঢুকেনি। ছাত্র ইউনিয়নের সমর্থক ছিলাম। কিন্তু সোভিয়েট রাশিয়া ও পূর্ব-ইউরোপে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পতনের পর কমিউনিস্ট শাসন ব্যবস্থার ভিতরে সংঘটিত সব বর্বরতার কাহিনী যখন বেরিয়ে আসে, তখন আমি খুবই দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ি কমিউনিজমের এহেন ব্যর্থতা ও সে সাথে অমার্জনীয় বর্বরতার কাহিনী জেনে। মনে প্রশ্ন উঠতে থাকেঃ মানবতাবাদের এমন একটি অনন্য দলিল ও সংবিধানে চালিত রাষ্ট্রে কিভাবে এমন বর্বরতা সংঘটিত হতে পারে? অবশ্যই নেতারা প্রয়োগে ভুল করেছে; মার্ক্সবাদ বা কমিউনিজমে তত্ত্বগত কোন সমস্যা নেই। ভুল মানুষের হাতে পড়ে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের এই দশা হয়েছে।

এরপর শুরু হবে আমার মুসলিম কমিউনিস্ট থেকে ধর্মে সন্দেহবাদী বা নাস্তিক কমিউনিস্ট হওয়ার পালা ও পরিশেষে আজকের নাস্তিক উদারবাদীতে উত্থাণ। আমার ধর্মে সন্দেহ ও পরবর্তিতে নাস্তিক্যে অবতীর্ণ হওয়ার শুভাযাত্রার সূচনা ঘটে প্রথমত বার্ট্রান্ড রাসেলের লেখা পড়ে। রাসেল প্রাথমিকভাবে মার্ক্সবাদী তত্ত্বে উদ্দীপিত ছিলেন এবং রুশ বিপ্লবে উল্লসিত হয়েছিলেন। কিন্তু রুশ কমিউনিস্ট শাসকদের আমন্ত্রনে রাশিয়া ভ্রমণে গিয়ে সেখানকার অবস্থা দেখে সমাজতন্ত্র সম্পর্কে তার মোহ ভেঙ্গে যায়, ঠিক যেমনটি ঘটেছিল আমাদের বংগীয় মনিষী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ক্ষেত্রে। যাহোক, রাসেল তার লেখায় বলেছেনঃ মার্ক্সবাদের ভিত্তি রয়েছে যীশু খৃষ্টের শিক্ষায় –- অর্থাৎ মার্ক্সবাদের সূচনা বা অনুপ্রেরণা রয়েছে খৃষ্ট ধর্মতত্ত্বের মাঝে। কথাটা আমার বিশ্বাস হয়নি তখন। কেননাঃ

• প্রথমত, সমাজতন্ত্র একটা নাস্তিক্যবাদী সমাজতত্ত্ব -– যার উদ্ভব ঘটে পাশ্চাত্যে খৃষ্টধর্মের সাথে লড়াই করে।
• দ্বিতীয়ত, মার্ক্সিস্টরা প্রচণ্ড রকমের খৃষ্টধর্ম বিরোধী।

পাশ্চাত্যের কমিউনিস্টদের মাঝে অনেক হিন্দুধর্ম প্রীতি পাওয়া যাবে; পৃথিবীর সর্বত্র পাশ্চাত্য থেকে বাংলাদেশ-ভারত পর্যন্ত কমিউনিস্টদের মাঝে ইসলামধর্ম প্রীতি পাওয়া যাবে; কিন্তু তাদের মাঝে খৃষ্টধর্ম প্রীতি -- হোক সে পাশ্চাত্যের কিংবা বাংলাদেশ-ভারতের -- একদম অনুপস্থিত বা বিরল। যদি যীশুর শিক্ষায় সমাজতান্ত্রিক তত্ত্বের ভিত্তি নিহিত, তাহলে কমিউনিস্টদের মাঝে এমন খৃষ্টধর্ম বিদ্বেষ থাকতে পারেনা। তবে এটা স্পষ্ট করে বলা যায় যে, কমিউনিস্টদের মাঝে কোন ধর্মের প্রতি প্রীতি বা সহানুভূতি যদি থেকে থাকে -- সে ধর্মটি হবে “ইসলাম”।

খৃষ্ট ধর্মতত্ত্বের উপর বিস্তর গবেষণার পর মার্ক্সবাদের ভিত্তি যে খৃষ্ট ধর্মের শিক্ষায় নিহিত সেটা আজ অস্বীকার করতে পারছি না। সমাজতন্ত্রের মৌলিক বিষয়টি হলো, প্রত্যেক ব্যক্তির অন্য-বস্ত্রের নিশ্চয়তা, তথা প্রত্যেক ব্যক্তির পেটের ভাত যোগানো। সে দায়িত্ব সমাজের সরার উপর ন্যাস্ত, অন্যের ঘাড়ে অর্পিত। যীশু খৃষ্টের শিক্ষায় (Gospel-এ) আমরা দেখি তিনি বার বার সমেবেত হাজার হাজার ক্ষুধার্তকে তার এক-টুকরো রুটি ভাগাভাগি করে খাওয়াচ্ছেন। দেখুন “গসপেল” বা যীশুর বাণী মার্ক ৮:১-১০, যেখানে যীশু তার থলির এক টুকরো রুটি সমেবেত ৪,০০০ লোককে ভাগ করে খাওয়াচ্ছেন। অন্যত্র যীশু ধনীদেরকে উপদেশ বা নির্দেশ দিয়েছেন তাদের ধন-সম্পদ বিক্রি করে দিয়ে গরীবদেরকে খাওয়াতে। যেমন মার্ক ১০:২১-এ যীশু তার এক ধনী শিষ্যকে বলছেনঃ “যাও, তোমার যা কিছু আছে সব বিক্রি করে দাও এবং গরীবদেরকে দিয়ে দাও এবং তুমি স্বর্গের ভাণ্ডার পাবে। তারপর এসো আমাকে অনুসরণ করতে।

সুতরাং নিজের ধন-সম্পদ ভাগাভাগি করে সমাজের সবাইকে খাওয়ানো খৃষ্টধর্মের শিক্ষার একটা মৌলিক ভিত্তি (খৃষ্টানরা সেটা চর্চা করে কি না, সেটা ভিন্ন কথা)। আর এটাই মার্ক্সবাদী সমাজ-ব্যবস্থার সবচেয়ে মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসেলের মন্তব্য যথার্থ।

তাহলে খৃষ্টধর্ম না হয়ে ইসলামের প্রতি মার্ক্সিস্টদের এমন প্রীতি বা সহানুভূতি কেন? সেটা কি ইসলামের সাথে সমাজতন্ত্রবাদের অধিক মিল থাকার কারণে? আমার সাম্প্রতিক গবেষণা সেটাই ইংগিত করে -- যে ইসলামের সাথে সমাজতন্ত্রবাদের শক্তিশালী একতা রয়েছে।

১) প্রলেতারিয়াতদের শাসন প্রতিষ্ঠাঃ মার্ক্সবাদী তত্ত্বানুসারে নবী মুহাম্মদের শিষ্য-সাথীরা ছিল মূলত আরবের অশিক্ষিত, হত-দরিদ্র ও নিপীড়িত দুর্বল জনতা; প্রকৃতপক্ষে তারা ছিল সমাজতন্ত্রের “প্রলেতারিয়াত”। এবং তাদেরকে খাওয়ানো ও তাদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা -- অর্থাৎ প্রলেতারিয়াতদের শাসন বা একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা ছিল মুহাম্মদের আন্দোলনের একটা বড় বিষয়। তাত্ত্বিকভাবে সেটা প্রাধান্য না পেলেও মুহাম্মদের কর্মকাণ্ডে সেটাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। যীশুর শিক্ষায় প্রলেতারিয়াতদের প্রতি সহমর্মিতার ছাপ থাকলেও তাদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার ধারনা মুখ্য হয়ে উঠেনি।
২) সশস্ত্র বিপ্লবঃ সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য হলো সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে বিদ্যমান ধনীক-সুবিধাবাদী শাসন বা সমাজব্যবস্থা ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলা, ধনীক-সুবিধাবাদীদেরকে প্রলেতারিয়াতদের পদানত করা বা তাদেরকে নির্মূল করে ফেলা এবং তাদের ধনসম্পদ লুটে নিয়ে গরীব-দুঃখীদেরকে খাওয়ানো। মুহাম্মদের আন্দোলন ছিল প্রায় একই। আমরা কোরানে দেখি মুহাম্মদ আরবের ধনীদের ভড়ৎসনা করছেন এবং তাঁর দরিদ্র-নিপীড়িত শিষ্যরা সংখ্যায় ও বাহুবলে শক্তিশালী হয়ে উঠতেই মুহাম্মদ আরবের ধনী সম্প্রদায়গুলোকে আক্রমণ করে তাদেরকে নিধন করছে এবং তাদের ধনসম্পদ লুটে এনে তার প্রলেতারিয়াত সমর্থকদের মাঝে বিলিয়ে দিচ্ছে (যদিও সে নিজে বড় একটা হিস্যা রাখছে)। কোরানে মালামাল লুট ও তা বণ্টনের বিষয়ে পুরো একটা সুরা বা অধ্যায়ও নাজিল করেছেন আল্লাহঃ দেখুন সুরা নং ৭৫ বা সুরা আল-আনফাল [AL-ANFAL (SPOILS OF WAR, BOOTY)]। তাহলে আমরা দেখিঃ সশস্ত্র বিপ্লবের প্রশ্নে মুহাম্মদের ইসলামি আন্দোলন ও কমিউনিস্টদের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন একই সারিতে পড়ছে, যেটা যীশুর আন্দোলনে অনুপস্থিত। বরং যীশুর কথায় আমরা তাঁকে দেখি শক্তিশালী ও সাম্রাজ্যবাদী রোমান শক্তির চাটুকারীতা করতেঃ তাদেরকে নির্ধারিত খাঁজনা দিতে ও আনুগত্য দেখাতে ইহুদিদেরকে উপদেশ দিতে।

সুতরাং আমরা দেখিঃ নিপীড়িত জনতাকে খাওয়ানো ও সশস্ত্র বিপ্লব – এ দু’টো বিষয়েই ইসলাম ও মার্ক্সবাদী আন্দোলন একই কাতারে পড়ে এবং উভয় বিষয়েই ইসলাম ছিল মার্ক্সবাদী আন্দোলনের অগ্রপুরুষ। বাস্তবে না ঘটলেও ইসলাম সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য অনুকরণীয় পূর্ববর্তি দৃষ্টান্ত হিসেবে স্থান পায়।

ইসলাম ও মার্ক্সবাদী আন্দোলনের মাঝে এ মৌলিক মিল থাকা সত্ত্বেও কিছু বিষয়ে আপাতঃদৃষ্টিতে পার্থক্য দেখা যেতে পারে। যেমন মুহাম্মদের আন্দোলনে প্রলেতারিয়াত ছিল তারা, যারা তার ধর্ম ও নেতৃত্ব গ্রহণ করত; বাকী সবাই ছিল শোষক-নির্যাতক এবং হত্যা ও লুটপাটের লক্ষ্য। সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে যদিও সব গরীব-দুঃখী মানুষই প্রলেতারিয়াত, বাস্তব প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিন্তু মুহাম্মদের মতই ঘটেছে। বিংশ শতাব্দীর মার্ক্সবাদী আন্দোলনে ও প্রতিষ্ঠিত সমাজতান্ত্রিক সমাজে – রাশিয়া, পূর্ব-ইউরোপ ও চীন হয়ে কম্বোডিয়া-উত্তর কোরিয়া পর্যন্ত কমিউনিস্টরা কোটি কোটি (৮.৫ থেকে ১০.০ কোটি) মানুষ হত্যা করেছে। এবং তাদের সিংহভাগ ছিল সমাজের সাধারণ মানুষ। এত অল্প সময়ে এমন বিরাট সংখ্যক মানুষ হত্যার ঘটনা ইতিহাসে বিরল। প্রলেতারিয়াত শ্রেণীর মানুষ হওয়া সত্ত্বেও সমাজতন্ত্রী কর্তৃপক্ষের সাথে দ্বিমত বা বিরোধের জন্যই তাদেরকে হত্যা করেছে সমাজতন্ত্রবাদীরা। নবী মুহাম্মদও একই পন্থার প্রয়োগ করেছিলেনঃ আরবের যেসব সম্প্রদায় তার আন্দোলনকে মেনে না নিত, তাদেরকে আক্রমণ করে মালামাল কব্জা করার পর তাদের উপর গণহত্যা ঘটাতেন বা তাদেরকে গণহারে নির্বাসনে পাঠাতেন তিনি – তাদের মাঝে গরীব-দুঃখী আছে কিনা সেটা বাছ-বিচার না করে। নবী মুহাম্মদের বিধর্মী সম্প্রদায়গুলোকে আক্রমণের কারণ আল্লাহ বর্ণনা করেছেন কোরানের ৫৯:৩-৪ আয়াতে:

"And had it not been that Allah had decreed "banishment" for them, He would certainly have punished them in this world: And in the Hereafter they shall (certainly) have the Punishment of the Fire. That is because they "resisted Allah and His Messenger": and if any one resists Allah, verily Allah is severe in Punishment." -- অর্থাৎ “আল্লাহ যদি তাদেরকে নির্বাসনের রায় না দিতেন, তিনি এ পৃথিবীতেই তাদেরকে (অন্য উপায়ে) শাস্তি দিতেনঃ এবং পরজনমে তার জন্য রয়েছে অগ্নিদহনের শাস্তি। তার কারণ তারা “আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে” প্রত্যাখ্যান করেছিল; এবং কেউ আল্লাহকে প্রত্যাখ্যান করলে আল্লাহ তার উপর শাস্তিতে কঠোর।”

তার মানে দাঁড়ায়ঃ আল্লাহকে অর্থাৎ আল্লাহর তথা নবী মুহাম্মদের ইসলামী আন্দোলনকে প্রত্যাখ্যান করলেই তাদেরকে আক্রমণ করে নির্বাসনে পাঠানো বা গণহত্যা করা ছিল মুহাম্মদের প্রধান কর্মপন্থা, যার মাধ্যমে তিনি মদিনার বনি কাইনুকা ও নাদির গোত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন এবং বনি কুরাইজা, বনি মুস্তালিক ও খাইবারে পুনর্বাসিত নাদির গোত্রকে গণহত্যার মাধ্যমে নির্মূল করেছিলেন (দেখুন Ibn Ishaq, The Life of Muhammad, Karachi, p. 363, 437, 461, 490, 510)।

সুতরাং আমরা দেখছিঃ কেবলমাত্র ঈশ্বর ও পরকালে বিশ্বাসের মত কিছু গৌণ বিষয় বাদ দিলে মার্ক্সবাদ ও ইসলাম একাকার হয়ে যায়। তবে ইসলামের পরকালে বিশ্বাসের বা বেহেস্ত-গমনের বদলি বা বিকল্পও রয়েছে মার্ক্সবাদে। মার্ক্সবাদ স্বপ্ন দেখে এক কল্পিত স্বর্গরাজ্যের (“Utopia” বা “perfect society”) এ পার্থিব জগতেই; আর ইসলামের মত ধর্মগুলোও অনুরূপ স্বর্গরাজ্যের স্বপ্ন দেখে পার্থিব ও কল্পিত পরজগৎ উভয় জায়গাতেই। ইসলাম ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে সে পার্থিব স্বর্গরাজ্য সৃষ্টির পন্থা (modus operandi) একইঃ সশস্ত্র বিপ্লব; খৃষ্টধর্ম সেক্ষেত্রে অনেকটা ভিন্ন।

মজার বিষয় হচ্ছেঃ ইসলামের পরজাগতিক স্বর্গরাজ্য ও মার্ক্সবাদের ইহজাগতিক স্বর্গরাজ্যের মাঝে মৌলিক মিল বিদ্যমান, যদিও তা সুস্পষ্ট উল্লেখ না হয়ে থাকতে পারে। ইসলামের স্বর্গরাজ্য বা বেহেস্ত হবে এমন এক সমাজ যেখানে মানুষের সব চাহিদা আপনা-আপনি পূরণ হয়ে যাবে; হোক সে মদ কিংবা ফলমূল – মনে এলেই তা মুখের মাঝে হাজির হবে; তার জন্য কোন পরিশ্রম করতে হবে না। কাজেই বেহেস্তবাসী মানুষের একমাত্র কাজ হবে আমোদ-প্রমোদ ও অবারিত যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়া। মার্ক্সও অনেকটা এমনই এক স্বর্গরাজ্যের স্বপ্ন দেখেছেন। মার্ক্সের মতেঃ নিত্যকার চাহিদা মিটাতে পরিশ্রম ও কর্মপ্রয়াস মানুষকে তার ব্যক্তিক ও মননশীল উন্নয়ন বা উৎকর্ষ সাধন থেকে বঞ্চিত করে – অথচ সেটাই হতে হবে মননশীল মানব প্রজাতির মৌলিক লক্ষ্য। কাজেই মার্ক্সিস্ট সমাজ ব্যবস্থার চরম পরিণতি বা স্বর্গরাজ্যে জনগণকে উৎপাদন বা শ্রমযন্ত্র থেকে মুক্ত করতে হবে। সে সমাজে উৎপাদন ব্যবস্থা হবে সর্বোচ্চ, সম্ভব হলে পরিপূর্ণভাবে যন্ত্রায়িত (mechanized)। এ প্রসংগে মার্ক্স লিখেছেনঃ

"Freedom in this field (i.e. from labor) can only consist in socialized man, the associated producers, rationally regulating their interchange with Nature; and achieving this with the least expenditure of energy and under conditions most favorable to, and worthy of, their human nature. But it nonetheless remains a realm of necessity. Beyond it begins that development of human energy which is an end in itself, the true realm of freedom, which, however, can blossom only with this realm of necessity as its basis. Shortening the working-day is its basic prerequisite." (Karl Marx, Capital, Vol. 3, p. 85; New York, 1967) -- অর্থাৎ "মানুষ শ্রমযন্ত্র থেকে মুক্ত হতে পারে কেবলমাত্র সমাজতান্ত্রিক মানবসমাজে, যেখানে শ্রম ও উৎপাদন হবে একটা প্রয়োজনীয়তা মাত্র, যা মেটাতে হবে সর্বনিম্ন প্রয়াস বা শক্তি ব্যয়ের মাধ্যমে, যা মানুষের প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর বাইরে শুরু হবে মানব-শক্তির উন্নয়ন, যা হবে কেবলই ব্যক্তির মনোঃপূর্তির জন্য – সত্যিকার স্বাধীনতা পর্ব, যদিও তা কেবলই প্রস্ফূটিত হতে পারে চাহিদা মেটানোর পর। শ্রমের সময় কমানো তার একটা মৌলিক প্রয়োজনীয়তা।"

তার মানে দাঁড়ায়ঃ মানুষ তার সত্যিকার স্বাধীনতার চরম পর্বে যতটা সম্ভব উৎপাদনের জন্য শ্রম থেকে মুক্ত থাকবে। বিজ্ঞানের বদৌলতে এমন সমাজে মূলত যন্ত্র কাজ করবে মানুষের পেটের চাহিদা মেটাতে, আর মানুষ ব্যস্ত হবে ব্যক্তিক ও মননশীল উৎকর্ষ সাধনে। তাহলে দেখা যাচ্ছেঃ ইসলামের বেহেস্তের মতই মার্ক্সের কাংখিত “অন্তিম স্বর্গরাজ্য” হবে অলস মস্তিষ্কের বা মানুষের কারখানা। সেখানে মানুষ কী করবে মানবীয় প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যক্তিক উন্নয়ন সাধনে! সামান্য কিছু মানুষ মননশীল গবেষণা ও উৎকর্ষ সাধনে ব্রতী হলেও ব্যাপক সিংহভাগ ব্যস্ত হবে আমোদ-প্রমোদে -- মদ, গাজা, আর যৌনকর্ম। এমন সমাজে এসবই হবে মানবীয় প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মকাণ্ড। কাজেই ইসলামের “বেহেস্ত” আর মার্ক্সের “অন্তিম স্বর্গরাজ্য” একে অপরের প্রতিচ্ছবি মাত্র।

এক কথায়ঃ এটা সন্দেহাতীত যে, মুহাম্মদের ইসলামী ও মার্ক্সের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে মৌলিক ও প্রধান বিষয়গুলোতে ব্যাপক সামঞ্জস্য বা একতা বিদ্যমান; একে অপরের আত্মার আত্মীয়।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ২:০৬
২৮টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×